একমুঠো_বসন্ত #নাজমুন_বৃষ্টি #পর্ব_৮

#একমুঠো_বসন্ত
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব_৮

দরজা খুলে দিল এক সুন্দরী মধ্যবয়স্ক মহিলা। নিহিলা শুরুতেই চিনে নিল। বেশ কয়েকবার মায়েদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার সময় নিহিলা দেখেছে ইনাকে। তিনি দরজা খুলেই নিহিলাকে টেনে নিল।

“আসসালামু আলাইকুম।” নিহিলা নিজেকে গুটিয়ে নিল। এখন ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।

“ওয়া আলাইকুমুস সালাম মা আসো আসো।” বলতে বলতেই তিনি নিহিলাকে জড়িয়ে নিলেন।

“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না এখনো। শেষ পর্যন্ত কত বছর পরে নিজের পরিবারের কাউকে কাছে পেলাম! কত বড়ো হয়ে গেছো! অথচ এতবছর পরে কাছে পেলাম।”

“তুমি আমার ভাইয়ের অস্তিত্ব মা। একদম ভাইয়ের মতো হয়েছো। কী মায়াবী! কেমন আছো?”

নিহিলা হাসার চেষ্টা করলো। তার ফুপির মতো এমন একজন কাছের মানুষের কাছ থেকে ‘তুমি’সম্বোধনটা ভালো লাগছে না।
“এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি ফুপি। আমাকে আপনি ‘তুই’সম্বোধন করতে পারেন।”

“আচ্ছা,ভাইজান কেমন আছেন?” রিনা আহমেদ মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
নিহিলা তাকালো। সে বুঝতে পারলো মানুষটি অনেক গভীর থেকে কথাটা বলেছে।

“এইতো ভালো আছেন।”

“দেখছিস? আমি কী পাগল! তোকে এখানে দাঁড়িয়ে রেখেই কথা বলছি।” বলেই তিনি দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিহিলার দিকে তাকালো।

“আহান কই? পাজিটা তোকে বিরক্ত করেনি তো? আর ব্যাগগুলো তোকে দিয়েই আনিয়েছে।দেখেছিস ছেলেটার কাজ কারবার!” বলতে বলতেই তিনি কেউ একজনকে ডেকে নিহিলার ব্যাগগুলো উপরে রেখে আসতে বললেন।

“না না ফুপি। ব্যস্ত হবেন না। ভাইয়াটা আমাকে কোনো বিরক্ত করেনি। ”

“ভাইয়া না, আহান, তুই , রিহি, অরিন একই বয়সের। হয়ত ওখানে থাকলে আজকে তোদের মধ্যে অনেক সুন্দর একটা সম্পর্ক থাকতো!” বলেই রিনা আহমেদ এক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

“আচ্ছা, অনেক ক্লান্ত তুই! যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে মা। তারপর আমি খাবার দিয়ে আসবো এরপর ঘুমিয়ে নিস্ ।”

“না না ফুপি। আমি ফ্রেশ হয়ে ঘুমাবো। এর আগে তোমার মোবাইলটা একটু দিবা? মা, বড়ো বাবাকে একটা খবর দেওয়া লাগবে।”

“আচ্ছা।” বলেই তিনি নিহিলাকে রুমে নিয়ে গেলেন।

————

ঘুম ভাঙলো জানালার কাছে কেউ একজনের পর্দা সরানোতে। নিহিলা চোখ মুখ কুঁচকে আবারো শুতে নিতেই রিনা আহমেদ ডাক দিলেন।

“রুম অন্ধকার করে এতক্ষন ঘুমালে চলবে? সেই সকালে এসেছিস এখন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। উপোস থেকে এতক্ষন ঘুমিয়ে আছিস! খুদা লাগেনি? উঠে পড়। কিছু খেয়ে দরকার হলে আবার শুইস।”

নিহিলার এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো সে তার বাড়িতে ছিল। ফুপির কণ্ঠস্বর শুনে ধারণা ভাঙলো। তার মনে হয়েছে সে বাড়িতে ঘুমিয়েছিল আর মা এসে পর্দা সরিয়ে দিচ্ছে। তার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল।

“নিহিলা?” রিনা আহমেদের ডাকে নিহিলার ধ্যান মগ্ন হলো। সে তাকাতেই তিনি হেসে এগিয়ে এসে নিহিলার মাথায় পরম আদরে হাত বুলিয়ে দিলেন।

“পরিবারের কথা মনে পড়ছে?”
নিহিলা চুপ রইল।

“আমি তো আছি। এখানে একদম নিজের মতো করে থাকবি। বাড়িতে নিজের মায়ের কাছে যা আবদার করতিস এখানেও আমার কাছে তাই করবি। মনে করবি আমি তোর আরেকটা মা।”

নিহিলা ‘হ্যাঁ-বোধক’ মাথা নাড়াতেই রিনা আহমেদ তাড়া দিলেন।

“উঠে পড়। নিচে সবাই খেতে বসেছে। অপেক্ষা করছে। আয়।” বলেই নিহিলাকে চোখ মুখ ধুতে বলে রিনা আহমেদ নিচে চলে গেল।

নিহিলা বেশ কিছু সময় চোখ মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে টেবিলের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তি হলো। সবাই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছে।

অরিন নিহিলাকে দেখেই টেবিল ছেড়ে দৌড়ে এগিয়ে এলো।

“আরে নিহিলা! কেমন আছো? তুমি তো ছবির থেকেও বাস্তবে আরো মায়াবী!”

