একজন_রূপকথা #পর্ব_১২,১৩

#একজন_রূপকথা
#পর্ব_১২,১৩
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব_১২

মাসখানেক পার হবার পরও কবিতার কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না। অদৌ সে পালিয়েছে? নাকি কেউ তুলে নিয়ে গেছে সে বিষয়েও কেউ সিউর হতে পারলো না।
শুধুমাত্র কথাই একমাত্র কবিতাকে নিয়ে আর টু শব্দটিও করলো না। সে রোজকার মতো সকালে মালোতির হাতে হাতে কাজ সামলায়, রোজিনা বেগমের সেবা যত্ন করে।
মালোতি একদিন তাকে প্রশ্ন করে বসলো,
“বোনটার জন্য আপনার কষ্ট হয় নাকি রাগ হয় আপা?”

কথা উত্তর দিতে পারলো না। রাগ কী না সে জানে না। তবে কবিতাকে তার নিজের বোন বলতে লজ্জা করে। এতকিছুর পরও সে কবিতাকে ছুড়ে রাস্তায় ফেলেনি, ভালো ঘরে বিয়ে দিয়ে তার জীবনটা গুছিয়ে দিতে চেয়েছিলো। অথচ কবিতা কী করলো? আর কেউ না জানুক, কথা ঠিকই জানে, কবিতা নিজ ইচ্ছায় পালিয়েছে। কথার কাছে হার না মানার জেদ নিয়ে পালিয়েছে। এমন মেয়েকে বোনের জায়গা দেওয়া যায় না।
তবুও মাঝেমধ্যে বুকের কোথাও যেনো ব্যথা করে ওঠে, কবিতার সেই বাচ্চামো মাখা আবদার, ভয়ে ভীত হওয়া মুখ চোখের সামনে ভাসে।
কথা বিরবির করে,
“আগের কবিতাটা আমার বোন ছিলো, হঠাৎ সে হারিয়ে গেছে, তার মতো দেখতে এক নিষ্ঠুর, স্বার্থপর মেয়ে কোথা থেকে যে চলে এলো।”

কবিতার জন্য তাদের কম ধকল তো পোহাতে হচ্ছে না। ম্যানেজারকে বিয়ের আসরে অপমানিত করা হয়েছে এমন দায় এসে পড়েছিল শোভনের কাধে৷ অতঃপর? চাকরীটা হারাতে হলো।
যেদিন চাকরীটা চলে গেলো সেদিন শোভন সারাদিন ঘরে চুপচাপ শুয়ে ছিলো।
কথা এসে বলল,
“আজ ছুটি পেয়েছেন? অফিস গেলেন না?”

শোভন উত্তর দেয়নি, শুধু একপলক কথার দিকে চেয়ে আবার চোখ বন্ধ করেছিলো। সেই চাহনীতে কী ছিলো? অসহায়ত্ব?
কথা বলল,
“চাকরীটা নেই?”

শোভন মাথা নাড়লো। ধীরে সুস্থে উঠে বসে বলল,
“এবার কী করবো কথা? সংসার কীভাবে চালাবো? অফিস থেকে লোন নিয়েছিলাম, একমাস সময় দিয়েছে শোধ করবার জন্য! এত টাকা কোথায় পাবো?”

“কবিতার বিয়ের জন্য গয়না কিনেছিলেন, সেগুলো বিক্রি করলে কিছু হবে না?”

শোভন মাথা নিচু করে ফেললো। কবিতা যাওয়ার সময়,গয়নাগুলো সাথে নিয়ে গেছে৷ একথা কথাকে বলা হয়নি৷ রোজিনা বেগম নিষেধ করেছিলেন। মেয়েটা এমনিতেই এত ভেঙে পড়েছে, কবিতার লোভের কথাগুলো জানলে আরও ভেঙে পড়তো না?

কথা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো,
“কবিতা সেগুলো নিয়ে গেছে?”

