এই তুমিটা আমার❤,পর্ব:০৫,০৬
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব:০৫
🍁ভার্সিটিতে,,,,
ছড়া আর কথার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছি। তারা দুজনেই রাগী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
–আজ ৫ দিন।। ৫ দিন ধরে বিনা কারণে শুধু শুভ্রকে দেখার জন্য তুই হাসপাতালের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস। একদিনও তোর সাথে উনার দেখা হয়না তবুও বেহায়ার মতো পরের দিন তুই আবার গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস।।(কথা)
–তুই তো এমন ছিলি না মিহু।। একসব পাগলামি এখন ছাড়।। তুই আর একদিনও হাসপাতালের সামনে উনাকে দেখার জন্য যাবি না। আর উনার কথা আর একবারও ভাববি না। ভুলে যা শুভ্রকে।।((ছড়া)
–((শান্ত কণ্ঠে)) ভুলতেই তো পারছি না আমি তাকে। অনেকবার চেষ্টা করেছি তাকে ভুলে যাওয়ার,,,তার কথা আর মনে না করার। কিন্তু পর মুহূর্তেই তাকে একনজর দেখার জন্য অস্থির হয়ে পড়ি।।। আজকে শেষ উনাকে দেখার জন্য যাবো। যদি আজ দেখা না পাই,,,তাহলে মনে করবো উনি আমার ভাগ্যে লেখা নেই।
–মানে কি?? তুই আবার যাবি??(ছড়া)
–এতক্ষণ যে তাকে এতো কিছু বললাম,,,তার কোন দামও নেই। শুধু শুধু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকাই তার কাজ। যা ইচ্ছা হয় কর।(কথা)
–এভাবে বলছিস কেনো তোরা?? বললাম তো,,,আজকেই শেষ।। আজ যদি দেখা না পাই তাহলে আর যাবো না। সত্যি।।।
ছড়া আর কথা একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার কথায় রাজি হয়ে যায়।
প্রতিদিনের মতো আজকেও ছড়া আমাকে হাসপাতালের সামনে পৌঁছে দিলো…
–মিহু,,,মনে রাখিস। আজকেই কিন্তু শেষ। এরপর থেকে তুই হাজার বার বললেও আমি আর তোর সাথে নেই।(ছড়া)
–হুম,,,ঠিক আছে।
🍁🍁
প্রতিদিন এই সময়ে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এখন আমার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন টানা দুই ঘন্টা ধরে তার জন্য অপেক্ষা করা,,,হয়তো আজকের পর থেকে আর হবে না। হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে হয়তো তার দেখা পাইনি,,,তবে দেখেছি নতুন কিছু। হাসপাতালে আসা প্রতিটি মানুষের অনুভূতি আমি দেখেছি। দেখেছি,,,কারো স্বজন হারানোর কষ্ট তো কারো নতুন কিছু পাওয়ার আনন্দ। কেউ নতুন করে বেঁচে থাকার তাগিদে এখানে আসছে তো কেউ তার প্রিয়জনকে হারিয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাচ্ছে।।। এখানে আসলেই হয়তো মানুষ তার জীবনের আসল অর্থটা বুঝতে পারবে। টাকার পিছনে ছুটে চলা মানুষ গুলোও কিভাবে বেঁচে থাকার জন্য তার সব অর্থ ব্যায় করে দিচ্ছে!! অদ্ভুত….!!
ভাবনার ছেদ পড়ে পাশে থাকা ছোট দোকানের চা বিক্রেতার কণ্ঠে…
–আপা মনি,,,আপনেরে দেখি প্রতিদিন এই সময় হাসপাতালের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়ায় থাকেন। কেউ আছে নাকি হাসপাতালে ভর্তি??
–না চাচা।। আসলে,,,আমি এখানে দাঁড়িয়ে এক জনের জন্য অপেক্ষা করি।
–প্রেমিকের লাইগ্যা??
