#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_১৬
#Esrat_Ety
উর্বী বুঝতে পারছে না সে কোথায়। হাত দিয়ে চোখ ডলছে সে। পরক্ষনেই মনে পরলো সে তো সেন্টমার্টিনের একটা রিসোর্টের রুমে আছে। বাইরে থেকে মিষ্টি রোদ জানালার সাদা রঙের পাতলা পর্দা ভেদ করে রুমের ভিতর উঁকি দিচ্ছে। তাদের ঘরটা বেশ বড়ো। গোটা রিসোর্টটাই অনেক বড়। উর্বী গা থেকে চাদর সরিয়ে মেঝেতে পা রাখে। রাওনাফকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। কোথাও বেরিয়েছে নাকি!
সে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেয়। বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। এতো বেলা অব্দি সে ঘুমোয় না। কিন্তু গতকাল রাতে জার্নি করে সে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। উর্বী ঘাড় ঘুরিয়ে বিছানার দিকে তাকায়। রাওনাফের ব্যবহৃত চাদরটা একেবারে গুছিয়ে ভাজ করে রাখা। এই মানুষটি খুবই গোছালো, এতো গোছালো পুরুষ উর্বী দেখেনি।
বিছানার সাথে লাগোয়া টেবিলটায় একটা কফি মেকার আর কিছু ইন্সট্যান্ট কফির পাতা দেখতে পায় সে। দেখেই উর্বীর কফি খেতে ইচ্ছে করছে। সে নিজের জন্য এক মগ কফি বানিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। বারান্দায় গিয়ে সে চ’ম’কে যায়। এখান থেকে সমুদ্র সৈকতের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যাচ্ছে। উর্বীদের ঘরটি চারতলায়। রিসোর্টের বাগানে প্রচুর লোকজন, সবাই যে যার মতো আনন্দ করছে। হঠাৎ রাওনাফের দিকে তার চোখ যায়। পুল সাইডের পাশে একটা টেবিলে তারা বন্ধুরা মিলে হৈ হৈ করে গল্প করছে।
রাওনাফকেও বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। রাওনাফের বন্ধুদের বৌয়েরা ব্যস্ত সেলফি নিতে। উর্বী কফিটা শেষ করে। সে এখন কি করবে ! রাওনাফকে ফোন দেবে?
রাওনাফকে ফোন দিতে হয় না, রাওনাফই তাকে ফোন দেয়। উর্বী কানে ফোন চেপে ধরে রাওনাফের দিকে তাকিয়ে আছে।
_হ্যা তুমি উঠেছো?
_হ্যা এইতো কিছুক্ষণ হলো।
_আমরা সবাই এখন ব্রেকফাস্ট করবো,তুমি ফ্রেশ হয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসতে পারবে? নাকি আমি আসবো?
_না,আমি পারবো আপনার আসতে হবে না।
রাওনাফ ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দেয়। সে হাত নেড়ে নেড়ে পুনরায় বন্ধুদের সাথে গল্প করতে শুরু করে। উর্বী দুমিনিট তার দিকে তাকিয়ে থেকে রেডি হতে যায়।
***
উর্বীকে আজ উর্বীর চোখেই ভীষণ সুন্দর লাগছে। সে আকাশী রঙের কাঞ্জিভরম শাড়ি পরেছে। মুখে একটু পাউডার লাগিয়েছে। একটু লিপস্টিকও কি দেবে? কিছুক্ষণ নিজের দিকে তাকিয়ে থেকে লিপস্টিক না লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয় সে। যা সেজেছে সেটাই ঢের। সাজবেই বা কেন উর্বী! নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে পার্স টা হাতে তুলে নেয়। তারপর পা বাড়ায় রুমের বাইরে।
উর্বী রুম লক করে ঘুরে দাঁড়াতেই চ’ম’কে ওঠে। তাদের রুমের বিপরীতে রুম নাম্বার টু ওয়ান টুতে একজন লোক ঢুকলো। পেছন থেকে এক ঝলক দেখলো উর্বী। লোকটির অবয়ব এমন চেনা চেনা মনে হলো কেনো?
“দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাবে না?”
উর্বী ঘুরে তাকায়। রাওনাফ দাঁড়িয়ে আছে।
“আপনি এলেন কেনো? আমিই যেতাম।”
_তোমার দেড়ি হচ্ছিলো দেখে ভাবলাম কোনো অসুবিধে হয়েছে। মানে ওরা পাঠিয়েছে।
উর্বী মনে মনে হাসে। রাওনাফ করিম খানকে সবসময় সবাই জোর করে।
মুখে বলে,”আমি কি ছোটো বাচ্চা?”
_তা ঠিক না, চলো সবাই অপেক্ষা করছে।
উর্বী রাওনাফের পিছু পিছু যেতে থাকে। কিছুক্ষণ বাদেই টু ওয়ান টু থেকে বেরিয়ে আসে উচ্ছাস। বেরিয়ে সে মুখে মাস্ক লাগিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে থাকে।
খাওয়ার সময়ও সেলফি! এবার উর্বীর খুবই বিরক্ত লাগছে।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মিতা বলে,”আরে সবাই মিলে একটা সেলফি তুলি চলো! সবাই তাকাও।”
সবাই ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। যে যার বৌয়ের কাঁধে হাত রেখেছে। হঠাৎ উর্বীর কাছে দৃশটা খুবই ভালো লাগে।
জুনায়েদের স্ত্রী রাবেয়া বলে ওঠে,”আরে রাওনাফ ভাই! আপনিও ভাবীকে ধরে রাখুন না।”
উর্বী হকচকিয়ে ওঠে। রাওনাফও ভীষণ বিব্রত হয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখে। মৌমিতা বলে ওঠে,”আরে বাদ দাও না। লজ্জা পাচ্ছে এরা। তোমরাও না!”
লামিয়া পাশ থেকে মৃদু হেসে বলে ওঠে,”চলো এবার সবাই তাকাও। তখন থেকে সেল্ফি স্টিক তুলে বসে আছি। তাকাও!”
তারা ছবি তুলছে। লামিয়া মাথা ঘুরিয়ে উর্বীকে নিচু স্বরে বলে,”হাসো!”
উর্বী হাসার চেষ্টা করে।
দূরের টেবিলে বসে আছে উচ্ছাস। সে অপলক দৃষ্টিতে উর্বীকে দেখছে।
***
নাবিল স্যান্ডউইচ নিয়ে খুটছে শুধু, খাচ্ছে না। শায়মী আর শর্মী দুজন মিলে অতি উৎসাহের সাথে পরিকল্পনা করছে খালামনিদের বাড়িতে গিয়ে কি কি করবে। খাবার টেবিলে তারা পাঁচজন। শর্মী,শায়মী,নাবিল আর সামিউল-অন্তরা।
কিছুক্ষণ পরে নাবিল শর্মীদের ধমক দিয়ে বলে,”চুপ করবি তোরা! আমার বিরক্ত লাগছে এসব শুনতে!”
সবাই মাথা তুলে নাবিলের দিকে তাকায়। শায়মী কড়া গলায় বলে,”গতকাল থেকে খিটখিটে করেই যাচ্ছিস! দিস ইজ ঠু মাচ নাবিল!”
নাবিল চুপ করে থাকে। শায়মী ক্ষনবাদে বলে ওঠে,”পাপা তার ওয়াইফকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে।”
সামিউল শায়মীর কথা শুনে নাবিলের দিকে তাকায়। নাবিলের মেজাজ এজন্য চটে আছে!
নাবিল চুপ করে থেকে বলে ওঠে,”কাল বুঝেছি, পাপা ওয়ার্ল্ডস বেস্ট পাপা হলেও কখনো বেস্ট হাজবেন্ড ছিলোই না। মাম্মাকে কখনও পাপা ভালোবাসেনি।”
সামিউল পাশ থেকে বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”ভালো না বাসলে তোরা পৃথিবীতে টপকালি কিভাবে!”