শোভন কথাকে বুকে টেনে আনলো৷ মেয়েটা কাঁদে না কেনো? বুকটা হালকা করার জন্য হলেও একটু কান্না করা উচিত নয় কী?

সে বলল,
“কষ্ট পেও না কথা।”

কথা সে কথার উত্তর দিলো না।
“আমার মায়ের কথা শুনেছেন আপনি? স্বার্থপর এক মহিলার কথা? যে কিনা নিজের ছোট্ট দুটো মেয়েকে পথে ভাসিয়ে অন্য পুরুষের হাত ধরে পালিয়েছিলো!
মামি প্রায়ই আমাকে তার সাথে তুলনা করতো জানেন? বলতো মায়ের মেয়েরা তো মায়ের মতোই হবে। কবিতা তার ব্যাপারে কিছুই জানতো না। আমার বিয়ের পরে জেনেছিলো। কী কান্নাটাই না কেঁদেছিলো মেয়েটা। পরবর্তীতে যখন পুরো ঘটনা জানলো মায়ের কথা তুললেই রেগে যেতো। মাকে ঘৃনা করতে শুরু করেছিলো আমার মতো।
কিন্তু সেই মেয়েটা মায়ের থেকেও নিকৃষ্ট কাজটা কীভাবে করতে পারলো? মামির কথা প্রমান করতে? যে সে ঐ মায়েরই মেয়ে?”

শোভন উত্তর না দিয়ে আরও শক্ত করে আকড়ে ধরলো।

মালোতির সাথেও কথার বেশ খাতির হয়েছে।
কী মিষ্টি অথচ দুঃখী মেয়েটা। কতই বা বয়স হবে তার? এ বয়সে এসেই জীবনের কঠিন বাস্তবতায় পিষে যাচ্ছে।
মালোতিও কথার সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখে না। নতুন করে আর কাউকে বিশ্বাস করতে না চাইলেও সে কথা রাখা যায় না, বিশ্বাস এসে যায়। কথাও বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে।
আগের বাড়িতে যখন কাজ করতো সেই বাড়ির মালকিন কথায় কথায় যা তা ব্যবহার করতো, মালিক কুদৃষ্টিতে তাকাতো। সে তুলনায় এ বাড়ির মানুষগুলো আলাদা।
মালোতি জিবনে কম ঠকেনি, আজকাল সেও মানুষ চিনতে শিখে গেছে।


লোন শোধ করার আর দুটো দিন মতো সময় আছে। এরমাঝে শোভন একজন অপরিচিত ভদ্রলোককে বাড়িতে নিয়ে এলো। চোখে মুখে তার উৎফুল্লতা। এতদিন কেমন মুখ শুকনো করে ঘুরে বেড়াতো, চাকরীর চেষ্টা চালাতো। কিন্তু চাকরী পাওয়া কী এত সহজ? তার উপর যদি মামা চাচার জোড় না থাকে!
এর আগের চাকরীরা ভাগ্যগুনে পেয়ে গিয়েছিলো।
রোজিনা বেগম বললেন,
“লোকটা কে শোভন? তোর পরিচিত?”

শোভন উৎসাহ নিয়ে বলল,
“ওকে চিনলে না মা? ও রাকিব! ঐ যে ছোটবেলায় একসাথে কত খেলেছি আমরা, মনে নেই তোমার? তোমার হাতের খিচুড়ি খাবার জন্য পাগল ছিল।”

রোজিনা বেগম শত চেষ্টা করেও মনে করতে পারলেন না। বয়স বাড়ছে বৈ কমছে না। স্মৃতি শক্তিও দুর্বল হয়ে পড়েছে। আগের কত স্মৃতি মন থেকে মুছে গেছে।
তিনি বললেন,
“ঠিক মনে করতে পারছি না।”

রাকিব অভিমানের সুরে বলল,
“সেকি আন্টি, আমায় তুমি ভুলে গেলে? আমি খুব রাগ করেছি।”

