#একজন_রূপকথা
#পর্ব_২,৩
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব_২
শোভন একা একা বসে আছে ঘন্টা দুই হলো। বিয়ের পরপরই তার সাথের লোকজন খেয়েদেয়ে চলে গেছেন। শোভনের দুর সম্পর্কের আত্মীয় তারা। নিকটাত্মীয় বলতে মা ছাড়া তার আর কেউ নেই। যদিও এখন আরেকজন যুক্ত হবে, কথা।
শোভন উশখুশ করছে, কেউ এ ঘরটায় আসছে না কেনো? সেই যে তাকে একা ফেলে চলে গেলো… কবিতা নামক মেয়েটাকেও তো দেখা যাচ্ছে না। বিয়ের পর থেকে দুলাভাই দুলাভাই বলে মেয়েটা মাথা ব্যথা করে দিচ্ছিলো। বয়স তার কম না, তবে বুদ্ধির পরিপক্বতা হয়ত কম।
শোভন উঠে দাঁড়াতেই কথা এসে সামনে দাঁড়ালো। শোভন আবার বসলো। কথার গায়ে শাড়ি নেই, বাড়ি পরার সাধারণ থ্রী পিস, চুল টাও এলোমেলো। কনের এমন দশা হবার কথা না। শোভনের বুকটা ধক করে উঠলো।
কনে অন্য কেউ নয়তো? তাছাড়া সন্দেহ হবার আরেকটা কারণ আছে, বিয়ের পড়ানোর সময় কনের নাম কথা ছিল না, ছিল রূপকথা।
কথা বলল,
“বসে আছেন কেনো? বাড়ি ফিরবেন না? ”
শোভন বলল,
“আপনি কনের কে হন?”
কথা একবার তীক্ষ্ণ নজরে পর্যবেক্ষন করলো। লোকটার মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে? কেনো? একটু আগেও তো খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে ছিল।
সে বলল,
“কনেকে না দেখে বিয়ে করতে এসেছেন? ”
শোভন উত্তর দিতে পারলো না। উত্তর দেবার মতো অবস্থাও তার নেই। ভেতরে কোথাও ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যে মেয়েটাকে একপলক দেখার জন্য দিনের পর দিন অফিস যাওয়ার আগে রাস্তায় হা করে দাড়িয়ে থাকতো, যাকে বিয়ের জন্য নিজের মায়ের কথার বিরুদ্ধে গিয়েছে। তার সাথেই কি না বিয়েটা হয়নি? অন্যকোনো মেয়েকে সে মেনে নিতে পারবে? সে চটজলদি উঠে দাড়ালো। চোখে পানি এসে যাচ্ছে।
কথা বলল,
“আরে বউ রেখে চলে যাবেন নাকি?”
শোভন মুখ খুলল,
“জ্বি না, মানে, তাকে ডাকুন!”
কথা বলল,
“একমিনিট অপেক্ষা করুন, আমি আসছি।”
কথা ভেতরে যেতেই শোভন ধপ করে সোফায় বসলো। দু’হাতে মুখ চেপে ধরলো। তার এই মুহূর্তে সব ছেড়ে ছুরে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
কথা প্রথমে গেলো মামির ঘরে। তিনি চুপচাপ মুখ ভার করে বিছানায় বসে ছিলেন। মামা বসেছেন পাশের চেয়ারে। তার মুখটাও গম্ভীর।
কথা বলল,
“আমি চলে যাচ্ছি। ”
রুবিনা বেগম উত্তর না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসলেন। মামা উঠে এলেন। হুট করে কথাকে বুকে টেনে হুহু করে কেঁদে উঠলেন।
কথা কিছুটা অবাক হলো। তার মামা তাদের ভালবাসে, বা সহানুভূতি আছে এমন কখনও প্রকাশ করেননি৷ বরাবরই তিনি বউয়ের আচল ধরা মানুষ। কবিতা তাকে ডাকে গৃহপালিত স্বামী। তবে আজ তার ব্যবহার অন্যরকম, কথার মনে হচ্ছে লোকটা তার আপন মানুষ। অথচ আগে কখনও এমন ধারণা মনেও আসেনি।
মামা তাকে ছেড়ে বললেন,
“আমি চেষ্টা করেছিলাম কথা, খুব চেষ্টা করেছিলাম তোর ভালবাসার মানুষটার হাতে তোকে তুলে দিতে৷ কিন্তু সে যে নিজেই তোকে বিয়ে করতে রাজী হলো না রে মা।”
কথা চমকে উঠলো। আরিফ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে? সত্যিই? অথচ কল করে কী অবুঝ সাজলো? এতটা ভালো অভিনয় করা সম্ভব?
