#আমার_হৃদয়ে_সে,০৪,০৫,০৬
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৪
বাবার ওহেন ব্যবহারে আমি প্রায় স্তব্ধ এবং বাকরুদ্ধ!কষ্টটা বুকে একটু বেশিই দানার মতন বিঁধছে।কষ্ট হবে না কেন বলুন?বাবা তার নিজের মেয়েকে বিশ্বাস না করে বিশ্বাস করলেন একটা পরের ছেলেকে?বিশ্বাস যদি এতই হয় এরআগে অন্তত মেয়ের ত দোষগুণ একবার তার জাস্টিফাই করা উচিত ছিল!তিনি তা না ভেবে উল্টো আমাকেই দোষ দিলেন!চোখজোড়া ভিঁজে এলো আমার! আর যে সহ্য করতে পারছি না!কী করবো আমি?বা কী করা উচিত আমার এখন?ভাবনার মাঝে ওপাশের রুম ,অর্থাৎ বাবার রুম থেকে চিল্লাপাল্লার আওয়াজ শুনতে পাই।অবচেতন মস্তিষ্কটা ক্ষীণ করে ফেলি।বাবা উঁচু গলায় বলছেন,
“অভিকে আমি ছোট্টকাল থেকে চিনি।ওর স্বভাব-আচার-ব্যবহার আমি সব দেখেছি।ও কখনো ওরকম করতেই পারে না।তোমার মেয়ে ন্যাঁকা কান্না করছে সব!সব ন্যাঁকা কান্না!”
“তবে আমার মনে হয় তোমাকে অভির সাথে এই ব্যাপারে একবার কথা বলা উচিত!”
“কী কথা বলবো?কী কথা?কোনোকিছু হলে ত অভি আমাকে নিজেই সে কল করে বলতো।অভি তা বলে নি।ও যে এসব করছে তল্লাসি করে দেখো অভি হয়তো এসবের কিছুই জানে না।ও আমাদের কাছে এসে সুযোগ খুঁজছে মাত্র।মিথ্যে বাহানা ধরছে কীভাবে ভার্সিটিরওই বদমাশটার ছেলেটার আবার হাত ধরতে পারবে।”
“তারপরও কথা বলে দেখলে ভালো হত না…?”
বাবার আর কোনো কথা শুনতে পাইনি।মা হয়তো বাবার কাছে যেয়ে আমার ব্যাপারে কিছু বলেছেন তাই বাবা এতটা রেগে গেছেন!রেগে যাওয়াটা বাবার জন্যে স্বাভাবিক। কারণ বাবার চোখে ত অভি নামটাই হলো “একখানি হিরের টুকরো।”আমি এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়াই।কিছুই আর ভাল্লাগছে না।কোনো কিছুই না।
“পারিসা,দরজা খোল!”
তাকিয়ে মা দরজায় করাঘাত করছেন।আমি দরজা খুলার উদগ্রীব না করে উল্টো দৃষ্টিটা আগের মতন করে নিই।কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না আর।
“কি হলো পারিসা?দরজাটা খুলবি ত?”
এবার চোখমুখ খিঁচে আনি।বড় অসহ্যকর মুখে বলি,
“দরজা খুলবো কেন?”
“দরকার আছে!”
“কি দরকার?”
“আগে দরজাটা খুলবি ত?”
নিরস মুখ নিয়ে দরজা খুলে দিই।মা খাবার প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে।প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে,
“খাবারগুলো খেয়ে নে।”
কিছু বললাম না।মুখটা অন্যদিক করে ফেললাম।মাও আর বাড়াবাড়ি করলেন না।আমাকে পাশ কেঁটে ভেতরে ঢুকে প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে আবার চলে যান।মাকে চলে যাবার মুহূর্তে আমার খুব আঁটকাতে ইচ্ছে হয়।আটকিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকপ্রাণ উজাড় করে বলতে”মা,তোমরা আমাকে কেনো অবিশ্বাস করো?কেন বারবার বিয়ের হবার আগের দিনগুলোর মতন আজ আবার বলো ভার্সিটির ওই ছেলেটির সাথে আমার সম্পর্ক আছে!তোমাদের মেয়ে একটা বখাটের সাথে সম্পর্ক রাখবে এই তোমাদের মনে হলো?কেন মা তোমরা তোমাদের মেয়েকে চেনো না!?”বলতে পারলাম না।তারপর আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার দরজা বন্ধ করে বিছানার দিকে যাই।গুঁটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ি।খানিক্ষণ বাদেই ঘুম চলে আসে আমার।মাঝরাতে হঠাৎ আবার ঘুম ভেঙ্গে যায়!ঘুম ভাঙ্গার কারণ আমি খুব খারাপ একটা স্বপ্ন দেখি!স্বপ্নটা অভিকে নিয়েই!দেখি অভি স্বপ্নেও আমার গাঁয়ে হাত তুলেছে।আর রাগ রাগ গলায় বলছে,”তোমার সাথে আমি আর সংসার করতে পারবো না।চলে যাও এই বাসা থেকে!তোমাকে আমি ডিভোর্স দিব!”
