আঠারো_বছর_বয়স পর্ব-১৯
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
লম্বা লম্বা পা ফেলে এগিয়ে আসা লোকটা আর কেউ নয়, বিভোর ছিলো। ওর এমন রুক্ষমূর্তি দেখে রুহি কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। বিভোর ওর একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। রাস্তাঘাট তখন খালি থাকলেও রুহির কেমন অস্বস্তি লাগছিলো। সে সরে দাঁড়ালো। বিভোরের কন্ঠ আকাশ কালো করা মেঘের গর্জন যেন। চিৎকার করে বলল,
‘সরে দাঁড়াচ্ছো কেন?’
রুহি গলা নামিয়ে বলল,
‘চিৎকার করছেন কেন অভদ্রের মতো?’
বিভোর গা জ্বালানো একটা হাসি দিয়ে বলল,
‘আমি অভদ্র? হ্যাঁ, ঠিক বলেছো।’
রুহি অবাক হয়ে বলল,
‘মানে?’
‘এতোদিন অনেক ছাড় দিয়েছি বলে বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে তোমার।’
‘বাজে কথা বলবেন না।’
‘কেন বলবো না? আর এটা বাজে কথা কীভাবে হলো?’
‘আপনার সাথে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই।’
বলেই হাঁটা ধরলো ফুটপাত ধরে। আশ্চর্য, আজ একটা রিকশাও নেই। রুহির বিরক্ত লাগছে। আবার মনটাও খচখচ করছে। বিভোরের সাথে এতোদিন পরে দেখা, আর সে কিনা রাস্তায়ই উল্টোপাল্টা বকবক শুরু করেছে। হঠাৎই পেছন থেকে ওর হাত টেনে ধরলো বিভোর। একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। রুহির দম বন্ধ হয়ে আসছে। নিঃশ্বাস নেওয়ার ফুরসত পাচ্ছেনা। বিভোরের গায়ের কড়া পারফিউমের গন্ধে মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। এতোটা অসভ্য ব্যবহার কেন করছে ডাক্তারবাবু? রোগীদের চিকিৎসা করাতে করাতে এখন নিজেই পাগল হয়ে গেলো নাকি! কিন্তু এমন করছে কেন বিভোর?
রুহি নিজেকে যতোই বিভোরের কাছ থেকে সরানোর চেষ্টা করছে, ও ততোই রুহিকে শক্ত করে ধরছে। একপর্যায়ে রেগে বিভোরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো রুহি। তারপর নিজেই অবাক হয়ে গেলো।
বিভোর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ছায়াগুলো পিচঢালা পথে প্রতিফলিত হচ্ছে। কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে সবকিছু। বন্য বাতাসে কয়েকটা গাছের পাতা উড়ে এসে পড়লো রুহির ওড়নায়। ও সেগুলো ঝাড়ছে ঠিক তখনই বিভোর প্রচন্ড জোরে গাড়ির জানালায় একটা ঘুসি দিতেই গ্লাস কয়েক টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। কিছুটা কাচ বিভোরের হাতেও ঢুকে যায়। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। রুহি দ্বিগবিদিক কোনোকিছু চিন্তা না করে দৌড়ে গিয়ে বিভোরের হাতটা টেনে নিলো। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। বলল,
‘এটা আপনি কী করলেন?’
বিভোর বলল,
‘যা ইচ্ছা তাই করেছি। হাত ছাড়ো।’
‘কতোটা রক্ত বেরুচ্ছে!’
বিভোর হেসে বলল,
‘বাইরের রক্তটাই শুধু চোখে পড়লো তোমার রক্তজবা?’
‘মানে?’
‘আমার বুকের ভেতরে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেটা দেখতে পাচ্ছোনা তুমি?’
‘আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।’
‘পারবে কীভাবে! তুমি চিরকালই অবুঝ ছিলে। বয়স এখনো আঠারোই রয়ে গেলো।’
রুহি ওর হাতটা ছাড়ছেনা দেখে রেগে ঝটকা দিয়ে নিজের হাত সরিয়ে নেয় বিভোর। রুহি বলল,
‘হাতে তো ইনফেকশন হয়ে যাবে!’
