ইতির_সংসার পর্ব ১৪

0
480

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ১৪

-“আসসালামু আলাইকুম মা। বলেন কি বলবেন?” ফোন রিসিভ করে বলে ইতি।

-“ওয়ালাইকুম সালাম। তোমার স্কুল শেষ হবে কখন? আজ একটু তাড়াতাড়ি আসো। আর তুলির বিয়ে শেষ হওয়া পর্যন্ত ছুটি নাও।” বলেন নাজমা বেগম।

-“আচ্ছা মা, আমি বলে দেখি।”

-“দেখাদেখির কি আছে? ছুটি না দিতে চাইলে আমার সাথে কথা বলায়া দিবা। হুহ ননদের বিয়ে, বাসায় কত কাজ আর ওরা ছুটি দিবেনা। যত্তসব ঢং। নাকি তোমারই ছুটি নেয়ার ইচ্ছা নাই?”

-“আমি স্যারের সাথে কথা বলে দেখি মা।” ফোন রেখে দিয়ে প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করতে যায় ইতি। ইতির আচরণ ও কর্মদক্ষতা গুণে ইতিকে অনেক স্নেহ করেন তিনি। ননদের বিয়ে শুনেই সাথে সাথে ৭ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে দেন তিনি। ইতি হাপ ছেড়ে বাঁচে।

বাসায় ফিরে দেখে তুলি শপিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে বসে আছে। ইতিকে দেখেই বলে -“ফটাফট কার্ড আর পিন নম্বর দিয়ে দাও। তোমার যাওয়ার দরকার নাই। আমি আমার ফ্রেন্ডদের সাথে গিয়েই কিনতে পারব।”

ইতি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে -“আন্টি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন সেটা আমাকেই পালন করতে দাও। তুমি কার্ড দেয়ার মতো ভরসার যোগ্য হলে তোমার কাছেই দিতেন, আমাকে না।”

-“কি? এতো বড় কথা? আমার মেয়ের যোগ্যতা নাই? এতো বড় সাহস তোমার, আমার মেয়েকে অযোগ্য বল। আজ আসুক নাঈম। এর বিহিত একটা করবই। এই তুলি, তুই এখন যাবিনা শপিংয়ে। আগে নাঈম আসুক, বিচার করুক। তারপর যাবি।” হুংকার দিয়ে বলেন নাজমা বেগম।

-“ঠিক আছে মা। কোন সমস্যা নাই। আমি ক্লান্ত হয়ে এসেছি, বিশ্রাম প্রয়োজন। আন্টি বিকেলে কার্ড নিতে পাঠাবেন, তখন কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে জানিয়ে দেব তুলির ইচ্ছে। তারপর উনি ডিসিশন নিবেন বিয়ের ডেট এটাই থাকবে নাকি পিছাবে। ভুলে যাবেন না উনারা তিন বছরের জন্য বিয়ের মুলা ঝুলিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, যেটা আমার অনুরোধে নাকচ করেছেন। এখন আমি যদি বলি ৪র্থ শর্ত না মেনে তুলি আমার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করতেছে আর আপনি তাতে প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারপর উনারা কি ডিসিশন নিবেন উনাদের ব্যাপার। আমি ঘরে গেলাম। ভালো করে চিন্তাভাবনা করে জানান কি করবেন আপনারা?” শান্ত স্বরে শাশুড়িকে কথাগুলো বলে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে শুয়ে পড়ে ইতি।

নাজমা বেগম ভেবে দেখেন ইতি যা বলছে সেটা সঠিক। ওরা বিয়ে ৩ বছর পরে করতে চেয়েছিল কিন্তু ইতির অনুরোধে ওরা বিয়ের তারিখ দেয়। এখন যদি ইতিকে চটায় তাহলে বিয়ে ভেস্তে যেতে পারে। এই রিস্ক কোনভাবেই নেয়া যাবেনা। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হোক, তারপর ইতির ব্যবস্থা করা যাবে। এই ভেবে ঘরে গিয়ে মেয়েকে বুঝান এখন ইতির বিপক্ষে না যেতে। এই কয়দিন ইতি যা বলে শুনতে। ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে যাক। তখন দেখা যাবে ইতিকে। তুলিকে পাঠিয়ে দেন ইতিকে ডাকতে।