ফুঁপরে কেঁদে উঠি আমি।কান্নাটা দুই মিনিটের মতন থাকে।তরপর মুখ চেপে কান্নার বেগ কমাই। নিজেকে বহু কষ্টে সংযত করে বালিশের কিনার হাতড়ে ফোনটা হাতে নিই।স্ক্রিনে তাকিয়ে সময় ৩ টা বেঁজে পঁচিশ মিনিট।খুব রাত।ঘুমাতে আবার চেষ্টা করি।কিন্তু চোখে আর ঘুম ধরা দেয়নি।সে ওই দুঃস্বপ্নের সাথে হারিয়ে যাই।পুরো রাতটা আমার নির্ঘুমেই কেঁটেছে।সকালে চারদিকে ফর্সা আলো পড়তেই আমি শোয়া থেকে উঠে বসি।মাথাটা খুব ভার ভার লাগছে।রাতে ভালোমতন ঘুম হয়নি তাই হয়তো মাথা ভারের কারণ।তাই তা নিয়ে বেশি আর মাথা না ঘামিয়ে সোঁজা বেলকনির দিকে হেঁটে যাই।সেখানে খানিক্ষন বসে থাকি।বসে থাকার কিছুক্ষণ পরই পূর্বাকাশে সূর্যি মামা উঁকি দেয়।তার সোনালী রোদে গাছের পাতা,ডাল,দালানকোঠা,মাঠঘাট সব ঝলমল করে উঠে।সেদিকে গভীর মনোযাগ নিয়ে তাকিয়ে থাকি।তাকিয়ে থাকার মাঝেই কেনজানি মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়।সাথে মাথা ভারটা কেঁটে যায়।প্রকৃতির আসলেই অসীম শক্তি যে অল্পক্ষণেই তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে মনখারাপের মানুষ গুলোর মনকেও ভালো করে দিতে পারে।এমন সময় আবারো দরজায় মার করাঘাত।
“পারিসা?পারিসা?”
গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
“তোমার বাবা তোমার সাথে কথা বলতে চায়।যাও গিয়ে কথা বলে আসো।তোমার বাবা আবার অফিসে চলে যাবেন।”
মার কথা বাধ্য মেয়ের মতন মেনে বাবার রুমে যাই।দেখি বাবা পত্রিকা পড়ছেন।পত্রিকার দিকে দৃষ্টি রেখেই বলেন,
“চেয়ারে বসো।কথা আছে তোমার সাথে।”
আমি চেয়ারে বসলাম।এবার উনি পত্রিাকাটা বন্ধ করে চশমা টা খুলে পাশে রাখলেন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“দেখো তুমি একজন মেয়ে!মেয়ে মানুষদের প্রধান গুণ কি জানো?”
একথার পিঠে সরাসরি বাবার চোখের দিকে তাকালাম।চোখের ভাবান্তরে বুঝালাম, “জানি না।” বাবা বললেন,
“মানিয়ে নেওয়া!বিয়ের পর মেয়েদের প্রধান হয়ে ওঠে তার স্বামী এবং সংসার!সে যদি বিয়ের পর তাতে না মানিয়ে নিতে পারে তাহলে সে কোনো সাংসারিক জীবনটা সুন্দরভাবে উপভোগ করতে পারে না।দেখো বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয়।বিয়েটা একটা বন্ধন।বন্ধনটা যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে সেটার সাফার মেয়েটি পরে নিজেই ভোগ করে।মানলাম তুমি বিয়ের আগে সব করেছে,দশটা বিশটা ছেলের সাথে প্রেম করেছো অন্তত বিয়ের পরতো একটু ভালো হবার চেষ্টা করো!?কারণ তোমাকে ভাবতে হবে বিয়ের পর ওসব অন্যায়!পাপ!”
বাবার কথাগুলো শুনে কেনজানি মনের অজান্তে খুব হাসি পেয়ে গেল।হাসিটা আবার ঠোঁটের কোণে চাপিয়ে নিয়ে চট করে এবার বলে উঠলাম,
“বাবা আমি আমার এই চব্বিশ বছর জীবনে প্রেমের প্র টুকু বুঝি নি!আর সংসার এবং স্বামী?সে ত বিয়ের পর থেকেই মানিয়ে আসার চেষ্টা করেছি!কিন্তু লাভ জিরো তে জিরো!”
“মিথ্যে কথা বলতেছো তুমি!”
“আমি কেনো মিথ্যে বলবো বাবা?আমি কি কোনোদিন আপনার সাথে মিথ্যে বলেছি,বাবা? ”
“হ্যাঁ বলেছো।তুমি ভার্সিটি পড়াকালীন ওই হ্যাংলা ছেলেটার সাথে প্রেম করেও আমাকে মিথ্যে বলেছো।এবং এখনো মিথ্যে বলতেছো!”
“বাবা আমি কখনোই মিথ্যে বলি নি এবং এখনো বলছি না! এসব শুধুই আপনার সন্দেহ ছাড়া আর কিছুই না বাবা। আর আপনি অভিকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করে সবথেকে বড় ভুল করছেন!অভিকে আমি চিনি বাবা।কারণ ওর সাথে আমার সাংসারিক জীবনের আঁটমাস চলছে।”
“তুমি ওকে আঁটমাস ধরে চিনো।আর আমি ওকে ছোট্টকাল থেকে চিনি !”
“কাউকে দূর থেকে চেনা এবং কাউকে খুব কাছ থেকে চেনার মাঝে আকাশসম তফাৎ ।দূর থেকে কাউকে ভালো দেখালেও দেখা যায় ভেতরটা তার তিক্ততা!”