বিভোর গম্ভীর গলায় বলল,
‘ডাক্তার তুমি নও। সো চুপ থাকো।’
রুহি হতাশ হয়ে বলল,
‘এরকম করছেন কেন? কী হয়েছে আপনার? ডাক্তারি করতে করতে কী নিজেই পেশেন্ট হয়ে গিয়েছেন? অদ্ভুত!’
বিভোর রুহির দিকে তাকালো। বলল,
‘হ্যাঁ। আমি পেশেন্ট হয়ে গিয়েছি। মানুষের ভালো করতে গিয়ে, সাহায্য করতে করতে আমি আজ ক্লান্ত। অথচ কেউ একটাবারের জন্য আমাকে বুঝতে চাইলোনা। জানতে চাইলোনা আমার কষ্ট হয় কিনা। আফসোস, আমি কাদের জন্য কী করলাম, কেন করলাম!’
রুহি বিভোরের কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারলোনা। রক্তেমাখা বিভোরের হাতের দিকে নজর যেতেই শিউরে ওঠলো। ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,
‘প্লিজ আপনি হাতটাকে কিছু করুন।’
বিভোর সরাসরি উত্তর দিলো। টলমল চোখে বলল,
‘তুমি আমার কিছু কথা শুনবে? আমি আর পারছিনা এসব ঘটনা নিজের মনের ভেতর রাখতে। মনে হচ্ছে আমার বুক ফেটে যাবে, আমি অতি শ্রীঘ্রই মারা যাবো। প্লিজ রক্তজবা, আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতে দাও।’
রুহি আঁৎকে উঠলো। এরকম করছে কেন ওর ডাক্তারবাবু? আবার কেন সামনে আসলো ওর! এতোদিন ভালোই ছিলো, কত কষ্ট করে ভোলার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু চাইলেই তো আর ভোলা যায়না। কিন্তু সামলে নিয়েছিলো নিজেকে। এখন বিভোরকে যতোই দেখছে ততোই দুর্বল হয়ে পড়ছে। কী বলবে বিভোর ওকে! এই শহরেই বিভোরদের অন্য একটা বাড়িতে নিয়ে এলো রুহিকে। দোতলা ছিমছাম বাড়ি, কিন্তু খুব সুন্দর।
বিভোরের হাতটা একটা রুমাল দিয়ে বেঁধে দিলো রুহি। একপ্রকার জোরাজুরি করে ও এই অসাধ্য সাধন করেছে। খালি বাড়িতে কেমন ভয়ভয় লাগছিলো রুহির। ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে ডিভানের দিকে এগিয়ে যায়। রুহি দুরুদুরু বুকে সেখানে বসে। তারপর আনমনেই বিভোরকে জিজ্ঞেস করে,
‘ওই মেয়েটা যদি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি থাকতো তাহলে তো আপনি ফিরতেন না, তাইনা?’
বিভোর অসহায় চোখে তাকালো। বললো,
‘ভাগ্যে থাকলে হয়তো তাই হতো। কিন্তু জীবন আমাদেরকে আরেকটা সুযোগ দিয়েছে। তাহলে কেন ওসব টেনে আনছো আর বর্তমান নষ্ট করছো? তুমি যথেষ্ট বড়, ম্যাচিরিউড হয়েছো। কেন বুঝতে চাচ্ছোনা?’
রুহি বিরক্ত হয়ে বলল,
‘আমি আর কিছু শুনতে বা বুঝতে চাচ্ছিনা। আমাকে এখন যেতে দিন।’
রুহির ইগো আর ইগনোর দেখে বিভোর অবাক হচ্ছে শুধু। মেয়েটা ওকে পাগল করে দিচ্ছে। এই কথা শোনার পরে বিভোর রেগে চিৎকার করে বলল,
‘আচ্ছা, তুমিই বলো। একা যখন বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছিলে তখন যদি আমি তোমাকে সাহায্য না করতাম তাহলে আজ তুমি কোথায় থাকতে! কী হাল হতো তোমার? ট্রেনের ওই ছেলেগুলো কী ছেড়ে দিতো তোমাকে? আর আমি যদি তোমাকে বিয়ে না করতাম তাহলেই বা কী হতো? একবার ভেবে দেখছো তুমি? বলো?’
