#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_১৯
#Esrat_Ety
উচ্ছাস খবর পেয়েছে উর্বী ও বাড়ি চলে গিয়েছে। এতো বড়ো একটা সুযোগ। অথচ শহরে ঢোকাই যাবে না। রাগে উচ্ছাসের মাথার দুই পাশের রগ দপদপ করছে।
সজীব আড়চোখে উচ্ছাসকে দেখছে। একটা খু’ন করে পালিয়েছে তাঁতে কোনো হেলদোল নেই! এখনও এই লোকের মাথায় ঐ মেয়েটার চিন্তা। এই অর্ধ উন্মাদের সাথে থাকতে থাকতে একদিন সজীব মারা পরবে নির্ঘাত!
সজীব ভাইব্রেশনের শব্দে হাতের ফোনটার দিকে তাকায় তারপর ফোনটা উচ্ছাসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”ভাই কাকা ফোন দিচ্ছে!”
উচ্ছাস বিরক্ত ভঙ্গিতে ফোনটা হাতে নিয়ে কানে চেপে ধরে, ওপাশ থেকে শাখাওয়াত চৌধুরীর কন্ঠস্বর ভেসে ওঠে,”সেন্টমার্টিন গিয়েছিলে কেন?”
উচ্ছাস নিশ্চুপ। শাখাওয়াত চৌধুরী চেঁ’চি’য়ে ওঠে,”জবাব দাও সেন্টমার্টিন গিয়েছিলে কেনো?”
_ঘুরতে।
এক শব্দে জবাব দেয় উচ্ছাস।
_ঘোরাঘুরি করার ছেলে তো তুমি নও! কি অঘটন ঘটিয়ে এসেছো? আবার কি খেসারত দিতে হবে আমার? বলো!
উচ্ছাস জবাব দেয় না। সজীব উচ্ছাসকে দেখছে। বড়লোকের শিক্ষিত ছেলে, সুদর্শন। ক্ষমতাবান মানুষের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়াশোনা করে,কত লাক্সারিয়াস লাইফ কাটায়। আর এই ছেলে সেকেন্ড চান্স পেয়েও হত্যে দিয়ে শুধু ঐ মেয়েটার পেছনেই পরে আছে, যে কি না এখন প্রায় ত্রিশের বুড়ি। কি হাস্যকর একটা ব্যাপার। ঐ মেয়ের চাইতে হাজার গুণ সুন্দরী মেয়ে বাগিয়ে নিতে পারে এখনও। আজব!
উচ্ছাস নিশ্চুপ দেখে শাখাওয়াত চৌধুরী বলতে থাকে,”নির্বাচন টা গেলে ফ্রান্স পাঠাবো তোমায়। ততদিন দয়া করে একটু সমঝে চলো। আর হ্যা, ঐ মেয়েটার পেছনে লেগো না। ওর বিয়ে হয়েছে, আমি আমার ছেলে খুনি মানতে পারবো, আমার ছেলে পরস্ত্রীর দিকে নজর দিচ্ছে এটা মানতে আমার রুচিতে বাঁধবে। সব ঠিকঠাক হলে ওর থেকেও সুন্দরী মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো তোমার। এর মাঝে আর কোনো ঝামেলা বাধিও না যাতে করে আবার তোমায় জেলে যেতে হয়।
শেফালী স্বামীর হাত থেকে ফোন নিয়ে কানে চেপে ধরে উচ্ছাসকে বলে,”বাবা।”
উচ্ছাস জবাব না দিয়ে ফোন কে’টে দেয়। শেফালী অশ্রুসিক্ত চোখে হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
উচ্ছাস স্বাভাবিক গলায় সজীবকে বলে,”ঝামেলা হয়েছিলো কোনো। চেক আউট তো আগেই করে নিয়েছিলি তাই না?”
_হ।
সজীব উত্তর দেয়। উচ্ছাস বলতে থাকে,”আচ্ছা যা। আমি কিছুক্ষণ একা থাকবো!”
উর্বী চুপচাপ বসে আছে।
লুৎফুন্নাহার চিন্তিত হয়ে মেয়েকে দেখছেন। এভাবে হঠাৎ করে চলে এলো কেনো উর্বী! জামাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে! কিছু বলছেও না।
সে উর্বীর কাঁধে হাত দেয়,” হ্যা রে।ওদিকে সব ভালো? ”
_হু,সব ভালো।
_তাহলে হঠাৎ এলি যে !
