অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব 12,13

#অবহেলার সংসার 🏘️,পর্ব 12,13
#লেখিকা__(মায়া)
12

হসপিটালের করিডোরের দেওয়াল ঘেঁসে বসে আছে আতিক। চোখের কোনে পানি। বার বার ঘন শ্বাস নিচ্ছে। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে আসমা আর সাফিক। আসমার চোখে মুখে আতংকের ছাপ। সাফিক ছোট বাচ্চার মত চোখের পানি ফেলছে।

মায়াকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ডাক্তার মায়ার ট্রিটমেন্ট করছে।

আতিকের মাথায় শুধু একটা জিনিষই ভাসছে। ওয়াশরুমের ফ্লোরের তাজা রক্তের কথা। আতিকের মনে হচ্ছে তার শরীর এখানে পরে রয়েছে কিন্তু জান যেন অন্য কোথাও চলে গেছে।

মায়াকে হসপিটালে নিয়ে আসতেই ডাক্তারের জেরিনের সাথে দেখা হয়ে যায়। ডাক্তার জেরিন যার কাছে মায়া কে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছিল আতিক। আতিক কে দেখেই ডাক্তার জেরিন বলে উঠে। মিস্টার আতিক না আপনি??? মায়া কে কোলে করে আতিক হসপিটালেই প্রবেশ করে। প্লিজ ডাক্তার মায়া কে একটু দেখেন। মায়ার দিকে তাকিয়ে বললেন। ওহ মাই গড উনার মুখে রক্ত তো???

তারাতারি নিয়ে চলেন,, ডাক্তার জেরিনের হেল্পে মায়াকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। অন্যান্য ডাক্তাররা মায়াকে দেখছে।

ডাক্তার জেরিন আতিকের কাছে আসে এবং খুব কঠিন গলায় বলে,, আমি আজ অব্দি আপনার মত এত কেয়ার লেস মানুষ দেখিনি। আর আপনার ওয়াইফ কে তো বাদিই দিলাম। নিজের ক্যান্সার রিপোর্ট হাতে নিয়ে পাগলের মত হাসছিল। ক্যান্সার রিপোর্টের কথা শুনে আতিক থমকে যায়। ক্যান্সার রিপোর্ট মানে??? কাঁপা কাঁপা গলায় বলে কার ক্যান্সার। আসমা নিজেও বুঝতে পারছে না ডাক্তারের কথা। কিন্তু সাফিক চুপসে গেছে।

ডাক্তার জেরিন কিছু টা অবাক হয়ে বলেন। কেন আপনার ওয়াইফের ক্যান্সার আপনারা জানেন না। এন্ড কয়েক দিন আগে আমি আপনার ওয়াইফ কে ফোন করছিলাম। কিন্তু আপনার ওয়াইফ ফোন রিসিভ করেননি। বাধ্য হয়ে আপনাকেও কল দিয়েছিলাম কিন্তু আপনিও রিসিভ করেননি।

উনার রিপোর্ট টা খুব একটা ভালো ছিল না। এবং প্রতি মাসে রক্ত চেন্জ করার কথা ও তাকে বলা হয়েছিল। কিন্তু মিস মায়া সেই রিপোর্ট নিয়ে গেলেন আর আসলেন না।

আর আমি যত টা বুঝতে পারছি আপনার ওয়াইফের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আমি উনাকে ভালো করে বলেছিলাম,, রক্ত চেন্জ না করলে লাইফ রিস্কে থাকতে পারে।
আর সব থেকে আশ্চর্য এটা নিয়ে হচ্ছে। যে মিস মায়া ক্যান্সারের কথা জানালেন না কেন। মিস্টার আতিক কাছের মানুষের খেয়াল রাখতে শিখেন।

ডাক্তার জেরিন সেখান থেকে চলে যায়। আর আতিক যেন পাথর হয়ে গেছে।

সাফিক আর আসমার দিকে তাকালো আতিক। সাফিক আতিকের কাছে এসে বলল। তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাবীর কিছু হবে না। আসমা বেগম নিজেও স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

প্রায় এক ঘন্টা পর এক জন ডাক্তার বাইরে আসলো। আতিক হন্তদন্ত হয়ে উঠে ডাক্তারের কাছে গেল।

