#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব_14,15
#লেখিকা (মায়া)
মিথ্যা আশ্বাস আর নয় মায়া,,, এবার বাস্তব আশ্বাস পাবে!!
মায়া ভ্রু দুটো কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,,কি করে??
সময় হলে দেখতে পারবে!! সে সব ছাড়ো,, বল কোন ফ্লেভারের আইস ক্রিম খাবে,, তোমার জানা উচিৎ আতিক আমার আইস ক্রিমের কোন ফ্লেভার টা ফেবারেট।
আতিক মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল আমার তো মনে নেই?? প্লিজ আজ বল এবার থেকে মনে রাখবো প্লিজ।
মায়া বেডে শরীর টা এলিয়ে দিয়ে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,, তোমার মত আমিও যদি সব ভুলে যেতে পারতাম। তো আজ হসপিটাল বেডে থাকতে হতো না আমায়।
আতিক মায়ার কথা টা শুধু শুনলো কোন এনসার করলো না। কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। মায়া আতিকের যাওয়ার দিকে এক বার তাকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল।
২০মিনিট পর আতিক আবার ফেরত এলো। হাতে ফুলের তোড়া,, বিভিন্ন ফুল,,সব থেকে আকর্ষনীয় লাগছিল,,সাদা গোলাপের কাছে একটা বেলি ফুল টা কে। মায়ার খুব ইচ্ছে করছিল। বেলি ফুল টা নাকের কাছে এনে সুগন্ধি নিবে। কিন্তু আতিক কে কিছু বলল না।
আতিক ফুলের তোড়া টা বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিল টার উপর রেখে দিল। তার পর ঔষুধের কৌটা থেকে ঔষধ বের করে হাতে পানির বোতল নিয়ে মায়ার সামনে বসলো।
স্বাভাবিক ভাবে আতিক মায়ার দিকে ঔষধ নিয়ে বলল হা করো আর কোন কথা ছাড়াই চুপচাপ খেয়ে নাও।
মায়া কঠিন গলায় উত্তর দেয়,, আমি খাবো না। দয়া করে তোমার এসব কেয়ার বন্ধ করো।
আতিক মায়ার কথায় পাত্তা দিল না,, গাল চেপে ধরে বলল। খাবি না মানে?? তুই খাবি না তোর ঘাড় খাবে। হা কর,,মায়া গালের ব্যাথায় উঁহু করছে, এক হাতে ক্যানোলা ফুড়ানো আছে বলে নড়াতে পারছে। আর এক হাতেও ক্যানোলা সকালে খুলে দিয়েছে। ব্যাথার কারনে সেই হাত ও নাড়তে পারছে না মায়া। আতিকের কাছ থেকে ছাড়ার কোন রাস্তা না থাকায় মুখ খুললো মায়া।
আতিক টুক করে মায়ার মুখে ঔষধ দিয়ে পানি খাইয়ে দিল।
ফুলের তোড়ার ভিতর থেকে আইস ক্রিম বক্স বেড় করে মায়ার সামনে ধরলো। এমনি এমনি আইস ক্রিম ঢেং ঢেং করে যদি নিয়ে আসতাম তাহলে হসপিটালের ডাক্তাররা আমায় পাছায় লাত্থি দিয়ে বের করে দিতো। তাই এই আইডিয়া।
নাও তারাতারি ফিনিশ করো। ১ ঘন্টা পর ডাক্তার তোমাকে চেক আপ করতে আসবে।
মায়া আইস ক্রিমের বাটি টা হাতে নিল। বাটি খুলে দেখে ভ্যানিলা ফ্লেভার আইস ক্রিম ঋ মায়ার ফেবারেট।
আতিকের দিকে তাকিয়ে বলল,,মনে নেই নাকি??? হুমমম মনে নেই।
মায়াকে ডাক্তার চেক আপ করতে আসছে,,
গুড ইভিনিং মিস মায়া!! মায়া একটা শুকনো হাসি দিল।
চেক আপ শেষে,, কেমন ফিল করছেন এখন?? মায়া ডাক্তারের কথায় পাত্তা দিয়ে নিজেই এক সাথে কয়েক টা প্রশ্ন করে বসলো। আমি তো আপনার থেকে জানতে চাচ্ছি আমার অবস্থা কেমন ডক্টর??? আর আমার রিপোর্ট কোথায়?? রিপোর্ট তো আপনি দেখছেন??? রিপোর্ট কেমন??? কথা গুলো অন্তত চিন্তিত কন্ঠে বলল মায়া।
ডক্টর মায়ার কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আতিকের দিকে তাকালো,,, ডাক্তার আর আতিকের মাঝে চোখে চোখে কি যেন কথা আদান প্রদান হচ্ছে। যা মায়ার চোখ এরিয়ে গেল না।
মায়া ডক্টর কে আবার জিজ্ঞেস করল!! কি হলো ??? আতিকের দিকে কি তাকাচ্ছেন কেন?? আমাকে বলুন।
ইয়ে মানে মিস মায়া আপনার কন্ডিশন আগের থেকে অনেক ভালো,, শরীর একটু দূর্বল। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খাবেন এক দম ফিট হয়ে যাবেন। আর ক্যান্সার নিয়ে এতো ঘাবড়াবেন না,, রক্ত চেন্জ করার জন্য আসতে হবে আর!!
