অবিশ্বাস,পর্বঃ২
লেখকঃরনি হাসান
রিয়াদের বাসা থেকে বাইরে এসে যেই রিক্সা ডাকতে যাবো হঠাৎ রিয়ার ছোট বোন রিদিতার সঙ্গে দেখা,তো আমার কাধে ব্যাগ দেখে জানার আগ্রহ নিয়ে বলল ” ভাইয়া আপনি সাদসকালে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন
–“হুম না
–“তাহলে কোথায় যাচ্ছেন_?
–“কোথায় যাচ্ছি তা এখনো ভাবেনি, তবে তোমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি, হইত আর তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে না
–“ভাইয়া আপনি যাবেন না প্লিজ_?
–“এখানে শুধুমাত্র তোমার আপুর ভালোবাসা আর টেক কেয়ার গুলো পাবার জন্য এখানে থেকেছি, মনের কোনে অনেক স্বপ্ন ও সাজিয়ে নিয়েছিলাম, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই সব ভেঙে গেলো, তবে একটা বিষয়ে আমার অনেক খারাপ লাগা কাজ করছে আমি চলে আসার সময় আংকেল আন্টি তারা একটি কথা ও বলল না, উনা রাও তো আমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসত, কিন্তু কেউ একজন আমার নামে বাজে মন্তব্য করায় আমার উপর ভালোবাসাটা মনে হই উঠে গেছে-
–“ইয়ে মানে আপনার নামে আমিই বাজে কথাটা আপুকে বলছি, আপু যে আব্বু আম্মুকে এত জলদি জানিয়ে দিবে তা ভাবেনি
রিদিতার এ কথা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না, কেন না তার সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই যে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমাকে পচাবে, রিদিতাকে সবসময় আপন ছোট বোন ওই ভাবতাম, রিদিতাও আমাকে সবসময় ভাইয়া ভাইয়া বলে সম্বোধন করত, এরকম ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও আমার নামে বাজে মন্তব্য করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব না, চেহারায় কিছুটা রাগি ভাব নিয়ে বললাম
–“আমার নামে তোমার আপুর কাছে কি বাজে মন্তব্য করেছো আর সেটা কেনো করেছো বলো আমায়
রিদিতা ভয়ে পেয়ে বলল” ভাইয়া আমি যে কথা এখন বলতে যাচ্ছি তা শুনলে আপনি রাগান্বিত হয়ে থাপ্পড় মারতে পারেন,
–“থাপ্পড় মারবো না, তুমি বলো
–“প্রমিজ
–“হুম প্রমিজ
ইয়ে মানে আপনাকে আমি অনেক পছন্দ করতাম, ইভেন এখনো করি, কিন্তু আপুর জন্য কোনো কিছু বলবার মতো সাহস আমার নেই, একদিকে আপুও আপনাকে অনেক ভালোবাসত, এরমাঝে আপনি আমারেও ভালো লাগার কারন হয়েছিলেন, আর আপুর সঙ্গে আপনার রিলেশনটা ভাঙার জন্য আপনার নামে নোংরা একটা অপবাদ দেই, আপু ও আমার কাছ থেকে কথাগুলো শুনে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে ফেলে, এবং আপনার সঙ্গে সম্পর্কে ও শেষ করে। রাতে যখন আপুকে কান্না করতে দেখলাম তখন বুঝতে পারলাম যে আমি কতবড় একটা ভুল করেছি, বিবেকের কাছে বার বার নিজের কুধারনার জন্য অপমানিত এবং অনুশোচনায় ভোগেছি, এবং রাতেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে সকাল হলেই আপুকে সব সত্য কথা বলে আপনার আর আপুর কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবো, কিন্তু তার আগেই যে আপনি আমাদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার সিন্ধান্তই উপনীত হবেন তা আমার জানা ছিলো না
রিদিতা এটুকু বলে থেমে গেলো, ওর কথা শুনে শিহরিত হয়ে গেলাম, দশম শ্রেণির পড়ুয়া একজন পিচ্ছি মেয়ে আমাকে নাকি তার ভাল্লাগে , রাগান্বিত হলেও নিজেকে সংযত রেখে বললাম” ছোট হক কিংবা বড় একজন আরেকজনকে পছন্দ করা কিংবা ভালো লাগা এটা খারাপ কিছু না,কিন্তু নিজের স্বার্থগতাকে হাসিল করার উদ্দেশ্যে কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করা কিন্তু এটা অন্যায়,আজ তোমার কাছ থেকে এরকম কিছু শুনবো তা কখনো কল্পনা করেনি।মনের কোনে এমনি খারাপ লাগা ছিলো তোমার কথাগুলো শুনে তা আরও দ্বিগুণ বেড়ে হয়ে গেলো
এ বলে রিক্সা ডেকে রিক্সায় উঠতে যাবো রিদিতা আমার হাত ধরে কান্না করে বলল ” ভাইয়া আমি ভুল করে ফেলছি প্লিজ মাপ করে দিন, আপুকে আমি সব জানিয়ে দিবো তবুও চলে যাইয়েন নাহ প্লিজ
–“এসব বলে কোনো লাভ নেই, অবিশ্বাস করে তোমার আপু যেহেতু সম্পর্ক শেষ করছে, তো দ্বিতীয়বার আর তাকে আপন করে নেওয়া মতো ইচ্ছা আমার নেই , ভালো থাকো আল্লাহ হাফেজ, এ বলে ওখানে বিদায় জানিয়ে চলে আসি নিলয় বন্ধুর মেসে,
অপরদিকে
আপু আমি একটা বড় করে ফেলছি তোকে আগেই বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু সময় সাপেক্ষে এতটা উল্টো হয়ে যাবে তা আমি কখনো কল্পনা করিনি,
রিদিতা কান্না জড়িত কন্ঠে রিয়ার উদ্দেশ্য বলে উঠলো, রিয়া ফোন ঘাটা বাদ দিয়ে রিদিতার কান্না শব্দ পেয়ে হচকিয়ে বলল” কি ব্যাপার রিদিতা কান্না করছিস কেন, আর কোন ভুলের কথা বলছিস _?
