❤#আশিকী ❤
#Madness_Of_Love,Part_29
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
দুই বছর পর,,,,
রেডিও স্টেশন থেকে বের হয়ে ফুল স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে আমাল। এই মুহুর্তে ওর নিজের গন্তব্যে পৌঁছানো সব চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
মনের মধ্যে অজানা ভয় উকি দিচ্ছে ওর। এই ভয়টা দুই বছর আগে ওর জীবন উলট পালট করে দিয়ে গিয়েছে।
গাড়ি টা থামলো হসপিটাল এর সামনে। আমাল দ্রুত পায়ে এক প্রকার দৌঁড়ে ভিতরে ঢুকলো।
থার্ড ফ্লোরে ডক্টর খায়ের ( সানার অপরেশন যিনি করেছেন) এর কেবিন। আমাল দ্রুত উনার কেবিনে প্রবেশ করলো।
একটা ফাইল খুব তীক্ষ্ণ নজরে চেক করছিলেন তিনি। আমাল প্রবেশ করতেই চোখ তুলে দরজার দিকে তাকালেন তিনি। হাঁপিয়ে পরেছে আমাল জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে ও।
ড. খায়েরঃ ভিতরে আসো আমাল,, ( ফাইলটা রেখে)
আমালঃ জ্বি,,,
আমাল ডা. খায়েরের অপজিটে বসে পরলো। বেশ কিছুক্ষন কথা বলার পর আমাল বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। খানিকটা এগিয়ে যেতেই কেবিন নাম্বার 125 । আমাল নিজের সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে ঠোঁটে হাসি ফুঁটিয়ে কেবিনটায় প্রবেশ করলো।
দুইজন নার্স খানিকটা হাসলো আমালকে দেখে তারপর চুপচাপ বেরিয়ে গেল। আমাল গিয়ে বেডের পাশের চেয়ারে বসে পরলো।
বেডে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে সানাহ। আমাল সানার হাতে নিজের হাত রাখলো তারপর অপর হাত দিয়ে ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলতে শুরু করল,,,
আমালঃ স্যরি লাভ আজকে একটু লেট হয়ে গিয়েছে। একচুয়ালি সেটে একটু বেশি কাজ ছিল তো তাই। দেখো না এক সাথে কত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে তোমার এই আমালের। বিজনেস এর চাপ তার উপর তোমার এবসেন্স এ রেডিও এর শো হোস্ট। আবিদ আর দিয়াকে সামলানো। ও হ্যাঁ ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে আবিদ আর দিয়া আবার ঝগড়া করেছে আর টপিক কি ছিল জানো?? ( হাসতে হাসতে) কে কাজ বেশি করে,,,
আবিদ বেচারা তো ওর সামনে মিচি বিড়াল হয়ে থাকে। আর দিয়া!! ও তো বাড়ির মহারানী। বারবার এক কথাই বলে আমার সানাহ দি ঠিক হলে আমি আর সানাহ দি মিলে তোমাদের দুই ভাইকে শিক্ষা দিব,,, ( আমালের চোখে পানি টলমল করছে তারপরেও ঠোঁটের হাসি গায়েব করে নি ও।)
তুমি ব্যাস তারাতারি সুস্থ হও আর নিজের দায়িত্ব সামলাও আমি আর পারছি না। তুমিতো জানোই আমি কতটা অলস,,, এই দুই বছর এতো দায়িত্ব পালন করতে করতে আই অ্যাম টায়ার্ড। ( হঠাৎ থেমে যায় আমাল)
আচ্ছা লাভ তুমি কি বোর হচ্ছো আমার কথায়??