উর্বী রে’গে যায়,”কি এসেছি পর থেকে একই কথা বলে যাচ্ছো। এসেছি খুশি হওনি নাকি! ঠিকাছে চলে যাবো।”
উর্বী উঠে গিয়ে রুমে ঢুকে ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
লুৎফুন্নাহার চুপ করে বসে আছে। তহুরা আর তার স্বামী রেজাউল কবির একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
***
রওশান আরা নিজ বাড়িতে ফিরেছেন। বাড়ি ফিরেই তিনি লিভিং রুমের সোফাতে আ’রাম করে বসে প্রথম যে কথাটি বললেন তা হলো,”বড় বৌমা ! আমাকে একটু পানি খাওয়াও তো !”
উর্বী পানি নিয়ে আসে না। পানি আনে আমীরুন।
“তুই এনেছিস কেনো? তোর কাছে চেয়েছি আমি?”
আমিরুন থতমত খেয়ে বলে,”ভাবি তো বাড়িতে নাই আম্মা।”
_কোথাও বেরিয়েছে? রাওনাফ কোথায়? হসপিটালে?
_ভাবী হের বাপের বাড়ি চইলা গেছে আম্মা।
রওশান আরা আমীরুনের দিকে তাকায়, রাগী কন্ঠে বলে, “বাপের বাড়ি গিয়েছে মা’নে? কখন? ফিরবে কখন? আশ্চর্য আমাকে ফোন দিয়ে জানানোর প্রয়োজন মনে করলো না একবারো? ”
আমীরুন ভয় পেয়ে যায়। রওশান আরা খে’পে গিয়েছেন। এখন একে কিভাবে থামাবে সে?
_রাওনাফ কই। ও তো আমায় কিছু বললো না।
_ভাইজান হাসপাতাল আম্মা। ভাবি ভাইজানরেও কিছু বলে নাই। একা একা চইলা গেছে।
রওশান আরা অবাক হয়, উর্বী একা একা চলে গিয়েছে! কেনো!
_ফিরবে কবে জানিস কিছু? জানিয়েছে?
_না আম্মা। কি হইতেছে তাই বুঝতে পারতেছি না।
_রাওনাফের সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্য হয়েছিলো?
_তা আমি কেমনে কমু আম্মা।
রওশান আরা রাগে দাঁত কিরমির করতে থাকে। সামিউল সিড়ি দিয়ে নিচে নামছে।
রওশান আরা সামিউলকে দেখে বলে,”তোর বৌ কোথায়?”
_ছাদে মা,কেনো?
_বাহ। একটা পোয়াতি মেয়ে মাগরিবের ওয়াক্তে ছাদে গিয়ে ঢ্যাংঢ্যাং করছে আর বাড়ির বড় বৌ কাউকে কিছু না বলে চলে গিয়েছে। চমৎকার। তোর মনে হচ্ছে না এ বাড়ির বৌদের শাসনে না রাখার ফল এটা?
সামিউল বলে,”মা অন্তরা একটু হাওয়া খাচ্ছে। আর ভাবি বাপের বাড়িতেই তো গিয়েছে। চলে আসবে। এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?
_রাগ উঠবে না আমার ? দুটোতে মিলমিশ করাতে আমার জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। উর্বী তো এভাবে চলে যাওয়ার মেয়ে নয়। নিশ্চয়ই আমার বড়ছেলের অবদান আছে এতে।
“তা থাকতে পারে। ভাইজান তো ভাবীরে পাত্তাই দেয়না,খালি হাসপাতাল হাসপাতাল কইরা শেষ হইয়া যায়।”
আমিরুন রওশান আরাকে সম্মতি জানিয়ে বলে।
সামিউল আমীরুনকে চোখ রাঙানি দেয়। আমীরুন চুপ হয়ে যায়।
রওশান আরা সামিউলকে বলে,”তুই ওকে চোখ রাঙাচ্ছিস কেনো? ও কি ভুল বলেছে? আমি দেখি না? আমার চোখ নেই? সাতদিনের জন্য পাঠিয়েছিলাম ঘুরতে। তারা তিনদিনেই ফিরে এসেছে। নিশ্চয়ই হাসপাতালের দোহাই দিয়ে এসেছে তোর বড় ভাই। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। রাওনাফের সাথে রাগারাগি করেই উর্বী চলে গিয়েছে। কত সংসারী একটা মেয়ে,তোর বড় ভাই একটু বুঝবে না?