–((একটু হেসে)) অনেকটা তেমনই।।
–ওহহ!! কতো প্রেমিক/প্রেমিকারে দেখছি পার্কে বইয়া অপেক্ষা করতে,,রেস্টুরেন্টে বইয়া অপেক্ষা করতে। জীবনে এই প্রথম কোন মাইয়ারে দেখতাছি তার প্রেমিকের লাইগ্যা হাসপাতালের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়ায়া অপেক্ষা করতে।(চাচা)
চাচার কথায় শুধু একটু হাসলাম।
প্রায় দু’ঘণ্টা হতে চলেছে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। হয়তো শুভ্রর সাথে আর দেখা হবেও না।। এভাবে আর কখনো তার অপেক্ষায় আমার দাঁড়িয়ে থাকাও হবে না। ইচ্ছে করছে হাসপাতালের ভেতর দৌড়ে গিয়ে তাকে একবার দেখে আসি। কিন্তু সব সময় হচ্ছে থাকলেও তো সম্ভব হয়না। হঠাত ফোনটা বেজে ওঠায় হাতে নিয়ে দেখি বাবা কল করেছে…
–হ্যালো বাবা।
–মিহু মা,,,,কোথায় তুই?? এতো দেরি হচ্ছে কেনো মা??(বাবা)
–পথেই আছি বাবা। বেশি দেরি হবে না।
–ঠিক আছে। সাবধানে আয়।(বাবা)
হাসপাতালের গেইটের দিকে শেষ একবার তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। শুভ্র হয়তো আমার ভাগ্যে নেই,,,তাই বারবার এতকাছে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে। একটু এগিয়ে যেতে নিতেই পিছন থেকে কেউ একজন বললো…
–মিস মাহিরা!!!
কণ্ঠটা শুনে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। ধীরে ধীরে পিছনে ফিরে দেখি শুভ্র!!!!
আমি একদম স্তব্ধ হয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছি,,,,বুকের ভেতরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে…
–আপনি হঠাত এখানে?? সব ঠিক আছে তো??(শুভ্র)
–জি? হ…হ্যা। সব ঠিক আছে।
–তাহলে এখানে কেনো??
–আ..আসলে((এখন কি বলবি তুই মিহু??))আ..আমার বান্ধবীর বাসা সামনেই। তার কাছেই এসেছিলাম। এখন বাসায় ফিরে যাবো।
–ওহ!! এই সময় তো সহজে রিকশাও পাবেন না। চলুন আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই।
–আপনি শুধু শুধু…..!!
–আরে সমস্যা নেই। চলুন যাই।
আমি ধীরে ধীরে শুভ্রর গাড়িতে উঠে বসলাম। শুভ্র গাড়ি স্টার্ট দিলো…
–তারপর…!! আপনার বাবা এখন কেমন আছেন??
–বাবা এখন অনেকটাই ভালো আছে। তবুও আমরা তাকে পুরোপুরি খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।
–ভালো।। আর আপনি কেমন আছেন??
–আমি একদম ভালো আছি।(মুচকি হেসে)
–হুম! আসলে সেদিন হঠাত করেই একজন জরুরি রোগী চলে আসায় আপনার বাবাকে দেখতে যেতে পারিনি।
–((হুহ!! কতো অপেক্ষায় ছিলাম জানেন না)) হ্যা,নার্স আপুটা বলেছিলো। আর আপনার বন্ধু ডাক্তার সাদ,,,তিনিও ভালোই ছিলেন। ভালো মতো বাবার চেকআপ করে ঔষধ লিখে দিয়েছেন।
–((মিহুর দিকে একবার তাকিয়ে)) ওহ আচ্ছা,,,,ভালো তো। তবুও,,,আমারই যাওয়ার দরকার ছিলো।।
–হুম।।((এখন কি বলা যায়? ধুর!! মিহু,,,প্রয়োজনের সময় তোর মাথায় কিছুই আসে না)) আপনার বাসার সবাই কেমন আছেন??
–সবাই ভালোই আছে।
–আচ্ছা।।
শুভ্রর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে বাসার সামনে চলে আসলাম। এতো কথা বলা হলো অথচ যেটা বলার জন্য এতোদিন অপেক্ষা করে ছিলাম সেই কথাই বলার সাহস হচ্ছে না।
–বাসায় চলুন। বাবা আপনাকে দেখলে অনেক খুশি হবে।
–আজ না। আজকে একটু তাড়া আছে। অন্য একদিন নিশ্চয়ই যাবো।
–ঠিক আছে।
শুভ্র আমাকে বিদায় দিয়ে গাড়িতে বসতে নিবে এমন সময়…
–ডাক্তার শুভ্র!!!