রুহির মুখটা কালো মেঘে ছেয়ে গেলো। একটা কথাও মিথ্যে নয়। ওইটুকু বয়সে বিভোর না থাকলে আজকের রুহি হতে পারতোনা। বিভোর ঘোলাটে দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। কথাগুলো বলা হয়নি, কিন্তু আজ বলতে বাধ্য হয়েছে। রুহি কী ভাবে নিজেকে? ওর সাথে বিভোর অন্যায় করেছে, আর বিভোরই যদি ওকে সেদিন না বাঁচাতো তাহলে কী হতো রক্তজবার? একবার ভেবে দেখলো না কেন রুহি! আসলেই, প্রয়োজন পড়লেই মানুষকে দরকার হয়, তারপর সবাই সবকিছু ভুলে যায়। বিভোর এলোমেলো কন্ঠে আবারও বলল,
‘তোমার ভাইয়ের কাছেও যদি রেখে আসতাম তাহলে ওরা তোমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিতো। আমি যদি শহরে নিজের সাথে না নিয়ে আসতাম তাহলে তোমার অস্বস্তি থাকতো রক্তজবা? তাহলে কেন তুমি আমার একটা ভুল ধরে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো? তবে কী ভেবে নিবো, তুমি আমার থেকে সুযোগ নিয়েছো? এখন দরকার ফুরিয়ে যাওয়ায় আমাকে আর চিনোই না!
I know I have done wrong. But you are also an opportunist. A selfish girl. তাই নয় কী?’
বলেই বিভোর ডিভানে একটা লাথি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। কড়া কয়েকটা নির্মম সত্য শোনার পর
রুহি মাথা নিচু করে কাঁদছে। ঠিকই তো বলেছে বিভোর। সেন্স অব হিউমার বলে তো কিছু একটা আছে৷ যেটা বলে, রুহানি তুমিও তো বিভোরের সাথে অন্যায় করেছো। নিজের প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে তাই তাকে তুমি এখন দূরে সরিয়ে দিচ্ছো। আসলেই, তুমি একটা সেলফিশ!
আধঘন্টা পর বিভোর ঘরে আসে। মনে হচ্ছে আরও ড্রিংক করে এসেছে। রুহি গলার স্বর নামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কিছু বলবেন? আমাকে কেন নিয়ে এসেছেন এখানে?’
বিভোর গম্ভীর গলায় বলল,
‘নাদিরা আন্টি তোমার বিয়ে ঠিক করছে।’
রুহি অবাক হয়ে বলল,
‘তাই নাকি?’
‘হুম।’
রুহি শুধু বলল,
‘ভালোই।’
এটুকু কথা বলতে দেরি, বিভোরের রাগতে দেরি হয়নি। চিৎকার করে বলল,
‘তোর খুব আনন্দ হচ্ছে তাইনা?’
রুহি বাক্যহারা হয়ে গেলো। এসব কী? হুট করে তুই-তোকারি কেন করছে বিভোর? বলল,
‘কী বলছেন আপনি?’
‘ঠিক বলছি। তোর মনে এখন খুব ফুর্তি হচ্ছে তাইনা?’
রুহি হতভম্ব হয়ে বলল,
‘ফুর্তি হবে কেন?’
‘কেননা তুই আমার ওপর রিভেঞ্জ নিতে পারবি।’
‘কীসের রিভেঞ্জ? আপনার সাথে আমার কীসের শত্রুতা?’
‘সেটা তুই জানিস। নইলে আমার থেকে কেন দূরে সরে গেলি?’
বিভোর কিছুতেই নিজেকে আর রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছেনা। কথাগুলো বলার সময় ওর গলা কাঁপছিলো,চোখ উলটে আসছিলো। রুহি ভয় পেয়ে গেলো। বলল,
‘কী হয়েছে আপনার?’
