এক মুঠো সুখ,পর্ব_২
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
সামনে গিয়ে পর্দা সরাতেই একটি উজ্জল শ্যামলা নিষ্পাপ ১৫,১৬ বছরের একটি মেয়েকে দেখতে পেলো। যে ভয়ে গুটিসুটি মেরে মেরে পর্দার আড়লে। ঠিক সেই মুহূর্তে যেন প্রেমে গেল সে।
সেদিনের পর থেতে শুরু হলো নিয়নের পাগলামি। সে পাগলা হয়ে উঠলো রেনুকে বিয়ে করতে।এদিকে রেনুর বাবা এসব নারাজ। কোনো মতে পলিটিক্স করা ছেলের কাছে নিজের মেয়েকে বিয়ে দিবেন না। তিনি বললেন,,
–” আমার মেয়েকে নদীতে ভাসিয়ে দিবো। তবু তোমার ঘরে দিবো না।”
তখন নিয়ন রেনু বাবার পায়ের কাছে বসে পড়ে। অতি বিনয়ের সুরে বলে,,
–” খালু আমি সব ছেড়ে দিবো। নতুন জীবন শুরু করবো রেনুকে নিয়ে!”
নিয়নের কথায় যে কারো মন গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু রেনুর বাবা কঠিন মানুষ। তার কাছে নিজের মেয়ের জীবন আগে। তিনি কাঠ কাঠ গলায় বললেন,,
–” কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না!”
সেদিনের এ টুকু বানীতে নিয়নের জন্য আরো মাথায় জেদ চাপিয়ে দেয়। সে বিয়ে করবেই রেনুকে! শুরু হলো জালাতন। তাও শান্ত ভাবে। যার কোনো সাড়া শব্দ নেই। এদিকে এসব দেখে এলাকার মানুষের মুখে নানা কু কথা ছাড়াতে বেশী সময় লাগেনি। তিল থেকে তাল পাকিয়ে রেনুর কিশোরী বয়সে তাকে অপরাধী করে তুলতে বেশী সময় লাগেনি যেন। সব সহ্য করতে করতে ছোট রেনু যেন হাপিয়ে উঠেছিল। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম সব ছেড়ে অসুস্থ হয়ে উঠে সে। রেনুর মা সব দেখে আচঁলে চোখ মুছে। কি বলবে কি করবে? ভেবে পায় না সে?
সেদিন হুট তরে রেনুর ফুপু এসে হাজির। হাসি হাসি মুখে ইনিয়ে বিনিয়ে নিয়নের কথা বার বার তুলছিলেন তিনি। মুলত নিয়ন তাকে পাঠিয়েছে। কিন্তু রেনুর মার এক কথা,,
–” ওর বাবা যা ভালো বুঝে!”
–” কিন্তু আপা! আপনি ভাইজানকে না বুঝালে কিভাবে? এমন ছেলে আগে পিছে বলার মতো কেউ নেই। দু হাতে আমাদের রেনুর উপর টাকা ঢালবে। তার উপর রেনুর চাঁপা রং। এটা দেখে এত সুন্দর ফুট ফুটে ছেলে তাকে বিয়ে করতে চায়! এটা কম কিসে?”
রেনুর মা চিন্তায় পড়ে গেলেন। তার ননদ আর যাই হোক তার মেয়ের খারাপ চাইবে না যথেষ্ট ভালবাসে তাকে। তারপরও একটি চিন্তা যদি ছেলে ভাল না হয় বিয়ের পর? তখন এত টাকা দিয়ে কি হবে? মনের শান্তি যদি নাই থাকে?তিনি বললেন,,
–“আচ্ছা দেখি তোমার ভাই কি বলে!”
সেদিন ঠিক সন্ধ্যায় রেনুর শরীরের গতিবেগ ভাল না দেখে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে রেনুর মা। ডাক্তার রেনুকে দেখে বলল,,
–” এটুকু বয়সে এতো কি চিন্তা করো আম্মু? এখন হাসবে, পড়বে, খেলবে? নো চিন্তা ফিন্তা!”
রেনু তখন মলিন হেসে মাথা নাড়ালো। চিন্তা কি সে করতে চায়? চিন্তা তো নিজেই হাজির হয়ে যায়।
ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিতে লাগলেন। তখনি হাজির হয় নিয়ন। তাকে দেখে রেনু আর তার মার চোখ কঁপালে। ডাক্তার তখন স্বাভাবিক। মুচকি হেসে বলল,,
–“আরে নিয়ন যে? কি হাল?”
নিয়ন হেসে বলল,,
–” ভালো। ওর কি হয়েছে?”
(রেনুকে উদ্দেশ করে বলে)
ডাক্তার তখন ভ্রু কুচকে বলে,,
–“চিনো নাকি তুমি?”
নিয়ন লাজ্জুক হেসে বলল,,
–” ও আমার হবু বউ?”
ডাক্তার অবাক হলেন,,
–“এতো এখনো ছোট! বয়স হয়নি ওর!”
নিয়নকে গম্ভীর দেখালো। দাম্ভিকতা সুরে বলল,,
–“হয় নি হয়ে যাবে!”
সেদিনের পর থেকে এটা যেন রুটিন মাফিক হয়ে গেল। রেনু যেখানে যেতো নিয়ন হাজির হতো। এদিকে নিয়ন আর রেনুকে নিয়ে খারাপ কথা বাতাসের সাথে ছাড়াতে লাগলো। এমন অবস্থা হলো যেন বাড়ি ছাড়তে হবে তাদের! কি করবে ভেবে অস্থির রেনুর বাবা মা। এদিকে তার দু ভাই এত বড় না। রেনু ৪,৫ বছরের বড়।
তাদের না ক্ষতি করে বসে নিয়ন!
একদিন সকালে এলাকার কমিশনার এসে হাজির। তিনি রেনুর বাবাকে অনেক সম্মান করেন। তিনি রেনুর বাবার হাত ধরে বলেন,,
–“চাচা যদি কেউ আপনার মেয়ের হাত ধরে ভাল পথে আসতে চায়! তাহলে ক্ষতি কি? সে ভাল হলে তার সাথে এলাকার ছেলে-পুলেও ভাল হবে!”
তখন রেনুর বাবা শক্ত কন্ঠে বললেন,,
–” তাদের ভালো হওয়ার জন্য আমি আমার মেয়েকে বলির পাঠা বানাতে চাই না..!”
কমিশনার দমে গেলেন। তাও রেনুর বাবাকে বুঝাতেই লাগলেন। কিন্তু লাষ্ট পর্যন্ত রাজি করাতে না পেরে হতাশ হয়ে চলে গেলেন।
এদিকে এলাকায় রেনুকে নিয়ে নানান কথা ছড়াতেই লাগলো। এমন কথাও রেনুর বাবার কানে এলো যে তার মেয়ে নাকি নিয়নকে জালে ফাসিয়েছে। নিয়ন ছিল হ্যান্ডসাম। এলাকার অনেক মেয়েই তাকে পছন্দ করতো। এসব কথা তাড়াই তেল, মশলাপাতি মিক্সট করে ছাড়াতে লাগলো।
না পেরে রেনুর বাবা রাজি হলো বিয়েতে! কিন্তু বিপত্তি ঘটলো তখন যখন বিয়ের ডেট সব রেডি তখনি বাসায় পুলিশ এসে হাজির আর…!
চলবে,