অবিশ্বাস,পর্বঃ৪

অবিশ্বাস,পর্বঃ৪
লেখকঃরনি হাসান

তুমি যদি ভেবে থাকো, এত অপমান অপদস্ত হবার পরেও তোমাকে ভালোবাসবো, তা তোমার একান্তই ভুল ধারনা না, আমার মন থেকে কেউ যদি একবার বেরিয়ে যায়, তাকে দ্বিতীয়ভবারের মতো আপন করি নাহ, সেটা তুমি ভালো করেই জানো

রিয়া এ কথা শুনে আমার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল “রিলেশন করার মাঝে কি ভুল বুঝাবুঝি হই না_?

–“ভুল বুঝাবুঝি হই, কিন্তু তুমি আমাকে জনসম্মুখে চরিত্রহীন লম্পট বলে ছোট করে করেছো, যাই হক এখন এসব বলে লাভ নাই, আমি আমার রাস্তায় তুমি তোমার রাস্তায়, দুই জনের এখন পথচলা এখন ভিন্ন ,

–“আমার প্রথম ভালোবাসা তুমি, তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না, প্রয়োজনে আমার উপর তোমার যত রাগ ক্রোধ আছে মিটাতে পারো তবুও আমায় ফিরিয়ে দিয়েও না প্লিজ

–” রিয়া তোমাকে আগেই বলছিলাম রিলেশন একবার ভেঙে গেলে দ্বিতীয়বারে তুমি যতই কান্না করে আমায় ডাকো না কেন, আমি সাড়া দিবো না, আজ তার প্রমান পেলে তো, মানছি রিদিতা আমার নামে তোমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে, তুমি আমার কাছে এসে অন্তপক্ষে সব কিছু জিজ্ঞেস করতে পারতে, তা না করে উল্টো রাগ দেখিয়ে আমাকে অপমান করে বাসা থেকে চলে যেতে বললে, দুই বছরের সম্পর্ক ভেঙে ফেলতে এক সেকেন্ড ও ভাবলে না, ব্রেকআপ যখন করলে, তখন কতটা আঘাত আমি পেয়েছি তা তোমার ধারণা নেই। যদি আমার কষ্ট উপলব্ধি করার ক্ষমতা তোমার থাকতো তাহলে এত সহজেই সম্পর্ক ভাঙতে না,

–“অহ তারমানে আমার কোনো মাপ নেই তাই না, রিয়া এ বলে নিজের অশ্রকনা হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে নিলো, চোখজোড়াতে ইতিমধ্যে লাল বর্ন হয়েছে, ওর কান্না জড়িত মলিন চেহারা দেখে আমার ও কেমন জানি খারাপ লাগছে কিন্তু তা রিয়ার সামনে প্রকাশ করছি না, এরমধ্যে রিয়াকে ডাকতে তার মা আসলো, আমাকে দেখে অনেকটা আনন্দিত হয়ে বলল ” বাবা তুমি এতদিন কোথায় ছিলে হ্যা, তুমি চলা আসার পর বাসা কেমন জানি শান্ত হয়েছে, রিয়া তো তোমার কথা ভেবে শুধু কান্নাই করে

–“ওহ তাই (মিথ্যা হেসে)

–“বাবা আমার একটা রিকুয়েষ্ট করবো রাখবা

–“হুম চেষ্টা করবো আপনি বলেন

–“এখন কি আমাদের বাসায় আবার আগের মতো থাকা যায় না_?

আন্টির এ কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম, সেদিন তাদের সামনে বাসা থেকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম একটা কথা বলল না, আজ আবার ফিরে যেতে বলছে কি অদ্ভুত , আনমনে ভেবে বললাম” আন্টি এতকিছু হবার পরেও আপনাদের বাসায় ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, তাছাড়া আমার ও আত্মসম্মান বোধ আছে, যেখানে অপমান অসম্মান হয়েছি, সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো যাওয়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ দুইটির মাঝে একটি ও নেই। সরি আন্টি আমি আপনার কথা রাখতে পারলাম না,

রিয়ার সঙ্গে আন্টি ও আমার কথাগুলো শুনে বিষন্নতায় মুখশ্রী কালো করে ফেললেন।তারা হইত আমার এমন ধারা কথা শুনবে তা আশা করেনি, কিছুক্ষন নিরবতা থাকার পর রিয়া বলল” আমার কথা নই নাই মানলে, মার কথা অন্তত শুনো প্লিজ

–“সম্ভব না, এবার আমাকে যেতে হবে, এবলে বিদায় জানিয়ে মেসে চলে আসি, আসার সময় রিয়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো, ওর চাহনিতে অনেক কিছু বলছে যা প্রকাশ কর‍তে পারছিলো না, নিজের রাগ ক্রোধ কে প্রধান্য দিয়ে রিয়াকে আমার লাইফ থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম,