রুহির থেকে দূরে সরে গেলো বিভোর। তারপর অগ্নিমূর্তি হয়ে চিৎকার করে বলল,
‘আমার থেকে দূরে থাকো। আমিতো খারাপ আর ক্যারেক্টারলেস। আমিতো মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করি, তাদের সাথে আমার বাজে সম্পর্ক। আমার এই ভুলের তো ক্ষমা নেই। আমি পাপী। আমি নিজের বউকে ভুলে গেছি। আমি তাকে একা ফেলে বিদেশে গিয়ে গার্লফ্রেন্ড জুটিয়েছি। এখন এই শাস্তি আমার সারাজীবন পেতে হবে। আমার বউ, হ্যাহ। সে আমাকে ভালোবাসেনা। তার কাছে আমি অপরাধী। আমি নাকি তার সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়েছি। কোনোদিন সে আমার হাতটা ছুঁয়েও দেখলোনা। একজন ডাক্তার আমি, কতশত মেয়ে ঘুরে বেড়ায় চারপাশে। ইচ্ছে করলে আমি যেকারো সাথে সম্পর্ক রাখতে পারি। কিন্তু বিদেশে আমি যে ভুলটা করেছি সেটা আমাকে নরকে ঠেলে দিয়েছে। ফাঁসির আসামীর শেষ ইচ্ছেটাও জানতে চায় মানুষ, সেখানে আমি এর চেয়েও বড় অপরাধী। এর তো কোনো ক্ষমাই নেই। তাহলে কেন আমি বাঁঁচবো? যেখানে আমাকে কেউ বুঝেইনা? আমি.. আমি আর বাঁঁচবোই না।’
বিভোরের এলোমেলো কথার ভঙ্গি দেখে রুহি অবাক হলো। হঠাৎ করে প্রশ্ন করলো,
‘আ..আপনি কী আবার ড্রিংকস করেছেন ডাক্তার সাহেব?’
বিভোর বাচ্চাদের মতো হেসে বলল,
‘ড্রিংকস তো ভালোরা করে। আমিতো পচা। নো নো, আমি খারাপ। নাহ, সবাই আমাকে খারাপ ভাবে। আর খারাপদের কষ্ট শোনার জন্য কেউ তো নেই, ড্রিংকস করেছি বেশ করেছি।’
রুহির মাথা ঘুরাতে লাগলো। ড্রিংকসের প্রভাব আস্তে আস্তে বাড়ছে বোধহয়। কারণ বিভোর ইতিমধ্যেই অনেক উল্টোপালটা কথা বলা শুরু করেছে। রুহির কোলে নিজের মাথা এলিয়ে দিয়ে ওর ওড়না টেনে নিয়ে নিজের মুখের উপর দিলো।
রুহি বলল,
‘এরকম কেন করছেন?’
বিভোর গম্ভীর গলায় বলল,
‘আমিতো তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে আর কারোর হতে দেবোনা।’
রুহির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এলো। মনে হচ্ছে আকাশে মেঘ ভাসছে এলোকেশে। ঘরের ভেতরে বাইরে থেকে আসা ফুরফুরে হাওয়া বইতে লাগলো। রুহির সাথে এবার প্রকৃতিও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো যে, বিভোর তাকে ভালোবাসে। আহা! বাতাসে কেমন সুখ সুখ সুগন্ধ। রুহি জানে বিভোর এখন নিজের জ্ঞানে নেই। এ অবস্থায় মানুষ বেশিরভাগ সময়ই সত্যি কথা বলে। রুহি মজা করে জিজ্ঞেস করলো,
‘আমাকে ডিভোর্স দেবেন না?’
বিভোরের মাথা রুহির কোলে। ও রুহির কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল,
‘প্রশ্নই ওঠেনা। তুমি যদি চাও আলাদা থাকতে তাহলে থাকো৷ আমি কখনোই ছাড়তে পারবোনা তোমাকে।’
‘আপনি ড্রিংকস করেছেন কেন? আর এতোদিন পরই বা আমার সামনে এলেন কেন?’
‘তুমি আমাকে এতো কষ্ট কেন দিচ্ছো?’
রুহি মিটিমিটি হেসে বলল,
‘ভালো লাগছে তাই।’
‘আমি মরে গেলে বুঝি খুশি হবে?’
‘একদম না।’
‘আমাকে ছাড়ুন। বাসায় যেতে হবে।’
‘আজ বাসায় যাওয়া যাবেনা।’
‘কেন?’