“তুমি আসতে পারো এবার!”
বলে বাবা আবার পত্রিকা হাতে নেন।বুঝলাম বাবা আর আমার কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।আমি চুপ হয়ে যাই।আর নিশ্চুপ মুখে কয়েক সেকেন্ডস বসে থেকে বাবার দিকে তাকিয়ে থাকি।বসা থাকার সময়টা একটু বেশিই মনে হতে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যাই।পেছন ঘুরতে নিলে বাবা পেছন থেকে বাবা বলে উঠেন,
“অভির সাথে আমি কথা বলবো।দেখবো কার ভুল কার ভুল নয়! যদি তোমার ভুল দেখি তাহলে তোমার সাথে আমার বোঝাপড়া আছে!কঠিনভাবে বোঝাপড়া আছে!”
বাবার কথার জবাব দিলাম না।নিশ্চুপ মুখেই চলে এলাম।তবে বাবার এটা দেখে কিছুটা ভাল্লাগলো বাবা এবার আর অভিদের বাসায় ফিরে যেতে আমাকে কিছু বললেন না।আমি মনে মনে সে ভয়টাই করেছিলাম।যাইহোক ভয়টা এখন কিছুটা কমেছে।
৭.
সন্ধে আটটার নাগাদ অভি আমাদের বাসায় আসে।অভিকে বাবাই আসতে বলেছেন তাই অভি এসেছে।এখন অভি ডাইনিং এ আমার মা-বাবার সাথে বসে আছে।আমি কানদুটো ক্ষীণ করে দরজার সাথে লেপ্টে আছি।উদ্দেশ্য আমার মা-বাবা এবং অভির সাথে কি কথা হচ্ছে তা শুনতে।
“অভি, তোমাকে এখানে ডাকার কারণ নিশ্চয়ই তুমি এতক্ষণে অবগত হয়েছো,রাইট?”
“জ্বী!”
“তাহলে বলো ত তোমাদের দুজনের মাঝে কি এমন হয়েছিলো যে আমার মেয়ে তোমাদের বাসা থেকে চলে এসেছে?এবং এসে বলছে তোমার সাথে আর সংসার করবে না?কেনো করতে চায় না সে?আমাকে কি কারণটা বলবে?”
কয়েক সেকেন্ডস অভির থেকে নিরবতা শুনতে পাই।তারপর সে হাঁক ছেড়ে বলে উঠে,
“সে যদি চায় আমার সাথে সংসার করবে না।তাহলে কারো ইচ্ছের উপর হস্তক্ষেপ করার আমার অধিকার নেই!”
অভি এ কেমন কথা বললো ?আমার ইচ্ছাতেই ডিভোর্স?আমার ইচ্ছের উপর তার হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই!?কিন্তু এসবটারই একমাত্র কারণ যে সে তার জবাব কে দেবে?কে দেবে?না চাইতেও এবার জোরে একটা অস্ফুট আর্তনাদ করে উঠি।আর্তনাদের বেগ এতটাই তীব্র ছিল দেয়াল টপকে বেগটা ওপাশে গিয়ে ছিটকে পড়লো!
চলবে…..
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৫
কান্নার বেগ শুনার পর ওপাশে নিরবতা বয়ে যায়।তবে নিরবতাটা বেশিক্ষণ থাকেনি।নিরবতার গুমোট ভাঙ্গে মার কন্ঠস্বরে।অত্যন্ত শান্ত স্বরে মা বলেন,
“অভি?সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে হালকাপাতলা ঝাঁমেলা হয়ই। দুজনে যদি চায় ঝামেলাটা আবার মিটমাটও করা যায়।স্ত্রী রেগেছে স্বামীর উপর আবার স্বামীও রেগে উঠেছে স্ত্রীর উপর এরকম দুজন দুই মেরুর হলে সংসার করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।অন্তত একজন উগ্র হলে আরেকজনকে শান্ত থাকা উচিত।ঝামেলা টা এতে বাড়ে না।দ্যাখো?তোমাদের বিয়ে হয়েছে মাত্র আঁটমাস!আঁটমাস তেমন বেশি সময় নয়।এই সময়ে দুজন দুজনকে বুঝে ওঠা আসলেই সময়সাপেক্ষীয় ব্যাপার।তাই তারজন্যে একটু সময় প্রয়োজন।তোমরা চাইলে আরেকটু সময় নাও।এভাবে হুটহাট রেগে বসে কোনো ডিসিশন নেওয়া আমার দৃষ্টিতে উচিত না।ভুলত্রুটি দুজনের মাঝেই থাকে।সেই ভুলত্রুটি টুকু নিজেদের মাঝে বোঝাপড়া করা উচিত অন্তত।”
অভি চুপ থাকে।বাবা পাশ থেকে বলেন,
“তোমার শাশুড়ী মা ঠিক বলেছেন অভি।”
“আচ্ছা,আমি পারিসাকে কি এখানে ডাকবো?তোমরা দুজন কথা বলে দেখো।”
অভি এবার বড় করে একটা শ্বাস ছাড়ে!শ্বাসটার মাঝে প্রচন্ড ক্ষীপ্রতা জুড়ে আছে তা আমি গভীর অনুভূতি দিয়ে অনুভব করতে পেরেছি।অভি বলে উঠে,
“ডাকতে হবে না আমিই ওর সাথে গিয়ে কথা বলছি।”
বলে অভি সম্ভবত বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।আমি তরহর করে চোখের পানি মুছে দরজার থেকে ছিটকে অন্যপাশে এসে দাঁড়াই।অভি ভেতরে ঢোকে।আমার দিকে খানিক্ষন ক্ষিণ চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,
“তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিল!”