–((শুভ্র আমার দিকে তাকিয়ে)) আমাকে শুভ্র বলেই ডাকতে পারেন। বাই দ্য ওয়ে,,,কিছু বলবেন??
–((শুভ্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে,,,মনে অনেকটা সাহস নিয়ে))আপনি,,,আমার….!!
–((প্রশ্ন বিদ্ধ চোখে তাকিয়ে)) কি??
–আমার…..আমার বন্ধু হবেন???((একদমে))
–((মুচকি হেসে)) বন্ধু হওয়াই যায়। আমারও এখানে বন্ধু সংখ্যা অনেক কম। তোমার মতো একজন বন্ধু হলে খারাপ হয়না। যাই হোক,,,আজকে থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
–((((ছড়া সেদিন বলেছিলো,,,শুভ্রকে মনের কথা বলতে হলে আগে তার সম্পর্কে জানতে হবে। আর তাকে চেনার/ জানার একটাই উপায় হলো বন্ধুত্ব করা)))) ঠিক আছে।
–তো,,বন্ধু যখন হয়েছি। তাহলে একে অপরকে তুমি করেই বলতে পারি।
–হ্যা। তুমি আমাকে মিহু বলে ডাকতে পারো। সবাই আমাকে এই নামেই ডাকে।
–মাহিরা থেকে মিহু!! আমম…আমি নাহয় তোমাকে মাহি বলেই ডাকবো।
–((মুচকি হেসে)) তোমার যেমন ইচ্ছা।
–এইটা আমার ফোন নম্বর। এখন তাড়া আছে তাই বেশি কথা বলা হলো না। রাতে কল দিও।
–ঠিক আছে।
শুভ্রকে বিদায় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগছিলো। শুভ্রর ফোন নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে যাচ্ছি। খেয়ালই নেই ভাবি যে সামনে দাঁড়িয়ে আছে…
–আজ এতো খুশি?? ব্যাপার কি??
ভাবিকে জড়িয়ে ধরে সব কিছু খুলে বললাম।
–এইটা ঠিক আছে। বন্ধুত্ব করে আগে শুভ্রর সম্পর্কে সব জেনে তারপর মনের কথা প্রকাশ করা ভালো। যাই হোক,,,বেস্ট অফ লাক।।
–((মুচকি হেসে)) ধন্যবাদ।
–চলবে🍁
এই_তুমিটা_আমার❤
মাহিয়া_মেরিন
পর্ব::::০৬
“””যদি তুমি সত্যিই মন থেকে কিছু চাও তাহলে তা পূরণ হয়””” কথাটা কতটুকু সত্য জানি না। তবে আমার মনে হচ্ছে,,,হয়তো কথাটা একটু হলেও সত্য। তাইতো এতোদিনের অপেক্ষার পর অবশেষে আজ শুভ্রর সাথে দেখা হলো।। শুধু তাই না,,,আমরা এখন একে অপরের বন্ধু।। বন্ধুত্ব!!! শব্দটা ছোট্ট হলেও এর গভীরতা অনেক বেশি।
ছড়া আর কথাকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বললাম। বিকেলের দিকে তারা বাসায় চলে আসলো।। তিনজন মিলে আমার রুমে বসে আছি। নিরবতা কাটিয়ে কথা বললো….
–মিহু,,এভাবে হঠাত করেই আমাদের বাসায় আসতে বললি।। সব ঠিক আছে তো?? (কথা)
–হুম। সব ঠিক আছে। তোদের সাথে আমার কিছু কথা আছে।((সিরিয়াস একটা ভাব নিয়ে))
–শুভ্রকে নিয়ে কোন কথা?? আজকেও তার সাথে তোর দেখা হয়নি,,,তাই না?? (ছড়া)
–আমি জানতাম এমনটাই হবে।। শুধু শুধু এতোগুলো দিন তুই উনাকে একবার দেখার জন্য হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতি।
যাই হোক,,,উনাকে ভুলে যা মিহু। জানি তোর জন্য উনাকে ভুলে যাওয়া এতো সহজ না,,,তবুও বলছি। আর আমরা আছি তো তোর সাথে।(কথা)
–কথা একদম ঠিক বলেছে মিহু। শুভ্র হয়তো তোর ভাগ্যে লেখা নেই। শুধু শুধু তার জন্য মন খারাপ করে কি হবে তোর??(ছড়া)
ছড়া আর কথা একদমে এসবকথা বলে যাচ্ছে। কেউ একবারও আমার কথাটা শোনার প্রয়োজনই মনে করছে না।। নিজেরাই নিজেদের মতো করে সব বুঝে ফেলছে,,,তাহলে আমার কথাটা শুনে কি হবে। ধুর!!!