_মা সেটা ভাইয়ার সাথে উর্বীর বিয়েটা দেওয়ার আগে তোমার মাথায় আনা উচিত ছিলো। তুমি আর নুরুন্নাহার খালা। তোমরা দু’জনে দায়ী।
রওশান আরা রে’গে সামিউলের দিকে চায়,”পুরনো কথা টেনে আনছিস তুই?”
সামিউল ভয় পেয়ে যায়,মনে মনে বলে,”এইরে। মাকে খেপিয়ে দিলাম!”
রওশান আরা দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
_যা গিয়ে তোর বৌয়ের ঘা’ড় ধরে ছাদ থেকে নিয়ে আয়। মাগরীবের আজান দিয়ে দেবে। হাওয়া খেতে গিয়েছে ! এহহহ,আমরা যেনো বাচ্চা হওয়াইনি।”
সামিউল বুঝতে পারে,তার মা ভীষণ খেপেছে। তার এখান থেকে কে’টে পরাই ভালো। সে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে গিয়ে আ’ছাড় খায়। তারপর আবার উঠে দৌড়াতে থাকে।
রওশান আরা বিরবির করে বলে,”ছাগল একটা!”
আমীরুন ফিক করে হেসে দেয়।
রওশান আরা রাগী দৃষ্টিতে সেদিকে তাকায়,বলে,”তুই হাসছিস কেনো? যা আমার চোখের সামনে থেকে। তো শ্রদ্ধেও বড় ভাইজান এলে বলবি আমার সাথে যেনো দেখা করে। আমি আমার ঘরে গেলাম। কেউ বিরক্ত করবি না।”
***
শর্মী উর্বীকে ফোন দিচ্ছে।
নাবিল পেছন থেকে বলে,”কাকে ফোন দিচ্ছিস?”
শর্মী হঠাৎ করে ভয় পেয়ে হাত থেকে ফোন ফেলে দেয়,
তারপর বুকে থুথুরি দিয়ে বলে,”তুমি আমায় ভয় পাইয়ে দিয়েছো ভাইয়া!’
_আচ্ছা সরি। কাকে ফোন দিচ্ছিলি?
কথাটি বলে নাবিল মেঝে থেকে শর্মীর ফোন উঠিয়ে দিতে গিয়ে দেখে উর্বীর নাম্বার।
নাবিল হেসে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে,”ও তোর মাকে। তা আন্টি লিখে রেখেছিস কেনো? বোকা মেয়ে। মা কে কি কেউ আন্টি বলে?”
শায়মী এসে নাবিলের পেছনে দাঁড়ায়,বলে,”নাবিল তোর কোনো কাজ নেই? যা এখান থেকে। ওকে খেপাচ্ছিস কেনো?”
নাবিল মুখ ভেঙচিয়ে বলে,”ওওওও আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।তোরও তো মা।”
শায়মী রেগে নাবিলের দিকে তাকিয়ে থাকে। নাবিল হাসতে হাসতে ঘর থেকে বের হয়। যাওয়ার সময় দরজার বাইরে থেকে বলে,”তোদের মা তো গেলো। এখন কার কোলে শুয়ে ফিটু খাবি শর্মী?”
শর্মী রেগে গিয়ে কিছু বলতে এগিয়ে যায়। শায়মী শর্মীর হাত ধরে আটকায়,”ছাড় তো ওর কথা। তোকে খেপাচ্ছে। আন্টিকে ফোনে পেলি?”
_ ধরছে না আপু।
_কি হলো বলতো?
শর্মী তাকিয়ে আছে। আন্টি এরকম কেনো করছে? আন্টি তার সাথে কথা বলতে চায় না?
***
আমিরুন সদর দরজা খুলে দেয়, রাওনাফ ঘরের ভেতরে ক্লান্ত ভঙ্গিতে পা রাখতেই আমীরুন বলে ওঠে,”আপনেরে আম্মা হের কথা শুনতে বলছে ভাইজান।”
“মা আসবো!”
রওশান আরা একটা ইসলামিক বই পড়ছিলো। রাওনাফের কথায় তার দিকে না তাকিয়েই বলে,”আয়।”
রাওনাফ সরাসরি রওশান আরার ঘরে এসেছে। তার হাতে এপ্রোন, স্টেথোস্কোপ।
রওশান আরা বলে,”বোস।”
_তুমি বলো কি জন্য ডেকেছিলে।
_বৌমা কেন গিয়েছে?
রাওনাফ শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। রওশান আরা বলতে থাকে,”কি করেছিস তুই?”
_আমি কি করেছি মানে? মা তোমার কি মনে হয়না তুমি….