“আলহামদুলিল্লাহ আছি। তুমিও সুন্দর। একদম পুতুলের মতো।”

“উহু, এটা তোমার সাথে মানায়। আচ্ছা? তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি?”

নিহিলা নিজেই আগ বাড়িয়ে অরিনকে জড়িয়ে নিল।
নিহিলা ভাবলো ছোটকাল থেকে এই দেশে থেকেও কী সুন্দর করে তারা বাংলা ভাষায় কথা বলছে। ফুপি হয়ত ভালোভাবেই ভাষার শিক্ষাটা দিয়েছে। সকালে আহানের কথা বলা দেখে মনে মনে ধারণা এসেছিল যে হয়ত সেই মায়ের কাছে থেকে শিখেছে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে অরিনও পারে।

রিনা আহমেদ তাড়া দিতেই তারা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। টেবিলে আহান আর মধ্যবয়স্ক এক পুরুষ বসে আছে। ইনিই হয়ত তার ফুপির স্বামী মানে ফুপা। নিহিলা এগিয়ে গিয়ে মানুষটিকে সালাম দিল।

“এইতো বসে পড়ো মা। অবশেষে রিনা নিজের পরিবারের কাউকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটালো বলে! কেমন আছো মা? বাসায় সবাই কেমন আছেন?”

“এইতো আঙ্কেল আলহামদুলিল্লাহ সবাই।”

“বসে পড়ো।” তিনি নিহিলাকে চেয়ারের দিকে ইশারা করলেন।

রিনা আহমেদ নিহিলার প্লেটে খাবার দিতে দিতে বলে উঠল,
“আমার ছোট ছেলেকে তো দেখেছিস। সকালে আনতে গিয়েছিল। পাজিটা তোরে ব্যাগ বহন করতে দিয়েছিল। এই সে। আহান।”

নিহিলা তাকাতেই আহানের সাথে চোখাচোখি হতেই আহান হাসলো।

“হ্যালো ভাইয়া।”

“উহু, আমাকে ভাইয়া ডেকো না। এটা তুমি রাহান ভাইয়ার জন্য তুলে রাখো। মা বলেছে আমরা একই বয়সের।”

“আচ্ছা।”

শফিক আহমেদ আহানের দিকে তাকালো,
“তোর মা যা বলছে সত্যি? অতিথিকে কীভাবে আপ্পায়ন করা লাগে জানিস না? সকালে ব্যাগটা নিজে এনে দিলে কী হতো!”

“ওহ বাবা, নিহিলার তো কোনো সমস্যা হয়নি। ও বললে আমি ঠিকই এনে দিতাম।” বলেই আহান নিহিলার দিকে তাকালো, “কী নিহিলা? তোমার সমস্যা হয়েছে?”

“না না, আমার সমস্যা হবে কেন!” বলেই নিহিলা খাবারের দিকে হাত বাড়ালো।

“আমার পরিবারকে পরিচয় করিয়ে দিলাম। যদিও আনাফ নেই কিন্তু ও থাকলেও গম্ভীর। ও এদের সাথে যায় না। অফিসের কাজে অন্য জায়গায় গিয়েছে। এইবার পুরো পরিবারকে চিনে নিছিস। কোনো সংকোচ করবি না। যা লাগে বলবি।” রিনা আহমেদের কথায় নিহিলা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।

“হ্যাঁ মা। মনে করো আজকে থেকে এই পরিবারের আরেক জন সদস্য তুমিও। যা লাগবে বিনা সংকোচে বলবে। অস্বস্তি আনবে না। অরিন আর তুমি একই ভার্সিটিতে পড়বে। আশা করি সমস্যা হবে না।”

“জি আঙ্কেল।”

“তোমার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে?”

“জি।”

শফিক আহমেদ নিহিলার জবাব পেয়ে অরিনের দিকে তাকালো।

“তুমি বা আহান বিকালে গিয়ে নিহিলাকে কিছু কেনাকাটা করে দিয়ে আসিও। কয়েকদিনের ভেতর ক্লাস শুরু হবে। আপাতত কয়েকদিন ঘুরে দেখাইয়ো।”

অরিন হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়তেই শফিক আহমেদ হেসে নিহিলার দিকে তাকালো,

“আচ্ছা খেয়ে নাও।”

নিহিলা খেতে খেতে ভাবলো। মানুষগুলো কী ভালো অথচ সে দুমিনিট আগেও অস্বস্তিতে কীভাবে মানিয়ে নিবে ভাবছিল। যেমন ভেবেছিল তেমন মোটেও না। তার বড়ো বাবা কিনা এমন একটা সুন্দর পরিবারকে মেনে নিচ্ছে না! কী এমন দোষ করেছিল! ভাবতে গিয়েই নিহিলার ভাবনায় এলো, আচ্ছা ফুপি কী এরপর একবারও দেশে যায়নি? হয়ত কলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল। ফুপিরও তো উচিত ছিল গিয়ে সরাসরি ভাইয়ের কাছে যাওয়া। তাহলে হয়ত ফিরিয়ে দিতে পারতেন না। এতো বছরে এই ছেলেমেয়েদের দেখে বড়ো বাবা নিশ্চই ফিরিয়ে দিতে পারেন না।

#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। অগোছালো হচ্ছে কিন্তু কী করবো বলুন! রাইটিং ব্লকটা ভালোভাবে কাটিয়ে উঠতে পারছি না। যারা পড়েন একটু কষ্ট করে অগোছালো লেখাটার সাথে মানিয়ে নিন। আমি ক্ষমাপ্রার্থী। চাইলেও পারছি না। পরিশেষে ভুলভ্রান্তির জন্য অগ্রীম ক্ষমাপ্রার্থী।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here