আকাশ_ছোঁয়া_ভালোবাসা ❤️সিজন_২,পর্ব_২৬
সাহেদা_আক্তার
আমি সব খুইলা দেখিয়ে সব কইয়া বললাম, কে হতে পারে বলতো?
– তোর জামাই।
– এ্যাঁহ… আমার জামাই আসবে কোথা থেকে?
সাহেদা গোয়েন্দাদের মতো রহস্য কইরা কইলো, আছে মনা, তুমি তো জানো না। এখন এটা পরে নাও। একটু পরে সাজানোর লোক আসবে। আমি গ্লাসে পানি নিয়া কইলাম, তো মুই কি করবো? তারা তো তোকে সাজাবে।
– আগে তোকে সাজাই নিমু তারপর আমি।
– আমি কি বউ নাকি? পার্লারের লোক আমাকে সাজাবে কেন? টাকা কে দিবে?
– তোর জামাই৷ এখন যা তো। লেহেঙ্গাটা পরে নে। সন্ধ্যা হতে বেশি দেরি নেই।
আমারে জোর কইরা ওয়াশরুমে পাঠাই দিলো। বের হইয়া দেখি সাজানোর লোক চইলা আসছে। সাহেদা আমারে বসাই দিয়া বলল, ওকে সাজিয়ে দিন আগে। ব্যাস, আমার সাজগোজ শুরু। তারা আমাকে হালকা মেকআপ করিয়ে দিলো। চোখে সাদা আর সোনালি আইশেডো; ঠোঁটে খয়রি লিপস্টিক। কাঁধ পর্যন্ত চুলগুলো খোলা। তাতে একপাশে তিনটা হলুদ গোলাপ। গয়না পরিয়ে দেওয়ার পর এক হাতে চুড়ি আর অন্য হাতে রজনীগন্ধার থোকাটা পরলাম। আমার সাজ কমপ্লিট। সাহেদা আমাকে ওর দিকে ফিরিয়ে বলল, তোকে লেহেঙ্গা আর গয়নায় দারুণ মানিয়েছে রে। তোর জামাইর চয়েস আছে বলতে হবে। আমি বেশ বিরক্ত হয়ে বললাম, কি রে বোইন? বিয়েই হইলো না জামাই জামাই করছিস কেন? তার মানে তুই জানিস কে দিয়েছে। সাহেদা তাড়াতাড়ি আমাকে উঠিয়ে দিয়ে বলল, আরে আমার লেট হয়ে যাচ্ছে না? সন্ধ্যা হয়ে গেল। দিন, আপনারা এবার কনেকে সাজিয়ে দিন। বলেই চোখ মুখ বন্ধ করে বোবার মতো বইসা রইলো। বুঝলাম বিয়েটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওরে বাঘে আনা যাইবো না। আমি বিছানায় বইসা বইসা ওর সাজ দেখতে লাগলাম।
আমি সাহেদার সাথে রুম থেকে বের হইলাম। স্টেজে নিয়া গেলাম ওরে সবার ঠেলাঠেলির মধ্যে। ওরে বসাইয়া দশ মিনিট যাইতে না যাইতেই দেখি আমার পেছনে চাচি নেংচাইতে নেংচাইতে কোথা থেকে আসলো। আমি একটা হাসি দিতেই সে লাল লিবিষ্টিকের এমন হাসি দিলেন আমার এক মুহুর্তের জন্য মনে হইসিলো তার রূপে আমি বেহুশ হই যামু। যাহোক আমি ভাবসিলাম এখানেই শেষ। কিন্তু তিনি আমার বাম হাত চাইপা ধইরা চেয়ারের দিকে নিয়ে গেলেন বসার জন্য৷ আমার মনে হইলো আমার হাতের আজই সলীল সমাধি হয়ে যাবে। সে আমাকে একটা চেয়ারে বসাইয়া সে নিজেও বসতে গেল। চেয়ারটা কড়কড় কইরা উঠলো। আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম কখন চেয়ারটা ভাঙে।
– ছোঁয়া ওএমজি, কি অবস্থা তোমার?
