#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব__6,7
#লেখিকা__(মায়া)
06
মায়া অনেক ক্ষন আগে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ফাইজুল মেয়ে কে অটো স্ট্যান্ড অব্দি এসেছিলেন,, মায়া কে অটো তে উঠিয়ে দিয়ে গেছেন।
ফাইজুল বলেছিল মায়া কে আর কয়েক দিন থাকতে কিন্তু মায়া বলেছে যে আবার আসবো কিছু দিন পর। কথা টা বলার মায়া নিজেই অন্যমনস্ক হয়ে যায়। আসলেই কি সে আবার আসতে পারবে??? ফাইজুল সাহেবের মন বেশ খারাপ ছিল দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো। তত ক্ষণ অব্দি তাকিয়ে ছিল গাড়ির দিকে তত ক্ষণ না একে দূরে চলে যায়। মায়া নিজেও বার বার পিছনে তাকাচ্ছিল। নিরবে দু ফোঁটা চোখের পানি পড়ে গেল। মা বাবা কে ছেড়ে থাকার যে কি কষ্ট। তা বিবাহিত মেয়েদের জিজ্ঞেস করে দেখেন উত্তর পেয়ে যাবেন।
ইয়া ও রুমি তো কেঁদেই দিয়েছে। ছোট থেকে মেয়ে কে বড় করে বিয়ে দেওয়ার পর সেটা আর নিজের মেয়ে থাকলে ও অধিকার টা আর থাকে না। মেয়ে বেশি দিন নিজের কাছে আর রাখতেও পারবেন না। শশুর বাড়ির থেকে অনুমতি ছাড়া মেয়ে কে নিজের কাছে আনতেও পারবেন না।
অটো তার নিজের গন্তব্যে ছুটে চলেছে। মায়া বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে। হয়তো আমি বাবা মাকে সব বলে দিতে পারতাম যে তোমাদের সত্যিই ভালো নেই ঐ সংসারে। ঐ সংসারে আতিকের সাপোর্ট টাই তো নেই। স্বামীর সাপোর্ট ছাড়া নাকি স্ত্রী কখনই শশুর বাড়িতে টিকতে পারে না। আমি ও পারছি না মা। দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।
কিন্তু আমি তো আতিক কেও ছাড়তে পারব না। ওকে ছাড়ার হলে তো অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। মা বাবা খুব বেশি কি দায়িত্ব পালন করত??? আতিকের সাথে ডিভোর্স করিয়ে দিত। তার পর যে অন্য জায়গায় বিয়ে হলে সেখানে আমি সুখে থাকবো তার কি গ্যারান্টি। বরং দিন রাত খোটা শুনতে হবে। আর এসব কি ভাবছি আমি??? এখন তো ডিভোর্সের কথা কি ভাবে আসছে। আতিক আমাকে কষ্ট দিলেও মানুষ টা কে আমি আজো অনেক ভালোবাসি। কেন যেন আমার প্রতি এত অন্যায় করার পরো ঘৃণা করতে পারলাম না। তাই তো এত যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করে নেয়। ভেবেছিলাম বিয়ের পর আতিক আগের মত কেয়ার লেস থাকবে না। আমার লয়াললিটি দেখে আর আমার বিশ্বাস টা ভাঙ্গবে না। আমার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে সেও এক সময় আমায় ভালবাসবে।
কিন্তু আমি বুঝে গেছি এখন। ভালোবাসলেই ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসা পেতে হলে খুব ভাগ্যবতী হতে হবে।
মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির ভিতর থেকে বাহিরে তাকিয়ে আছে। হুট করে তার চোখ যায় একটা কফি হাউজের দিকে।
মায়া জোরে বলে উঠে মামা গাড়িটা থামান একটু!!!
আতিক!!! কফি হাউজে??? সাথে কে ওটা???