বেরুনোর আগে একবার কবিতার ঘরে উকি মারলো কথা। কবিতার চোখ ফোলা, কেঁদেছে হয়তো। কথা বলল,
“কাঁদছিস কেনো কবিতা?”
মৃদু কান্নার সুর এবার জোরে শুরু হলো। কান্নার দাপটে তার শরীর কেঁপে উঠছে। কথার হঠাৎ মনে হলো সেও যদি এমনভাবে কাঁদতে পারতো! বুকটা তার ও ভার হয়ে আসে, কষ্ট হয়..একটু হালকা করতে ইচ্ছে হয়.
কবিতা বলল,
“তুই চলে গেলে আমি কী করে থাকবো আপা? তুই ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই!”
কথা পরম মমতায় তার মাথায় হাত রাখলো।
তার বোকা সহজ সরল বোনটার জন্য তার যে চিন্তা হয় না তা কিন্তু না। মামির কাছে ফেলে যেতে বুক কাঁপছে বৈকি। সকাল সন্ধ্যা কটু বাক্য শুনতে শুনতে দিননিপাত করতে হবে তাকে।
কথা বলল,
“কিছুদিন পর তোকে আমি নিয়ে যাবো কবিতা, তুই চিন্তা করিস না।”
একটু চুপ থেকে আবার বলল,
“মামা আরিফের কাছে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল, আরিফ সরাসরি না করে দিয়েছে। তুই জানতি এসব?”
কবিতা মাথা নাড়লো।
“তবে বলিসনি কেনো আমায়?”
“তুই কষ্ট পেতি যে!”
“এইজন্য বুঝি এই বিয়ের ব্যপারে তুই আগ্রহ দেখিয়েছিলি?”
কবিতা আরও একবার মাথা নাড়লো।
“দুলাভাই আরিফ ভাইয়ের মতো নয় আপা, সে তোকে খুব ভালো রাখবে। তুই খুব ভালো থাকবি আপা, ভালো মানুষেরা খারাপ থাকে না।”
“আমি ভালো মানুষ?”
কবিতা এবার কথাকে জাপটে ধরলো।
“তোর মতো ভালো মানুষ আমি কোনদিনও দেখিনি।
কথা এবার লাল বেনারসি গায়ে জরিয়েছে, তাকে দেখাচ্ছে কিছুটা রাজকন্যার মতো। কোমড় সমান লম্বা চুলটা খোলা রেখে সে চোখে কাজল আকছে। কথার বাবা বেচে থাকতে তাদের দুইবোনকে বড় রাজকন্যা এবং ছোট রাজকন্যা বলে ডাকতেন। কথা খুব উপভোগ করতো এ ডাক। তবে এখন সেসব মনে পড়লে নিজের ভাগ্যের উপর হাসি পায়। বাবা বেচে থাকলে দেখতে পেতেন তার দুই রাজকন্যা এখন ভোল পাল্টে ঘুটে কুড়ানির রূপ নিয়েছে।
শোভন কথাকে দেখে লাফিয়ে উঠলো। এখন কথাকে দেখতে নতুন বউদের মত লাগছে। ডাগর ডাগর চোখ জোড়ায় কাজল দেওয়ায় আরও মোহনীয় হয়ে উঠেছে। মুলত তার চোখ দেখেই শোভন প্রেমে পড়েছিল। এত মায়াবী চোখ… একদিন ভেবেছিল কথাকে ডেকে বলে,
” তুমি চোখে কাজল দাও না কেনো?”