অন্তরা সামিউলকে খোঁচা মেরে চেঁ’চি’য়ে ওঠে,”থামবে তুমি! ওরা বাচ্চা!”
শায়মী নাবিলের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে,”নাবিল! প্লিজ পাপাকে এভাবে জাজ করিস না!”
_চাই না তো! হয়ে যায়!
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে নাবিল।
***
দুপুরে সবাই মিলে সমুদ্র স্নানে বের হয়েছে। উর্বীর একদমই যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু সবাই মিলে তাকে টেনে নিয়ে যায় । সে শাড়ি পরে আছে। মেরুন রঙের সাধারণ সুতি শাড়ি।
রাওনাফ চুপচাপ হাঁটছে।
উর্বীর কাছে এসে মিতা বলে,”কি ব্যাপার উর্বী! তুমি এভাবে রাওনাফ ভাইয়ের থেকে আলাদা হয়ে থাকো কেনো? আরে লজ্জা কিসের? আমরা আমরাই তো।”
উর্বী কি বলবে বুঝতে পারছে না। জবাবে সে শুধু মুচকি হাসে।
“রাওনাফ ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি রাতে?”
পেছন থেকে আশিকের স্ত্রী জান্নাত বলে ওঠে।
_না তো, ঝগড়া কেনো হবে?
_তাহলে তার কাছে যাও।
কথাটি বলেই জান্নাত উর্বীকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে রাওনাফের দিকে পাঠিয়ে দেয়। রাওনাফের চোখে উর্বীর চোখ পরে। সে চোখ নামিয়ে হাটতে থাকে।
উর্বীর এখন একটু শান্তি লাগছে। বীচে এসে এখন কেউ আর তাদের নিয়ে পরে নেই। যে যার স্বামীর সাথে সমুদ্রস্নান করছে। এদের দেখে উর্বীর সত্যি সত্যি অবাক লাগে। এদের ছেলেমেয়েরা নাকি আবার স্কুলে পরে। তবে উর্বীর খুব ভালো লাগে এদের স্বামী-স্ত্রীতে খুনসুটি গুলো।
সৈকতে একা একা হাঁটতে থাকে সে। মৃদুমন্দ বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উড়ছে। উর্বী চুলে কোনোমতে একটা খোঁপা বেঁধে নিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। কিছু ঝিনুক তার পায়ে লাগে। সে ঝিনুকটা উঠিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে থাকে। বাহ বেশ সুন্দর তো!
উর্বী দুমিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ঝিনুক কুঁড়াতে শুরু করে।
“কি করছো?”
পেছন থেকে বলে রাওনাফ।
উর্বী লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”ঝিনুক কুড়োচ্ছি।”
_এগুলো দিয়ে কি হবে?
অবাক হয়ে উর্বীর হাতের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
_এগুলো খুবই সুন্দর। শর্মী নিতে বলেছিলো। ও কি একটা ক্রাফ্ট বানিয়ে নেবে বলছিলো ওর চারুকলা ক্লাসে।
রাওনাফ হাসে। উর্বীকে তার এখন শর্মীর মতোই একটা বাচ্চা মনে হচ্ছে।
উর্বী কথা না বাড়িয়ে ঝিনুক কুঁড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরে। রাওনাফ কিছুক্ষণ তাকে দেখে। খানিক বাদে সেও তার পায়ের কাছ থেকে একটা ঝিনুক উঠিয়ে উর্বীকে এগিয়ে দেয়। উর্বী একপলক রাওনাফের দিকে তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকায়, তারপর মুচকি হাসি দিয়ে সেটি নেয়।
“এই দেখো দেখো ওদিকে দেখো।”
মিতার কথায় সবাই দূরে রাওনাফ আর উর্বীর দিকে তাকায়। দুজনে পাল্লা দিয়ে ঝিনুক কুড়িয়ে জড়ো করছে।
জুনায়েদ বলে,”আমাদের সামনে এমন ভাব করে যেনো ভাজা মাছ টা উলটে খেতে পারে না এরা দুজন। গলায় গলায় কত ভাব দেখেছো?”