‘তোমাকে আজ পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। আর আমি চাইনা কেউ তোমাকে দেখুক, পছন্দ করুক। দূরে গেলে এটাই সত্যি যে তুমি আমারই।’
রুহি বুঝলো বিভোর কেন এতোটা রেগে আছে। কিন্তু পাত্রপক্ষ দেখতে আসার ব্যাপারটা নাদিরা ওকে কেন বললো না? রুহির মন খারাপ হয়ে গেলো। বিভোরকে ছাড়া আর কাউকে কখনো স্বামী হিসেবে মানতে পারবেনা। এই সময়টাকে এখানেই থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। এবার অন্তত ক্ষমা করে দেওয়া যায় লোকটাকে। অনেক তো হলো। সাড়ে পাঁচটা বছর তো কম নয়। রুহি নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছে, দেখিয়ে দিয়েছে বিভোরকে যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে মেয়েরা। যদিও অনেকটা অভিমান থেকেই করা। বিভোরের মতো একটি ছেলের প্রতীক্ষাই তো রুহি আজীবন করেছে। যে নিজের ভুল বুঝতে পারবে,সেটা স্বীকার করতেও কুন্ঠাবোধ করবেনা। ভাবনার মাঝেই বেজে উঠলো রুহির ফোন। ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রিনে ভেসে উঠলো নাদিরার নাম। রুহি রিসিভ করলো। নাদিরা ওপাশ থেকে বলল,
‘কোথায় রে মা তুই?’
‘কেন?’
নাদিরা কেমন অপরাধী কন্ঠে বলল,
‘তোকে না জানিয়ে একটা কাজ করে ফেলেছি।’
‘কী?’
‘পাত্রপক্ষ তোকে দেখতে এসেছে। তোকে এই কথাটা বলিনি।’
‘ওদেরকে চলে যেতে বলো।’
নাদিরা হতভম্ব হয়ে বলল,
‘মানে?’
‘আমি এখন বিয়ে করবোনা। যখন করার ইচ্ছে হবে জানাবো তোমায়। প্লিজ তুমি ওদিকটা হ্যান্ডেল করে নাও। আর আজ আমার বাসায় ফিরতে লেইট হবে, আবার নাও আসতে পারি।’
নাদিরা আর কিছু বললেন না। মেয়ের মত না থাকলে সেই বিয়ে কেমন করে হবে! জিজ্ঞেস করলেন,
‘কোথায় তুই?’
‘আছি এক জায়গায়।’
‘রাত হয়ে গিয়েছে তো মা।’
‘চিন্তা করোনা।’
‘আমাকে জানাস, কখন ফিরবি।’
‘আচ্ছা, রাখি!’
বিভোর স্বজ্ঞানে ছিলোনা। রুহি ওর চুলে হাত বুলাতে লাগলো। সব ভিজে যাক, বেঁচে থাক অভিমান। অভিমান না থাকলে সেই ভালোবাসা কোনো ভালোবাসাই নয়। চট করে বিভোর চোখ খোলে রুহির দিকে চাইলো। মিষ্টি করে হাসলো রুহি। ওকে চমকে দিয়ে বিভোর ওর মুখটা নিজের অতি কাছে টেনে নিলো। রুহির ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলো বিভোর।
অবাক রুহি তখন নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় রত।
বেশ কিছুক্ষণ পর রুহি নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হয়। এটা কী ছিলো! ভালোবাসা এতোটাও সুখের হয়? রুহি ঠিক করলো বিগত তিনটা বছরের গল্পগুলো বলবে সে বিভোরকে। কিন্তু ও ইতিমধ্যেই ঘুমিয়ে কাদা। রুহি আনমনে হেসে বলল, শহর জুড়ে আরো একবার বৃষ্টি নামুক। দেখুক পৃথিবী, আমি কতোটা ভাগ্যবতী। আমাকে ওরা হিংসে করুক। বৃষ্টিরাজির ফুল ফুটুক সারা আকাশজুড়ে। পৃথিবী! আমারও একটা ভালোবাসার মানুষ আছে, সে আমায় ভালোবাসে।
অনেক বড় পর্ব দিলাম। ভেবেছিলাম গ্যাপ দিবো, কিন্তু পারলাম না। এবার অন্তত গঠনমূলক মন্তব্য জানাবেন আশা করি। ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং ধরিয়ে দিবেন।
চলবে…ইনশাআল্লাহ!
আপনার লেখার মাঝে একটা গানের লাইন দেখলাম “সব ভিজে যাক বেঁচে থাক অভিমান”…
যাই হোক গল্পটা খুব ভালো লাগছে…
Thanks এতো সুন্দর গল্প দেওয়ার জন্য…