ভাড়া দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে মায়া।
কফি হাউজের উদ্দেশ্য হাঁটতে থাকে।
আতিক আর সাথে সেই মেয়েটি। কত রং ঢং হাসা হাসি করছে দু জন। মায়া কে আতিক অবশ্য দেখলে চিন্তে পারবে। বোরখা পড়া নিকাব করা তবুও। কিন্তু আতিকের ধ্যান তো এখন অন্য দিকে নেই।
কফি হাউজের ভিতরে প্রবেশ করলো মায়া।
আতিক দের টেবিল থেকে একটু দূরের টেবিলে বসে পরলো সে। আতিক মেয়ে টা কে জরিয়ে ধরে আছে এক হাত দিয়ে।
নিজের স্বামীকে অন্য কারো সাথে দেখা টা যে কত কষ্টের তা এক জন স্ত্রী ভালো জানে।
তার চোখ বার বার পানিতে ভরে উঠেছে। তার পর ও নিজেকে খুব করে সংযত রাখছে সে।
ওয়েটার এসে মায়া কে জিজ্ঞেস করে।
ম্যাম কি নিবেন??? একটা কল্ড কফি।
ওকে ম্যাম একটু অপেক্ষা করুন। জ্বি নিশ্চয়ই।
মায়া ফোন বের করে আতিক কে কল করে,,,
আতিক মায়ার ফোন পেয়ে কেটে দেয়।মায়া বার বার কল করতে থাকে। আতিক বার বার কেটে দিচ্ছে। মায়ার মনে হচ্ছে কেউ তার ভিতরে হাতুড়ি পেটা করছে।
আজো মায়া অনেক গুলো ছবি উঠিয়ে নিল ওদের।
আর একটু বসে আতিক মেয়ে টাকে বলে আনহা আর কোথায় যাবে বল???
অনেক জায়গায় ঘুরবো আজ,,,
মায়া নিজের মুখে উচ্চারণ করে আনহা নাম মেয়েটার।ভালো করে মেয়েটার দিকে তাকালো মায়া। মর্ডান,,, শরীরে ছোট পোশাক,, মুখে ভারী মেকআপ,,,
আশে পাশের টেবিলে থাকা ছেলেরা আনহা কে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।
আতিক আর আনহা উঠে বিল পে চলে গেল। মায়া নিজেও তাদের পিছনে উঠে পরলো।
বাহিরে এসে আতিক একটা রিক্সা ডাকলো। আজ বাইক নিয়ে আসেনি।
রিক্সা চলতে লাগল তাদের মায়া নিজেও একটা রিক্সা নিয়ে তাদের ফলো করতে লাগলো।
তাদের রিক্সা গিয়ে থামলো পার্কের গেটের সামনে। মায়া নিজেও তাদের পিছন পিছন পার্কের ভিতরে প্রবেশ করলো।
আতিক আর আনহা একটা নির্জন জায়গায় বসলো। মায়া অনেক গুলো এত ক্ষনে ছবি উঠিয়ে নিয়েছে।।
আতিকের ভাব অন্য রকম সে একান্ত করে যাচ্ছে আনহা কে।।
আনহার সায় পেয়ে আতিক আনহার দিকে ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায়।
নাহ মায়া আর এখানে দাঁড়িতে পারবে না।
সে দেখতে পারবে না এটা নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ দৃশ্যে দেখতে পারবে না। আড়াল থেকে শেষ একটা ছবি উঠিয়ে নিল তাদের।
আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালো না মায়া তার খুব কষ্ট হচ্ছে। সে পারছে না ছুটে পার্ক থেকে বের হয়ে যেতে।
বাসায় এসে দরজায় কলিং বেল চাপলো মায়া। সারা রাস্তা সে হেঁটেই এসেছে হাতে লাগেজ নিয়েই।
কিছু ক্ষন পর শাশুরি মা অর্থাৎ আসমা বেগম দরজা খুলে দিলেন। (শশুর শাশুড়ির নাম না দেওয়াই লেখতে প্রবলেম হচ্ছে। তাই শাশুরির নাম দিলাম আসমা বেগম,, শশুরের নাম আনোয়ার মোহাম্মদ।)
মায়া কে দেখে তিক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। কি নবাব সেহজাদীর বাবার বাড়িতে সফর করা শেষ। মায়া কোন কথা না ভিতরে চলে আসে। আসমা বেগমের মায়ার এই আচারন টা এক দম পছন্দ হলো না।
মায়া নিজের ঘরে চলে আসলো। লাগেজ টা রেখে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল। বোরখা হিজাব নিকাব খুলে সাওয়ার চালু করে বসে পরলো।
নিজেকে পাথরের মত লাগছে তাকে। নিজের জিবন কে নানা ভাবে তাচ্ছিল্যে করলেও বুঝি শেষ হবে না। মায়া হাউমাউ করে কাঁদছে,,, কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেছে।
প্রায় এক ঘন্টা সাওয়ার নিয়ে জামা কাপড় পাল্টে ঘরে চলে আসে। মাথা টা খুব ভারী ভারী লাগছে মায়ার। কাঁপুনি অনুভব করছে মায়া। খুব করে জ্বর আসবে তার আজ সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে।
মাথাটা খুব ব্যাথা ও করছে। খাটে গিয়ে ধপ করে মায়া শুয়ে পরে।
মুহূর্তেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করে মায়ার চোখে।
আসমা বেগমের চিৎকার চেঁচামেচি তে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ফোন হাতরে নিয়ে টাইম দেখে চোট করে উঠে বসে পরে মায়া। ও আল্লাহ ৭টা বাজে আমি ৩ঘন্টা ধরে ঘুমিয়েছি!!!
