অবিশ্বাস,পর্বঃ১
লেখকঃরনি হাসান
–“রিয়ার জন্মদিনে আমাকে যে এতটা অপমান অসম্মান করবে তা কখনো কল্পনা করেনি, ও তো আমাকে অনেক ভালোবাসত আজ হঠাৎ কি বুঝে আমাকে অপমান অপদস্ত করল তা ও ভালো জানে, অনেকটা ভালোবাসা নিয়ে জন্মদিনের গিফট কিনে রিয়ার সামনে হাসি উজ্জ্বল চেহারা উপস্থাপন করে বললাম, রিয়া এই নাও তোমার জন্মদিনের গিফট
রিয়া গিফটটি হাতে না নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল ” তুই ভাবলি কি করে যে তোর মতো চরিত্রহীন লম্পট এর দেওয়া উপহার আমি নিবো, তোকে অনেক ভালো মনে করতাম, এরজন্য তোকে নিজের লাইফ পার্টনার হিসাবে সিলেট করেছিলাম, কিন্তু তুই যে চরিত্রহীন লম্পট তা এখন বেশ ভালোভাবেই জেনেছি, আর হ্যা দুইদিন তোকে সময় দিলাম এই দুদিনের মধ্যে আমাদের বাসা ছেড়ে দিবি-
রিয়ার কাছ থেকে হঠাৎ এসব কথাবার্তা শুনে থতমত খেয়ে বললাম, আমি চরিত্রহীন লম্পট এসব কথা তোমাকে কে বলছে
রিয়া রাগে আগুন হয়ে বলল” সে কৈফিয়ত তোকে দিতে পারবো না, তবে একটা কথা মনে রাখ তোর সঙ্গে এতদিন যে সম্পর্ক ছিলো তা আজ শেষ, জেনে শুনে চরিত্রহীন লম্পট এর জীবন সঙ্গী হওয়া তো সম্ভব নাহ,
এবার সম্পর্ক শেষ হওয়ার কথা শুনে আকাশ ভেঙে যেন আমার মাথার উপর পড়ল, দুই বছরের সম্পর্ক নিমিষে ভেঙে যাচ্ছে তাও আবার ভুল বুঝে, জানি না আমার নামে রিয়াকে কে ভুলভাল বুঝিয়েছে, কিন্তু আজ একটা ব্যাপারে কষ্ট হচ্ছে যে এতদিন রিলেশনে থাকার পরেও রিয়া আমাকে চিনতে পারলো না, আনমনে ভেবে বললাম, রিয়া তোমার কোথায় একটা ভুল হচ্ছে, আমার নামে কেউ যদি বাজে মন্তব্য করে থাকে তাহলে সেটা ভুল, প্রকৃত পক্ষে আমি কারো সঙ্গে অসভ্যতামী কিংবা মন্দ সভার কাজ করেনি বিশ্বাস করো –
–“তোর এই ভালো চেহারার পিছনে যে একটা শয়তানের মুখোশ রয়েছে তা আজ আমি ভালো করেই জেনেছি, দয়া করে আমাদের বাসা ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যা, প্লিজ
–“ভুল একটা মন্তব্য শুনে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো, ঠিক আছে আমিও দূরে সরে যাবো, কটা দিন সময় দাও
রিয়াকে এ বলে রুমে এসে পড়লাম, এবং আমার সমস্ত ব্যবহৃত দ্রব্য ব্যাগে গুছিয়ে নিলাম,
আমি রনি হাসান, এবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি, বাবা আছে মা বেচে নেই, মা না থাকায় আমার লাইভ টা একবারে ছন্নছাড়া হয়েছে, মার মৃত্যুর পর বাবা আরেকটা বিয়ে করেন, তখন থেকেই পরিবারে আমাকে অশান্তি লেগেই থাকত, বাড়িতে কদিন পর পর ওই আমাকে নিয়ে ঝগড়াবিবাদ অই মহিলা বাধিয়ে দিত, যদিও এসব ঝামেলা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতাম, তারপরেও অই মহিলা বাবার কাছে মিথ্যা কথা বলে আমাকে পচাতো, বাবা ওই মহিলার কথাগুলো প্রধান্য দিয়ে আমার উপর ঝাড়ি দিত, বাবার সঙ্গে এক দুই কথায় কথা কাটাকাটি করে বাবা বলে
তোর দুইচোখ যেদিকে যায়, তুই সেদিকে চলে যা, এবং আমাকে এক্টু শান্তি মতো থাকতে দে
সেদিন বাবার এ কথাটি শুনে তাদের বাসায় আর এক মুহূর্তে ও থাকেনি। রাগান্বিত হয়ে ঢাকায় চলে আসি। এবং নিজের কর্ম করে পড়াশোনা এবং নিজের ভরপোষনে নিয়োজিত হয়ে যায়, আর রিয়ার সঙ্গে পরিচিত হই তাদের বাসায় ভাড়াটে হয়ে, রিয়াদের বাসায় আছি আজ প্রায় দুই বছর হয়ে গেলো এরমধ্যে রিয়ার সঙ্গে রিলেশনটা কীভাবে যে হয়ে গেলো তা আমি নিজেও জানি না,রিয়া আমার অনেক টেক কেয়ার করত, ওর যত্নশীল আচরনে আমি মুগ্ধ, কিন্তু আজ হঠাৎ আমার সঙ্গে মিস বিহেব করবে তা আমি কখনো কল্পনা করেনি, খুব কষ্ট হচ্ছে ও ভুল বুঝে রিলেশন টা অতি সহজেই ভেঙে ফেললো, ওর ভুলটা একদিন না একদিন ভাঙবে তখন হইত আবার রিলেশনে জড়াতে বলবে, আফসোস তখন আমি আর ফিরবো না