–আজকে শুভ্রর সাথে দেখা হয়েছে।।।
–((ছড়া আর কথা ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে)) কিহহহহহ????
–জিহহ!!! সেই কখন থেকে তোরা দুজন বকবক করেই যাচ্ছিস।। আরে আমাকে সবটা বলতে তো দিবি নাকি??
–শুভ্রর সাথে তোর দেখা হয়েছে?? কথা হয়েছে তোদের?? কি বললি তুই?? (ছড়া)
–মনের কথা বলে দিয়েছিস?? তারপর উনি কি বললো?? (কথা)
–তোদের কথা মতোই,,,তাকে আমার বন্ধু হতে বলেছি। আর,,,সে ও রাজি হয়ে গিয়েছে।।(আমি)
–সত্যি বলছিস??? (ছড়া)
–তারপর?? কিভাবে বললি,,,সব হলো খুলে বল।।(কথা)
তাদেরকে আজকের সারাদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো খুলে বললাম।
–আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। মানে শেষ মুহূর্তে তোদের দেখা হলো!!(কথা)
–সব শুনে মনে হচ্ছে,,,নিয়তি চায় যেন তোরা এক হতে পারিস।(ছড়া)
–জানি না শুভ্রকে কোনদিন নিজের মনের কথাগুলো বলতে পারবো কিনা।।
–আরে এতো চিন্তা করিস না। আমরা আছি তো।।(ছড়া আর কথা)
🍁রাতে….
একটু আগেই ছড়া আর কথা তাদের বাসায় চলে গিয়েছে। যাওয়ার আগে বারবার বলে গিয়েছে,,, রাতে শুভ্র ফোন দিলে আমাদের কি কি কথা হয় সেটা তাদের জানাতে।
ফোন হাতে নিয়ে বসে আছি। কল দিবো কি দিবো না এই নিয়ে চরম দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগছি।। অবশেষে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে কল দিলাম শুভ্রকে।।। দুইবার রিং হওয়ার পর কল রিসিভ করলো।। ওপাশ থেকে অপরিচিত কণ্ঠে কেউ একজন…
–হ্যালো কে বলছেন??
–((আমতা আমতা করে))এটা ডাক্তার শুভ্র হাসানের ফোন না??
–জি এটা শুভ্রর ফোন। কিন্তু শুভ্র ভুল করে তার ফোনটা ফেলে রেখে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে গিয়েছে।। বাই দ্য ওয়ে,,,আপনি কে??
–ওহ!!((এখন কি বলবো?? সত্যিটাই বলে দেই)) জি,,আমি মাহিরা। শুভ্রর….
–(বাকি কথা বলতে না দিয়েই)) ওহ আচ্ছা,,,ভাবি!!!!!
–((ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)) জি?? ভ…ভাবি মানে??
–((হালকা হেসে)) তেমন কিছু না। এমনি মজা করলাম আমি। আসলে আন্টি ছাড়া শুভ্রর ফোনে কখনো কোন মেয়ের কল আসতে দেখিনি,,,তাই আরকি….।।।
–ওহ আচ্ছা।। আমি তাহলে পড়ে কল দিবো।
আর কিছু না বলেই কলটা কেটে দিলাম। ওপাশ থেকে ভাবি ডাক শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠেছিলো। এখনো মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা কেউ হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে। আয়নার সামনে গিয়ে দেখি গাল দুটো একদম লাল গোলাপী হয়ে গিয়েছে। আর কিছু না ভেবে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। কিন্তু এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার পর কোনভাবেই তো পড়ায় মন দিতে পারছি না।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফোনটা বেজে ওঠায় হাতে নিয়ে দেখি শুভ্রর কল।। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা রিসিভ করলাম।।
–হ্যালো মাহি।।
–((কণ্ঠটা শুনেই বুকের ভেতর ঝড় শুরু হয়ে গেলো)) জি।।
–সরি। আসলে,,,ফোনটা ভুল করে রেখে গিয়েছিলাম।। আর সাদ কলটা রিসিভ করলো।। তুমি প্লিজ সাদের কথায় কিছু মনে করো না। সে আসলে….((আর কিছু বলতে না দিয়ে))
–আ..আমি কিছু মনে করিনি।
–হুম।। ((কিছুক্ষণ নীরব থেকে)) কি করছো??