তারাতারি করে উঠে বাহিরে গেল মায়া। আসমা তাঁকেই কথা শুনাচ্ছিল এত ক্ষন।
মা বাবা কি শুয়ে বসে থাকার জন্য তোমায় আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে??? রাতের রান্না টা কে করবে শুনি??
কি ট্রেনিং নিয়ে আসলে আবার তুমি??? মা কি শিখিয়ে পাঠিয়েছে।
মায়া চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ আটকানোর চেষ্টা করছিল। বড় বড় কয়েক টা শ্বাস নিয়ে বলল। আমাকে মাফ করবেন মা শরীর টা খারাপ লাগছিল তাই ঘুমে গেছিলাম আমি এখনি রান্না করে দিচ্ছি।
কেন বাপু বাবার বাড়ি থেকে আবার অসুখ বাঁধিয়ে নিয়ে আসলে। কি এক অকর্মা বউ জুটেছে আমাদের কপালে!!!
মায়া মুখ বুজে রান্না ঘরে গেল। কপালে নিজেই হাত দিয়ে দেখে। জ্বর ভালোই আছে এখনো।
অনেক রাত করে আতিক বাসায় ফিরলো। মায়া কে বাসায় দেখে আতিকের কোন রিয়েকশন বুঝা গেল না।
মায়া শুধু আতিক কে বলল আজ তো ওফ ডে ছিল??? তাহলে এত রাতে কোথা থেকে ফিরছো???
আতিক গরম চোখে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল সেটা তোমাকে বলার ইচ্ছে নেই। কেন বাবার বাড়ি থেকে আসলে??? তোমার এই চেহারা টা এক দম দেখতে ইচ্ছে করে না।
মায়া মুচকি হেসে বলল জানি আমি সেটা কেন?? কি জন্য দেখতে ইচ্ছে করে না।
আতিক মায়ার কোথায় গুরুত্ব না দিয়ে বলল তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী কথা আছে।
মায়া বলল ডিভোর্স চাই তোমার???
আতিক কিছু টা ভরকে গেল মায়ার কথায়।
কি ভাবছো তোমার জরুরি কথা টা আমি কি করে জানলাম???
চলবে____,,,,,???
#পর্ব __7
#অবহেলার সংসার 🏘️
#লেখিকা (মায়া)
আতিক মায়ার কথার দিল না,, কি বলতে চাও বলো। তুমি কি করে বুঝলে আমি ডিভোর্সের কথা বলছি।
আমি কি তোমাই ফোন দিয়েছিলাম আতিক??? ইয়ে মানে হ্যাঁ। কিন্তু তুমি আমার ফোন উঠাওনি কেন??? আমি ব্যাস্ত ছিলাম।
মায়া নিজের ফোন টা ব্যাগ থেকে বের করে আতিক কে সব ছবি দেখালো এসব নিয়ে ব্যস্ত ছিলে??? আতিকের চোখ তো পুরা চক্কর গাছ। সে মায়ার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে ।
আতিকের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। তার পর ও আতিক কঠিন গলায় বলল হ্যাঁ তোমার তাতে কি যায় আসে??
কথা টা বলতে দেরি হয় কিন্তু চট করে আতিকের গালে থাপ্পর পড়তে দেরি হয় না।
আতিক অবাক দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে!!! তুমি আমাকে চর মারলে???
আতিকের দ্বিতীয় গালে আবার একটা থাপ্পর পরে।
এবার আতিক রাগী কন্ঠে বলে তোমার সাহস তো কম আমাকে থাপ্পর মারো!??