” দাঁড়াও এখনই ধরছি দুটোকে।”
মৌমিতা এগিয়ে যেতে নেয়।
সবাই হো হো করে হাসতে থাকে। লামিয়া তাকে বাধা দিয়ে বলে,”মৌমিতা প্লিজ যাসনা। ওরা ওদের মতো থাকুক। আমাদের ওদেরকে নিজেদের মতো করে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।”
“ঠিক বলেছো।”
জাহাঙ্গীর লামিয়ার কথার পিঠে বলে।
দূর থেকে উচ্ছাস উর্বী আর রাওনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। সে দীর্ঘসময় আগে একটা সিগারেট ধরিয়েছিলো,কিন্তু সেটি তার হাতেই পুড়ছে। ওড়াচ্ছে না সে ধোয়া।
***
“পুরুষ দের আর পছন্দ কি। শেষ মেষ তো তোমরা তোমাদের পছন্দ অনুযায়ীই সব কিনবে। আমরা কয় বন্ধু এখানে বসে কফি খেতে খেতে আড্ডা দেই। তোমরা ঘুরেফিরে কেনাকাটা করো।”
আশিক বলে কথাটি। তারা সবাই সন্ধ্যায় শপিং করতে বেরিয়েছে। উর্বী চুপচাপ বসে আছে। তাকে অন্যরা টানাটানি করছে। শেষমেষ বাধ্য হয়ে সে উঠলো।
মহিলারা সবাই বিভিন্ন জিনিস দেখছে। দরদাম করছে। উর্বী সব ঘুরেফিরে দেখছে। সেন্টমার্টিনের সবথেকে বড় লোকাল মার্কেট এটি।
উর্বী ঘুরেফিরে একটা চাদরে হাত দেয়। এগুলো পার্বত্য এলাকার মানুষের বুননকৃত শাল। তার মা আর শাশুড়ি রওশান আরার জন্য পছন্দ হয়েছে চাদরটি। সে বেছে বেছে দু’টো নিয়ে নেয় দু’জনের জন্য।
অন্য ভাবিরাও ঘুরতে ঘুরতে তার কাছে চলে আসে।
লামিয়া উৎসাহী হয়ে উর্বীর হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,”বেশ সুন্দর তো! কার জন্য নিলে?”
_মা আর শাশুড়ি।
লামিয়া মৃদু হাসে। উর্বীর মাথাটা হঠাৎ চক্কর দিয়ে উঠতেই লামিয়া এসে ধরে ফেলে। মিতা চেঁ’চি’য়ে ওঠে,”আরে ওকে কেউ বসিয়ে দাও।”
লামিয়া উর্বীকে বসিয়ে দেয়। মিতা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলে,”নাও এটা খাও।”
উর্বী অস্ফুট স্বরে বলে,”ঠিক আছি আমি।”
মিতা বলে,”কি হয়েছে? মাথা ঘুরছে?”
_আসলে আজ অনেক বেশি ঘোরাঘুরি হয়ে গিয়েছে। একদিনে এত বেশি স্ট্রেস নিতে পারি না আমি।
রাবেয়া সাথে সাথে বলে ওঠে,”আমি ভেবেছি সুখবর আছে বোধহয় কোনো।”
সবাই উচ্চশব্দে হাসতে থাকে। উর্বী বসে বসে নিজেকে ধাতস্থ করে। বাকিদের মশকরায় তার কোনো হেলদোল নেই। মৌমিতা বলে ওঠে,”তা উর্বী! প্লানিং করেছো কোনো?”