আমি এবার অভির মুখশ্রীতে তাকাই।বলি,
“বলেন?”
“তুমি ডিভোর্স চেয়েছিলে না?আমি ডিভোর্স দিতে রাজি আছি।”
আমার চোখজোড়া ক্রমান্বয়ে তীক্ষ্ণ হয়ে আসে।অভি বলে,
“এতদিন তোমার সাথে আমার যা হলো,যা ঘটলো এসবের কারণ আজ তোমাকে আমি সরাসরি বলে দিচ্ছি।তোমার রিয়াজ নামের কোনো ছেলের সাথে রিলেশন ছিল,তাই না?”
“কি!”
“শুধু রিলেশন বললেও ভুল হবে।আরো গভীর রিলেশন ছিল!
“কী বলছেন এসব আপনি…!”
“আগে আমি কথা বলা শেষ করি…!তুমি ওর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করে তারপর আমার সাথে বিয়ের পীড়িতে বসলে!তো বিয়ের পীড়িতে বসার আগে আমার দিকটা একবারও ভাবা উচিত ছিল না যে যার সাথে বিয়েটা করছি তার জীবনটা এভাবে শেষ করে দেওয়াটা কি ঠিক?আমিতো তোমার মতন এরকম কাউকে চাই নি!বিয়ের রাতে বাসর ঘরে ঢোকার আগে আমার মাথাটাই পুরো নষ্ট করে দিলে রিয়াজ!আমার কপালটা এতটাই খারাপ যে আমি একটা ভার্জিন মেয়ে পাই নি!”
ভীষণ আত্মসম্মানে লাগলো আমার।তাও মিথ্যে কিছু নিয়ে!এবার আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।বললাম,
” আপনি না বুঝে না শুনে আমার নামে সব মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছেন অভি!রিয়াজের সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক ছিল না।”
“আমি জানতাম তুমি সব মিথ্যে বলবে।তুমি এসব করেও হেরে যাবে।এইজন্যে তোমার সাথে আজ পর্যন্ত আমি এই বিষয় নিয়ে কথা তুলি নি!আমি জানতাম তুমি কখনোই সত্যটা আমাকে বলবে না!”
অভি এ কারণে আমাকে এতটা মাস তার স্ত্রীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে!জাস্ট এটুকু কারণে?অবাক!চরম রকমের অবাক।মাথাটা শূন্য হয়ে আসে আমার!বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠে!সাথে গলাটাও।এবার বুঝি আমি জোরে কেঁদে উঠবো!এমন সময় অভি তার ফোনটা আমার দিকে তাঁক করে।বলে,
“লুক!”
ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাঁকালাম।রিয়াজ ভাইয়ার পাশে বসা আমি।সে আমাকে নিয়ে সেলফি তুলেছে।অভি বললো,
“এটা তোমাদের ঘুরতে যাওয়া অবস্থায় তোলা,রাইট?”
আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে।ঘুরতে যাওয়াটা ত জাস্ট একটু রিকুয়েষ্ট ছিল রিয়াজ ভাইয়ার।
“এটা আসলে উনার অনেক রিকুয়েষ্টের পর।”
“তাহলে একসাথে ঘুরতে যাওয়াটাও অন্যকিছু ছিলো?”
চুপসে যাই।সেটা আসলে কীভাবে যেন হয়ে যায়।আমি তখন রিয়াজ ভাইয়ার প্রতি একটু আবেগে পড়ি।আবেগটা অবশ্যি জোঁকের বসেই ছিল।এছাড়া আর কিছুই না।
“কি হলো বলো?”
“আসলে..?”
” বলতে পারবে না তাই তো?জানি বলতে পারবে না।
আমার কোনো আফসোস ছিল না!আমার আফসোস শুধু একটাই যে তুমি একটা ভদ্র ঘরের মেয়ে হয়ে কীভাবে পারলে ওই ভার্সিটির আস্ত বড় একটা সিনিয়র গুন্ডার প্রেমে পড়তে।তাও যেই ছেলে ডেইলি আঁটটা দশটা মেয়ের সাথে রুমডেটও করে।আর তুমিও
শেষপর্যন্ত সেসব মেয়েদের মতন..ছিঃ!আই হাস্ট হেইট দিস।আমার কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।তোমার মা বললেন তোমার সাথে ভুলগুলো মিটমাট করতে।আমি জানি না কীভাবে মিটমাট করা উচিত।সম্ভবত আর কখনো মিটমাট হবেও না!”
বলে অভি দম ছাড়ে ।খুব শব্দ করে দম ছাড়ে।অভির মুখ দিয়েও আমার মতন এখন আর কথা আসছে না।সে এদিকওদিক তাকায়।তারপর নিজেকে বহু কষ্টে সংযত করে বলে,
“আসছি!”
