এক_ফালি_রোদ ২৮তম_পর্ব

এক_ফালি_রোদ
২৮তম_পর্ব

সূর্যের তীব্র রশ্নি অয়নের চোখে আছড়ে পড়লে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। বেলা কটা বেজেছে সেদিকে একেবারেই হুশ নেই তার। তবে আলোর প্রখরতা বলে দিকে দুপুর হয়ে গেছে হয়তো। বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে অয়ন। চোখ খুলতেই দেখলো ঘরটা শূন্য। বিছানাটা শীতল, প্রাপ্তির উষ্ণতাটুকু আর অনুভব হচ্ছে না অয়নের। হাই তুলতে তুলতে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো অয়ন৷ ঘুমের রেশটুকু এখনো যায় নি। তিনদিন পর স্বস্তির ঘুম দিয়েছিলো সে৷ এই দুমাসে প্রাপ্তি নামক নারীটি তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অনেকটা বদঅভ্যাস বলা যেতে পারে, সিগারেটের মতো। একটা সময় পর যেমন নিকোটিনের অভাবে মানুষ পাগলপ্রায় হয়ে যায়, ঠিক তেমন ই প্রাপ্তির সান্নিধ্য না পেলে অয়ন পাগলপ্রায় হয়ে উঠে। তাই তো কাল মরিয়া হয়ে ছুটে এসেছে বাসায়। প্রাপ্তির মাঝে বিশেষ কিছু নেই, তবুও তার প্রতি একটা টান অনুভূত হয় অয়নের। কিন্তু এটা শুরু শারীরিক চাহিদা মাত্র। এই চাহিদাকে ভালোবাসা বললে ভালোবাসাকে অপমান করা হবে। মেয়েটি অনেক আলাদা, চাইলেও তার প্রতি উদাসীন থাকতে পারে না অয়ন। হঠাৎ মোবাইলে নোটিফিকেশন বেজে উঠে অয়নের। একটি ইমেইল এসেছে। ইমেইলটি অন করে অয়ন। সনয় শেষ হয়ে এসেছে। এবার খেলার ইতি টানতে হবে তাকে। চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হয়ে উঠে অয়নের কপালে। মাঝে মাঝে সব কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়, সব শেকল ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছে হয়। তার শেকল ধীরে গলার ফাঁদ হয়ে যাচ্ছে। সে দেখছে কিন্তু কিছুই করতে পারছে না। হয়তো এটা তার এবং প্রাপ্তির নিয়তি। অয়ন উঠে দাঁড়ালো বিছানা থেকে, চেয়ারের টিশার্টটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। তারপর ওয়াশরুমের দিকে হাটা দিলো। আজ প্রাপ্তির মনে কোনো অভিযোগ রাখবে না সে। সকল অভিযোগের সমাপ্তি ঘটাবে অয়ন।

বিকেল ৫.৩০টা,
শপিংমলের বাহিরে অপেক্ষা করছে রাইসা। অপেক্ষা আবরারের। লোকটা বলেছিলো সে ঠিক চারটা ত্রিশে তার সাথে শপিংমলে দেখা করবে। কিন্তু কিসের কি! লোক তো দূরে থাক তার ছায়াটি ও নজরে আসে নি এখনো রাইসার। সে আবরারের অপেক্ষায় ঘড়ির কাঁটা গুনতে লাগলো। সূর্যের তেজ নিভে এসেছে। একঘন্টা পর সন্ধ্যা নামবে। আর ঢাকার যে জ্যাম তার কথা আর নাই বা বললাম। সাতটার আগে কলিগের বাসায় পৌছাতে পারলে হয়। কেনাকাটাও করতে হবে। কিন্তু লোকটার তো হদিস ই নেই। হঠাৎ রাইসার কানে এলো,
– সরি, সরি….. শেষ সময়ে ওবায়দুল কয়েকটা ফাইল নিয়ে হাজির হয়েছে। তাই লেট হয়ে গেছে। সরি

দৌড়াতে দৌড়াতে এখানে উপস্থিত হয়েছে আবরার। ঘেমে নেয়ে একসার হয়ে আছে লোকটি। এখনো হাপিয়ে যাচ্ছে। রাইসার এতোক্ষনের সব রাগ আবরারের উপস্থিতিতেই পানি হয়ে গেলো। তবুও রাগের মিথ্যে অভিনয় করে বললো,
– একঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, আসতে পারবে না একটা ফোন করা যেতো না?
– সরি তো বউ, আর রাগ করো না। আর হবে না। এখন থেকে ওবায়দুলকে খুব বকা বকে দিবো আমি। চলো আর সময় নষ্ট করি না
– তুমি কি বলতে চাও আমি সময় নষ্ট করি?
– না না একেবারেই না, লক্ষীটি রাগ করো না। এমনিতে লাঞ্চটাও করতে পারি নি। খালি পেটে তোমার বকাবকিটা ঠিক হজম হবে না৷
– কেনো শুনি?
– কাজের চাপ ছিলো যে। আজকের মতো ক্ষমা করে দেও প্লিজ। আর হবে না।
– ঠিক আছে, এতো নাটক করা লাগবে না। চলো, কিছু খেয়ে নিবে।