–একটু পড়ছিলাম আরকি।
–ওহ। কাল ভার্সিটি কয়টায় তোমার??
–দশটায় একটা ক্লাস আছে।।
–আচ্ছা ঠিক আছে। কাল দেখা হবে।।
–((অবাক হয়ে)) দেখা হবে মানে?? কোথায় দেখা হবে??
–কাল সকালে একটা কাজে তোমার ভার্সিটির সামনেই যাবো। পরে নাহয় তোমার সাথে দেখা করে হাসপাতালে চলে যাবো।।
–ঠিক আছে। কাল দেখা হবে।।
–আচ্ছা। এখন তাহলে পড়ো। কাল কথা হবে।
শুভ্রর কাল আমার ভার্সিটির সামনে আসবে। মানে কাল আমাদের আবার দেখা হবে!!! খুশিতে ডান্স করতে ইচ্ছা করছে আমার।। আজ আর রাতে ঘুম হবে না,,,,মনের ভেতর একটাই কথা কখন যে সকাল হবে!!!
🍁পরদিন ভার্সিটিতে….
ছড়া আর কথাকে বললাম শুভ্র ভার্সিটির সামনে আসছে। শুনে তারাও খুব খুশি হলো।। তাদেরও অনেক ইচ্ছা ছিলো শুভ্রকে দেখার। একটা ক্লাস করে বের হতেই শুভ্র কল দিয়ে জানালো সে ভার্সিটির গেইটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।। ছড়া কথা আর আমি ভার্সিটির গেইটের সামনে আসতেই দেখি একটু দূরে শুভ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রকে দেখে তো আমি হা হয়ে গেছি,,,কালো শার্টে তাকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে। আর তার এই মায়া দিনদিন আমাকে তার মায়াজালে বেধে দিচ্ছে।।
–এই মিহু,,,,কোথায় তোর শুভ্র??
–((আঙুল দিয়ে দেখিয়ে)) কালো শার্ট পড়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখ।।
ছড়া আর কথাও হা করেই শুভ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।।
–মিহু রে….!!! তোর শুভ্র তো সেই দেখতে।।(ছড়া)
–এই জন্যই তো বলি,,,মিহু কেনো তাকে ভুলে যেতে পারে না।(কথা)
–এই চুপ কর তো তোরা।। চল পরিচয় করিয়ে দেই।।
শুভ্রর সামনে আসতেই সে তার হৃদয়ে দাগ কাটানো মুচকি হাসি দিলো।
–শুভ্র,,,পরিচিত হও। ছড়া আর কথা,,,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।।
–হ্যালো। কেমন আছেন??
–আমরা ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন??
–আমিও ভালো আছি।(শুভ্র)
–আপনার কথা মিহুর মুখে অনেক শুনেছি। আজ দেখা হয়ে ভালো লাগলো।(কথা)
–((আমার দিকে তাকিয়ে)) জি,,,আমারো।
–আমম..মিহু তুই তাহলে থাক। আমার আর ছড়ার একটা দরকারি কাজে যেতে হবে। রাতে ফোন দিবো।(কথা)
–আরে কোথায় যাচ্ছিস তোরা? (অবাক হয়ে)
–((চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝিয়ে)) আমাদের কাজ আছে মিহু। তুই থাক।। ভাইয়া,,,একদিন মিহুর সাথে আমাদের বাসায় আসবেন।(ছড়া)
–জি।
কথা আর ছড়া আমাকে রেখেই চলে গেলো। আমি একবার আড়চোখে শুভ্রর দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলে আমি চোখ নামিয়ে ফেলি।
–গাড়িতে ওঠো।(শুভ্র)
–কোথায় যাবো আমরা??
–আশেপাশেই যাবো। ভয় নেই।(মুচকি হেসে)
আমিও আর কিছু না ভেবে গাড়িতে উঠে বসলাম।।
–চলবে🍁