– জ্বি ভালো। আপনার?
– ওএমজি, আমি তো সব সময় হট এন্ড চিল মুডে থাকি।
হট শুইনাই কাশি আসলো আমার। সে আমার পিঠে চাপড় দিতে দিতে বলল, ওএমজি, কাশছো কেন? তার চাপড়ে আমার মনে হইলো আমার পাজরের সব হাড় বুঝি মিহি দানা হই যাবে। তার সাথে সে নড়তেই চেয়ারটা যেভাবে কড়কড় করতেসে। আমি কোনোমতে কাশিটা থামালাম নইলে রুহ নিয়ে বাসায় ফিরতে পারব না। কাশি থামলেও তার পিঠ চাপড়ানো থামলো না। আমি কইলাম, আন্টি আমি একটু বাসা থেকে আসছি। আমি উঠতেই চাচি হাত ধইরা কইলো, ওএমজি, শুনো শুনো। একটা হেল্প করে দাও।
– কি আন্টি?
– আমার চশমাটা সাহেদার রুমে ওএমজি। একটু এনে দাও তো।
– আচ্ছা।
আমি যাওয়ার সময় পিছন ফিইরা দেখলাম চাচি কার সাথে ফোনে কথা বলতেসে। সিঁড়ি দিয়া নামতে নামতে কইলাম, টমেটো আবার চশমা পরে কবে থেকে! আমি সাহেদার রুমের সামনে আইসা দেখি রুম অন্ধকার। ঢুকতে যাচ্ছিলাম এ সময় রাতুল হাত টাইনা একপাশে নিয়া আসলো। সে আমার দিকে কেমন করে তাকাই আছে। আমার অস্বস্তি লাগতেসে। কতক্ষণ তাকাই থেকে কইলো, তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে ছোঁয়া।
– থ্যাংক ইউ।
– কখন এই লেহেঙ্গা কিনলে? দেখিনি তো।
– আমার কাজ আছে।
– এড়িয়ে যাচ্ছো?
– আন্টি আমার জন্য অপেক্ষা করছেন উপরে। আমাকে তার চশমা নিয়ে যেতে হবে।
– কোথায় চশমা? আমি এনে দিচ্ছি।
– সাহেদার রুমে।
রাতুল সাহেদার রুমে ঢুকতেই সাথে সাথে দরজা বন্ধ হইয়া গেল। চশমা আনতে দরজা বন্ধ থাকা লাগে নাকি! আমি কান পাততেই শুনলাম কে যেন বলতেসে, হোমা! থুমি হ্যাতো লম্ভা এন্ড শখতো খখন হোলে ছোঁয়া!? শুইনাই বুঝতে পারলাম আলুটার গলা। আমার কাহিনী বুঝতে একমুহূর্ত দেরি হইলো না। আজকে রাতুল না থাকলে আমার ইজ্জতের ফালুদা হইতো। আমার কান পাতলাম। কয়েক মুহুর্ত নীরবতা আর তারপর কেবল ডিসুম ডুসুম সাউন্ড আর “আ”, ” মমি” এগুলাই শুনতে পাইলাম। ভেতরে আলুর ভর্তা তৈরী হইতেসে। বাইরে আসলে বোঝা যাবে রাতুল কেমন আলু ভর্তা বানায়। দশমিনিট পর রাতুল বেরিয়ে আসলো। তার পাঞ্জাবি কয়েক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে। গালের একপাশ লাল হই আছে। মেবি খামচি মেরেছে। আমাকে দেখে আমার হাত ধইরা একটানে বাসায় নিয়া আসলো। সোফায় বসিয়ে বলল, এখানে চুপ করে বসে থাকো। আমি চেঞ্জ করে আমি। আমি মাথা নাড়লাম। রাতুল এখন রাগে বোম হয়ে আছে। বুঝা যাচ্ছে আলু ভর্তার বেশ ভালোভাবেই বানিয়ে আসছে।