ওরা দুজন রাস্তায় বের হয়ে রিকশা ডাকতেই দেখে মুরাদ গাড়ি নিয়ে হাজির। দরজা খুলে দিয়ে বলে -“মা পাঠালো আপনাদের শপিংয়ের ব্যাগ বওয়ার জন্য।”

ইতি হেসে বলে “এখন থেকেই অভ্যাস করেন, নইলে কিন্তু পরে পারবেন না।”

ইতি পিছনের সীটে আর তুলি সামনে মুরাদের পাশে গিয়ে বসে। ইতি মার্কেটের সামনে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ফিসফিস করে তুলিকে বলে -“তোমাকে যখন পছন্দ করতে বলা হবে তুমি কম দামের যেগুলো সেগুলো পছন্দ করবা। বাকিটা আমি সামলে নেব।”

তুলি শুনে “বাকি টাকা আমি মারব।” দাঁত কিড়মিড় করে বলে “আমার শাশুড়ী টাকা দিছে ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করার জন্য আর তুমি সেখান থেকে টাকা মারতে চাও আমাকে কমদামি জিনিস দিয়ে?”

রাগ উঠে যায় ইতির, পর মুহুর্তে মনে হয় এই গর্দভের কাছে এর চেয়ে ভালো আর কোন কথা আশা করা বৃথা। নিঃশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলে -“যা বলছি চুপচাপ সেটাই কর। পরে বুঝিয়ে বলছি।”

প্রথমেই ওরা যায় বিয়ের ল্যাহেংগা দেখতে। সেখানে গিয়ে তুলি অনেক দামী একটা ল্যাহেংগা পছন্দ করে, কিন্তু ইতি পাশে থেকে ওর হাতে চাপ দেয়ায় সে থেমে যায়। পরে সবকিছুই মুটামুটি দামের কেনা হয়। বেশি দামীও না, বেশি কমদামীও না। মুরাদ নিস্পৃহ ভাবেই ওদের সাথে থাকে। ইতির বারবার বলায় দুই একটা জিনিস পছন্দের সময় মতামত দেয়। শপিং শেষ করে মুরাদ একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় ওদের। এখানেই ডিনার সেরে যাওয়ার কথা বলে কিন্তু ইতি মানা করে কারণ বাসায় বলেও আসেনি আর রান্নাও করে রেখে আসেনি। তখন হঠাৎ নাঈমের গলা শুনে -“বাসায় আমি বলেছি আর খাবার নিয়ে যাব যাওয়ার সময়।”

ইতি অবাক হয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে -“তুমিইইইই কখন আসলা? আমি টের পাইনি।”

মুরাদ হেসে বলে -“ভাবি আপনি শপিং নিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলেন যে নাঈম আমাদের সাথেই ছিল আপনি টের পাননি। তবে টের না পাওয়ারই কথা। ও আপনার চোখের আড়ালেই থাকছে, আপনাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য।”

নাঈম তুলির দিকে তাকিয়ে বলে -“আমার একটামাত্র বোনের বিয়ে। আমি তারজন্য কোন শপিং করতে পারবোনা আন্টির মানা করার জন্য কিন্তু শপিং করার সময় তো সাথে থাকতে পারি। সেই জন্য পুরো সময় তোমাদের আশেপাশেই ছিলাম। বাসায় বলে দিছি। আমরা খেয়ে বাসার জন্য খাবার নিয়ে যাব। আর হ্যাঁ মুরাদের তোর সাথে কিছু কথা আছে। খাবার আসতে আসতে তোরা কথা বল, আমরা অন্য টেবিলে বসছি।”

নাঈম ইতিকে নিয়ে অন্য টেবিলে গিয়ে বসে। মুরাদ আর তুলি মুখোমুখি বসে। তুলি নার্ভাস ফীল করে। ও ছোট থেকেই মুরাদকে ভালোবাসে কিন্তু মুরাদ বরাবরই ওকে ইগনোর করে আসছে। সেই মুরাদ হঠাৎ করে ওকে বিয়ে করতে চাওয়ায় হতভম্ব হয়ে যায় তুলি। মুরাদ বিয়ের কথা বলার পর থেকে সে মুরাদের সাথে একটা কথাও বলেনি। পারতপক্ষে তার সামনেও যায়নি। আজ এভাবে একা কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হয়ে যায়। এমন না যে সে লাজুকলতা, কিন্তু মুরাদকে সে ভয় পায়। মুরাদ ডাকে -“আমার দিকে তাকা তুলি। আমি তোকে কয়েকটা প্রশ্ন করব, চাইলে তুইও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিস। তার আগে একটা কথা বলি ছোট থেকেই তোকে তুই ডাকি, হুট করে চেঞ্জ করা যাচ্ছেনা তবে আমি চেষ্টা করতেছি, আমাকে একটু সময় দে।”