আর কি ডক্টর??? ২মাসে যে শরীরের অবনতি করেছেন তা পুষাতে একটু টাইম লাগবে। এর বেশী কিছু না?? এবং ফ্রি মাইন্ডে থাকবেন। এক দম পেশার নিবেন না!! নিয়ম মাফিক ঔষধ খাবেন।
মায়া অন্যমনস্ক হয়ে জিজ্ঞাস করল তাহলে আমাকে ক্যান্সারের জন্য লাইফ ওয়ারনিং দেওয়া হচ্ছে না। আপনি বলতে চাচ্ছেন,,যে এখন আমার লাইফ ঔষধের উপর???
এমন টা নয় মিস মায়া,, তাহলে কি?? ক্যান্সার এক বারে নিক্রিয় হয়ে যাবে???
আপনার কি মনে হয় যাদের ক্যান্সার হয় তারা সবাই মারা যায়?? এমন টা নয়। পেসেন্ট কে রোগের সাথে স্ট্রাগল করতে হয় বুঝছেন।আর আপনাকেও করতে হবে। আর বলতে হবে আমি অসুস্থ হবো না। নিজের উপর ভরসা রাখবেন। আপনি অবশ্যই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন!!
মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল। জ্বি নিশ্চয়ই।
আর ডক্টর আমি যখন এখন ফিট তাহলে আজই আমি বাসায় যেতে চাই। আমার এক দম ভালো লাগছে না এখানে।
ডাক্তার একটু উত্তেজিত হয়ে বলছেন। আপনাকে রিলিজ দেওয়া অসম্ভব।
মায়া কঠিন মুখ করে বলল কেন??? আমি তো ফিট এখন। বাসায় গেলে কি প্রবলেম?? নাকি মিথ্যা বলছেন এসব??
ডাক্তার চোখ দুটো ছোট করে হাসার চেষ্টা করে বলল। এসব কি বলছেন মিস মায়া মিথ্যা কেন বলবো???
আতিক এত ক্ষন দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল। হাত দুটো পকেটে ঢুকিয়ে বলল। হ্যাঁ আমরা বাসায় যাবো। কিন্তু এখন তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কাল যাবো আমরা ওকে।
ডাক্তার অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল বাট মিস্টার আতিক!!
ডাক্তার কে আর কিছু বলতে না দিয়ে আতিক কে উদ্দেশ্য করে বলল বাহিরে চলুন বলছি।
মায়া স্পষ্ট বুঝতে পারছে। আতিক আর ডাক্তার মিলে তাকে ঘোল খাওয়াচ্ছে। রিপোর্ট নিয়ে কিছু তো একটা লুকাচ্ছে। অবশ্যই বের করব কি সেটা!!!
সকালে মায়াকে রিলিজ দেওয়া হয়। কিন্তু মায়া কে কয়েক দিন পর আবার হসপিটালের আসতে বলেছে।
মায়া বাসাতে এসে যেন শান্তির নিশ্বাস নিচ্ছে। হসপিটাল এমন একটা জায়গা যেখানে ভালো মানুষ ও অসুস্থ হয়ে পড়বে কয়েক দিন থাকলে। আতিক বাসা তে নেই। মায়ার কতক গুলো ঔষধ নিতে গেছে।
মায়া খাটে হেলান দিয়ে কপালে হাত রেখে মগ্ন হয়ে কি যেন ভাবছে। আসমা মায়ার জন্য ফল কেটে নিয়ে এসেছে।
আসমার হাতে ফলের প্লেট দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মায়া।
তারাতারি খেয়ে নাও। আমি একটু আসছি আচ্ছা। আসমা চলে যেতে নিলে মায়া পিছন থেকে ডেকে বলে,, মা আমার কাছে কি একটু বসবেন??