রোজিনা বেগম হেসে উঠলেন।

রাত বাড়লে রাকিব চলে গেলো। বসার ঘরে এতক্ষণ তুমুল আড্ডা চলেছে। শোভন নিজেও বেশ খোজমেজাজে গল্প করেছে৷ ছোটবেলার স্মৃতি… তাছাড়া আজ একটা বোঝাও ঘাড় থেকে নামলো।
রাকিব ব্যবসা বানিজ্য করে ভালো অর্থ উপার্জন করেছে। শোভনের সাথে দেখা হতেই খোজ খবর নিলো। শোভনের এমন অবস্থা শুনে নিজে যেচে বলল,
“এত বড় বিপদে আছিস, প্রথমেই বলবি না? আমি তোকে সাহায্য করবো। কত টাকা লাগবে বল?”

শোভন নিতে চায়নি। অনেক জোড়াজুড়ির পর ধার হিসেবে নিয়েছে।

কথাকে সে কথা বলতেই সে মুখ গম্ভীর করে ফেললো। বলল,
“সেধে সাহায্য করবে কেনো সে? এর পেছনে তার কী উদ্দেশ্য? ”

শোভন হেসে ফেললো,
“আশ্চর্য! উদ্দেশ্য কেনো থাকবে? বন্ধুকে সাহায্য করেছে মাত্র, আর কিছু তো না। তাছাড়া আমি তো শোধ করে দেবো।”

কথা তবুও নিশ্চিন্ত হলো না। বারবার বলল,
“আপনি আগে এত বোকা ছিলেন না, এবার এত বোকামী করছেন কেনো? যদি আবার কোনো বিপদে পরি?”

—-

কথার চিন্তাকে বাস্তব রুপ দিতেই হোক বা অন্য কারনে, এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই রাকিবকে এ বাড়িতে দেখা গেলো। একদিন মালোতি বলল,
“লোকটার মতিগতি আমার ভালো লাগে না আপা, আমি তার সামনে যাই বা আপনি, কেমন লোভাতুর চোখে তাকিয়ে থাকে।”

কথা চমকে উঠলো।
“সত্যি বলছিস?”

“মিথ্যা কেনো বলবো? আপনি নিজেও একবার পর্যবেক্ষন করে দেখেন।”

সেদিন দুপুরে রাকিব এ বাড়িতে খাবার খেলো। রান্না করেছে কথা নিজে। রোজিনা বেগমের শরীর খারাপ। মালোতিও আজ ছুটি নিয়েছে।
রাকিব খেতে খেতে বলল,
“ভাবির হাতের রান্নার তুলনা নেই রে দোস্ত, এত ভালো রান্না করে সে। ইস ভাবীর তো একটা পুরস্কার পাওনা হয়ে গেলো।”

শোভন কিছু না বলে শুধু হাসলো।
রাকিব আবার বলল,
“তো ভাবীকে কী দেওয়া যায় বলতো, ফুচকা খেতে নিয়ে যাবো?”

শোভন বলল,
“সে ফুচকা টুচকা পছন্দ করে না রে, সে অন্যরকম মানুষ। সাধারণে তার অরুচি।”

“সে কি রে, তবে তোর সাথে এই অসাধারণী কী করছে, তুই ও তো সাধারণ। ভাবীর তো দরকার আমার মতো মানুষ।”

কথাটা শোভনকে যতটা না স্তম্ভিত করলো তার থেকেও বেশি চমকালো কথা। খাবার ঘরের ঠিক দরজার পাশে সে দাড়িয়ে ছিলো। মালোতির কথাটা ঠিক তখুনি তার কানে বাড়ি খেলো। মালোতি তো মিথ্যা বলার মেয়ে না।

রাতে সে কথার সত্যতাও প্রমাণ হলো।
শোভন ফোন দিয়ে বলল,
“তুই এমন একটা কথা কিকরে বলতে পারলি রাকিব, আমি খুব মনোক্ষুণ্ণ হয়েছি!”