সানাহ আগের মতই চুপ করে আছে,,,
আমালঃ হচ্ছোনা তাই তো। আমি তো জানি আমার লাভ আমার কথায় কখনো বোর ফিল করতেই পারে না।
এভাবেই বিভিন্ন কথা বলছে আমাল। ওর রেগুলার রুটিন এটা। সারাদিন এর যত কথা আছে সব এসে সানাহকে বলবে ও। সেদিন সানাহ আমালের থেকে দুরে না গিয়েও দূরে চলে গেছে। সানাহ দুই বছর যাবত কোমায় আছে। হয়তো সব কিছু শুনতে পারে কিন্তু কিছু বলার ক্ষমতা নেই ওর। কাছে থেকেও দুরে ও আমালের থেকে।
বাইরে দাঁড়িয়ে নার্স দুটো আমালের কথা শুনছে। তাদের চোখেও পানি কিন্তু ঠোঁটে হাসি। এমন কখনো কাউকে দেখে নি তারা যে নিজের ভালোবাসার জন্য এতো কষ্টের মাঝেও হাসতে পারে অন্যকে হাসাতে পারে।
আমাল প্রয়োজন ছাড়া কেবিন থেকে বের হয় না। এই কেবিনেই ও একটা সোফা আর নিজের প্রয়োজনের যাবতীয় যা লাগে আনিয়ে রেখেছে। ওর রাত এখানেই কাটে ওর সানার কাছে দিনের শুরুও হয় ওর সানার চেহারা দেখে।
অফিস সেট আর হসপিটাল এই কয়টার মাঝেই আটকে গেছে ওর লাইফ। মাঝে মধ্যে বাড়িতে যায় তাও শুধু কিছুক্ষনের জন্য। বাড়ির সব দায়িত্ব দিয়া পালন করে। এখন ও আবিদের বউ। এক বছর আগে আমাল দিয়া আর আবিদের বিয়ে দিয়েছে। ও চায় নি ওর জন্য বাকিদের জীবন থমকে থাকুক।
আমালের কথা হয়তো সানার অবদি যাচ্ছে তাই ওর চোখের কোন বেয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো ওর।
আমাল আলতো করে সানার চোখের কোনা মুছে ওর চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,,,
আমালঃ Don’t Cry love এই দেখো আমি নিজেকে স্ট্রং করে নিয়েছি। কষ্ট হচ্ছে না আমার সত্যি। তুমি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না। you know that I can’t see tears on your eyes.
নার্স দুটো কেবিনে প্রবেশ করে,,,
১ম নার্সঃ আমাল আপনাকে ডক্টর খায়ের ডাকছেন,,,
২য় নার্সঃ আপনি যান আমরা আপনার সানাহকে চেঞ্জ করিয়ে দেই,,,
আমালঃ OK but Carefully.
আমাল সানার দিকে ঝুঁকে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,
আমালঃ সানাহ আমি আসছি ওকে। পরে বাকি গল্প বলবো জান,,,
আমাল বেড়িয়ে আসে কেবিন থেকে।
❤❤ In Doctors Cabinet ❤❤
ড. খায়েরঃ আমি অনেক ভেবে চিন্তে বলছি আমাল,,,
আমালঃ কিন্তু এই অপারেশনে আমার সানার কোন ক্ষতি হবে না তো ডক্টর। আর আপনি আমাকে আগে কেন এই অপারেশন এর কথা বলেন নি??
খায়েরঃ কারন তখন সানার অবস্থায় কোন পরিবর্তন ছিল না। কিন্তু এখন আমি ওর রিপোর্ট এ পরিবর্তন লক্ষ করছি। ও মেডিসিনে রেসপন্স করছে। তাই এখন যদি অপারেশন টা করা হয় তাহলে সানার ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা 50%
আমালঃ শুধু 50% তাহলে বাকি 50% ??
খায়েরঃ বাকি 40% চান্স হচ্ছে ম্যামোরি লস। আর 10% চান্স হচ্ছে অপারেশন ফেইল হওয়ার। অপারেশন ফেইল হওয়ার সম্ভাবনা কম তাই আমি তোমাকে সাজেস্ট করছি এটা,,,
আমালঃ কিন্তু 40% যে ম্যামোরি লস সেটার মানে কি?