_কিসের প্ল্যানিং?
_ফ্যামিলি প্ল্যানিং!
সবাই দ্বিতীয় দফায় হাসতে থাকে।
উর্বী নিশ্চুপ। লামিয়া হাসতে হাসতে বলে ওঠে,” রাওনাফ কখনো করতে পেরেছে ফ্যামিলি প্ল্যানিং? ও কখনো প্ল্যান করে বাচ্চা নিতে পারেনি, শিমালাই পিল খেতে ভুলে যেতো। সবসময় হেসেছি আমরা বন্ধুরা এটা নিয়ে। কিন্তু রাওনাফ বরাবর সবকিছু খুবই দায়িত্বের সাথে সামলেছে। শিমালা প্রথম যখন কনসিভ করেছে তখন রাওনাফ স্টুডেন্ট ছিলো, শিমালা একবার চেয়েছিলো এ’ব’র’শ’ন করাতে। তখন রাওনাফ কি রাগটাই না করেছিলো শিমালার উপরে! সপ্তাহখানেক তো শিমালার সাথে রেগে কথাই বলেনি। রাওনাফ প্লান না করলেও তার পিতৃত্ব নিয়ে বরাবর এক্সাইটেড ছিলো। নাবিল শায়মীর পরে শিমালা একটা লম্বা গ্যাপ দিতে চেয়েছিলো। কারন নাবিল শায়মী জমজ ছিলো। কিন্তু বেশি গ্যাপ দিতে পারেনি, শর্মীর বেলায়ও শিমালা পিল খেতে ভুলে গিয়েছিলো। রাওনাফ সেবারও খুবই খুবই এক্সাইটেড ছিলো। রাওনাফ বরাবর বেস্ট ফাদার নামে স্বীকৃত আমাদের কাছে।”
উর্বী লামিয়ার কথা শুনে নিচু স্বরে বলে,”এসব কথা আমাকে বলছেন কেন?”
লামিয়া হেসে ফেলে। রাবেয়া বলে,”লামিয়া এটা বলেছে তোমাকে বোঝাতে, প্ল্যান করার দরকার নেই অতশত। ইচ্ছে হলে বাচ্চা নিয়ে নাও। রাওনাফ ভাই খুবই চমৎকার একজন বাবা হবে! তোমার চিন্তা নেই!”
মিতা হাসছে। লামিয়া রাবেয়াকে থামিয়ে উর্বীর চোখে চোখ রেখে বলে,”অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বাচ্চা কিংবা বিয়ে। রাওনাফ খুবই দায়িত্বের সাথে সামলাতে জানে মৃদুলা উর্বী। এটাই বোঝাতে চেয়েছি।”
উর্বী লামিয়ার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলে ওঠে,”আমি উঠছি! রিসোর্টে ফিরবো।”
***
রাতের ডিনার শেষে যে যার রুমে ঢুকবে। উর্বী লবিতে একা দাঁড়িয়ে আছে। রাওনাফ সবার সাথে আগামী কালকের স্কেজিওল নিয়ে কথা বলছে। কাল তারা একটা পিকনিকের আয়োজন করেছে রিসোর্টে।
উর্বী একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেয়ালে পেইন্টিং দেখছে। তার শপিং ব্যাগ গুলো রাওনাফের হাতে। বাড়ির সবার জন্যই টুকটাক কিনেছে অনেক কিছু।
উর্বীকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উচ্ছাস। সে এই সুযোগটাই খুঁজছিলো। আশেপাশে কেউ নেই। বেয়াদপটাকে ঘা’ড় ধরে রুমে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে উচ্ছাসের। সে হাত মুঠো করে তার রা’গ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। উর্বী উচ্ছাসের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়েছিল।উচ্ছাস উর্বীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ রাওনাফ উর্বীর কাছে চলে আসে।
উচ্ছাস দাঁড়িয়ে পরে।
উর্বী ঘাড় ঘুরিয়ে রাওনাফকে বলে,”কথা শেষ হয়েছে আপনাদের?”