আমি বইসা আছি আর মনে হইলো উপরে শোরগোল চলতেসে। আমি ভয় পাচ্ছি সাহেদার জন্য। আজকে ওর গায়ে হলুদ আর এ রকম বিচ্ছিরি একটা ব্যাপার ঘটলো! রাতুল চেঞ্জ হইয়া বের হইলো। একটা সাদা শার্ট পড়সে আর জিন্স প্যান্ট। বেচারা শখ কইরা নীল পাঞ্জাবি পড়সিলো সেটার অবস্থা খারাপ হই গেল। সে আমারে নিয়া উপরে আসতেই দেখি আলু ভর্তা সোফায়। দুই গাল রসগোল্লা ভর্তি। কপালেও আছে একটা। বাকি আর কোথায় কোথায় কি হইসে তা জানি না। তবে পাঞ্জাবির অবস্থা সেই লেভেলের খারাপ। সবাই ঘিরে দাঁড়াই আছে আর মাঝে টমেটো সুন্দরী তার নিত্য করতেসে। সাহেদার আম্মু একব্যাগ বরফ এনে ইয়োর মুখে লাগাইতে লাগল। তার মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ। মেয়ের বিয়েতে এমন কান্ড। আঙ্কেল মেবি উপরে।
আমারে দেইখাই চাচি দাঁত মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসতে আসতে বললেন, ওএমজি, তোর জন্য এ অবস্থা আমার ছেলের ব্লা* বি*। আমার কাছে আসতেই রাতুল আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
– প্ল্যানটা কার ছিল?
চাচি ওকে দেখে একটু থতমত হইয়া গেল। তারপর আবার চিৎকার কইরা কইলো, ওএমজি, কিসের প্ল্যান? ঐ মেয়ে আমার ছেলের এ অবস্থা করেছে। ঐ মেয়েকে আমি দেখে নেব। বইলা আমার দিকে হাত বাড়াইতে লাগলে রাতুল তার হাত চেপে ধইরা বলল, অন্ধকার রুমে নিজের ছেলেকে রেখে ওখানে ছোঁয়াকে পাঠানোর প্ল্যানটা কার ছিল? চাচি একটু ঘাবড়াই গেল। চাচা এসে বলল, আরে বাবা তুমি ভুল ভাবছো। এসব…
রাতুল ইয়োর দিকে তাকাতেই ইয়ো বেচারা কাঁদো কাঁদো হইয়া বলল, মমি হামাকে ভলেছিলো রুমে লাইট অফ খরে থাকটে। ছোঁয়া হেলে ওখে ঝড়িয়ে ধরটে হার……
– আর কি?
– আর খিস খরতে।
চাচি চিৎকার করে বলল, ওএমজি, তোকে এসব কে বলতে বলেছে? এই ছেলে? এ…। রাতুল আরো জোরে তার হাত চাইপা ধরল। আমি দেখলাম, ময়দার ডোতে চাপ দিলে যেমন হাত ডুবে যায় তেমনি চাচির হাতের মাংসের মধ্যে রাতুলের হাত ডুইবা গেল। ব্যাথায় চাচি কথা বলা বন্ধ হই গেল। বেচারি অনেক ব্যাথা পাচ্ছে। আমি রাতুলকে অনেক বার ইশারা করার পর ও হাতটা ছাইড়া দিল। দেখলাম হাতে লাল পাঁচ আঙ্গুল স্পষ্ট বইসা গেসে। রাতুল সাহেদার আম্মুকে বলল, আজকে আমি না থাকলে ছোঁয়ার কি হতো বুঝতে পারছেন। এখন সিদ্ধান্ত আপনাদের। আন্টি ইতস্তত হয়ে বলল, আমি কি বলব বাবা, এমন যে হবে আমি ভাবতেই পারছি না। সাহেদার আব্বুর সাথে আমি এ ব্যাপারে কথা বলব। রাতুল নম্রভাবে সম্মতি জানিয়ে আমাকে নিয়া ছাদে চইলা আসলো।
আমি মলিন মুখে বইসা আছি। সাহেদা স্টেজে। রাতুলকে দেখলাম আঙ্কেলের সাথে কথা বলতে বলতে নিচে বাসায় চইলা গেল। সাহেদার আমার দিকে নজর পড়তেই স্টেজ থেকে নাইমা আসলো।
– কি রে? এভাবে বসে আছিস?