ডাক্তার আমার ওয়াইফের অবস্থা কেমন?? ডাক্তার চিন্তিত কন্ঠে বললেন। মিস্টার আতিক ক্যান্সার একটা খুব ড্যানজারজ রোগ,,এই রোগে এমনিই লাইফ রিস্ক থাকে,, তার উপর আপনার ওয়াইফ কোন প্রকার মেডিসিন হয়তো নেননি। কজ মাত্র ২মাস হচ্ছে উনার শরীরে এই রোগ দেখা দিয়েছে। কিন্তু শরীরের যা অবনতি হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে উনার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল,, বাট একটা প্রবলেম খুবই ঘাবড়ে যাচ্ছি। উনি নিজেই নিজেকে মৃত্যুর মুখে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিকজ একজন পেসেন্ট কে সুস্থ করার জন্য ডাক্তাররা যত খানি চেষ্টা করেন। ঠিক ততখানি স্ট্রাগেল এক জন পেসেন্ট তার নিজের রোগের সাতে করে। যে সে সুস্থ হবে। কিন্তু আপনার ওয়াইফ করছে তার বিপরীত। সে নিজেই শরীর ছেড়ে দিয়েছে। বেঁচে থাকতে সে নিজেই চাচ্ছে না। আর তার জন্য আপনার ওয়াইফের জ্ঞান ও ফিরছে না। দেখুন আমরা যত টা সম্ভব চেষ্টা করছি,, বাকি টা আল্লাহর হাতে।

আতিক ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে আবার।সাফিক আসমা দৌড়ে আতিকের কাছে আসে। আতিক তুই ঠিক আছিস?? এতো ঘাবড়ে যাচ্ছিস কেন তুই???

ভাইয়া ভেঙ্গে পরিস না তুই এভাবে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। সাফিক আতিক কে শান্তনা দিতে পারলেও নিজেকে শান্তনা কিছুতেই দিতে পারছে না। সাফিকের ভিতর টাও কেঁদে উঠছে বার বার।

আতিক চোখে পানি,,সেই নোনা অশ্রু তার গাল বেয়ে টপ টপ করে পরছে। প্রথম বার তার মনে হচ্ছে সে মায়াকে হারিয়ে ফেলছে।

আতিক OT এর বাইরে কাঁচের দরজায় হাত দিয়ে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আতিকের ইচ্ছে হচ্ছে মায়াকে এক বার ছুঁয়ে দিতে। মায়াকে অক্সিজেন মাস্কে দেখতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মায়ার চেহারার দিকে যেন তাকানো যাচ্ছে না। কত টা শুকিয়ে গেছে।

আজ মায়ার বলা কথা গুলো খুব মনে পড়ছে। রিলেশনে থাকতে মায়া আতিক কে এক বার জিজ্ঞেস করেছিল।

আচ্ছা আতিক একটা কথা বলি???
ঐ কি করছো এত ফোনের ভিতর?? আমি তোমার সাথে বসে আছি আর তুমি ফোন নিয়ে পরে আছো??? মায়া আতিকের হাত থেকে ফোন টা কেড়ে নিয়ে ব্যাগে রেখে দিল।

মায়া আমার ফোন!! দিবো না।
প্লিজ একটা কাজ করছি দাও,,৫মিনিটের জন্য দাও।

নাহ আর এক মিনিট ও না। আমি কি বলছি সেটা বল আগে। মায়া এসব কিন্তু ভালো লাগে না। ফোন দাও বলছি।

মায়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আতিকের দিকে। কিহ সমস্যা?? আমার থেকে ফোন দরকার আগে???
আতিক হাল ছেড়ে দিয়ে বলল আচ্ছা কি বলবে বলো।

মায়া একটা হাসি দিয়ে বলল আচ্ছা কখনো কি তোমার বুকের বাম পাশে ব্যাথা করছে???

আতিক নিজের বুকের পাশে হাত দিয়ে বলল আমার হার্টের রোগ নেই মায়া।

মায়া রাগী লুক নিয়ে বলল। কুত্তা আমি বলছি কি আর উনি বলছে কি?? ব্যাথা করে কি করে না সেইটা বল???

ব্যাথা করবে কেন আমার ব্যাথা করে না কেন বলতো??? তোমার কি কখনো কাউকে হারানোর ভয়ে বুকের বাঁ পাশে ব্যাথা করেনি??

আতিক স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিয়ে বলে কৈ না তো?? আর আমি কাউকে হারানোর ভয় কেন করবো??