“হ্যা।”
রাওনাফ লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে।
***
রাওনাফ দেখছে তার দিকে একজন ২৯-৩০ বছরের রুপবতী নারী এগিয়ে আসছে। পরনে তার বাসন্তী-লাল রঙের জামদানি শাড়ি। উর্বীর উচ্চতা কম। ছোটোখাটো আনন। আজ খানিকটা বেশি লম্বা দেখাচ্ছে। হাই হিল পরেছে হয়তো।
উর্বী রাওনাফের দিকে তাকাতেই সে বিব্রত হয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। খোপায় আবার গাজরা লাগিয়েছে। অতি সাধারণ বাঙালি মেয়েদের সাজ। অথচ উর্বীকে দেখে এতটা স্নিগ্ধ লাগছে! উর্বী খুব কাছে চলে আসে। রাওনাফ বন্ধুদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পরে।
উর্বীকে আসতে দেখে রাবেয়া বলে ওঠে,”এইযে এসে গিয়েছে আমাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি। যার জন্য এতো আয়োজন! ”
সবাই উর্বীর দিকে তাকায়।
উর্বীর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। সে যে বাড়তি সাজ হিসেবে চুলে এই গাজরা টা লাগিয়েছে এটা কি বেশি হয়ে গিয়েছে!
পার্টিতে অনেক অপরিচিত মুখ দেখা যাচ্ছে। উর্বী এদের চেনে না। এখানে,এই অচেনা যায়গায় এতো অতিথি এরা পেলো কোথায় !
মিতা এসে উর্বীর হাত ধরে টেনে রাওনাফের কাছে নিয়ে যায়।
“সাজতে সাজতে এতো সময় লাগিয়ে দিলে এখন স্বামীর সাথে কেক কাটবে এসো।”
_কেক কেনো কাটবো?
অবাক হয়ে জানতে চায় উর্বী।
_আরে এই পিকনিক থুড়ি পার্টিটা তোমাদের অনারে রেখেছি আমরা। তোমাদের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। এখন কেক কেটে একটু আমাদের উদ্ধার করুন আপনারা দুজন।
_এতো অতিথি! এরা কারা?
_এরা এই রিসোর্টের গেইস্ট। সবাই ইনভাইটেড আজ।
উর্বী অবাক হয়ে যায়। তাদের জন্য এতো আয়োজনের কি আছে! এখানে কি রাওনাফ আর উর্বীর বিয়ে হচ্ছে নাকি!
উচ্ছাস অনেকটা দূরে একটি চেয়ার পেতে বসে ড্রিংকস খাচ্ছে। তার শীতল দৃষ্টি উর্বীর দিকে। এতো সাজ,এতো জেল্লা মুখে ! সব স্বামীর জন্য। একটা নীরব পৈশাচিক হাসিতে উচ্ছাসের ঠোট প্রশস্ত হয়ে যায়।
রাওনাফের বন্ধুরা পার্টিতে আসা প্রত্যেক গেইস্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে পার্টির আরম্ভ ঘোষণা করে দিয়েছে।
“কি হলো! কেইক কাটো।!”
মিতা ধমকের সুরে বলে ওদের। উর্বী ছুড়িটা কেকের উপর বসায় তখনই মৌমিতা রাওনাফকে বলে,”তুই এভাবে রোবটের মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? বৌয়ের সাথে কেক কাট!”
রাওনাফ ছুড়িটা ধরতে গিয়ে উর্বীর হাতের উপর হাত রেখে ফেলে। রাওনাফ খানিকটা বিব্রত বোধ করছে। উর্বীর কোনো ভাবান্তর নেই। সে নির্লিপ্ত হয়েই কেক কাটতে থাকে।
উচ্ছাস তাদের দেখছে। সে উর্বী আর রাওনাফের মুখের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাদের হাতের দিকে তাকায়। একটা কাজ করলে কেমন হয়! ওই ছুড়িটা দিয়ে উর্বীর স্বামীর গ’লাটা কেটে দেবে সে?