রাকিব হাসলো,
“আরেহ্, মনোক্ষুণ্ণ হবার মতো কী বলেছি আমি? এসব কথা বাদ দিয়ে একটা জবরদস্ত কথা শোন।”

“কী?”

“তোকে যেই টাকাগুলো দিয়েছিলাম না আমি? ঐ যে ধারে? সেই ধারটা চাইলে তুই এখনই শোধ করতে পারবি!”

শোভন অবাক হলো,
“কীকরে?”

“তোর বউকে একরাত আমার বাড়িতে ডিনার ডেটে পাঠা, ধারের টাকা আর পরিশোধ করতে হবে না। আমাকে খুশি করতে পারলে বরং বাড়তিও কিছু পাবি।”

শোভন ফট করে কল কেটে দিলো। তার শরীর খারাপ লাগছে নাকি মন?

চলবে…..

#একজন_রূপকথা
#পর্ব_১৩
#নুশরাত_জেরিন
,

পরদিন শোভন রাকিবের মেসে গেলো। দুজন রুমমেট থাকে তার সাথে৷ দুজনেই রাকিবের সমবয়সী। শোভনকে দেখেই বিরক্তিকর মুখ বানালো, বলল,
“কাকে চাই?”

“রাকিব আছে?”

“কোন রাকিব?”

শোভন বিস্মিত হলো। রাকিব তাকে এখানকার ঠিকানাই দিয়েছিলো, বলেছিলো সে এই মেসেই তার বন্ধুদের সাথে থাকে। এরা তার ব্যবসায়ীক পার্টনারও বটে।
সে বলল,
“রাকিব সত্যি এখানে থাকে না? সে যে আমায় এই ঠিকানা দিয়েছিলো..”

দুজনার মধ্যে লম্বা করে লোকটা বলল,
“আপনি রাকিবের কে হন? পাওনাদার? ”

“পাওনাদার কেনো হবো? বরং দেনাদার। ”

লোকদুটোর গম্ভীরতা কমে এলো। মুখটা একটু স্বাভাবিক ও লাগলো শোভনের কাছে।
তারা বলল,
“ভেতরে যান, রাকিব ভেতরে আছে।”

শোভনের কাছে বিষয়টি অদ্ভুত লাগলেও সে কিছু বললো না। রাকিব ঘরেই ছিলো, বিছানায় শুয়ে আছে। শোভনকে দেখে উঠে বসলো। একগাল হাসলো। এইতো দুটো দিন আগেও তার হাসিকে কতটা পবিত্র লেগেছিলো শোভনের কাছে। অথচ আজ? শোভন দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রাকিব উঠে বসলো,
“আরে শোভন যে, এত সকাল সকাল আমার কাছে? কী চাই? ঋন পরিশোধের সুযোগ?”

তার চোখমুখে ভীষন কৌতুকতা। শোভন দাতে দাত চাপলো,
“তুই এসব বলতে পারিস না রাকিব, কথা আমার স্ত্রী হয়। তার সম্পর্কে এসব তুই বলতে পারিস না। তাছাড়া আমি তো বলেছি তোর টাকা শোধ করে দেবো।”

রাকিব উচ্চস্বরে হাসলো,
“রেগে যাচ্ছিস কেনো, আমি কী তোর বউকে একেবারের জন্য চাইছি নাকি? জাস্ট একটা রাতের জন্য।”

আচমকা উত্তেজিত হয়ে পড়লো শোভন। সে অনেকক্ষণ যাবত রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, আর সম্ভব না। কাল রাতেও নিজেকে বহু কষ্টে সামলেছে। কথার চোখে চোখ রাখতে পারেনি। যদিও কথা এসবের কিছুই জানে না। তবে সন্দেহ করেছে।
কাল শোভন যখন বলল সে রাতের খাবার খাবে না তখন কথা বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। পরমুহূর্তেই বলেছিলো,
“আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছেন আপনি?”

