এক মুঠো সুখ,পর্ব_১
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
—“আমি তোমার সাথে সংসার করতে পাড়বো না।”
বিয়ে তৃতীয় দিন এমন একটি বাক্য শুনে হতভম্ব রেনু। নোনাজল গুলো গর গর করে পড়তে লাগলো।কাঁপা গলায় বলল,,
–“এ সব কি বলছেন?”
নিয়নের নির্বিকার ভাবে বলল,,
–” কানে নিশ্চয় কম শুন্তে পাও না?”
রেনু কিছু এটা এগিয়ে এসে তার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে বলল,,
–” সংসার যখন করবেনই না? বিয়ের আগে তাহলে কেন এতো রং তামাশা করলেন? বলুন? “লাষ্ট কথাটা কিছুটা চিৎকার করে বলল রেনু।
নিয়ন এবারো নির্বিকার। এমন একটি কথা বলার পর তার মুখে অনুতাপের লেশ মাত্র নেই।রেনু আবার বলল,,
–” কি হলো জবাব দিচ্ছেন না কেন? বিয়ের তিন দিনের দিন এমন কি হলো যে আপনি সংসার করতে চান না?”
নিয়ন রেনুর বাহু ধরে খাটে বসালো। তার সামনে হাটু গেড়ে বসে বিনয়ের সাথে বলল,,
–” কাম ডাউন রেনু। আমি তোমাকে ছাড়তে চাই না। আমিও চাই তুমিও থাকো আমার পাশে! কিন্তু কিছু শর্ত আছে তাতে?”
রেনু অবাক হয়ে গেল। ভ্রু কুচকে বলল,,
–” কিসের শর্ত?”
নিয়ন গম্ভীর সুরে বলল,,
–” আমার প্রেমিকাকে এখনে থাকতে দিতে হবে। আমাদের ভালবাসার মাঝে বাঁধা হতে পাড়বে না। আর এর বিপরীতে আমার প্রেমিকার ধন সম্পদ তোমার নামে করে দিবে।এমনকি সারা জীবন পায়ের উপর পা তুলে খাবে!”
নিয়নের এসব কথায় মাথার উপর বাজ পড়লো যেন। সে নিয়নকে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিয়ন ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যাওয়া রেগে গেল। রেনু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,
–” আমি এসব কিছু চাই না? আমি শুধু আমার স্বামীকে চাই। তার সাথে সুখের সংসার করতে চাই।”
নিয়ন রেনু দু বাহু চেপে বলে উঠে,
–” তা তো হচ্ছে না শোনা? আমি তাকে বিয়ে করে নিবো তোমাকে তালাক দিয়ে এটাই আমার শেষ কথা।”
বলে রেনুকে হালকা ধাক্ক দিয়ে হন হন করে চলে গেল।রেনু দিশেহারা হয়ে গেল। সে দৌড়ে শাশুড়ি কাছে আসলো। যে এখন পানে চুন লাগিয়ে মুখে পুড়চ্ছেন কিছুক্ষণ আগের রেনু আর নিয়নে সব কথাই কানে গেছে তার। সে দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। রেনু শাশুড়ির পায়ের কাছে বসে পড়ে।সিক্ত চোখে বলতে লাগে,,
–” মা কিছু বলেন। উনি এসব কি বলছেন?”
রেনুর শাশুড়ি নাকে নাকে কথা বলেন। তিনি বললেন,,
–” আমি কিছু জানি না তোমাগো সংসার তোমরা বুঝো। ”
রেনুর পাশ কাঁটিয়ে ছেলের কাছে এলেন। নিয়ন তখন ডাইনিং টেবিলে বসে পানি খাচ্ছিল। তিনি বললেন,,
–” বাবা আমারে গাড়ি ভাড়া দেও চইলা যাই বাড়িতে। যা ভালো বুঝো করিও। আমাগো মতামত জানাই দিও।”
নিয়ন তার প্যাকেট থেকে টাকা বের করে দিল। বলল,,
–“সাবধানে যাইয়েন আম্মা!”
–“আইচ্ছা বাবা!”
টাকা নিয়ে তার মা চলে গেলেন। এসব দেখে রেনু যেন অবাক হতেই ভুলে গেল। এ কেমন বিচার করলো তার শাশুড়ি?
নিয়নও সে মুহূর্তে বের হয়ে যায়। রেনু আর আটকায় না। কিভাবে আটকাবে? সে অধিকার কি তার আছে? না সেদিন বিয়ে আটকাতে পড়েছিল আর না নিয়নকে? এটাই কি ছিল তার নিয়তি? এসব ভাবতেই মনে পড়লো সেই দিনটির কথা! যেদিন তার লাইফে আগমন ঘটে নিয়ন নামের ব্যক্তিটির।
মিডিল ক্লাস ফ্যামেলীতে জম্ম নিয়েছিল রেনু। দু বোন দু ভাই তারা। ছোট থেকে সুখে-দুঃখে পার হচ্ছিল তার। একদিন মাঠে খেলতে গিয়ে জানতে পারে তার বান্ধবীর কাছে এলাকায় নাকি নতুন গুন্ডা থাকতে এসেছে। সবাই যেন আতঙ্কে থাকে সব সময়। একদিন সেই লোককে তার বড় ভাই বাসায় নিয়ে এলো। আড়াল থেকে দেখেছিল কুহু তাকে।
গোলাপি ফর্সা গায়ের রং। মাথায় কোকড়ানো চুল। দেখতে আমির খানের মতো অনেকটা। তাকে দেখে মোটেও যেন ক্যাডার বা গুন্ডা মনে হচ্ছিল না তার। বরং হিরো হিরোই লাগছিল তাকে।
এভাবে রেনুদের বাসায় নিয়নের আনাগোনা শুরু হতে লাগলো ঘন ঘন। তেমনি একদিন বাসায় কেউ ছিল না। রেনু তখন আসরের নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে কোরআন তেলাওয়াত করছিল। তখনি হুট করে শুন্তে পায় নিয়ের কন্ঠ। নিয়ন তার ভাইকে ডাকতে এসেছিল। রেনু ভয়ে সেদিন সিটিয়ে গেছিল। যার ফলে সে দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়ে সে। এদিকে নিয়ন কারো সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ধাক্কা দিল। তা সাথে সাথে খুলে গেল। সে ধীরে পায়ে হেটে রুমে এসে কুহু মাকে ” খালা ” বলে ডাকতে লাগলো। যখন কোনো শব্দই পেলো না তখন সে ফিরে আসতে পা বাড়াতেই দরজার পিছনের পর্দা নড়ে উঠলো। কিছুটা সন্দেহ হলো নিয়নের। সে সামনে গিয়ে পর্দা সরাতেই….!
চলবে,
(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)