কিন্তু সাহস করে উঠতে পারেনি। কথার সামনে এলেই কেন জানি তার হাটুতে কাঁপন ধরে৷ এই যে এখনও কাঁপছে।
কথা সামনে দাড়িয়ে বলল,
“এখন কী আমায় কনের মতো দেখাচ্ছে? ”
শোভন লজ্জায় মাথা নোয়ালো। মাত্র বিয়ে করা নিজের বউকে সে চিনতে পারেনি। তবে তার আনন্দটাও আবার ফিরে এসেছে। অন্য মেয়েকে বিয়ের কথা সে চিন্তাও করতে পারে না। এতটুকু সময়ে উল্টো পালটা ভেবে অসুস্থ হয়ে পরেছিল প্রায়।
—
শোভনদের ফ্লাটটা খুব বেশি বড় নয়। দু’রুমের ছোট্ট ছোট্ট শোবার ঘরের সামনে ড্রয়িং রুমের মতো মাঝারি সাইজের একটা ঘর। কয়েকটা সোফার সামনে একটা মিডিয়াম সাইজের টিভি। রান্নাঘরটা দেখা যাচ্ছে না, হয়তো ভেতরে কোথাও। মধ্যবিত্তের ছোট্ট সংসার। তবুও কথার খুব পছন্দ হলো। আরিফের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীন সে প্রায়ই এমন ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখতো। আরিফ নিজেও কম স্বপ্ন দেখায়নি। কিশোর বয়সের প্রেম তাদের। কথা প্রথমে তাকে পাত্তা দিতে না চাওলেও পরে নিজেও আরিফের পাগলামির কাছে হার মেনেছিলো।
শোভনের মা রোজিনা বেগমকে দেখেই কথার মনে হলো তিনি এ বিয়েতে রাজি ছিলেন না।
কথাকে দেখে তার মুখে কোনো হাসি ফুটলো না, বরং কপালে আরও দু’একখানা ভাজ যুক্ত হলো।
কথা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার জিবনে কখনই পুরোপুরি শান্তির দেখা পাওয়া যায় না।
আরিফকে ভুলে যেখানে নতুন জীবনে সুখের সন্ধান চালানোর সিদ্ধান্ত নিলো সেখানেও ঝামেলা তার পিছু ছাড়লো না।
রোজিনা বেগম দায়সারা ভাবে কথার মাথায় হাত রেখে কড়া চোখে ছেলেকে দেখে নিজের রুমের দরজা আটকালো। এত জোরে দরজা আটকানোর শব্দে কথা কিছুটা কেঁপে উঠলো।
শোভন ঠিক তক্ষুনি কথার হাত আঁকড়ে ধরে বলল,
“সব ঠিক হয়ে যাবে কথা, চিন্তা করো না।”
কথা নিজেও হাতটাকে আকড়ে ধরলো। এমন ভরসার হাতই তো চেয়েছিল সে এতদিন। এতগুলো বছর পরে বুঝি ভাগ্যে সুখের দেখা মিললো!
চলবে…..
#একজন_রূপকথা
#পর্ব_৩
#নুশরাত_জেরিন
বাসরঘরটা সাজানো হয়েছে রজনীগন্ধা দিয়ে। খুব বেশি ফুল জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। শোভন নিজেই পাশের দোকান থেকে কিনে এনেছে, কথা যখন খাবার খেতে ব্যস্ত ছিল তখন নিজেই ঘর সাজিয়েছে। তবে এখন খুব লজ্জা লাগছে। ফুল দিয়ে ঘর সাজানোটা হয়ত একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো। মেয়েটা যখন ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করবে,
“এসব কী!”
তখন শোভন কী বলবে! তাছাড়া নিজের বাসর ঘর নিজে সাজিয়েছে ব্যপারটা আরও লজ্জাজনক। এসব কাজ সচারাচর বন্ধু বান্ধবেরা করে, অথচ শোভনের দুই বন্ধুই এখন দেশের বাইরে। তাদের আর্থিক অবস্থা শোভনের তুলনায় বেশ ভালো, আচার ব্যবহারও আলাদা তবুও কিভাবে যে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো!
শোভন আরেকবার ফুলে ঘেরা বিছানাটার দিকে তাকালো। তার রজনীগন্ধা ফুল পছন্দ। কথার কী পছন্দ, অপছন্দ এসব কিছুই শোভন জানে না। জানার চেষ্টাও করেনি। শুধু মাসের পর মাস রাস্তায় দাড়িয়ে দুর থেকে কথাকে দেখে মনের তৃপ্তি মিটিয়েছে।
—
কথা এখনও খাবার টেবিলে বসে আছে। সেদিকে একবার নজর দিয়ে শোভন তার মায়ের ঘরে টোকা মারলো। পর পর তিনবার। রোজিনা বেগম দরজা খুললেন গোমড়ামুখে। তিনি জানতেন শোভন আসবে। যে ছেলেটা মায়ের কথার বিরুদ্ধে কখনও এক চুলও নড়েনি সে কিনা মায়ের কথা অমান্য করে একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে? রোজিনা বেগম কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।
শোভন বিছানায় বসে বলল,
“ভাত খাও নাই মা?”