অবিশ্বাস এমন একটা শব্দ যত গভীর আর দুষ্ট মিষ্টি মধুর সম্পর্ক থাকুক না কেনো। যদি একবার সম্পর্কের মাঝে অবিশ্বাস নামক শব্দটি যুক্ত হয়ে যায় তো, সে সম্পর্ক টিকে না, রিয়ার সঙ্গে আমার রিলেশন টাও সবদিক থেকে ভালোই চলছিলো, কিন্তু রিয়া আমাকে অবিশ্বাস করার কারনে দুইবছরে সম্পর্ক শেষ করতে এক সেকেন্ড ও ভাবেনি, সত্যটা জানার পর ও আবার সম্পর্ক জড়া লাগানো জন্য অধিক আগ্রহ নিয়ে বসে আছে, আফসোস জুড়া আর লাগবে না। আপনারা হইত ভাবছেন রিলেশনটা ভেঙে আমার খুব আনন্দ লাগছে _? নাহ প্রকৃত পক্ষে রিয়ার মতো আমারেও খারাপ লাগা কাজ করছে। আর এখন মন খারাপ নিয়ে মেসে বসে আছি, ফেসবুকে ও এখন কেন জানি ভালো লাগে না, মন খারাপ লাগা নিয়ে দিনটা কোনোরকম কেটে যায়।,

আজ শুক্রবার কাজ কর্ম থেকে কমবেশি সবাই বিরত, কেউ নাক ডেকে বিছানা আরামে গড়াগড়ি করছে, কেউ এবার সকাল সকাল পরিপাটি হয়ে তার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখতে করানো জন্য বেরচ্ছে, আর আমি সুয়ে থেকে রুমমেটদের কান্ড দেখছি এরমাঝে হঠাৎ নিলয় সজীব এসে আমাকে বিছানায় সুয়ে থাকা দেখে বলল” কিরে সুয়ে থাকবি নাকি আমাদের সঙ্গে ঘুরতে যাবি কোনটা_?

–“ধুর সুয়ে থেকে কি সময় কাটবো _?

–“২ মিনিটে রেডি হ হাতে সময় খুব কম, আজ নিলয়ের আবার প্রোপজ ডে, কিরে নিলয় পারবি তো মেঘলাকে প্রোপজ করতে (হেসে)

–“অবশ্যই পারবো, তোরা শুধু আমাকে দূর থেকে সাপোর্ট দিবি

–“ওকে দোস্ত

তারপর তিন বন্ধু মিলে দিয়া বাড়ি অইদিকে ঘুরতে যায়, আজ নিলয় মেঘলাকে প্রোপজ করবে আর আমরা দূর থেকে সাপোর্ট দিবো, নিলয় আবার একটু ভিভু টাইপের ছেলে চাপাবাজ গিরি দিকে সেরা, কিন্তু কোনো মেয়ের সামনে গিয়ে কথা বলা আজ পযন্ত তার সাহসে কুলাইনি, আজ সে কি করবে তা ও ভালো জানে, আনমনে ভেবে যাচ্ছি হঠাৎ সজীব নিলয়ের উদ্দেশ্য বলে উঠলো

নিলয় অইদেখ মেঘলা তোর জন্য অপেক্ষা করছে, আজ ভালো ভালোই মেঘলাকে প্রোপজ যদি না করতে পারস তো, দুই বন্ধুর মারের হাত থেকে তোকে রক্ষা করতে পারবে না কথাটি মনে রাখিস

সজীব বন্ধুর এমনধারা কথা শুনে কিছুটা হেসে বললাম” নিলয় চাপ নিস না,আজ তুই যদি ওখান থেকে কেটে পড়িস তো, মেঘলাকে আমি প্রোপজ করবো, আর তুই তো আমাকে ভালোভাবেই চিনিস,

নিলয়, আমাদের কথাগুলো শুনে রেগেমেগে বুকে সাহস জুগিয়ে মেঘলা সামনে গড়গড় করে টেপ রেকর্ডার মতো প্রোপজ করল, এখন লাল গোলাপ নিয়ে মেঘলার সামনে তুলে ধরলো, মেঘলা কি জানি ভেবে তারপর ফুলটি হাতে নিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো, আর নিলয় খুশিতে আত্মাহারা হয়ে নাচতে নাচতে আমাদের দিকে এসে বলল

–“বন্ধু রিলেশন টা হইয়া গেছে, চল এবার তোদের রেস্টুরেন্টে গিয়ে ট্রিট দিবো,

–“কি রিলেশন টা হইছে ট্রিট তো তাহলে অবশ্য লাগবে চল

তারপর তিন বন্ধু মিলে আবার রেস্টুরেন্টে চলে যায়, খাবার দাবারের পর্ব ভালো চলছে, হঠাৎ চেনা কন্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো ” বাবা কেমন আছিস, কতদিন পর তোকে দেখলাম_?

উপস্থিত সজীব নিলয় তারা ও লোকটির দিকে তাকাল, আর আমি খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে লোকটির দিকে তাকাতেই চোখ যেনো কপালে উঠে গেলো, কেন না ওই লোকটা অন্য আর কেউ নই আমার জন্মদাতা পিতা, যার সঙ্গে রাগ করে ৩ তিনবছর আগে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসি , আজ ৩ বছর পর বাবাকে দেখে অল্প সময়ে চোখজোড়াতে অশ্রু কনা এসে ভিড় করল, নিজেকে বেশ সংযত রেখে বললাম

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here