ঐ আওয়াজ নিচে জনাব নয়লে এই ছবি গুলো তোমার মা বাবা ভাই সবাই কে দেখিয়ে দিবো। চরিত্র হীন বলার জন্য যেই থাপ্পর তুমি আমাকে মেরেছো! তার ১০০টা থাপ্পরে শোধ নিবো বলে দিলাম। তার পর তোমার মায়ের বড় মুখ টা কয় যায় সেটাই দেখবো। আতিক এবার ভয়ে চুপসে গেল।
মায়ার এ অগ্নিকাণ্ডের মত মুখ রিলেশনৈ থাকতে দেখেছিল একবার। বিয়ের পর মায়া মাত্রাতিরিক্ত ভাবেই কেমন নরম হয়ে যায়।
মায়া আরাম করে খাটে পা তুলে বসে পরে আতিক চেয়ার দেখিয়ে বলে বসো।
আতিক বসে পরলো। মায়া শান্ত ভঙ্গীতে প্রশ্ন করে মেয়ে টার নাম আনহা তাই তো!!
আতিক ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে। সে কি জানে তুমি বিবাহিতা???
আতিক চুপ হয়ে আছে!! তাই দেখে মায়া বিরক্ত হয়ে বলে চুপ করে আছো কেন??
আস্তে করে বলে উঠে আতিক হ্যাঁ জানে।
কি দেখে পাগল হয়েছে তোমার???
কি বলতে চাচ্ছো তুমি???
কয় বছরের সম্পর্ক তোমাদের???
আতিক নিশ্চুপ হয়ে আছে। ডিভোর্স চাই না কি তোমার???
হ্যাঁ চাই। মায়া খাট থেকে উঠে এসে আরেক দফা থাপ্পর দিল। আর রাগী কন্ঠে বলে উঠে তোর সাহস কি করে হয় ডিভোর্সের কথা বলার!!? সালা তোর জন্য আমি এত কিছু সহ্য করি আর তুই অন্য মেয়ের সাথে পার্কে ঘুরে বেরাস???
আমি তোর জন্য কি করি নাই হ্যাঁ। এত অবহেলা এত কষ্ট আমি সহ্য করছি তোর জন্য উঠতে বসতে রোবটের মত তোদের সবার হুকুম পালন করছি। আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য???
মায়ার এমন রুপ দেখে আতিক অবাকের শেষ সীমানায় চলে যায়।
মায়া আতিকের উপরে ঝুকে ফিসফিস করে বলে আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অন্য কারো হতে পারবি না। বলে মায়া বাহিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতে লাগে
মায়া আমি পারবোনা তোমার সাথে থাকতে!!!
মায়া পিছন ফিরে আতিকের দিকে ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলে। আমার চোখের দিকে তাকা আর বল আমার সাথে থাকতে পারবি না।
আচ্ছা ছাড় 3মাস টাইম দে আমায় এর ডিভোর্স আর লাগবে না। এমনিই তোর লাইফ থেকে গায়ের হয়ে যাবো আমি!!!
আতিক তীক্ষ্ণ নজরে বলল। 3 মাস পর কোথায় যাবে তুমি???
বিয়ে করে নিবো অন্য কাউকে,,, কিহ???
মায়া আর কিছু না বলে বাহিরে চলে যায়,, প্রায় কিছু ক্ষণ পর হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে হাজির হয়।
মায়ার এমন আচারনে এখনো আতিকের ঘোর কাটেনি। দুই গালে দুই হাত দিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে।
যাও ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার খাবে। মায়ার কথায় আতিকের ঘোর কেটে যায়। আতিক গম্ভীর গলায় উত্তর দিল আমি খাবো না ক্ষুধা নেই। খাবি না মানে। ভালো করে বলছি বলে কথা কানে যাচ্ছে না।
মায়া আমার ক্ষুধা নেই আমি খাবো না। কেন আনহা কে কিস করেই ক্ষুধা মিটে গেছে না কি তোর??? সোজা ওয়াশরুমে যাবি না কি বেত দিয়ে পিটাবো এবার???