রোজিনা বেগম শান্ত গলায় বললেন,
“তোর বউয়ের খবর রাখ, আমার খবর রাখার দরকার নাই। আমি খেলেই কী আর না খেলেই কী! তোর কিছু যায় আসে?”
“তুমি তো রাজি হইছিলা মা, তোমার মত নিয়েই তো বিয়েতে গেলাম।”
রোজিনা বেগম ক্ষীপ্ত গলায় বললেন,
“ঐটারে রাজি বলিস তুই? দু’দিন না খেয়ে ঘরে বসে ছিলি জেদ করে, অসুস্থ হয়ে পরেছিলি। আমি মা হয়ে কিভাবে সহ্য করতাম?”
শোভন হাত আঁকড়ে ধরলো,
“এইবারই শেষ বার তোমার বিরুদ্ধে গেছি মা, আর জিবনেও যাবো না। মাফ করে দাও!”
রোজিনা বেগম শান্ত হলেন। তার একটা মাত্র ছেলে। স্বামী মারা যাবার পর কত কষ্টে মানুষ করেছেন। ভাইদের দারে দারে ঘুরে যখন কোনো লাভ হয়নি তখন নিজেই কাজে নেমেছেন। টিউশনি করিয়েছেন৷ সেই ছেলে তার কথার অবাধ্য হয়েছে সেটা মানতেই তার কষ্ট হচ্ছে। তাও আবার কার জন্য! রূপ গুনহীন একটা মেয়ের জন্য? চেহারা সুরতও আহামরি নয়, কী দেখে ছেলেটা পাগল হলো কে জানে! তারচেয়ে রোজিনা বেগমের সইয়ের মেয়ে রুমা.. কী মিষ্টি দেখতে! সারাদিন ছুটাছুটি করে ঘরটা আনন্দে মুখিয়ে রাখতো। এসেছিলও তো দু’একবার। ছেলেটা ফিরেও তাকাতো না। অতচ তাকালো কার দিকে? রোজিনা বেগমের মনটা বিষিয়ে উঠলো। ছেলের উপর থেকে সব রাগ একেবারে মেয়েটার উপর পরলো। বাড়ি আসতে না আসতেই মা ছেলের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে ছাড়লো।
—
কথা শাড়ি পাল্টে ফেলেছে। সারাদিন কম ধকল যায়নি তার উপর। শরীরটা ভেঙে আসছে, সাথে মনও। আরিফের বদলে যাওয়া রূপ তার সহ্য হচ্ছে না।মনটা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। ওপরে যতই শক্ত থাকার চেষ্টা করুক না কেনো, ভেতরটা তার নরম, তুললতুলে। সামান্য আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়। যদিও আরিফের সাথে তার সম্পর্কটা অতটাও গভীর নয়। কথা বরাবরই বাস্তববাদী মেয়ে। প্রেম ভালবাসাকে জীবনে ঠাঁই দিতে রাজী ছিলো না সে। তবে আরিফের পাগলামীতে রাজী হতে বাধ্য হয়েছিলো। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল, একটা ভালো ঘর, সংসার, বর…এইটুকুই। নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ বা প্রেমিক প্রেমিকার মতো হাতে হাত রেখে ঘুরতে যাওয়া হয়নি কখনও, ভালবাসাটা প্রকাশ করাও হয়নি। যদিও ভালবাসা অদৌ ছিল কিনা কে জানে! ভালবাসার ব্যাখা কথা জানে না। শুধু মামির অত্যাচার থেকে বাঁচতে একটা আশ্রয়ের খোঁজ করেছিলো, আরিফ সেই আশ্রয়ের প্রতিজ্ঞা করতেই নতুন স্বপ্নের জাল বুনেছিলো।
কথা বিছানায় শুয়ে পরলো। চোখ বুজে আসছে। শোভন এখনও আসেনি। সারা বিছানা জুরে ফুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পরিষ্কার করতে ইচ্ছে করছে না।
শোভন ঘরে এসে দরজায় খিল আটকালো। চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আবার বেরিয়ে এলো। কথা উঠে বসলো। শোভন বলল,
“ঘুম পেলে ঘুমিয়ে পড়ো, উঠছো কেনো?”
“আপনি ঘুমাবেন তো?”