মায়ার রক্তিম চেহারা টা নিমিষেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল। তুমি কাউকে হারানোর ভয় পাও না?? কিন্তু সত্যি ভালোবাসলে হারানোর ভয় তো এমনিই আসে।

আতিক মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল তোমার ব্যাথা করে??? মায়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল হুম করে। ভিষন ভাবে ব্যাথা করে। বিশেষ করে মাঝরাতে যখন এই ব্যাথা উঠে। তখন সহ্য করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

আতিক একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে আমি তো তোমার সাথেই আছি ভয় কেন পাও???

সত্যিই কি আছো জানি না।

ভাইয়া!!! আতিকের নাম ধরে ডাকাই ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসে।

পিছনে ফিরে দেখে সাফিক। ভাবির জ্ঞান কখন ফিরবে?? আতিক মায়ার দিকে এক বার তাকিয়ে বলে। ওর নিজেরই বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই। নিজের শরীর কে একে বারে ছেড়ে দিয়েছে। সব কিছু আমার জন্য হয়েছে,, আমি দায় এসবে সাফিক,, আমি দায়। সাফিক কে জরিয়ে ধরে কেদে দেয় আতিক।

আসমা একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে সব। কেমন জানি তার অপরাধ বোধ কাজ করছে ভিতরে ভিতরে।

আতিক চোখ মুছতে মুছতে বলে। তোমারা বাসায় যাও রাত হয়ে এসেছে। আসমা ছেলের কাছে এসে বলে কি বলছিস তুই এভাবে তোদের রেখে আমরা চলে যাবো??? মা এখানে থেকে তো তোমাদের লাভ নেই। আমি আছি তো। বাবাকে কিছুই বলা হয়নি আর মায়ার পরিবার কেও নয়। বাবা বাসায় এসে বাড়ি ফাঁকা দেখলে চিন্তা করবে তোমরা যাও।
বাবাকে ফোন করে বলে দিচ্ছি তাহলে তো হয়ে যায় ভাইয়া!!!

নাহ তোমরা যাও দরকার হলে আমি ফোন দিবো। কিন্তু ভাইয়া তোকে এভাবে একা রেখে যেতে পারবো না।

তোমরা চিন্তা করো না।

আতিক,, সাফিক,আসমাকে বুঝিয়ে বাসায় দিয়ে পাঠায়। এখন আতিক একা আছে।

আতিক OT এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল আমার আজ বা পাশে খুব ব্যাথা করছে মায়া!! খুব করে ব্যাথা করছে। আতিক বুকের বাম পাশটায় হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে রেখেছে যেন কান্নার শব্দ না আসে।

হঠাৎ আতিক দেখে মায়া কেমন যেন ছটফট ছটফট করছে। হাত পা ছুটাছুটি করছে। আতিক ভয় পেয়ে OT এর ভিতরে গেল। নাহ মায়া শান্ত হচ্ছে না। আতিক বার বার ডাকছে। মায়া কি হচ্ছে তোমার??? জোরে জোরে ডাক্তার কে ডাকতে লাগল আতিক।

ডাক্তার, ডাক্তার প্লিজ এই দিকে আসুন। মায়া কেমন করছে। ডাক্তার।

মায়া তোমার কিছু হবে না!! মায়া এই মায়া।

চলবে____????

#পর্ব__13
#অবহেলার সংসার 🏘️
#লেখিক__(মায়া)

আতিক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মায়ার দিকে,, মায়ার একটা হাত শক্ত করে ধরে,,মায়ার শরীরের রক্ত চেন্জ করা হচ্ছে,, দুই হাতেই ক্যানোলা ফুড়ানো,,
একটু আগের ঘটনা মনে পড়তেই তার আত্মা পুরি কেমন শুকিয়ে আসছে।

কিছু ক্ষন আগের ঘটনা___

আতিক পাগলের মত ডাক্তারদের ডাকছিল। মায়ার ছটফটানি যেন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে দিচ্ছে। আতিক ডাক্তারের কাছে যেতে পা বাড়ালো,, কিন্তু সে বুঝতে পারলো মায়া তার হাত খামচে ধরে রেখেছে। মায়ার দিকে এক বার তাকিয়ে দেখে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ডাক্তার আর এক জন নার্স প্রবেশ করে ICU তে।

প্লিজ দেখুন না ডাক্তার,,মায়া কেমন করছে,, নার্স দ্রুত বুঝতে পারে অক্সিজেন সিলিন্ডারে অক্সিজেন নেই।

নতুন অক্সিজেন সিলিন্ডারে জলদি করে ট্রান্সফার করে দিল। অক্সিজেন মাস্ক টা মায়ার মুখে লাগাতেই যেন সব ছটফটানি বন্ধ হয়ে গেল। আস্তে আস্তে আতিকের হাত টাও ছেড়ে দিচ্ছিল মায়া।