মায়া বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু এসব। তুমি আমার সাথে জোর করার ট্রাই করছো।
লাইক সিরিয়াসলি??? ওকে জোর করবো না!! এই করবো না কেন আমি তো তোর ওয়াইফ। আর ওয়াইফের তো ১০০% জোর রয়েছে। ওসব ছাড় তোর ক্ষুধা নেই তো কি হয়েছে। আমার ক্ষুধা লাগছে। খাবারের প্লেট টা হাতে নে আর আমায় তুলে খাওয়া।
ভাষা ঠিক করো বলছি। আর আমি তোমাকে তুলে খাওয়াতে পারবো না। কেন পারবি না বিয়ের আগে তো খুব বলছিলি আমাকে তুলে খাওয়াবি।
মায়া ভালো লাগছে না এসব প্লিজ লিভ মি
আর কিছু দিন সহ্য করো আমায় তার পর আর সহ্য করতে হবে না।
মায়ার এই কথার আগা গোড়া কিছুই বোঝতে পারছে না আতিক।
খাবারের প্লেট টা ঢেকে রেখে মায়া ছাদের উদ্দেশ্য চলে গেল।
ছাদের এক কোনায় ছোট একটা দোলনা রয়েছে । আগে প্রায় আসা হতো কিন্তু মাস খানেক ধরে ছাদে আর তেমন আসা হয় না।দোলনার পাশেই কয়েক টা ফুলের টব রয়েছে। কিছু গোলাপ গাছ। সখ মায়া নিজেই গাছ গুলো লাগিয়েছিল এখানে। কিন্তু যত্নের অভাবে কেমন নেতিয়ে গেছে।
মায়া গাছের দিকে এক মনে তাকিয়ে আছে। কেন জানি তার নিজেকে গাছের মত জিবন মনে হচ্ছে। সৃষ্টি জগতে সব থেকে নিঃস্বার্থ উদ্ভিদ প্রানী দের মাঝে গাছ হলো অন্যতম যা শুধু আমাদের কে দিয়েই যায়। বিনিময়ে কিছুই আশা করে না। গাছের পাতা থেকে শুরু করে গাছের গুঁড়ি অব্দি আমারা আমাদের কাজে ব্যাবহার করে থাকি। অথচ গাছ কে কিন্তু আমাদের মনুষ্য জাতি বিলুপ্তের পথে নিয়ে যাচ্ছে। অবহেলা অনাদরে বেড়ে উঠে এই গাছ।
মায়ার জিবন টা গাছের সাথে মিলাচ্ছে সে।
সব সময় এই সংসার টা কে সে নিঃস্বার্থ ভাবে শুধু দিয়ে গেছে বিনিময়ে অবহেলা ছাড়া কিছুই প্রতিদান পায়নি। যাকে হারানোর ভয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করছে। সে আজ নিজেই বলছে তার মুক্তি চাই।
নাহ আমি বেঁচে থাকতে আতিক কে অন্য কারো হতে দেখতে পারবো না। কিছু তেই নাহ।
আমার মৃত্যুর পর যা খুশি করতে পারে কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে নয়। অনেক হয়েছে সতী সাবিত্রী হয়ে থাকা। এবার আতিক বুঝতে পারবে মায়া কি জিনিষ।
আকাশ পানে চেয়ে দেখে মায়া,, আকাশে চাঁদ নেই। কিন্তু লক্ষ লক্ষ তারা মিটি মিটি করে জ্বলছে। যদি চাঁদ থাকতো তাহলে আকাশ টা আরো ঝলমল করতো। ঠিক তার জিবনের মত সব আছে কিন্তু ভালোবাসা টা নেই।
অর্ধ রাত সে ছাদেই কাটালো। তার পর উঠে সে ঘরের উদ্দেশ্যে নিচে নেমে গেল।
ঘরে প্রবেশ করে দেখে আতিক বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল মায়া। খাটের যে পাশে আতিক ঘুমিয়েছে মায়া সে পাশে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে পরলো। আতিকের মুখে ঝুঁকে পড়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো। কি আছে তোমার ভিতর জানি না। এত কিছুর পরো কেন ঘৃণা আসে না আমার??? এই মুখের দিকে তাকালে হাজার ও অভিযোগ ভালোবাসাই পরিনত হয়। আমার প্রতি কি তোমার এত টুকু মায়া হয় না। কি দোষ করেছি আমি???