আসমা ইতস্তত হয়ে মায়ার সামনে বসলো। হ্যাঁ কিছু কি বলবে তুমি?? আসলে মা আপনি ও আমার ক্যান্সারের কথা জানার পর থেকে এমন ভালোবাসা দেখাচ্ছেন??
আসমা মায়ার কথায় কোন রিয়াকশন দেখালো না। কি হলো মা বলুন??
আসমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে মায়া নিজেই বলে আপনাকে কিছু কথা বলবো মা। যদি কিছু মনে না করেন তবে???
আচ্ছা কি বলবে বলো!!!
আমি তো খারাপ মেয়ে তাই না??? আমাকে তো বাসা থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ?? তাহলে আমি তো আবার আপনার বাসায় চলে আসলাম আর ফল কেটে খাওয়াচ্ছেন???
আসমা মুচকি হেসে বলল,, লজ্জা দিচ্ছো??
লজ্জা দিচ্ছি না। আসলে কি জানেন!!
বউ শব্দের অর্থ টাই এখনো আমি বুঝে উঠতে পারলাম না?? আর এক বউয়ের আসল বাড়ি কোন টা সেটাও বুঝে উঠতে পারলাম না।
আচ্ছা মা!! বিয়ে হওয়ার পর নতুন বউকে সবাই বলে শাশুড়ী মায়ের মত দেখতে। পারা প্রতিবেশী আত্বীয় স্বজন সবাই এক কথা বলে।
আর শাশুড়ী কে কয় জন মানুষ বলে তোমার বাড়ির বউ টাকে নিজের মেয়ের মত করে দেখো।
নিজের মেয়ের মত দেখতে কিন্তু মেয়ের মা বাবা বলে ছাড়া আর কেউ বলে না।
আর একটা কমন ডায়লগ শাশুড়ী কে ছুটি দিয়ে দাও। ছেলের বউ এসেছে বাসায়। শাশুড়ী এখন বিশ্রাম করবে শুধু। এই কথা কেন বলে সবাই মা??? বিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে কি শুধু বাসার কাজ করানোর জন্য আর আপনার বংশ বৃদ্ধির জন্য নাকি??
নতুন বউ এমনিই তো অনেক ঘাবড়ে থাকে,, নতুন জায়গা,,খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। মেয়ে টা অবশ্যই সংসারের দায়িত্ব নিবে,, কেন নিবে না??
এই সংসার টা তো তার ও এখন। কিন্তু সবাই এভাবে এসে হকুম কেন করে???
আর একটা কথা কি বউয়ের মানুষের একটু কাজ এদিক থেকে ওদিক হলে। মা চাচি তুলে বোকা ঝোকা করা হয় কেন???
মা চাচিরা কে কি আপনারা ঘরের বউ করে নিয়ে এসেছেন??? ভুল হতেই পারে সেটা ভালো ভাবে সুধরে দিন।
বউয়ের ভুল পেলে। এই ঐ ঘর সবাই কে বলে বেড়াতে হয়। কেন??? সম্মান কি বাড়ে নিজের বউয়ের খারাপ আলোচনা করে। নাকি আরো কমে???
নিজের বাড়ির বউ কে মেয়ের মত দেখেন বলে গলা উচু করেন। কিন্তু আপনি কি কখনো নিজের খারাপ কোন কথা ছেলে মেয়েদের কথা এই বাড়ি ঐ বাড়ি বলে বেরান???
একটা কথা কি জানেন?? শাশুড়ী হয়ে ছেলের বউ কে শাসন করবেন না। নিজেকে বউয়ের জায়গা তে বসাবেন তার পর শাসন করবেন,,কারন বউয়ের জায়গা সম্পর্কে আপনাদের ও ধারনা টা খুব ভালো করে আছে!!! তাই নয় কি???
চলবে____????
