অবিশ্বাস,পর্বঃ৩
লেখকঃরনি হাসান
নিলয়ের সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে গল্প করছি, এরমধ্যে রিয়ার কল পেয়ে হটাৎ হকচকিয়ে যায়, যে মেয়ে আমাকে অপমান অপদস্ত করে বাসা থেকে চলে যেতে বলল , আর সে কিংনা এখন কল দিচ্ছে, যাক এই সুযোগে তার অপমানের কিছু কথা ফিরিয়ে দেওয়া যাবে, আনমনে ভেবে কল রিসিভ করে বললাম” হঠাৎ কী ভেবে এই চরিত্রহীন লম্পট এর কাছে কল দিলেন, আমি তো খারাপ মানুষ ওই তাই নাহ –
–“সরি আমার আসলে বুঝার ভুল ছিলো, রিদিতা আমাকে যেভাবে তোমার নামে মিথ্যাটা সাজিয়ে বলছে তা বিশ্বাস করা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না,আমাকে মাপ করে দাও প্লিজ
রিয়ার এরকম সহজ কথাগুলো শুনে রাগটা কেন জানি তীব্র গতিতে বেড়ে গেলো, নিজেকে বেশ সংযত রেখে বললাম” আচ্ছা ঠিক আছে মাপ করে দিলাম, আর কিছু বলার আছে
–“এখন কোথায় আছো_?
–“জাহান্নামে
–“এমন করে কথা বলছ কেন
–“তো কীভাবে বলবো
–“ওহ বুঝতে পারছি তুমি আমার উপর রেগে আছো এটাই স্বাভাবিক, আমিও তো ভুল বুঝে অনেক কিছু তোমাকে বলছি, যাই হক তুমি এখন বাসায় ফিরে এসো
–“এমনভাবে ফিরে আসতে বলছো আমি যেন, তোমার বাসার চাকর, শুনো রিয়া তোমাদের বাসায় এমনি এমনি থাকেনি মাস শেষে টাকা দিয়েই থেকেছি, আর হ্যা আমাকে দেখে কি নির্লজ্জ আত্মসম্মানহীন মনে হই যে এতটা অপমান অসম্মান হবার পরেও ওই বাসাতে আবার থাকতে যাবো _? অসম্ভব কখনো নাহ, এই ঢাকা শহরে টাকা ফেললে আমার থাকার জায়গায় অভাব হবে না কথাটা মনে রেখো
–“তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও তা আমি মাথা পেতে নিবো, তবুও দূরে থেকো না প্লিজ
–“এতটা অপমান অপদস্ত হবার পরেও নির্লজ্জর মতো তোমাদের ওখানে ফিরে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, তোমাদের ওখানে ছিলাম বলে তুচ্ছ ভেবে কটু কথা গুলো আমাকে শুনিয়েছো, সে কটু কথাগুলো যদি অন্য কেউ বলত হইত কষ্ট পেলেও অতটা পেতাম না, কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোভাবেই চিনতে, তারপরেও অবিশ্বাস করলে এবং দুইবছরে সম্পর্ক তা শেষ শব্দটি মুখে নিতে এক সেকেন্ড ও ভাবার সময় নিলা না, খুব সহজেই সম্পর্ক শেষ করে ফেললে,তো অবিশ্বাস করে সম্পর্ক ওই যখন ভেঙেই ফেলছো তো মিছে মিছে কথা বলার প্রয়োজন নেই। রাখছি এবার
আমার কথাগুলো শুনে রিয়া কেন জানি কান্না করে দিলো, এ কান্নার মানে টা হইতো ভুল বুঝে ভালোবাসার মানুষটিকে দূরে ঠেলে দেওয়ার এক অদ্ভুত খারাপ লাগা এবং অনুশোচনা, যা তিলে তিলে রিয়াকে আঘাত করে যাচ্ছে,ওর কান্না শুনে তা ভালোভাবেই কষ্টটা উপলব্ধি করতে পারছি কিন্তু, সেদিকে তোয়াক্কা না করে কর্কশ গলায় বললাম” কি ব্যাপার এখন কান্না করছো কেন_?