–“রনি ভাইয়া আমাদের বাসা ছেড়ে চলে গেছে তোর কি খারাপ লাগছে না (রিদিতা)
রিদিতার এ কথা শুনে রিয়ার বুকে কেমন জানি দুমড়ে মুচড়ে উঠে, অজানা এক খারাপ লাগা মনে কাজ করতে লাগলো, নিজের খারাপ লাগা সত্ত্বেও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল” ওই চরিত্রহীন লম্পট চলে গিয়ে ভালো হইছে, যে আমার ছোট বোনকে কুপ্রস্তাব দেই তাকে তো জুতাপিটা করে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিলো, ভালোবাসতাম বলে জুতাপিটা করেনি,
–“তোর বয়ফ্রেন্ড ভালোই ছিলো, আমিই তোকে অইসব মিথ্যা বলছি যাতে তোদের ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙে যায়,
–” তুই যেগুলো আমাকে বলেছিস সেগুলো একটা ও সত্য নাহ সব মিথ্যা, তাহলে মিছে কেন আমাকে এসব কথা বললি_? (আদো কান্না হয়ে)
–“আমি ও রনি ভাইয়াকে ভালোবাসতাম, কিন্তু তোর জন্য কিছু বলতে পারতাম না, তাই এই ভুল পন্থা অবলম্বন করে নেয়। বিশ্বাস কর আপু আবেগে পড়ে, বিবেগকে কাজে লাগাইনি। রাতে যখন তোকে চাপা সুরে, কান্না করতে দেখলাম তখন বিবেকে নড়া দিয়ে উঠল, যে আবেগের বশে কতবড় ভুল, আমি করে ফেলছি, সকালে ঘুম থেকে উঠে তোকে সবকিছু বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই রনি ভাইয়া চলে গেলো, আটকানো অনেক চেষ্টা করছি, কিন্তু আটকাতে পারেনি
রিদিতার এ কথা শুনে রিয়ার চোখজোড়াতে নোনা জলে ভিজে উঠলো,কান্না জড়িত রাগি কন্ঠে বলল” ইচ্ছা করছে তোকে কাচা ব্যথ দিয়ে পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলি, আমার ব্যাপারে সব জেনেও এতটা বড় একটা জঘন্য কাজ তুই কেমনে করতে পারলি, বল আমায় _?
–“সরি আপু
–“খবরদার অই মুখে আমাকে আপু বলে ডাকবি না, এখন দূর হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে ,নইলে কিন্তু এবার সত্যিই সত্যিই ব্যথ আনবো
রিদিতা মাথা নিচু করে চলে গেলো, আর রিয়ার ভুল টাও খুব সহজেই ভেঙে গেলো, রিয়ার খুব ইচ্ছা করছে তার ভালোবাসার মানুষটির কাছে গিয়ে সরি বলে সব সমাধান নিতে, নিজের রুমে বেশিক্ষণ মন টিকলো না ভালোবাসার মানুষটি যেরুমে থাকত, রিয়া খুব দুরুত্ব সে রুমে চলে যায়, তালা ঝুলানো দেখে মনে খারাপ লাগা আরও দ্বিগুণ বেড়ে যায়, পরিশেষে প্রিয় মানুষটির ফোনে লজ্জা শরম বাদ দিয়ে কল করতে বাধ্য হলো রিয়া,
এইদিকে
নিলয়ের সঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে আলাপ আলোচনা করছি এরমধ্যে রিয়ার কল পেয়ে হকচকিয়ে যায়, যে মেয়ে আমাকে অপমান অপদস্ত করে বাসা থেকে চলে যেতে বলল , আর সে কিংনা এখন কল দিচ্ছে, যাক এই সুযোগে তার অপমানের কিছু কথা ফিরিয়ে দেওয়া যাবে, আনমনে ভেবে রিয়ার কল রিসিভ করে বললাম
চলবে….