বলে অভি তরতর করে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।অভি চলে যাওয়া মাত্রই আমার বাবা রুমে ঢুকলো।বাবার পেছন পেছন মাও!বাবা এসেই আমার গালে খুব জোরে দুটা চড় বসিয়ে দিলো!ঝাঁঝ গলায় বলে উঠলো,
“হলো ত আমার সন্দেহ সত্যি?হলো?বিয়ের আগে এতসব আমার লজ্জায় মাথা হেইট হয়ে আসছে!ছিঃ! আমার মানসম্মান আর রাখলো না!আমার বন্ধুর কাছে,অভির কাছে,অভির মার কাছে!ওকে বলো এখান থেকে চলে যেতে পারুল।যেদিকে চোখ যায় সেদিকে বলো চলে যেতে!ওর মুখ দেখতে চাই না আমি!”
আমি বরাবরের মতন এবারও চুপচাপ।বাবাকে জবাব দিতে পারি নি!বলতে পারি নি বাবা অভির সবকথা ঠিক নয়।রিয়াজ ভাইয়া অভিকে যা বললো সব বেশিভাগই বানোয়াট কথা!বাবা চলে গেলো।মা আর গেলো না।মা ঠায় সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকলো।মা বললো,
“অভি যা বললো সব কি ঠিক?”
আমি এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি।মাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে বলি,
“মা আমি ওরকম কিছুই করি নি।মা তোমাকে একদিন বললাম না?রিয়াজ নামের একটা ছেলে আমাকে খুব ডিস্টার্ব করে?তার সাথে সম্পর্ক করিনি বিধায় সে আমার সংসারে এরকম আগুন লাগালো। সে ইচ্ছে করে ই এরকম করলো মা।আমি ওই রকম বখাটের সাথে কেন সম্পর্ক করবো,বলো?”
“টেনশন করিস না।আমি দেখি কি হয়!তবে ওই যে ছবি এবং তোর ঘুরতে যাওয়া?”
আমি এবার মার বুক থেকে মাথা তুলে চোখের পানি মুছে বলি,
“মা তাহলে শুনো এবার?কি থেকে কি হলো?”
ফ্ল্যাশব্যাক…
সেদিন ছিল আমাদের তৃতীয় বর্ষের লাস্ট সেমিস্টার পরিক্ষা।আমি এবং মমি এক্সাম দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হলাম।মমি আমাকে বিদেয় দিয়ে রিক্সায় চড়ে চলে গেল।আর আমি রিক্সার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকলাম।কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর এমন সময়,
“এক্সকিউজ মি,আপু?”
আমি পাশে ফিরে তাকালাম।দেখলাম একটা চিকন,লম্বা ছেলে এসে আমাকেই সম্বোধন করছে।আমি ছেলেটিকে বললাম,
“কিছু বলবেন?”
ছেলেটি আমার দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই এডমিট কার্ডটা কি আপনার?”
আমি চট করে এডমিট কার্ডের দিকে তাকালাম।এডমিট কার্ডের উপর আমার ছবি এবং নাম।আমি বললাম,
“হ্যাঁ আমার।আমার এডমিট কার্ড কি তাহলে পড়ে গেছে?”
বলে আমার ফাইল হাতরালাম।ফাইলে কোনো এডমিট কার্ড পাইনি।তাহলে এটাই আমার।বললাম,
“কোথায় পেয়েছেন এডমিটটা?”
“এডমিটটা আমি সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের সামনে পড়ে থাকতে দেখলাম।ছবি দেখে আপনাকে চিনতে পারলাম না।পরে কয়েকজনকে দেখালাম।তাদের মধ্যে একজন আপনাকে চেনতে পারলো।সে বললো আপনি এদিলে চলে এলেন।আমিও এদিকে আসলাম।দেখাহয়ে গেলো আপনার সাথে।যাক এডমিটটা দিতে পারলাম।”
“আসলে আমিও বুঝতে পারি নি আমার এডমিটটা কখন পড়েছে।থ্যাংকু ইউ সো মাচ আপনাকে!এতবড় বিপদ থেকে বাঁচালেন।এডমিটটা যদি হারিয়ে যেত তাহলে আমার আর এক্সাম ই দেওয়া হতো না।অনেক থ্যাংকস!”
“থ্যাংকস দেওয়া লাগবে না।মানুষ মানুষদের জন্যে ত কিছু করতেই পারে, তাই না?”
“নাম কি আপনার?”
“জ্বী আমার নাম রিয়াজ।আপনার?”
“আমার নাম পারিসা। ”
“শুধুই পারিসা?”
“জ্বী!”
“কিউট নেইম।”
“থ্যাংকস।”
“কিসে পড়েন আপনি?”
“জ্বী আমি এবার তৃতীয় বর্ষের লাস্ট সেমিস্টার এক্সাম দিচ্ছি।আপনি?”
“ওহ তাহলে ত তুমি আমার জুনিয়র!আমি চতুর্থ বর্ষে এবার।সমাজবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট!”
“আচ্ছা ভাইয়া!”
চলবে..