রাইসার ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসিটি আবরারের খুব প্রিয়। এই এক হাসির জন্য সবকিছু করতে পারবে সে। শুধু একটি জিনিস ব্যাতীত। এই একটা জিনিসই আবরারকে প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। রাইসার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো আবরার। এই হাতের উষ্ণতা তার শীতল হৃদয়ে এক শান্তির পরশ বুলিয়ে যায়। মনে করিয়ে দেয় তার রাইসার তার ই আছে।

শপিংমলের অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরির পর ও কিছু মনে ধরে নি রাইসার। কিন্তু কিছু একটা তো কিনতে হবেই। হুট করেই মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেলো। সব দোকান বাদ দিয়ে তাই সে বাচ্চাদের খেলনা, সরঞ্জামের দোকানে ঢুকে পরে। দোকানদারকে নবজাতক বাচ্চাদের কাপড়, খেলনা দেখাতে বলে রাইসা। রাইসার এরুপ আচারণে আবরার অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– এখান থেকে কি কিনবে?
– বাবুদের জামা?
– কিন্তু বাচ্চাটা তো এখনো হয় নি। এখন জামা কেনাটা কি ঠিক হবে?
– কেনো হবে না? আর তো দেড় কি দু মাস! এর পর ই তো ইনশাআল্লাহ সে পৃথিবীর মুখ দেখবে, এখন কেনাটা একদম ঠিক হবে। আমাদের বেলায় আমি তো ছয়মাসের সময় থেকেই কিনতে শুরু করবো, দেখো। আমার বাচ্চাদের জন্য আমি সব কিছু বেঁছে বেঁছে কিনবো দেখো।

রাইসার এরুপ কথা শুনে আবরার চুপ হয়ে যায়। সে কথাটা ঘুরাতে পারছিলো না। রাইসা খুব আগ্রহের সাথে বাচ্চাদের কাপড়গুলো দেখছিলো। তার চোখে এক অজানা আনন্দ কিরণ দেখা যাচ্ছিলো। হঠাৎ রাইসা একটা বাচ্চাদের জামা দেখতে দেখতে উৎসাহিত কন্ঠে বলে,
– আবরার, এই জামাটা দেখো কি সুন্দর না?
– হুম
– এমন একটা জামা আমরা আমাদের জন্যও কিনি?
– আমাদের জন্য কেনাটা অহেতুক হবে না রাইসা?

আবরার খানিকটা ঠান্ডা গলায় কথাটা বলে। আবরারের এমন কথাশুনে খানিকটা অবাক হয় রাইসা। প্রতিবাদের স্বরে বলে,
– এতে অহেতুক হবার কি আছে? আমরা বিবাহিত। আমাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। কিছুদিন পর বাচ্চার প্লান তো করতেই হবে তাই নয় কি? তাহলে আজ যদি একটা জামা আমার ভালো লেগেছে বলে কিনে রাখি তবে দোষের কি আছে শুনি?

রাইসার কথাটা শুনে পুনরায় ঠান্ডা কন্ঠে আবরার বলে,
– যখন বাচ্চা নেওয়া হবে, তখন না হয় কিনো। এখন এসবের কোনো মানেই হয় না।

এবার নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলো না রাইসা। কাঁপা স্বরে বলে উঠলো,
– আচ্ছা তুমি বাচ্চা নেবার কথা শুনলেই এতো উদাসীন হয়ে যাও কেনো বলো তো? আমি যখনই তোমাকে এই কথাটা বলি তখনই….
– রাইসা, এটা তোমার ঘর নয়। দোকানে এসে এভাবে সিন ক্রিয়েট না করলেই ভালো হয়। তোমার যদি শপিং হয়ে যায় তাহলে চলো। নয়তো আমি বাহিরে ওয়েট করছি। তুমি শপিং করে আসো।

বলেই গটগট করে দোকান থেকে বেরিয়ে যায় আবরার। রাইসা তখন………

চলবে

[পরবর্তী পর্ব আগামীকাল তারাবীর পর ইনশাআল্লাহ পোস্ট করবো। দয়া করে কার্টেসি ব্যাতীত কপি করবেন না ]

মুশফিকা রহমান মৈথি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here