শোভন ইতস্তত ভঙ্গিতে বলল,
“কী সব বলো তুমি, কী লুকাবো বলোতো?”

“সেটা আপনিই ভালো জানেন।”

কথাটা বলেই সে আর দাড়ায়নি। গটগট হেটে চলে গিয়েছিলো।

রাকিব ছেলেটা কথা সম্পর্কে এসব কীভাবে বলতে পারে, ভাবতেও বা পারে কিভাবে।
সে রাকিবের কলার চেপে ধরলো।
“আর একবার এসব কথা মুখে আনলেই তোকে আমি খুন করে ফেলবো রাকিব।”

রাকিব আবারও হাসলো। শোভনের হাত থেকে সাবধানে নিজের কলার ছুটালো।
শোভনও ততক্ষণে নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। সে বলল,
“কথাকে তুই কিভাবে চিনিস?”

রাকিব চমকে উঠলো, তবে প্রকাশ করলো না।
শোভন আবারও বলল,
“তুই সবার কাছে থেকে টাকা ধার নিয়ে পালিয়ে বেড়াস, আমার বেলায় কেনো উল্টো কাজ করলি? কথার জন্য? ওকে পাবার জন্য?”

রাকিব বলল,
“বাহ্ তোর তো অনেক বুদ্ধি, আমিই তোকে বোকা ভেবে বসেছিলাম।”

“হেয়ালি না করে উত্তর দে।”

“কিসের উত্তর? ”

শোভন কড়া চোখে তাকালো। রাকিব এবার উচ্চস্বরে হাসলো।
“বাব বাহ ভয় দেখাচ্ছিস নাকি? তোর কী ধারণা, এতটুকুতে আমি ভয় পাবো? যেই আমি কিনা পুলিশের চোখ লুকিয়ে মেয়ে পাচার করি।”

শোভন চমকে উঠলো,
“তুই নারী পাচার করিস?”

“তো তুই কী ভেবেছিলি, কী ব্যবসা করি আমি? যে এত কম সময়ের মধ্যেই এত টাকার মালিক হয়ে গেলাম? যদিও তোর টাকাটা…”

রাকিব কথা শেষ করতে পারলো না, আচমকা শোভন বলল,
“আসিফ দিয়েছে?”

“ভালোই তো গেইজ করলি, তোর বউয়ের প্রাক্তন প্রেমিককে চিনিস তাহলে?”

“একরাতের জন্য কথাকে সেই চেয়েছে, তাই না?”

রাকিব বলল,
“আসলেই তোর বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারছি না। এত সহজে সব বুঝে গেলি? ”

শোভন উত্তর না দিয়ে আবার বেরিয়ে গেলো। কথাগুলো সে আন্দাজের উপর বলেছিলো, তবুও কিভাবে যে মিলে গেলো। যদিও পরশু রাকিবের সাথে শুকনো মতো এক ছেলেকে দেখেছিলো সে। কাছে যায়নি, দুর থেকেই দেখেছে। ছেলেটা আসিফ ছিলো।
কথা তার কথা বললেও ছবি দেখায়নি, শোভন নিজ কৌতুহলে তার বিষয়ে খোজ খবর নিয়েছে।
কথাকে সন্দেহ করে নয়, কবিতার চিঠিটা পাবার পর।
এইতো সপ্তাহ খানেক আগে কথা চিঠিটা তাকে দেখিয়েছিলো। শোভনের ঠিক তক্ষুনি মনে হয়েছে কথার কাছের কেউ বলতে কবিতা আসিফকে বুঝিয়েছে। তাদের বাড়ির সামনে প্রায়ই কবিতার সাথে কথা বলতে দেখেছে সে।
শোভনের সন্দেহ হতেই খোজ নিয়েছিলো।

বাড়ি ফিরে সে কারো সাথে কথা বলল না। তার মাথা এলোমেলো হয়ে আছে। এতগুলো টাকার ব্যপার। রাকিবকে এই মুহূর্তে টাকাগুলি ফেরত দিতে পারলে বেশ হতো, কিন্তু কোথা থেকে পাবে? গ্রামের বাড়ি তার বাবার কিছু জমি ছিলো, সেগুলো বিক্রি করলে হবে?
রোজিনা বেগমকে বলতেই তিনি বললেন,
“রাকিব কী এখনই টাকা ফেরত চাইছে? দু’দিন আগেই না দিলো।”

শোভন বলল,
“সেরকম কিছু না মা।”

“তাহলে জমি বিক্রি করতে চাইছিস কেনো?”