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৬(বোনাস পর্ব)
তারপর থেকে উনার সাথে ক্যাম্পাসে এলে আমার প্রায়ই দেখা হত।দেখা হলেই উনি আমাকে দেখে হেসে দিতেন।আমিও তাতে তাল মিলিয়ে হেসে দিতাম।তবে তেমন বেশি কথা বলতাম।মানে উনি আমাকে হালকা চেনেন এবং আমি উনাকে চিনি এরকম সম্পর্ক আর কি। তারপর একদিন আমার ভার্সিটি ছুটি হলে আমি রিক্সার জন্যে রাস্তার পাশে এসে দাঁড়াই।অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন কোনো রিক্সা চোখে পড়ে নি তখন খুব বিরক্ত লেগে যায়।এমনিতেই আজ অনেকগুলো ক্লাস হয়েছে তারউপর আবার বাসায় পৌঁছাতে লেট হচ্ছে।ভাবনার মাঝে এমন সময় রিয়াজ ভাইয়া উনার বাইক নিয়ে আমার সামনে থামেন।বলেন,
“কি পারিসা?রিক্সা পাচ্ছা না?”
আমি সাবলীলভাবেই জবাব দিই,
“জ্বী,ভাইয়া।”
উনি তখন উনার বামহাতে থাকা ঘড়িটার দিকপ তাকান।তাকিয়ে খুব চিন্তিত গলায় বলেন,
“এভাবে আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে!একটা কাজ করো তুমি আমার বাইকে চড়ো আমি তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেব।”
“নাহ ভাইয়া তার প্রয়োজন নেই।আমি নিজেই যেতে পারবো।”
“রিক্সা ত পাচ্ছ না।যাবে কীভাবে?”
“আরেকটু দাঁড়াও পেয়ে যাবে।”
“তোমার ইচ্ছে।”
বলে উনি উনার বাইকটা একপাশে ব্রেক করে রাখেন।তা দেখে আমি বললাম,
“ভাইয়া আপনি যাবেন না?”
“যাবো।আগে তুমি রিক্সা পাও।যদি রিক্সা না পাও তাহলে ত..! ”
বাকিটা বললেন না আর।অবশ্যি আমি বুঝে ফেললাম রিক্সা না পেলে উনি তখন আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবেন।আমার খুব হাসি পেয়ে যায়।হাসিটা উনি আমার দেখে পেলেন।উনিও হেসে দেন।উনার কথাই হলো। পরবর্তীতে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরও রিক্সা পাই নি।তারপর বাধ্য হয়ে উনার রিক্সায় উঠি।উঠামাত্রই উনি আমাকে একটা কথা বলেন,
“আজকের পরিবেশ টা খুব সুন্দর,না?”
আমি চারপাশে তাকিয়ে বলি,
“জ্বী।”
“আজকে ঘুরতেও হেব্বি হবে।”
“ওহ।তো ঘুরতে যাবেন আজকে?”
“যেতাম।কিন্তু ঘুরার মতন তেমন কাউকে পাই নি ত তাই ঘুরতে পারছি না।”
“আপনার বন্ধুবান্ধব নাই?”
“আছে।তবে সবাই সবার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বিজি।গার্লফ্রেন্ড নিয়েই ওদের ঘুরতে ঘুরতে সময় যায়। বন্ধুদের নিয়ে আর কখন।”
বলে হাসার চেষ্টা করেন।আমি হাসলাম।তারপর উনি বলেন,
“তোমার ঘুরতে কেমন লাগে?”
“বেশ ভালো।”
“কাদের সাথে বেশি ঘুরতে পছন্দ করো?”
“বান্ধবীদের সাথে।”
“বয়ফ্রেন্ড নেই তোমার?”
তখন উনার কথায় আমি খুব লজ্জা পেয়ে যাই।আমি যে লজ্জা পেয়েছি উনি বুঝে পেলেন।
“আরেহ লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।বলো?বলো?”
“নাহ!”
“গ্রেটস!বফ না থাকাই ভালো।এসব থাকা মানেই প্যারা।রাইট?”
আমি মাথা নাড়ি।তারপর উনি লম্বা একটা হাঁক ছেড়ে বলেন,
“আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে?”
“জ্বী?”
“ভাবলাম বালুনদীতে যাবো।কিন্তু যাওয়ার মতন সাথে তেমন কেউ আমার নেই।যদি তুমি যেতে আই মিন ভাই হিসেবে?”
“নাহ ভাইয়া,নাহ।আমি আসলে কারো সাথে ঘুরতে যাই না।”
“কিছু হবে না।কাছেই বালুনদী।বেশিক্ষণ লাগবে না যেতে।কয়েক মিনিটস থাকবো তারপর আমরা আবার চলে আসবো।”
“ভাইয়া আসলে আমার বাসায় শুনলে সমস্যা আছে।”
“আরে কিছু হবে না।ওটা আমিই ম্যানেজ করবো।ওকে?”