_মেয়েটাকে তো দেখেছি আমি। কতটা সংসারী হয়ে উঠেছিলো। তোর অবদান ছাড়া এভাবে হুট করে চলে যেতে পারে না।
রাওনাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে রওশান আরা।
_স্টপ মা! নাউ প্লিজ স্টপ! বরাবর নিজের মতামত, নিজের ধারণা দিয়ে তুমি সব বলো। মা তুমি জানো তুমি কতটা ভুল?
রওশান আরা ছেলের ধ’ম’ক শুনে অবাক হয়ে ছেলের দিকে তাকায়।
রাওনাফ বলতে থাকে,”কি বলেছিলে, পাত্রী রাজি। কারন তার বড়ভাই,খালা বলেছে পাত্রী রাজি। আমাকে একটু সময় অব্দি দিলে না। পুরো দুনিয়ার কাছে একটা উপহাসের পাত্র বানিয়ে ছেড়ে দিলে। সবাই আঙুল তুলছে আমার দিকে। আমার ব্যক্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এই একটা যায়গায় এসে। তুমি আর তোমার এই ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলিং। এগুলো বন্ধ করো এখন। প্লিজ! আমি পাজেলড হয়ে আছি মা।”
রওশান আরা অবাক চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে,”তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস? তুই? বেশ করেছি! যা করেছি বেশ করেছি। দে আমাকে ফাঁসি দে সবাই। দে।”
রাওনাফ মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি শোধরাবে না তাই না?”
কথাটি বলে রাওনাফ হন্তদন্ত হয়ে ঘরের দিকে যায়। রওশান আরা দরজার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে।
***
ঘরে ঢুকে রাওনাফ এপ্রোন আর স্টেথোস্কোপ বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে ধপ করে বিছানার একপাশে বসে পরে। টাইয়ের নট আলগা করে মেঝের দিকে দৃষ্টি দিয়ে থাকে চুপচাপ। দীর্ঘসময় অতিবাহিত হয়। মাথা তুলে রাওনাফ ধীরে ধীরে বেড সাইডের টেবিলের ওপর রাখা শিমালার ফটোফ্রেমটির দিকে তাকায়। অস্বাভাবিক দুর্বল লাগছে হঠাৎ নিজেকে। কাঁপা কাঁপা হাতে শিমালার ফটোফ্রেমটি তুলে নিয়ে দেখতে থাকে ছবিটা। বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”প্লিজ কনসোল মি শিমালা!”
দরজার বাইরে এসে দাঁড়ায় আমীরুন। নিচু গলায় ডাকে,”ভাইজান আসবো?”
রাওনাফ ফটোফ্রেমটা যায়গামতো রেখে বলে ওঠ,” আয়! ”
আমীরুন ঘরে ঢোকে। রাওনাফ বলে,”কিছু বলবি?”
_আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো ভাইজান।
রাওনাফ অবাক হয়ে আমীরুনের দিকে তাকিয়ে থাকে,”কথা? কি,বল!”
***
“এসেছিস কেন?”
প্রশ্নটি করে উর্বীর খালা নুরুন্নাহার উর্বীর দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি তার মেয়ের ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উর্বীদের বাড়ির সবাইকে নিয়ে যেতে এসেছে। উর্বী নির্বিকার চিত্তে তার শাড়ি গুলো ভাজ করে আলমারিতে তুলে রাখতে থাকে।
তারপর বলে,”আমার বাপের বাড়ি আসবো না?”
_জামাই ছাড়া আসবি না। জামাই নিয়ে বছরে দুই ঈদে বেড়াতে আসবি তাও দুদিনের জন্য।
_এটা বাংলাদেশের কোন সংবিধানে লেখা?
_নেই এমন কোনো নিয়ম,এই নিয়ম শুধুমাত্র তোর জন্য।
উর্বী চুপ করে থাকে। নুরুন্নাহার বলতে থাকে,”কি? কথা বলছিস না কেনো?”
উর্বী চুপ করেই থাকে। নুরুন্নাহার বলতে থাকে,”যাই হোক! গুছিয়ে নে সবকিছু। এখানেই আছিস যখন,তুইও চল আমাদের বাড়িতে!”
