এক মুঠো সুখ,৩ শেষ পর্ব
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
পুলিশ এসে নিয়ে গেল নিয়নকে। নিয়ন পুরো ছ মাস জেল খাটে। তার চাচাতো ভাই তার নামে মিথ্যা কেশ করে তাকে ফাসিয়ে দেয়। ছয় মাস পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে নিয়ন রেনুকে জানিয়ে দিল বিয়ে করবে না। এদিকে রেনুকে নিয়ে আরো রং তামশা শুরু হয়। কেউ কেউ বলেই উঠে। রেনুর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে নিয়ন তাকে ছেড়ে দিয়েছে। কথাটি এক মুখ, দু মুখ হতে হতে পুড়ো এলাকা ছড়িয়ে যায়। লাষ্ট পর্যন্ত তাদের এলাকার সেই কমিশনার নিয়নকে বুঝায়। এবং সেদিনি তাদের বিয়ে পড়ানো হয়।
রেনুর বুক চিড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে। নিজের হাতের ব্যাগটি নিয়ে রওনা করে অচেনা-অজানা গন্তব্যে। যেখানে তার দাম নেই সেখানে আর যাই হোক সেখানে থাকা যায় না। না ধুকে ধুকে মরা যায়।
সেদিন রেনুর সাথে একটি মহিলার কাকতালীয় ভাবে দেখা হয়। মহিলা মধ্যবয়সী। ছোট একটি দূর্ঘটনায় তার শরীরে চোট পায়। রেনু তাকে সাহয্য করলে রেনু সবটা বলে তার। মহিলার বড়ই আফসোস হয়। উনি রেনুকে বলেন,,
—“আম্মু তুমি আমার সাথে যেতে পারো। আমার একটা পরিচিত এনজিও আছে যেখানে তোমাদের মতো দুঃখীনি মেয়েদের সাহায্য করে।”
রেনু দোনামোনায় পড়ে যায়। মহিলার কথাটিকি বিশ্বাস করবে কিন না ভেবেই পাচ্ছে না। তারপর ছোট শ্বাস নিয়ে বলল,
–” আচ্ছা!”
ভাগ্যের উপর সেদিন ছেড়ে দিয়েছিল রেনু। এবং তার ভাগ্য তার সাথেও ছিল। সাথে শক্ত ছিল তার মনবল। আর তার কঠোর পরিশ্রমে রেনু আজ নিজের অসহায় দরিদ্রদূরি করণ সংস্থা খুলে ফেলে। এবং শুধু এ দেশেই না আজ বিদেশেও তার চর্চা হয়ে চলেছে।
রেনু সকলের সামনে স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে। ছল ছল চোখে হাতে মাইকটি ধরে সামনে বসে থাকা শত শত মানুষের দিক তাকিয়ে বলল,,
—“আজ আমি এ পর্যন্ত এসেছি আমার নয়ন মার জন্য। তিনি আজ আমার সাথে নেই।সেদিন রাস্তা থেকে কুড়িয়ে তিনি আমায় এ পর্যন্ত আসতে সাহয্য করেছেন। আল্লাহ্ উনার আত্মার মাগফিরাত করুন।”
হাসি হাসি মুখে অ্যাওয়ার্ড নিয়ে বেড়িয়ে আসে রেনু।
আর তখনি ছোট পুতুল এসে রেনুকে জড়িয়ে ধরে চেঁচিয়ে বলে,,
–” আম্মু আবার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।”
রেনু হাসি মুখে কোলে তুলে নেয় তার সাত বছরের মেয়ে পুতুলকে। এবং পা বাড়ায় তাদের নতুন জীবনে।
রেনুকে টিভির পর্দায় দেখে হাহাকার করে উঠে নিয়নের বুক। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ভিতের সব কিছু। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলার নেই তার। আজ সে প্যারালাইজড। তার প্রেমিকে সেদিন তার সব লুটেপুটে নিয়ে চলে যায়। নিয়ন তাদের নামে কেইশ করবে বলাতে তারা নিয়নের এক্সিডেন্ট করিয়ে দেয়। সেদিনে পর থেকে সে বিছানায় পড়া। তাকে দেখার মতো আজ কেউ নেই। না মা, না তার প্রেমিকা। সব ছিল মরিচিকা। মা টাকার নেশা তাকে ব্যবহার করেছে। বাবা না থাকায় শাসন করার কেউ ছিল না তার। যা মন চাইছিল তাই করেছে। কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক তা কেউ দুটো থাপর দিয়ে দেখিয়ে দেয় নি। তার কঁপালে যে সুখ আসেনি তা নয় ম এসে ছিল। এক মুঠো সুখ তাকেও ধরা দিয়েছিল রেনু নামের মেয়েটিকে ঘিরে কিন্তু সে তা ধরতেই পারেনি। তাই তো আজ শূন্য শুধু শূণ্য তার চারপাশ।
সমাপ্ত
(আমার ফোন নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গল্পটা এগিয়ে নিতে পাড়লাম না এখানেই শেষ করে দিলাম। যদিও রেনু আর নিয়নের সংসার এখনো করছে। তাদের একটি না পাঁচটি সন্তান ও হয়েছে। কিন্তু নিয়ন? সে আজোও ফিরে নি তার রেনুর কাছে। আর রেনু তার ভাল হওয়ার প্রচেষ্টা এখনো করে যাচ্ছে। বুকে তার এক বুক আশা নিয়ন ফিরবেই আর তার জীবনের এক মুঠো সুখ হয়ে ধরা দিবে।)
(ভুল_ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)