“ভাইয়া থামুন,থামুন।”
“বাসার সামনে ত এখনে আসি নি।”
“নাহ ভাইয়া।আরে কাছে গেলে প্রবলেম আছে।কারণ ওদিকে সব পরিচিত মানুষ।”
“আচ্ছা বুঝলাম, বুঝলাম।আমাকে তোমার সাথে দেখলে মাইন্ড করবে তাইতো?মাইন্ড করলে সোঁজা বলবা আমার বয়ফ্রেন্ড না।আমার সিনিয়র ভাই।”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে উপরের ঠোঁট কামড়ে ধরি।লজ্জা পেয়েছি ভীষণ।
“আচ্ছা আসি পারিসা।মজা করলাম কিছু মনে করো না।জানি এখনকার মানুষ খুব মাইন্ডফুলী।”
তারপর তিনি চলে যান।আমি বাসায় আসার পর অনেকক্ষণ ভাবতে থাকি উনার আবদারটা একসেপ্ট করবো নাকি রিজেক্ট করবো।তবে মনটা বার বার বাড়াবাড়ি করছে একসেপ্ট করতে।মনটা বড্ড বেহালা!কোনোকিছু মানে না।কেন মানে না জানি না।তবে বারবার এটাই মনে হলো উনার সাথে কথা বলে খুব ভালো লাগলো।উনি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারেন এবং খুব মিশুকও।মাইন্ড টাইন্ড উনার মাঝে নাই।পরদিন ভার্সিটিতে যাওয়ামাত্রই উনি কোথাও থেকে আবার আমার পাশে এসে দাঁড়ান।বলেন,
“কি ডিসিশন নিয়েছো, পারিসা?”
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যাই।কাঁপা কাঁপা গলায় বলি,
“আসলে ভাইয়া..!”
“নো আসলে আসলে..।উত্তর ইয়েস/নো।”
খানিক্ষণ চুপ করে থাকি।সেই সময়ের জন্যে কেনজানি ভীষণ আবেগে পড়ে যাই।সামনের পিছনের কোনেকিছু আর ভাবি নি।চট করে বলে ফেলি,
“ইয়েস।”
উনি রাশভারী হাসি দেন।তারপর দিনই আমরা বালুনদীতে যাই।চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখি।প্রচন্ড বাতাস।বালুপানির খেই খেই ঢেউ।দারুন একটা পরিবেশ।উনি এমন সময় এসে বলেন,
“পারিসা,চলো?আমরা ওই জায়গাটায় গিয়ে বসি।”
বসলাম।তারপর উনি উনার ফোনটা বের করে বলেন,
“এমন সুন্দর একটা জায়গায় আসলাম।যদি সেলফি না তুলি কেমন দেখায় বলো ত?একটু ক্যামেরার দিকে তাকাও?একটা সেলফি তোলা হোক আমাদের?”
আমি এবারও অবুঝের মতন তাতে সায় দিলাম।অনেকগুলো সেলফি তুললো আমার।তারপর সাদামন নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম।বরাবরের মতন পরের দিন ভার্সিটিতে গেলাম।যাওয়া মাত্রই আমার ফ্রেন্ড মমি আমার ডান হাতটা টান মেরে আমাকে একপাশে এনে দাঁড় করিয়ে বলে,
“কী দেখতেছি এসব?”
“ক-কি!”
“কি?”
“তুই কাল ভার্সিটির সবগুলো ক্লাস না করে কোথায় গিয়েছিলি?”
আমি মমিকে সত্যটা বলতে পারলাম না।মমি কীভাবে যেন সত্যটা বের করে নিল,
“ওই রিয়াজ নামের ওই ভাইটার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি,না?”
“তুই কীভাবে জানিস?”
“দেখেছি আমি।তখন আমি ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিং দাঁড়িয়ে দেখেছিোম।ঘুরতে গিয়েছিস ভালে কথা!যার সাথে গিয়েছিস উনাকে তুই ভালো করে চিনিস?”
“ক-কে উনি?”
“হায়রে বলদ!এটা আমি গতকাল দেখেই বুঝতে পেরেছি তুই উনাকে চিনিস না তাই উনার সাথে হাঁটাচল করতেছিস।নাহলে কখনোই করতিস না!”
“উ-উনি ক-কে?”
“আব্রাহাম রিজভী রিয়াজ নামটা ত শুনেছিস,না?”
“হ্যাঁ!”
“উনিই সেই আব্রাহাম রিজভী রিয়াজ ভাইয়া!”
মমির কথা শুনামাত্রই আমি মুখে হাত দিয়ে মাটিতে ধপাস করে বসে পড়লাম।হতাশ জনিত কন্ঠে বলে উঠলাম,
“মমি গো, এটা আমি কি করলাম!উনার নাম অনেকের কাছে শুনেছিলাম উনি নাকি খুব বখাটে টাইপের!মেয়েদের নাকি র্যাগিং দেন!”
“হ্যাঁ!”
“এখন?এখন কি হবে?আমি যদি উনাকে আগে দেখতাম।আমি উনার নাম শুনেছি কতবার কিন্তু উনাকে কখনো দেখি নি!”
বলে আবারো ব্যথাতুর শব্দ করে উঠলাম।মমি বলে,
“এই তোদের মতন অতিরিক্ত ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করার মেয়ে গুলাই সবথেকে বেশি ফাঁদে পড়ে!”
“তো তুই কি বলতে চাচ্ছিস অভদ্র হয়ে থাকতে?”
“অভদ্র নারে ভাই।ভদ্র তবে গরজিয়াস ওরকম টাইপ।মানে চারপাশে চোখ-কান খোলা রাখার কথা বলেছি,শুধু বাসা এবং ক্লাসরুম না!”
“হয়েছে। ভুল ত করেই ফেললাম।এখন সমাধান কি ওটা বল!”