***
মামুন বসে আছে। তার সাগরেদ রানা এসে তার সামনে দাঁড়ায়, “ভাই হারামজাদা নিচে পা’র্টি করছে।”
_কিসের পা’র্টি?
_জানি না,হোটেলের কোন মালদার গেস্ট আয়োজন করেছে। বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। আমাদেরও দাওয়াত ছিলো।
_ওহহ। ওর সাথে ওই নেংটি ইঁদুর টা, সজীব না যেনো কি নাম। সে কোথায়?
_ওই কু’ত্তাকে আজ দেখছি না, হয়তো কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।
_ আচ্ছা ওটাকে পরে দেখে নেবো,শোন,সময় সুযোগ বুঝে ওকে শেষ করবি। কাজ শেষে আনোয়ার আর রউফকে ঝাউবনের ওদিকটায় থাকতে বলবি। লা’শ’টাকে ওখান থেকে ভাসিয়ে দিবি।
রানা মাথা নাড়ায়। সে তার বসের কথামতোই সব কাজ করবে।
***
পার্টিতে সবাই মুগ্ধ হয়ে জাহাঙ্গীরের গান শুনছে। উর্বী অবাক হচ্ছে। এই লোক এতো সুন্দর গান জানেন! আচ্ছা রাওনাফের বন্ধুদের এক একজন এক এক গুনের অধিকারী। রাওনাফের ডাক্তারি করা ছাড়া আর কোন গুন আছে? মায়ের আদেশ পালন আর কিউট কিউট বাচ্চা তিনটাকে পড়াশোনার জন্য সবসময় বকাঝকা করা ?
কথাটা ভেবেই উর্বী নিজেই নিজেকে ধমকায়,”ছিঃ মৃদুলা উর্বী। একজন ভদ্রলোককে সবসময় এভাবে খোঁচা মারতে পারো না তুমি!”
গান শেষে সবাই কড়জোরে হাততালি দিচ্ছে। উর্বী রাওনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। রাওনাফও হাততালি দিতে দিতে উর্বীর দিকে তাকাতেই উর্বী অন্যদিকে চোখ ফেরায়।
সবাই এবার যে যার পার্টনারের সাথে হালকা মিউজিকের তালে তালে নাচছে । উর্বী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না,তার ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।
উচ্ছাস আর অপেক্ষা করে না। একটা বাকা হাসি হেসে সে উঠে দাঁড়ায়। একটা গ্লাস হাতে উর্বীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরপায়ে। তার চোখে চশমা এবং মুখে মাস্ক।
উর্বী মিতা ভাবির সাথে কথা বলছে,”ভাবি আমি কিছু সময় নিড়িবিলি থাকতে পারি? আমার ভীষণ মাথাব্যথা করছে!”
_সেকি ! মাত্র তো পার্টি শুরু হলো।
_ভাবি শুধু ত্রিশ মিনিট!
উচ্ছাস ভিড়ের মধ্যে উর্বীর গা ঘেঁষে হেটে যাওয়ার সময় উর্বীকে ধাক্কা দিয়ে তার হাতের গ্লাসের শরবত টুকু উর্বীর গায়ে ফেলে দেয়।
_সরি ম্যাম সরি। আমি দেখতে পাইনি।
কন্ঠ যথাসাধ্য চাপিয়ে কথাটি বলে উচ্ছাস। রাওনাফ সেদিকে তাকায়।
উর্বী শাড়ি সামলাতে সামলাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে চোখের আড়াল হয়ে যায়। পার্টির ঘোলাটে লাইটিং-এর জন্য আশেপাশে তাকিয়ে কিছু ঠাহর করতে পারছে না সে।
রাওনাফ এসে বলে,”কি হয়েছে উর্বী? তোমার শাড়ীটা তো নষ্ট হয়ে গেলো!”