–“রিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে বলল ” আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ চলে এসো,
–“সম্ভব না রিয়া, তুমি এখন হাজার বার কান্না করে বলেও কোনো লাভ হবে না, সম্পর্ক একবার ভেঙেছে তো দ্বিতীয়বার জুড়া লাগানোর কোনো অপশন আমার কাছে নেই
–“আমি কি করতাম বলো, রিদিতা তোমার নামে যে নোংরা কথাটা আমাকে বলছে তা মুখে আনতে লজ্জা লাগছে, এছাড়া রিলেশনের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়েই থাকে, এ বলে কি সম্পর্ক শেষ করতে হবে
–“সম্পর্ক তুমি নিজেই ভেঙেছো, এখন উল্টো কথা আমাকে বলছো অদ্ভুত তুমি,
–“এবাবের মতো মাপ করে দাও, আর কখনো তোমাকে অবিশ্বাস কিংবা ভুল বুঝবো না, প্লিজ চলে এসো
–“আমার মতো চরিত্রহীন লম্পট ছেলেকে ভালোবাসার চেয়ে কোনো এক ভালো ছেলে দেখে তার সঙ্গে রিলেশনে জড়িয়ে যাও, আর হ্যা নেক্সট টাইম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবা না,
এ বলে ফোন কেটে দিলাম, পরক্ষনে রিয়া আবারও কল দিলো, কিন্তু রিসিফ করার বিন্দুমাত্র ও আগ্রহ বা ইচ্ছা নেই বলে চলে, অবহেলায় কল কেটে দিলাম, রিয়ার কাছে জলদি যে ভুলগুলো রিদিতা তুলে ধরবে তা কখনো কল্পনা করিনি, আনমনে ভেবে নিলয়ের সঙ্গে আবার গল্প সল্প করায় মনোযোগ হয়ে গেলাম, দুইদিন নিলয়ের মেসে থেকে, তারপর
পাশে আরেক মেসে সিফট হয়ে যায়, দুই তিন দিনে রুমমেটদের সঙ্গে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়ে যায়, ব্যস আগের মতো আবার নিত্যকার দিনে কাজ কর্মে লেগে যায়, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্টে চলে যায়, আবার সন্ধ্যার সময় মেসে চলে আসি, ফ্রেশ হয়ে আবার একটু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেই,
আপনারা হইত ভাবছেন রেস্টুরেন্টে আবার কেন যায় তাই তো _? সেটা আমার পার টাইম জব, মাসে শেষে ১৩ – ১৪ হাজার টাকা ওখান থেকে আসে তা দিয়ে পড়ালেখা বাসা ভাড়া আর নিজের খরচ বহন করছি, ৩ বছর ধরে প্রায় নিজের বাসা ছেড়ে ছন্নছাড়া এতিমদের মতো ঢাকায় পড়ে আছি, বাসা থেকে আমি চলে আসার পর বাবা হইত আমাকে অনেক খুজছে কিন্তু পাইনি। যাই হক এবার গল্পে আসি,
এভাবেই এক সপ্তাহ চলে গেলো, এরমাঝে রিয়ার অজস্র কল মেসেজ পেয়েও রিপ্লাই দিলাম না,ওর প্রতি আমার কেমন জানি একটা রাগ হতো, ভাবতাম অবিশ্বাস করে যখন সম্পর্ক ভেঙেই ফেলছে, সুতরাং আপন করে নিবার প্রশ্ন ওই আসে নাহ, এরকম ভেবে ওর দেওয়া কল মেসেজে রিপ্লাই দেইনি, তবে ওর মেসেজ গুলা প্রতিনিয়ত দেখতাম, অনেক আবেগপ্রবণিত এবং অনুশোচনায় দিয়ে ওর সব মেসেজ
এক নজরে দেখতাম আর আনমনে মুখে একটা শুকনো হাসি ফুটে উঠত, এছাড়া আমি নিজেও জানি যে রিয়া আমাকে কতটুকু ভালোবাসে,হইত রিদিতার কাছ থেকে সত্যটা জানতে পেরে আমাকে খুব মিস করছে ইভেন আমার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ টাও ওর অনেক বেড়ে গেছে, আফসোস এখন যতই কান্নাকাটি করে চোখের জল ফেলুক না কেন, দ্বিতীয়বার আর ভালোবাসবো না, সামনেও যাবো নাহ
১০ টা দিন এভাবে কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ শপিংমলে রিয়ার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো, রিয়া আমাকে দেখা মাত্র সঙ্গে সঙ্গে আমার কাছে চলে আসলো এবং চোখের কোনে অশ্রুকনা জমিয়ে আহত কন্ঠ বলল” তুমি আমার কল মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছো নাহ কেনো_?
রিয়ার অধিক আগ্রহ প্রশ্ন না শুনার ভান করে মুখ ফিরিয়ে চলে আসতে যাবো, এমন সময় সামনে দাঁড়িয়ে এবার চোখের জল দিয়ে বলল” প্লিজ মুখ ফিরিয়ে থাকো না, একটা সুযোগ অন্তত আমাকে দাও, তবুও আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলে যেয়ো না প্লিজ,
রাগ এবং বিরক্তকর একটা ভাব নিয়ে বললাম” সামনে থেকে সরে যাও, আমার এসব নাটক একদম পছন্দ না, সরো বলছি
–“নাহ সরবো না (মাথা নীচু করে)
–“দেখো রিয়া তুমি যদি ভেবে থাকো তোমার চোখের জল দেখে আমি গেলে যাবো কিংবা অপমান অপদস্ত এর কথা গুলো ভুলে পুনরায় ভালোবাসবো তা তোমার ভুল ধারনা, আর আমার মন থেকে কেউ যদি একবার বের হয়ে যায় তাকে দ্বিতীয়বারের মতো আপন করি নাহ এটা তুমি ভালোই করেই জানো
রিয়া আমার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
চলবে……