****
গাড়ী এখানেই থামাতে হচ্ছে। এই গাড়ী নিয়ে উর্বীদের পাড়ার সরু রাস্তায় ঢোকা মুশকিল। রাওনাফ চিন্তিত হয়ে বসে আছে। গাড়ি না হয় এখানে থাকবে কিন্তু সে কি করবে? এই ঝুম বৃষ্টিতে বাইরে পা দেবে কিভাবে? আধাঘণ্টা ধরে সে একই ভাবে বসে আছে। রাতও অনেক হয়েছে। রাত দশটা যদিও তেমন বেশি রাত না তবে উর্বীদের এলাকা শুনশান হয়ে আছে। বৃষ্টির জন্যও হতে পারে।
রাওনাফ রওনা দিয়েছে সন্ধ্যা নাগাদ। হসপিটাল থেকেই রওনা দিয়েছে। এখানে পৌছেই বৃষ্টি তাকে পেয়ে বসলো। এখন রাওনাফ কি করবে! এভাবে তো বসে থাকা যায়না। মেইন রোড থেকে সাত আট মিনিটের রাস্তা। রাওনাফ হেটে যাবে? এই বৃষ্টিতে?
উর্বীর মন মেজাজ বি’গড়ে আছে। সন্ধ্যে থেকে লোডশেডিং , মোমবাতির টিমটিমে আলো আর তার উপরে মশার উপদ্রব।
মোবাইল টা অফ হয়ে আছে। শর্মীর কথা মনে পরছে খুব উর্বীর। উর্বী শর্মীর ফোন ধরেনি তার জন্য খুব অনুশোচনা হচ্ছে। মেয়েটার সাথে একটু কথা বলে নিলে খুব তো ক্ষতি হয়ে যেতো না তার!
সে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলো,মাথা তুলে তহুরাকে ডাকে,” ভাবী । আরেকটা কয়েল জালিয়ে দাও না। আগেরটা শেষ হয়ে গেলো যে।”
তারপর তার মনে পরে সে বাড়িতে একা। জেদ করে যায়নি সবার সাথে।
বাইরে ঝমঝম শব্দ করে বৃষ্টি পরছে। উর্বীর বেশ শীত লাগছে। সে একটা কয়েল জালিয়ে নিজের ঘরে যেতে নেয় তখনি দরজায় কেউ ধাক্কা দেয়। উর্বী দাঁড়িয়ে পরে। এতো রাতে কে এলো! বাড়ির সবাই নয়তো? কিন্তু তাদের তো আজ আসার কথা না! উর্বীর হঠাৎ খুব ভয় হতে শুরু করে। প্রতিবেশীর বাড়িও তাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরে। খুব ভয় করছে তার।
উর্বী কয়েল রেখে মোমবাতি নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার এপাশ থেকে বলে,”কে?”
রাওনাফ শীতে কাপছে। সে কাঁপতে কাঁপতেই জবাব দেয়,”উর্বী আমি রাওনাফ! দরজা খোলো।”
উর্বী চ’ম’কে ওঠে। কার গলা শুনছে সে! কে এসেছে! এই ভারি পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে তার বুক চিনচিনিয়ে উঠলো কেনো। এমন অনুভূতি তখন হয় যখন কেউ কারো অপেক্ষা করতে করতে একসময় তার সান্নিধ্য পায়। তবে কি সে রাওনাফের জন্য অপেক্ষা করছিলো? সে জানতো না, নিজেও মানতো না,ভাবে নি রাওনাফ আসবে। রাওনাফের আসার তো কথা না। তবে তার অবচেতন মন চাইতো রাওনাফ আসুক? এমনটা নাকি? এমনটাই কি?
উর্বী কিছুই বুঝতে পারছে না। সত্যিই কি রাওনাফ? নাকি তার ভ্রম। নিশ্চিত হবার জন্য সে কাঁপা গলায় আবারও বলে,”কে?”
ওপাশ থেকে রাওনাফ বলে,”আরে আমি রাওনাফ উর্বী। দরজাটা খুলে দাও তাড়াতাড়ি।”
উর্বী একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। সিটকিনি তুলে দরজা খুলে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে। ক্লান্ত কিন্তু অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে দেখতে থাকে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বাটে, ছিমছাম গড়নের, গভীর চাহনির, শান্ত , গোছালো, মধ্যবয়সী পুরুষটিকে।
চলমান……
[ আজ হঠাৎ করেই শরীরটা বু’ড়ো আঙুল দেখিয়ে দিয়েছে। লেখিকা হার মেনে কাত হয়ে পরে আছে। বিধায় এই ছোট পর্ব। তাও শব্দসংখ্যা ১৯০০+। দয়া করে মানিয়ে নিন।
আর হ্যা মতামত জানাতে ভুলবেন না।]