আর ডাক্তার নার্স টা কে বকাবকি করছে। অক্সিজেন শেষ হয়ে যাচ্ছে নাকি যাচ্ছে না সেই জায়গায় কি খেয়াল রাখতে হবে না??? আর একটু দেরি হয়ে গেলে কি হতে পারতো বুঝতে পারছো তুমি???
নার্স টা মাথা নিচু করে রেখেছে,, সরি স্যার আমি এবার থেকে খেয়াল রাখবো। ওহ মাই গড এখনি একটা অঘটন ঘটে যেত। তুমি যাও এখন এখান থেকে। আর কার ডিউটি আজ এখানে তাকে পাঠিয়ে দাও। জ্বি স্যার।
নার্স টা মাথা নিচু করেই বেরিয়ে গেল।

মিস্টার আতিক আই এম রিয়ালি সরি,,, আপনি এখন বাহিরে চলুন।

আমি কোথাও যাচ্ছি না। কিন্তু মিস্টার আতিক, ICU এর ভিতরে থাকার কোন নিয়ম নেই। অনেক কিছুর তো নিয়ম নেই তার পর ও ঘটছে। আতিক অক্সিজেনের কথায় ইঙ্গিত করেছে তা ডাক্তার ভালো ভাবে বুঝেছে। তাই আতিক কে কিছু না বলে বেরিয়ে যায়।

বর্তমান_____আতিকের চোখ মায়ার মাথার দিকে গেল। নাহ মায়ার খুব লম্বা চুল নয়। কিন্তু কোমর অবধি ঘন চুল ছিল। আর আজ মাথায় গুটি কয়েক চুল রয়েছে। মায়ার কথা মনে পড়ে গেল আতিকের মাঝে মাঝে আয়নাতে মায়া নিজের চুল দেখে আর আতিক কে বলতো,,,

আচ্ছা আমার একটু বড় চুল হওয়া হয় না বল তো আতিক?? সবার বড় চুল দেখে না আমার খুব হিংসে হয় হিংসে,,, কেন আল্লাহ আমার একটু বড় চুল দিলো না।

বড় চুল কি চাইলেই পাওয়া যায়,,তার জন্য না যত্ন নিতে হয় বোঝলে। আর তোমার দ্বারাই তা সম্ভব নয় বলে আল্লাহ তোমাই বড় চুল দেয়নি। আতিকের কথায় মাঝে মাঝে খুব রেগে যেতো মায়া। আবার মাঝে মাঝে হেসে পার করে দিতো

মধ্যে রাত,, শুনশান নীরবতা পালন করছে যেন প্রকৃতি।

হুট করেই মায়ার হাত মুখের কাছে নিয়ে এসে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো আতিক।

সরি,, আমি খুব সরি মায়া। প্লিজ,, প্লিজ মাফ করে দাও আমায়?? আর শেষ বার একটা সুযোগ দাও প্লিজ। তোমার বলা কথা সব আমায় এখনি তাড়া করে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছে। আর যদি তুমি না থাকো তো???

নাহ তোমার কিচ্ছু হতে দিবো না,, তুমি সুস্থ হয়ে যাবে,, তোমাকে সুস্থ হতেই হবে। আতিক চোখ মুছে মায়ার কপালে হাত রাখলো।

আতিক লক্ষ করলো মায়ার চোখের পাতা কাঁপছে,, চোখের কোন দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছে। আতিক কিছু টা ঘাবড়ে গেল,, মায়া এখন অচেতন,, তাহলে কি মায়া তার কথা শুনতে পারছে। হ্যাঁ শুনতে পারছে মনে হয়।

আতিক কিছু টা উত্তেজিত হয়ে মায়ার কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল। আমি আছি তো কোন ভয় নেই তোমার। তোমার কিছু হবে না। আঙ্গুল দিয়ে চোখের পানি মুছে দিল আতিক। এক জন নার্স কে ডাকলো আতিক।

কিছু ক্ষনের ভিতর ডাক্তার আসলো,,মায়াকে চেক আপ করে হাসি উজ্জ্বল চেহারা বানিয়ে বলল,, পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু শরীর দূর্বল থাকার কারণে চোখ মেলতে পারছে না। স্যালাইন টা শেষ হলে একটু শক্তি পাবে শরীরে,, এখন উনার জ্ঞান ফিরলে বুঝতে পারা যাবে উনার অবস্থা টা কেমন।