#পর্ব_15
#অবহেলার সংসার 🏘️
#লেখিকা (মায়া)
আগে নিজের বউ হওয়ার পর কেমন জীবন চেয়েছিলেন সেটা মনে করবেন তার পর,, নিজের ছেলের বউকে ও সেই মুতাবেক চালাবেন।
কিন্তু আপনারা তা করেন না বরং ছেলে কে বিয়ে দেওয়ার পরপরই আপনারা কর্তি হয়ে উঠেন। আপনারা ভুলে যান যে এক সময় আপনারাও বউ ছিলেন। আপনারা মনে করেন আপনাদের শাশুড়ী যেমন ব্যবহার করেছিল আপনাদের সাথে সেই রকম নিজের ছেলের বউয়ের সাথেও করতে চান।
এই রকম আচার আচরণে,, অবহেলায়, নির্যাতন করার পর বউয়ের মনে কি আপনারা মায়ের জায়গায় করে নিতে পারেন??? শেষ বয়সে এই অত্যাচার আপনার উপর সে তো তুলবেই।
আপনি তো নিজেও এক জন মেয়ে আপনার মা কি আপনার সাথে এই আচারন করতো??
কিছু একটা হলেই বউ দের শুনতে হয়। বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে,,বাড়ি থেকে বের করে দিতে,, বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিতে,, কেন???
আমি বলছি না সব শাশুড়ী এক হয়!! কিছু শাশুড়ী এমন আছে যে নিজের মায়ের থেকেও বেশি আগলে রাখে খেয়াল রাখতে জানে যার কারণে আজো শাশুড়ী নামক শিক্ষিকা কে মেয়েরা কম ভয় পায়।
আবার ভালো শাশুড়ীর কপালে এমনো বউমা জোটে যে তারা নিজেই নির্যাতনের শিকার হন। হ্যাঁ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এমন সব বউদের উপর যারা আসলে মেয়ের মত হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
অচেনা অজানা একটা জায়গা,,সব সদস্য নতুন,, এই মানুষ গুলোর সাথে সারা জীবন কাটাতে হবে,,আপন করে নিতে হবে। নিজের স্বপ্ন কে মেরে ফেলতে হবে নিজের খুশি কে দাফন করে দিতে হবে। এত কিছু করার আপনার ছেলের বউ হতে হবে। তার পর ও কেন একটু খেয়াল আপনি শাশুড়ী রাখতে পারেন না নিজের বাড়ির বউ টার। বাবার বাড়িতে যেতে দিতে চান না!!
আপনার কি ইচ্ছে করতো না মা??? নিজের মা বাবার সাথে দেখা করতে,, তাদের সাথে আগের মত গল্প করতে। ভাই বোনের সাথে খুনসুটি করতে। অবশ্যই করতো। নিরবে আপনি ও চোখের পানি ফেলেছেন যখন মা বাবার কথা মনে পড়ছে। সব কিছু একটা সময় আপনিও উপলব্ধি করেছেন। তার পর ও ছেলের বউয়ের মন বুঝতে পারেননি।
ঘুম থেকে সবার আগে উঠে নাস্তা করে দিয়েছে কিন্তু সকালের নাস্তা টা বউয়ের আর করা হয়নি। বাসার নানা কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে গেছে এক বার এসে জিজ্ঞেস করেননি। আমি খেয়েছি কি না। দুপুর রান্না টা আবার সবাই কে খাইয়ে দিয়ে,,,নিজে গোসল করে খেতে বসে শান্তি নেই,,বউমা এই করো ঐ করো। দরজায় কে এসেছে দেখো আরো অনেক।
আবার বিকেলের চা নাস্তা বানানো হয়। সব সময় বলে দেন,৩কাপ চা করো না ৪ কাপ চা করো। কখন ও বলেননি তোমার জন্যেও এক কাপ চা করো,,বিকালে সবাই মিলে আড্ডা দিতে দিতে চা খাওয়া যাবে। রাতের রান্না করে আবার আপনাদের খাইয়ে দিয়ে,,আপনারা যে যার ঘরে চলে যান। কেন???
বলতে পারতেন না এক সাথে সবাই খাই আজ??? ডাইনিং টেবিলে কি চেয়ার ছিল না???
আসমা মায়ার কথা গুলো চুপচাপ শুনছিল,,এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মায়ার চোখের দিকে। মায়া এই দিকে বার বার চোখের পানি মুছতিছে।
বউ,, আর মা দুটো তো ভিন্ন মানুষ ভিন্ন তাদের চাওয়া ভিন্ন তাদের দায়িত্ব কর্তব্য।
তাহলে মানুষ জন কেন বলে?? বউ আগে না মা আগে???