“হ্যাঁ।”
কথা বলল,
“আপনার মায়ের একমাত্র ছেলে তো আপনি?”
“হ্যাঁ।”
“তবে তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আমায় বিয়ে কেনো করলেন?”
শোভন আমতাআমতা করলো। মা বিয়েতে রাজী ছিলেন না একথা সে কাউকে বলেনি। কথার পরিবারকে তো না ই। তাছাড়া মায়ের রুমে কথা বলার সময় এমনভাবে বলেছে যেনো কথার কান অব্দি না পৌঁছায়, তবু সে শুনলো কিভাবে। এসব তো তার জানার কথা নয়।
সে বলল,
“তোমায় এসব কে বলেছে?”
“কেউ বলবে কেনো? আমি নিজেই বুঝেছি।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলল,
“আমার বাবা বলতো আমার মানুষ চেনার ক্ষমতা নেই, সহজেই আমি সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলি, ঠকেও যাই। চেহারা দেখে মানুষ চেনার ক্ষমতা আমার শূন্যের কোঠায়। কিন্তু এবার কিভাবে যেনো আপনার মায়ের চেহারা দেখেই আমার মনে হলো তিনি আমাকে দেখে খুশি হননি। তিনি হয়তো বিয়েতে রাজি ছিলেন না।
কথাটা সত্যি? ”
শোভন ধীরস্থির ভাবে মাথা নাড়লো। বলল,
“জ্বি। ”
“তবে বিয়েটা কেনো করলেন?”
শোভন উত্তর না দিয়ে উশখুশ করতে শুরু করলো। কথাকে সে ভালবেসে বিয়েটা করেছে। প্রতিদিন রাস্তায় দাড়িয়ে মেয়েটাকে দেখতে দেখতে ইদানীং আর তৃপ্তি মিলতো না, কাছ থেকে দেখার, ছোয়ার আশায় ভেতরটা ছটফট করতো। এসব কথা সে কথাকে বলতে পারবে না। সে ভীতু মানুষ। এর আগেও অনেকবার নিজের মনের কথা মেয়েটাকে বলতে গিয়েও বলতে পারেনি। একবার চিঠি লেখবারও চেষ্টা করেছিলো, ব্যর্থ হয়েছে।
কথা উত্তর শোনার আশায় কিছুক্ষণ শোভনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। উত্তর না পেয়ে বলল,
“আমায় বলতে কোনো সমস্যা? ”
শোভন বলল,
“উহু।”
“তবে?”
“ছাঁদে যাবে?”
উত্তর দেবার পরিবর্তে আচমকা এমন প্রশ্নে কথা একটু নড়েচড়ে উঠলো।
বলল,
“এখন? ”
“হু, আজ আকাশে পূর্ণ চাঁদ উঠেছে, জানো? যাবে আমার সাথে?”
কথা নিষেধ করতে গিয়েও করলো না। সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কিছুটা স্যাক্রিফাইজ করতেই হবে। আজ নাহয় ঘুমটাকে স্যাক্রিফাইজ করলো। যেহেতু বিয়েটা হয়েই গেছে, লোকটা তো তার স্বামী। অন্য সবার মতো প্রথম রাতেই বউয়ের উপর হামলে না পড়ে লোকটা তাকে সময় দিচ্ছে, এর চেয়ে ভালো কিছু আর কী হয়। কথা একদফা মুগ্ধ চোখে শোভনকে দেখলো। চোখ ধাধানো সুন্দর না হলেও দেখতে মন্দ না। এমন একজনের সাথে সারাজীবন অনায়াসে কাটানোই যায়।
হঠাৎ কথার মনটা খুব ভালো হয়ে গেলো। ভেতরে ভাঙা চুরো স্বপ্নরা আবারও যেনো ডানা মেলতে চাইছে।
সে বলল,
“চলুন।”
ছাদে এসে কথার মনটা আরও একদফা ভালো হয়ে গেলো। ছাদটায় কোনো সাজসজ্জা না থাকলেও কেমন মিষ্টি পরিবেশ। চাঁদের আলোয় পরিপূর্ণ চারিপাশ। কথা রেলিং ধরে দাড়ালো। চুলগুলো আরো আগেই খুলে দিয়েছে সে
শোভন দিধাদন্দ সরিয়ে কথার হাতের উপর হাত রাখলো। কথা হাত সরালো না, প্রতুত্তরও করলো না। সে কেবল আরও একবার স্বপ্ন বুনতে শুরু করলো।
চলবে….