আতিক ঘড়িতে সময় দেখলো রাত তিনটা বাজে,, আতিক ওয়াশরুম থেকে ওজু করে আসলো,, উদ্দেশ্য তাহাজ্জুদের নামায আদায় করবে,, আল্লাহ তাহাজ্জুদের নামাযে কাউকে ফিরান না,, নিশ্চয়ই আমাকেও ফিরাবেন না।
তাহাজ্জুদের নামাযের প্রতি টা রাকাতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে আতিক,, অঢেউ বিশ্বাস তার চোখের পানি বিফলে যাবে না।

তিন দিন পার হয়ে গেছে,, মায়ার অবস্থা কিছু টা ভালো,, কিন্তু কারো সাথেই কথা বলে না,,এক ধ্যানে শুধু তাকিয়ে থাকে। মায়া কে ICU থেকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে,, তিন দিন মায়ার শরীরে শুধু স্যালাইন গিয়েছে। এক ফোঁটা পানি ও খায়নি মায়া।

আতিক যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছে মায়ার কিন্তু এখনো মায়াকে জিজ্ঞেস করেনি যে ক্যান্সার রিপোর্ট টা কেন সে লুকিয়েছে। অবশ্য আতিক আন্দাজ করেছে। যে মায়া ইচ্ছে করে মৃত্যু কে আহ্বান করছিল,, যেন এই দুনিয়া ছেড়ে যেতে পারে।

মায়াকে আবার বিভিন্ন টেস্ট করতে বলা হয়েছে,, তার রিপোর্ট মাত্র এসেছে ‌। মায়ার কাছে সাফিক কে রেখে গেছে। আসমা বেগম লজ্জা আর অপরাধ বোধ কাজ করাই মায়া কে দেখতে আসতে পারেনি। আনোয়ার সাহেব মায়াকে দেখে গেছেন। মায়াকে তেমন কিছুই বলেননি।

মায়ার পরিবার কে জানাতে চেয়েছিল আতিক,,মায়া এক কথায় না করে দিয়েছে।

ডাক্তারের কাছে থেকে রিপোর্ট জেনে আতিক কেবিনে আসে,, আতিকের মুখ টা শুকনো লাগছে। মায়া উৎসাহ নিয়ে আতিক কে। জিজ্ঞেস করলো। রিপোর্ট কেমন???

আতিক চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিল। সাফিক নিজেও বলল কি হয়েছে ভাইয়া???

আতিক সাফিকের উদ্দেশ্য বলল তুই বাসায় যাহ। আমি আছি,,, তুই আগামী তিন দিন থেকে বাসায় যাশনি,, শরীরের কি হাল করে রেখেছিস?? একটা কাজ কর তুই এখন বাসায় গিয়ে গোসল দিবি তার পর খাওয়া দাওয়া করে আবার আসবি। এখন আমি ভাবীর কাছে আছি। মায়া নিজেও এক বার আতিকের মুখের দিকে তাকালো। হ্যাঁ কেমন হয়ে গেছে যেন এই তিন দিনে। আর মায়ার মাথার একটা জিনিষ কাজ করছে না। আতিক এত কেয়ার কেন করছে তার??

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মায়া আবার ভাবতে বসে গেল,,হয়তো ক্যান্সারের কথা জেনেই এমন ভালোবাসা দেখাচ্ছে। কিন্তু আমার এখন তো এই ভালোবাসা চাই না। আর রিপোর্টে আবার কি আসলো কে জানে।

আতিক সাফিকের কথা মত বাসায় চলে আসে,, আসমা আতিক কে দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে,,, মায়া এখন কেমন আছে??
আতিক ফ্যাকাশে মুখ করে বলে ভালো।

আসমা আরো কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আতিক সে দিকে আর পাত্তা না দিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ায়।

সারা ঘর এলোমেলো করে রেখেছে আতিক পাগলের মত মায়ার ক্যান্সারের রিপোর্ট খুঁজছে। শেষে খাটের নিচে ছোট একটা বাক্সে খুঁজে পায় তালাবদ্ধ অবস্থায়। তালার চাবি খোঁজার সময় নেই এখন,, তালা ভেঙ্গে ফেললো মায়া। বাক্সোর ভিতর তেমন কিছুই নেই কিন্তু আতিক যা খুঁজছিল তা সে পেয়ে গেছে।