কোথায় বউ?? আর কোথায় মা?? আপনি মা আপনার ছেলে কে জন্ম দিয়েছেন,, লালন পালন করেছেন বড় করছেন,, বিয়ে দেওয়ার পর আপনার সেই ছেলেটাকে বাকি টা জীবন আগলে রাখার দায়িত্ব পালন আপনার বাড়ির বউ। তাহলে দুজন কেন পার্থক্য করি আমরা?? ভুলে কি করে যায় আমরা যে সেই বউ টাও এক সময় মা হবে। তাকেও মা নামে সম্বোধন করা হবে।
কেন এতো মা বউকে নিয়ে বৈষম্য?? আসেন বউ কে মেয়ের মত দেখেন আপনি,, শাশুড়ী মা নিজেও বউ কে নিজের মেয়ের মত দেখুক।
মা মেয়ের যেমন খুনসুটি হয় তেমন বউ শাশুড়ীও করুক।
বউকেও একটু জিজ্ঞেস করুন,, তোমার কি পড়তে ভালো লাগে?? কত দুর অব্দি পড়তে চাও??? স্বপ্ন কি তোমার??? পড়া শুনা করবে কি??? আচ্ছা তোমার ইচ্ছে কি???
মেয়ের মত আদর করে বউ কেও একটু ভালোবাসুন। আপনি তো জানেন মেয়েরা মমতার প্রতীক। ভালোবাসার কাঙ্গাল। সব মেয়েরাই ভালোবাসা,, সম্মান চাই। এক জন পতিতাও তাই আশা করে।
আসমা মায়াকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দেয়। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আতিক সাফিক আর আনোয়ার। সবার চোখের কোনে পানি।
মাফ করে দাও মা!! ভুল হয়ে গেছে। ছিহ মা কি বলছেন। মা ভুল করলে বাচ্চাদের কাছে কি সরি বলতে হয় না কি?? আর আমি রাগ করে কিংবা ক্ষোভে নেই তাই মাফ চাইতে হবে আপনাকে। আসমা মায়ার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে চলে যায়।
রাতে সবাই খেতে বসেছে। আজ সব মায়ার জন্য স্পেশাল রান্না করা হয়েছে। কিন্তু এক চামচ ভাত ও মায়া এখনো শেষ করতে পারেনি। আতিক শুধু আড় চোখে তাকাচ্ছে মায়ার দিকে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ। করছে। আতিক বলল তোমারা ঘুমাতে যাও। আমি মায়ার সাথে আছি।
গালে হাত আতিক মায়ার খাওয়া দেখছে।
আতিক কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া বিরক্ত হয়ে বলল,,, কি সমস্যা??? এভাবে আমার খাওয়া দেখছো কেন?? আবার কি খাইতে মন চাচ্ছে?? তো হা করো আমি খাইয়ে দেয় তোমায়।।
আতিক মায়ার প্লেট কেড়ে নিল তাতে আরো দু চামচ ভাত উঠিয়ে নিল।
ঐ কি করছো তুমি?? সত্যি সত্যি খাবি না কি?? আতিক চুপচাপ ভাত মেখে মায়ার মুখের সামনে ধরলো। হা কর!!
তুমি এত গুলো ভাত নিয়েছো তুমিই খাও আমি খাবোনা বলে মায়া উঠে যেতে নিলে আতিক হাত ধরে নেই। কোথায় যাচ্ছো?? বসো এখানে কোন কথা ছাড়া খেয়ে নাও ঔষধ খেতে হবে। এক চামচ ভাত ৮০ ঘন্টা ধরে খাচ্ছে।
আতিক আমি খাবো না প্লিজ!! কেন জোর করছো???
তুই খাবি না ক্যান??? তোকে কি সুস্থ হওয়া লাগবে না?? নাহ লাগবে না আমি সুস্থ হতে চাচ্ছি না কেন এত অধিকার দেখাচ্ছো???
ইউ আর মাই ওয়াইফ,, তাই জোর ১০০% দেখাতে পারি,,আর হবি না মানে তোকে নিজের জন্য সুস্থ হতে হবে না। আমার জন্য সুস্থ হবি তুই। বুঝছিস???
এই তুই তোকারি কেন করছিস?? আর তোর বউ মানে??? দু দিন পর তো আনহা কে বিয়ে করবি,, ডিভোর্স দিবি আমাকে।
আতিক ভ্রু কুঁচকে বলল। সেটা পরে দেখবো এখন খাবি কি তুই??
৪দিন হয়ে যাচ্ছে অফিস যাস নাই আনহা কি হার্ট অ্যাটাক করেনি???
বস কে বলা আছে আমার ওয়াইফ অসুস্থ তাই ছুটি নেওয়া আছে। আর আনহা হার্ট অ্যাটাক করলে তো হসপিটাল থেকে কল আসতো তাই নয় কি???