“সমাধান আর কি!সরাসরি বলে দিবি ছেলেদের সাথে কথা বললে আমার বাবা আমাকে ভার্সিটি আসা বন্ধ করে দিবে।তাই দয়া করে প্লিজ ভাইয়া আমার কথাটুকু অন্তত ভেবে আমার থেকে দূরত্বতা বজায় রাখার চেষ্টা করবেন।নাহলে আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে!আর যদি মিষ্টি করে বলার পরও ব্যাটা না মানে তাহলে সরাসরি ইগনোর।ক্লিয়ার?”
“হুম।”
মমির কথামতো রিয়াজ ভাইয়াকে ভালোমতন বলার পরও৷ লাভ তেমন হয়নি।উনি উল্টো আমার সাথে আরো বেশি কথা বলার চেষ্টা করতে থাকেন।ভার্সিটিতে গেলে আমার পথ আগলানোর চেষ্টা করেন।ক্যান্টিনে বসলে আমার সামনে এসে বসেন।বাসায় গেলে আমার পেছনে পেছনে ছুটেন।একদিন তো বাবা উনাকে আমাদের বাসার সামনে দেখে ফেললেন।উনাকে দেখার পর সেই থেকে বাবার মনে উনাকে নিয়ে আমার উপর সন্দেহের দানা বাঁধতে থাকে।আমি আর পারলাম না চুপ থাকতে।এবার সরাসরি উনাকে বারণ করে দিলাম।
“দেখুন,আপনি এভাবে আমার পেছন পেছন আসতে পারেন না!রাস্তার লোকে কি বলে?ভার্সিটির স্টুডেন্টরা কি বলে?ইভেন আমার বাবাও আপনাকে দেখে ফেলেছে!আপনি জানেন আপনি এভাবে আমার পেছনে আসেন আমি কতটা রিস্কিতে আছি!?”
“দ্যাখো,কে কি ভাবে,কি বলে আমি ওসন ভাবি না।তুমি আমাকে একটু বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ?আমি সেদিনের ঘুরার পর থেকে তোমাকে প্রচন্ড ভালোবেসে ফেলেছি!”
“আমাকে ভালোবাসেন নাকি আমার শরীরকে!”
“মানে?”
“আপনি কি ভেবেছেন আপনাকে আমি চিনি না?আপনাকে খুব ভালো করেই চিনি!আপনি যেমন গুন্ডা,তেমন বখাটে।কোনো মেয়ে আপনার সাথে প্রেম করবে না!”
“আমার সাথে প্রেম করবে না? ”
“নাহ!”
“সত্যিই করবে না?”
“আপনি কি জোর করছেন?”
“ওকে।ভালো থেকো!”
বলে চলে গেলেন উনি।বাসায় আসার পর আমি খুব ভয়ে পেয়ে যাই!কারণ উনার সাথে আমি যে সেলফি তুলেছি সেগুলো যদি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়?তাহলে আমার সব শেষ!উফস,এসব আমি কি করলাম?কিছু বলার আগে কেনো ছবিগুলোর কথা একবারও ভাবলাম না!এখন?ভাবতে ভাবতে পুরোটা রাত আফসোস করি!সে রাতে আর ঘুম হয়নি।দিনে আমি হন্তদন্ত হয়ে উনার নাম্বারে কল দিই।বাট নাম্বার অফ পাই।সেই থেকে আর কোনোদিন নাম্বারটা অন পাইনি।ভার্সিটিতেও উনাকে দেখি নি।আর ভার্সিটিতে না থাকারই কথা।যখন উনার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় তখন উনার গ্রাজুয়েশন ফাইনাল এক্সাম চলে!
বর্তমান…..
“সেদিনের সেই ভয়টা আজ সত্যিই হয়ে গেল মা।”
বলে মার দিকে ভেঁজা চোখে তাকাই।মার মুখটাও ভীষণ রকম মলীন হয়ে যায়!আমার পিঠ চাপড়ে বলেন,
“টেনশন নিবি না পারিসা।আমি তোর বাবাস সাথে কথা বলে দেখি!”
একটা তাচ্ছিল্যকর হাসি দিয়ে বললাম,
“বাবাকে আর কি বলবে,মা?বাবা আমাকে আগেও বিশ্বাস করেনি এবং এখনো করবে না।বাদ দাও।”
“মানুষ ত না বুঝে অনেক কিছুই বলে মা।তোর বাবা বুঝতে পারে নি তাই হয়তো…।”
মাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দিলাম না।হাত দিয়ে থামিয়ে দিলাম।মা চুপ হয়ে যান।আমিও চুপ থাকি কিছুক্ষণ।নিশ্চুপতার গুমোট ভেঙ্গে মা পরক্ষণে বলে উঠেন,
“তো এখন কি করবি?অভিকে গিয়ে সব বিস্তারিত বলবি?”
“বলতে ত অবশ্যই হবে।আমি চাই না কারো চোখে দুশ্চরিত্রা এবং খারাপ হয়ে থাকতে।”
মা আমার এ’কথা শুনামাত্রই মার চোখজোড়া চকচক করে উঠে।অধীর কন্ঠে বলেন,
“হ্যাঁ রে মা হ্যাঁ।এটাই করিস।আমি চাই তোদের ভুল বুঝাবুঝিটা নিজেদের মাঝে সংশোধন করে সুন্দর মতন আবার সংসারটা শুরু কর।”
“এতকিছুর হবার পরও তুমি বলছো অভির ঘরে আমি যেতে?”
চলবে….