আনমনে এসব ভেবে বাইরে বাসা খুজার সন্ধানে বেড়িয়ে গেলাম , সারাদিন অনেক বাড়িওয়ালাদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের একটাই সমস্যা সিংগেল কাউকে তারা বাসা ভাড়া দিবে না, নিরাশ হয়ে রিয়াদের বাসায়
ফিরতে হলো, সন্ধ্যার সময় ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, রিয়া হঠাৎ আমাকে চরিত্রহীন লম্পট ডাকলো কেন_? আমি তো কখনো খারাপ কাজে লিপ্ত হইনি,ও তাহলে কীভেবে আমাকে এসব ডাকল, আমাকে এসব জানতে হবে আনমনে ভেবে যাচ্ছি হঠাৎ কারো পায়ে হাটা শব্দ পেয়ে পিছনে তাকাতেই লক্ষ্য করলাম, রিয়া আমার দিকে ঘৃণা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছাদের এক কিনারায় গিয়ে দাড়িয়ে ফোনে কি জানি ঘাটতে লাগলো । কিছুক্ষন নিরবতা থাকা পর আগ বাড়িয়ে বললাম
আমি জানি না, কে তোমাকে আমার নামে ভুলভাল কথা শুনিয়েছে, আর সে কথা গুলোকে প্রধান্য দিয়ে আমার সঙ্গে মিস বিহেব করছো। তবে আজ একটা কথা ভেবে কষ্ট হচ্ছে যে আমাকে ভালো বুঝত টেক কেয়ার করত সে আজ অন্যজনের বলা মিথ্যা কথা শুনে আমাকে অবিশ্বাস করছে, আচ্ছা যাই হক তুমি আমার নামে শুনেছো এখন তো বলো_?
–“রিয়া অন্যদিকে তাকিয়ে বলল” তুই নিজে কি করেছিস সেটা তুই নিজেই ভালো জানিস, আর আমার সামনে এতো ভালো সাজার কোনো অভিনয় করবি না, চরিত্রহীন কোথাকার
–“নিশ্চুপ
–“আর ভালোই ভালোই আমাদের বাসা ছেড়ে চলে যাবি, তোর মতো চরিত্রহীন লম্পটের এখানে বাসা ভাড়া হবে না-
–“আমি চলে গেলে, তোমার খারাপ লাগবে না _?
–“একটুও লাগবে না, তুই এখান থেকে গেলেই আমি সুস্থি পাবো
–“ঠিকাছে আমি চলেই যাবো, ভুল তো তোমার একদিন ভাংবেই আফসোস সেদিন আমাকে হাজার বার চোখের জল ফেলে ডাকলেও তোমার ডাকে সাড়া দিবো না, কথাটি মনে রেখো
এ বলে রিয়াকে ছাদে রেখে রুমে চলে আসি,এতোদিন রিয়ার জন্যই এ বাসায় থেকেছি,আজ রিয়াই যখন এখান থেকে চলে যেতে বলছে তো এখানে বেহায়াদের মতো থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। তাছাড়া এখানে তো এমনি এমনি থাকি না টাকা দিয়ে ওই থাকতে হই, টাকা ফেললে থাকার জায়গার অভাব হবে না, আনমনে রাতে এসব ভাবতেই হঠাৎ নিলয় তানবীরের কথা মনে পড়ে গেলো,ওদের কাছে গেলে নিশ্চিত একটা বাসার সন্ধান বের করে দিতে পারবে, রাতে এসব ভেবে কোনো মতে রাতটা পাড় করলাম, সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগটা কাধে রেখে রিয়ার বাবা মার সামনে গিয়ে দাড়ালাম, চলতি মাস এবং আগের মাসের বাসা ভাড়ার টাকা গুলো রিয়ার বাবার হাতে দিয়ে বললাম
–“আংকেল আপনাদের এখানে দুবছর থেকেছি যদি ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তো নিজ ছেলে হিসাবে মাপ করে দিয়েন
–“নিশ্চুপ (রিয়ার বাবা)
–“আন্টি আমার জন্য দোয়া কইরেন, আপনাদের এখানে হইত আর আমার আসা হবে না, এরজন্য দোয়া আগেই চেয়ে নিলাম ভালো থাইকেন
এ বলে গুটি পায়ে রিয়াদের বাসা থেকে বাইরে চলে আসলাম, যেই রিক্সা ডাকতে যাবো হঠাৎ রিয়ার ছোট বোন রিদিতার সঙে দেখা সাদসকালে আমার কাধে ব্যাগ দেখে আগ্রহ নিয়ে বলল___?
(চলবে)