মায়া অন্য পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে। তার পর কি মনে করে আতিক কে ঘুরিয়ে নেয়। মরার মত ঘুমাচ্ছে। আতিকে জরিয়ে ধরে বুকে মুখ লুকায়। এই বুকে ঘুমানোর জন্য কতই না আগ্রহ ছিল এক সময়। আতিক আগে রোজ বলতো বিয়ের পর আমার বুকে তোমাকে ঘুমিয়ে নিবো। কয় গেল সেই দিন??? ভালোবাসার রং কখন কোথায় পরিবর্তন হয় বোঝা বড় দায় 😥😥 তোমাকে এবার আমি চরম শাস্তি দিবো আতিক। যেটা তুমি সারা জীবন বয়ে নিয়ে বেরাবে। মায়া চোখ বন্ধ করে আতিক কে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে
বিকেলের দিকে মায়া আজ ছাদে যায় ফুল গাছ গুলো তে পানি দিতে।মায়া মনে করছে তার জিবন টা হয়তো অবহেলাই শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু এই গাছ গুলো কে চাইলেই আবার নতুন করে জীবন পাল্টিয়ে দেওয়া যায়।
মায়া গাছে পানি দিচ্ছে। পিছন থেকে সাফিক ডাক দেয় মায়া কে,,,
মায়া পিছন ফিরে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বলে। কিছু কি বলবে???
সাফিক কাচুমাচু করছে শুধু। এই দিকে আসো!!!
সাফিক মায়ার কাছে গিয়ে দোলনায় বসে পরলো । মায়া বলল কি হয়েছে বলবে তো আমায় এমন ভয় কেন পাচ্ছো??? বল কিছু কি লাগবে তোমার???
ভাবি কি করে বলবো বুঝতে পারছি না। ইয়ে মানে!!;
তুমি কোন দিন থেকে আমার কাছে এত ফরমালিটি শুরু করলে বল তো। কি হয়েছে বলে ফেলো।
আমার না ৫০০ টা টাকা লাগবে। তুমি কি দিতে পারবে। আমি তোমাকে আবার ফেরত দিয়ে দিবো প্রমিজ।
মায়া হাসতে থাকে সাফিকের কথায়।
তোমায় না হাসলেই বেশি সুন্দর লাগে ভাবী!!!
মায়া চট করে হাসি বন্ধ করে বলে। টাকা দরকার তার জন্য এত ফরমালিটি???
আগে বল টাকা টা কি করবে??? কোন মেয়ে কে ডেটে নিয়ে যাচ্ছো???
তা নয় ভাবি ?? আসলে!!
মেয়েটা কে সেইটা বল এত লুকাচ্ছো কেন।
সাফিক লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে ওর নাম হেনা!! আমাদের ভার্সিটিতে পড়া শুনা করে আমার সিনিয়র। মেয়ে টা অনেক ভালো। ওর প্রতি টা কথা আচারন আমায় মুগ্ধ করে। আই ইন লাভ ভাবী!!! আজ ওকে প্রপোজ করতে চাচ্ছি।
ওহো ওয়াও 😱,,, মেয়ে টা কি তোমায় ভালবাসে???
ওর আচারনে বুঝি সেও আমায় পছন্দ করে।
বাট একটা ছোট উপদেশ দিবো তোমায়!!
ভালোবাসো ভালোবাসা টা প্রথম প্রথম যেমন মিষ্টি মনে হয় সময়ের সাথে সাথে সেই মিষ্টি জিনিষ টা তিতা হয়ে যায়। তাই যা করবে ভেবে চিন্তে। ভালোবাসা সবার জিবন রঙিন করে না। কারো কারো জিবন অন্ধকার করে দেয়। মেয়েটা যদি সত্যি ভালোবেসে। তাহলে এসব প্রেম বাদ দিয়ে বিয়ে করে নিও।
নিশ্চয়ই ভাবি। আর ওয়ার্ডরোবের ড্রয়ারে আমার পার্স আছে ওখান থেকে ১০০০ টাকা নিয়ে যাও।
সাফিক খুশিতে বলে উঠে থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ সোনা ভাবী। হুমমম হয়েছে হয়েছে।
প্রায় ১৫ মিনিট পর সাফিক আবার ছাদে আসে। মায়া সাফিক কে বলে কি হলো টাকা পাওনি!!! সাফিকের কিছু ক্ষণ আগের খুশি হওয়া মুখ টা কেমন কালো হয়ে আছে।
সাফিক কি হয়েছে কোন সমস্যা???
সাফিক মায়ার কাছে আসে। মায়ার দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয়।
মায়া আত্মা পুরি শুকিয়ে এসে গেছে।
এটা তোমার রিপোর্ট তাই তো ভাবী!?? এটা তো নরমাল রিপোর্ট তাই না!???
চলবে_____????