_একজনের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো। তার গ্লাস থেকে পরেছে।
কথাটি বলে উর্বী এদিক ওদিক তাকাতে থাকে।
_কি দেখছো?
_ জানেন লোকটাকে কেমন অদ্ভুত লাগলো, মুখে মাস্ক পরা।
_মুখে মাস্ক পরলেই অদ্ভুত! তার তো সর্দি কাশি থাকতে পারে। সেজন্য পরেছে।
_চশমা ছিলো! রাতেও সানগ্লাস!
_আই ইনফেকশন থাকতে পারে!
রাওনাফের কথায় উর্বী স্বস্তি পায়না। উর্বীর মন খুতখুত করছে।
লামিয়া বলে,”যাহ! হয়ে গেলো। আচ্ছা উর্বী যাও,তুমি শাড়ীটাও চেইঞ্জ করে এসো আর কিছুক্ষণ রেস্টও নিয়ে এসো। আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। আজ অনেক রাত অবধি জাগবো।”
উর্বী মাথা নাড়ায়।
পাশ থেকে মৌমিতা বলে ওঠে,
_ডাক্তারকে পাঠাবো সাথে? না মানে ওষুধ দিতে আরকি! তোমার না মাথা ব্যাথা করছে?
হাসতে হাসতে কথাটি বলে সে।
উর্বী আস্তে করে বলে,”তার দরকার নেই।”
***
উর্বীর মনে হচ্ছে কে যেনো তার পিছু নিয়েছে। রিসোর্টের সবাই পার্টিতে। পুরো দালান নিশ্চুপ হয়ে আছে। পার্টি হচ্ছে রিসোর্টের বাগানে। এখান থেকে খানিকটা দূরেই বলা যায়। উর্বীর বেশ ভয় ভয় করছে। তবু সে তার রুমের দিকে এগোয়। রুমে ঢুকেই দরজা লক করে দেয় উর্বী।
শাড়িটা পাল্টে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। একটু আরাম লাগছে এখন। দু’চোখ বন্ধ করে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে।
দুমিনিট পরে তার রুমের দরজায় কেউ ধাক্কা দিতে থাকে।
কে আসতে পারে! নিশ্চয়ই ভাবীরা রাওনাফকে ঠেলে ঠুলে পাঠিয়েছে। তাদেরও কাজ নেই কোনো।
উর্বী উঠে গিয়ে দরজা খোলে। দরজা খুলে সামনে তাকাতেই তার পুরো পৃথিবী ওলটপালট হতে শুরু করে, বুকের পাঁজর টনটন করে ওঠে। তার শরীর টা এতো কাপছে কেনো!
উচ্ছাস শীতল চোখে উর্বীর দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে রুমে প্রবেশ করেই উর্বীকে আগলে ধরেই দরজা লাগিয়ে দেয়। উর্বী কিছু বলতে পারছে না। সে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে শুধু। সে তার অনূভুতি বুঝতে পারছে না। তার শরীরে কি প্রান নেই!
উচ্ছাস উর্বীর দিকে তাকায়। উর্বী একটা কাঁপুনি দিয়ে ওঠে,ভেতর থেকে একটা গভীর নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসতেই দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে ওঠে,”মার্ডারার! রেপিস্ট!”
চলমান…..
[ ছোট্টো করে কিছু লিখে যান।
💝💔🖤🥹😂 👈👈 এইসব ইমোজি কোনো গঠনমূলক মন্তব্য না।
অআইঈউঊএঐওঔকখগঘঙচছজঞঞটঠডঢতথদধনপফবভমযরলশষসহড়ঢ়য়ৎ👈👈👈👈👈 স্বরবর্ন আর ব্যঞ্জনবর্ণ ব্যবহার করে ফটাফট একটা গঠন মূলক মন্তব্য করে ফেলুন। ]