মায়ার যেন রাগ উঠছে এবার। রাগে গজগজ করতে করতে বলল। তাহলে আমাকে আলগা পিরিত দেখাচ্ছ কেন?? যাও তোমার ঐ আনহার কাছে। দূরে থাকো আমার থেকে।
আগে খেয়ে নাও তারপর বলছি। খাবো না?? গাল চেপে ধরে খাওয়াতে হবে কি???
মায়া চট করে দুই গালে হাত বলছে। কখন নাহ। প্লিজ রিকোয়েস্ট করছি এবার হা করো। আতিকের অসহায় ভঙ্গিটা বেশ ভালো লাগলো মায়ার,,, অভিমানী মুখ করে মায়া হা করলো। ছোট বাচ্চাদের মত করে ঠুসে ঠুসে খাওয়াচ্ছে মায়াকে।
আর খেতে পারবো না প্লিজ,,আর এক লোকমা হা করো!! নাহ আর আধা লোকমাও নয় পেট ফেটে যাবে আমার প্লিজ। চোখ গরম করে আতিক মায়ার দিকে তাকাই,,বলেছি আর এক লোকমা খাও???
মায়া আতিকের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে। আগে যখন তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে না খেয়ে টেবিলে বসে থাকতাম তখন তো আমার সাথে বসে খাবার খাওয়ার সময় টুকু ছিল না তোমার!!! আমি খেয়েছি কি না সেটাও জিজ্ঞেস করতে না। আর বিয়ের আগে কি বলতে?? আমাকে নাকি রোজ তুলে খাওয়াবে নাকি!!!
মায়ার চোখ ছলছল করছে। আতিক খাবার প্লেট টা রেখে মায়ার দিকে এক গ্লাস পানি দিল। পানি টা পুরো টা খেয়ে নাও। একটু বসো আমি আসছি।
আতিক রুমে চলে গেল। মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পানি খেয়ে নিল।
আতিক ঔষধ এনে মায়ার হাতে দিল। কোন কথা ছাড়া মায়া ঔষধ টা খেয়ে নিল। হুট করে মায়ার মন টা ভিষন খারাপ লাগছে এখন।
ঘরে এসে মায়া বারান্দায় চলে গেল। মায়ার পিছন পিছন আতিক ও বারান্দায় গেল।
দুই জনেই নিশ্চুপ হয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার,, ঝিঁঝিঁ পোকা ডাক শুনা যাচ্ছে শুধু।
মায়া নিরবতা ভেঙ্গে বলল। আচ্ছা আতিক আমার কি খুব কমতি ছিল???
মানে কি বলতে চাচ্ছো??
অন্য মেয়ের প্রতি ঝোঁক কেন সব সময় তোমার??
মায়া প্লিজ ছাড়ো এসব। কেন ছাড়বো?? বল আমার কি কমতি??? আমার দোষ কি আজ তোমায় বলতেই হবে। কেন তুমি অন্য মেয়ের সংস্পর্শে যাও???
আমার ভালোবাসাই কোন জায়গায় ত্রুটি ছিল??? কত টা কষ্ট হয় জানো??? যখন এটা ভাবি এত ভালোবাসার পর আমি মানুষ টাকে একান্ত আমার করে নিতে সক্ষম হয়নি।
আচ্ছা তুমি কি দেখতে পারবে আমায় অন্য কারো সাথে!??
কি বলছো এসব তুমি??
নাহ বল আমায় পারবে অন্য কারো সাথে আমায় দেখতে?? কখন ও না।
তাহলে আমি কি করে পারি??? এত ভালোবেসে কি লাভ আতিক বলবে আমায়?? যখন মানুষ টা কে অন্য কারো সাথে দেখতে হয়। তুমি কি জানো এই যন্ত্রনা টা কত টা গভীর!?? এই বুকের ভিতর লাগে এই এখানে। পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মধ্য রাতে তুমি তো ঘুমে বিভোর। কিন্তু আমার কি হয় জানো??? বুক ফাটা কান্না। আমি একটু চিৎকার করে কাঁদতেও পারিনা।
ভালোবাসা সত্যি হলে কখন দ্বিতীয় কাউকে ভালো লাগতে পারে না আতিক। কখন পারে না। তুমি কখন আমায় ভালোই বাসোনি।
মায়া কাঁদছে।
আতিক মায়া কে শক্ত করে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিল। সরি মায়া,,রিয়ালি রিয়ালি সরি।
চলবে_____?????
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।