-“আচ্ছা।” নরম সুরে বলে তুলি।

-“শুনতে পাইনি, জোরে বল। তোর এমন আওয়াজ শুনে অভ্যস্ত না।” হেসে বলে মুরাদ।

তুলি আরো গুটিয়ে যায়। আরো আস্তে বলে -“কি জানতে চাও বল।”

-“বিয়ে নিয়ে প্রতিটা মেয়ে ছেলে সবারই কিছু স্বপ্ন থাকে। তোর কি স্বপ্ন বিয়ে নিয়ে বল, আমি পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।” মুরাদ বলে।

হঠাৎ একরাশ লজ্জা তুলিকে ঘিরে ধরে। কোনমতে উচ্চারণ করে -“আমার কোন স্বপ্ন নাই।”

মুরাদ বুঝতে পারে তুলি কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে তাই ওকে বলে -“ভেবে রাখ, আমি রাতে কল দিয়ে জেনে নেব।” কিছুক্ষণ চুপ থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে পরিস্কার করে নিয়ে মুরাদ আবারও বলে -“দেখ তুলি, তুই আমাকে ছোট থেকে চিনিস জানিস। আমি কেমন সেটাও তুই জানিস, তুই কেমন সেটাও আমি জানি। বিয়ের কথা ভাবলে আমি যেমন বউয়ের কথা ভাবতাম তুই তার সম্পুর্ণ আলাদা। শুধু তাই না, তুই আমিও একদম আলাদা। তারপরও তোকে বিয়ে করতে চাচ্ছি কারণ তুই নাঈমের বোন, নাঈমের চোখের মনি। তুই হয়তো বুঝিস না নাঈম আমার কাছে কতখানি। নাঈমকে ভালো রাখতে আমি সব করতে পারব ইনশাআল্লাহ।”

-“আমি কি ভাইয়াকে কষ্ট দিছি? তুমি আমাকে এসব বলছ কেন?” জানতে চায় তুলি।

-“কেন তুই বুঝিসনা? এই যে তুই ভাবির পিছনে লাগিস, অযথা সীন ক্রিয়েট করিস। ওদের বেডরুমে গিয়ে উঁকি দিস এগুলো লাগা না বল? এটা কি ঠিক? তোকে ধুমধামে বিয়ে দেয়ার জন্য ও দিনরাত এক করে পরিশ্রম করতেছে। তুই জানিস নাঈম সারাদিন কিছু খায়না টাকা বাঁচানোর জন্য। সকালে বাসা থেকে খেয়ে যায় আর রাতে বাসায় ফিরে খায়। এভাবে দিনরাত না খেয়ে পরিশ্রম করলে বাঁচবে ও? তোর কি মনে হয়? যতদিন তোর বিয়ে না হবে ততদিন ও এইসব করে যাবে সেজন্য, শুধুমাত্র নাঈমের কষ্ট কমানোর জন্য আমি এখন তোকে বিয়ে করছি। কারণ ওর মাথায় একটাই চিন্তা তোর ভালো ঘরে বিয়ে দেয়া। তাই ভাবলাম ছেলে তো আমি ভালোই, ঘরও ভালো। আমিই বিয়ের প্রস্তাব দেই। কাজটা ঠিক করছিনা বল?” মুরাদ বলে।

-“হ্যাঁ অবশ্যই ঠিক করেছ।” বলে তুলি।

-“তবে আমার একটা শর্ত আছে তোর কাছে, বা বলতে পারিস বিয়ের আগে সব ক্লিয়ার হয়ে নেয়া ভালো। জানতে চাস?”

-“হ্যাঁ জানতে চাই তোমার শর্ত। তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারব।” মাথা নিচু করে বলে তুলি।

-“শুন তাইলে। প্রথম শর্ত হল……….
দেখি সামনের পর্বে কি শর্ত দেয় 😁
@সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here