“না মানে।”
শোভন আমতাআমতা করলো।
রোজিনা বেগম বললেন,
“না চাইলে বলতে হবে না, তবে কোনো সমস্যায় যে পড়েছিস ঠিকই বুঝতে পেরেছি।”

শোভন উত্তর দিলো না।


রাত বারোটা নাগাদ খবর এলো রাকিব খুন হয়েছে, শরীর থেকে মাথাটা বিশ্রী ভাবে কুপিয়ে আলাদা করা হয়েছে, শরীরেও জখমের দাগ। কথা শুনেই বলল,
“কে মারলো লোকটাকে?”

শোভন বলল,
“জানি না, আজ সকালেও দেখা করে এলাম সুস্থ সবল ছিলো।”

কথা আঁতকে উঠলো,
“আপনি আজ গিয়েছিলেন? কেনো? এই নিয়ে পুলিশ আপনাকে সন্দেহ করবে নাতো?”

শোভনকেও আতঙ্কগ্রস্ত দেখালো।
“জানি না।”

তাদের আতঙ্ক সত্যি করে পরদিন সকালেই পুলিশ এলো। রোজিনা বেগম দরজা খুললেন। কথা আর মালোতি রান্না ঘরে।
শোভন নিজের রুমে ঘুমোচ্ছিলো। রাতভর দুশ্চিন্তায় সে ঘুমোতে পারিনি। একটু পর পর বিরবির করে বলেছে,
“আমাদের জিবনেই এত সমস্যা কেনো কথা? এত এত বিপদ কেনো একবারেই হানা দিচ্ছে? একটু রূপকথার মতো গোছানো পরিপাটি সুখি জীবন কেনো হলো না?”

কথা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলেছে,
“চুপ করুন, একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করুন।”

ভোর রাতের দিকে তার চোখে ঘুম এসেছে। হয়তো ক্লান্তিতে।
রোজিনা বেগম পুলিশ দেখেই বললেন,
“কাকে চাই?”

“শোভন সাহেব আছেন?”

কথাটা রান্নাঘর অবদি পৌঁছে গেলো। কথার তখন অবস্থা শোচনীয়। তার হাত পা কাঁপছে।
মালোতি শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ভেঙে পরবেন না আপা, শক্ত হোন। মনের জোর হারাবেন না।”

শোভনকে গ্রেফতার করার পরদিন কথার ফোনে ম্যাসেজ এলো। ম্যাসেজটা পাঠিয়েছে আসিফ।
লিখেছে,
“তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাইনি ঠিকই, কিন্তু তোমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হোক সেটাও চাইনি। কেনো জানো? অন্য মেয়েদের মতো তোমায় ব্যবহার করার সুযোগ তখনও পাইনি বলে।
তুমি কী ভোবেছো রূপকথা, আমায় পায়ে পিষে তুমি অন্য কাউকে নিয়ে সুখি হবে? এত সহজে?”

কথা ফোন হাতে নিয়ে হতভম্ব দৃষ্টিতে বসে রইলো। আসিফকে সে ধোঁকা দেয়নি, আসিফ নিজে দিয়েছিলো। কথার সম্পর্কে তার বন্ধুদের কাছে বাজে কথা বলে বেড়িয়েছে। তাছাড়া মামা তো তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলো, সে নিজে ফিরিয়ে দিয়েছে। এরপরও কথার দোষ থাকে কোথায়?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here