খায়েরঃ ও হয়তো নিজের অতীত অথবা অতীতের কিছু অংশ ভুলে যেতে পারে। এমনও হয়তো নিজেকে ভুলে যেতে পারে নাহলে হয়তো তোমাকে,,,
খায়েরের কথায় বুকটা ধক করে উঠলো আমালের। ওর সানাহ ওকে ভুলে যাবে এটা কি করে সম্ভব।
সানাহ যদি ওকে ভুলে যায় ও কি নিয়ে বাঁচবে। ভয় হচ্ছে আমালের। কি করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না ও।
খায়ের আমালের সামনে একটা কাগজ রেখে বলল,,,
খায়েরঃ it’s your choice Amaal. সানাহকে এভাবে জিন্দা লাশ হয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চাও নাকি ওকে নতুন করে বাঁচার সুযোগ করে দিতে চাও।
আমাল কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক। নাহ ও ওর সানাহকে এভাবে জীবন মৃত্যুর মাঝে আটকে রাখতে পারবে না। যদিও সানাহ ওকে ভুলে যায় নিজের জন্য বাঁচতে তো পারবে সানাহ।
যদিও সে আমালকে ভুলে যাক আমাল নতুন করে ভালোবাসতে শিখাবে ওর সানাহকে। নতুন করে রাঙিয়ে তুলবে ওর #আশিকি তে ওর সানাহকে। ভালোবাসার নতুন অধ্যায় শুরু করবে ও। ওর শুধু সানাহকে চাই হাসি খুশি প্রাণবন্ত ওর সামনে। সানার মনে আমাল থাকুক বা না থাকুক আমালের মনে সানাহ মৃত্যুর পরেও থাকবে।
ওর বিশ্বাস আছে ওর সানাহ ওকে ভুলতে পারবে না। কারন ভালবাসা মস্তিষ্ক ভুললেও হৃদয় কখনো ভুলতে পারে না। চোখ বন্ধ করে হৃদয়ের চোখ দিয়ে নিজের ভালোবাসাকে খুঁজে নেয়া যায়।
কথা গুলো গভীর ভাবে ভাবলো আমাল। তারপর আর কিছু না ভেবেই সাইন করে দিল পেপারে।
আমালঃ আপনি অপারেশন এর প্রস্তুতি করেন ডক্টর আমি প্রস্তুত। এখন যা হবে সব আমার ডেস্টিনি। ছেড়ে দিলাম নিজের ভালোবাসাকে ভাগ্যর উপর।
ডক্টরঃ এটা তোমার জন্য আর সানাহর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত আমাল। আমি এখুনি সিনিয়র ডক্টরদের সাথে কথা বলছি।
আমাল সানার কেবিনে চলে আসে। তারপর ওর পাশের চেয়ারে বসে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে সানার দিকে।
আমালঃ তোমাকে ফিরে আসতে হবে সানাহ। মৃত্যুকে হার মানিয়ে আমার কাছে ফিরতে হবে তোমাকে। তুমি ভুলতে পারো না আমায় কারন আমি তোমাকে আমার কথা ভুলতে দেব না।
অপারেশন এর প্রিপারেশন প্রায় শেষ। আমাল আবিদ দিয়া সানার আম্মু সবাই উপস্থিত হয়েছে হসপিটাল।
সবার দোয়াতে শুধু সানাহ। আমাল চেয়ারে বসে হাটুর উপর কনুই ভর দিয়ে মাথা নিচু করে আছে। আই সি ইউ এর রেড লাইট অন হয়ে যায়।
To be continued….
পুরোটা না পড়েই react করা public are like পাশের বাসার আন্টিস 😪 বেশি বেশি রিয়েক্ট করা তাদের birth গত অভ্যাস 😒
Let it be.
আমি এই কয়েকদিন এজন্যই কারো কমেন্টের রিপ্লাই দেই নি। I’m sorry for that. জীবনটা এতো সহজ না। এখানে দুঃখ সুখ মিলানো থাকে। দুঃখ না থাকলে সুখের অনুভূতি কখনো বুঝা যায় না।
আর হ্যাঁ কষ্ট ছাড়া ভালোবাসার গভীরতা উপলব্ধি করা যায় না। এই কষ্টই ভালোবাসার ডোরকে আরো মজবুত করে। যে ভালোবাসা তে পেইন নেই সেটা রিয়েল ভালোবাসা হতেই পারে না।
এগুলো সম্পুর্ন আমার মতামত।