– ভালো লাগছে না।
– কেন? কিছু হয়েছে?
– না, তেমন কিছু না। তুই এখানে কি করিস? স্টেজে বোস।
– হুম। জানিস ইরি বার বার তোর গাজরের কথা জিজ্ঞেস করছিল।
– তাদের আর কি কাজ? ছেলে ঘুরছে আমার পেছনে আর মেয়ে ঘুরছে আমার গাজরের পেছনে।
– তোর কি হয়েছে বলতো? অনেকক্ষণ তোকে দেখিনি।
– বাসায় গিয়েছিলাম। যা না স্টেজে। তোর গায়ে হলুদ চলছে।
– তুই আয় আমার সাথে স্টেজে।
সাহেদা আমারে জোর কইরা স্টেজে নিয়া গেল। ওর সাথে থেকে মুড ভালো হয়ে গেল। কিন্তু আশেপাশে সবাই কি নিয়ে যেন ফিসফিস করতেসে। নিচে কি হইলো কে জানে।
সাহেদার জোরাজুরিতে আমারেও মেহেদী পরা লাগলো। আমার মনোযোগ অন্যদিকে। মেহেদীর লাগানোর মেয়েটা কিছু জিজ্ঞেস করছিলো আমাকে। আমার তো মন নাই তাই শুনি নাই। সাহেদা কি যেন বলে দিল। সে আবার মেহেদী লাগানো শুরু করল। মেহেদী পরানো শেষ হইলো বারোটার দিকে। ব্যাস হলুদ শেষ।
সাহেদারে নিয়া বাসায় আসতেই আবহাওয়া কেমন কেমন জানি লাগল। সাহেদা আমারে জিজ্ঞেস করল, এই চাচা, চাচি, ইয়ো, ইরি কাউকে দেখছি না যে? জানিস কিছু?
– না।
– ইরি তো সারাক্ষণ স্টেজের চারপাশে ঘুরঘুর করছিলো। গেল কোথায় তারা? আম্মু?
আন্টি কাজ করতেসিলো রান্নাঘরে। সাহেদার ডাকে তাকাইলো। চাচিদের কথা জিজ্ঞেস করতেই বললেন তারা নাকি চলে গেছে। সাহেদা জিজ্ঞেস করল, এমন গায়ে হলুদের ভেতর হুট করে চলে গেল কেন? আন্টি সবটা খুলে বলতেই সাহেদা শান্ত কন্ঠে বলল, যাওয়ার সময় আমাকে একটা ডাক দিতা। ঐ ইয়োর আমি মুন্ডু চিবিয়ে খেতাম। তুই আমাকে বলিসনি কেন?
– তোর হলুদের বারোটা বাজানোর শখ ছিল না তাই।
– ওলে আমার বান্ধবী। আর আসুক আমাদের বাসায়। তখন মুন্ডু না হাড়গোড়সহ সব চিবিয়ে খাবো। ফালতু লোক।
– ওকে ওকে। এখন চল ঘুমাবি।
সাহেদারে রুমে নিয়া গেলাম। মানুষ তো উপরে নিচে ভরা। দুইজনেই চিপা চাপায় গিয়া শরীরটা এলিয়ে দিলাম।
চলবে…