ক্যান্সার রিপোর্ট,, আতিক রিপোর্ট তে হাত বুলালো,, গভীর ভাবে রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনে মনে ভাবছে খুব কি দেরী করে ফেললাম আমি??? নাহ দেরি হয়নি,, এক বার যখন মায়াকে পেয়েছি তখন আর নয়। যে করেই হোক তাকে আমি সুস্থ করে তুলবো।

বিকেল নাগাদ আতিক আবার হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। হাতে টিফিন বক্স,, আতিক বাসা থেকে বের হবার আগে আসমা আতিকের হাতে টিফিন বক্স টা ধরিয়ে দেয়,, আতিক কিছু টা হতবাক হয়ে যায়,, আসমা মুখ ফিরিয়ে বলল। মায়ার পছন্দের খাবার রান্না করেছি,, তুই তো খাবার খাসনি, এক সাথে খেয়ে নিস,, আতিক আসমার দিকে এক বার তাকিয়ে বেরিয়ে আসে,, আর ভাবতে থাকে,,মা তো মায়াকে দেখতেই পারে না। এক দিন মায়া না রান্না করলে বাড়ি মাথায় তুলতো আর আজ নিজে রান্না করছে মায়ার জন্য??
মুচকি একটা হাসি দিল আতিক।

হসপিটালে এসে সাফিক বাসায় পাঠিয়ে দেয় আতিক,, মায়া ঘুমিয়ে গেছে,, ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে আতিক,, আর পুরোনো স্মৃতি আওড়াচ্ছে। হাজার ভুল করার পর ও যে মানুষ টার কাছে মাফ পেয়েছি সেই মানুষ টা কে প্রতি নিয়ত শুধু আঘাত করে গেছি,, অবহেলা ছাড়া কিছুই দেওয়া হয়ে উঠেনি,, তার পর ও এক চুল পরিমান ভালোবাসা কমতে দেখেনি। মায়া আগে জিজ্ঞেস করতো,,

আচ্ছা আতিক কখনো তোমার সাথে এমন হয়েছে?? যে আমাকে ভালোবাসছো কিন্তু তখনও তোমার ইচ্ছে করছিল যে আর একটু বেশি ভালোবাসি???

মাঝে মাঝে তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝে উঠতে পারি না!! এটা আবার কথা হলো??

আমার হয় তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করছিলাম,, তোমার হয় না কি??

মায়া চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আতিক গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে??

আতিকের ধ্যান ভেঙ্গে যায়,, দেখে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেছে,, মায়া উঠে বসার চেষ্টা করছে!! কিন্তু আতিক কে কিছুই বলছে না।

দাঁড়াও আমি হেল্প করছি,,, মায়া গম্ভীর মুখে উত্তর দেয় লাগবে না আমি নিজেই পারবো।

বেশি কথা বললে থাপ্পর খাবে,,,কি দরকার বলো আমায়?? ওয়াশরুমে যাবো,,,

মায়াকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়,, ফ্রেশ হয়ে এসে মায়া কে আবার বেডে বসিয়ে দেয়,, তার পর টিফিন বক্স থেকে খাবার প্লেটে নিয়ে মায়ার সামনে বসে পড়ে।

এখন কোন কথা ছাড়াই চুপচাপ হা করবে আর খেয়ে নিবে। মা তোমার জন্য তোমার ফেবরেট পোলাও রান্না করেছে।

মায়া ঠিক বুঝতে পারলো না শাশুড়ী মা রান্না করছে মায়ার জন্য?? কেমন করে সম্ভব??

কিন্তু মায়া মুখ ঘুরিয়ে বলল আমি খাবো না, ক্ষুধা নেই আমার!!

হ্যাঁ ক্ষুধা থাকবে কি করে নিজের শরীরের তো ২৪ ঘন্টা স্যালাইন রাখা হয়েছে,, ক্ষুধা আমার লেগেছে মায়া!!!

মায়া উতলা হয়ে জিজ্ঞেস করল খাওনি কেন?? আতিক মুচকি হেসে বলল তুমি খাওনি তাই!! ঢং দেখাচ্ছো আমি খাইনি তাই?? কোন দিন থেকে নিয়ম হলো এটা। তারাতারি খেয়ে নাও।

নাহ তোমাকেও খেতে হবে,, আতিক প্লিজ,,
আচ্ছা শুনো তুমি যদি এখন আমার সাথে খাও তাহলে তোমাকে কি খাওয়াবো জানো??
মায়া জিজ্ঞেস করল,, কি খাওয়াবে???

আইস ক্রিম!!!😋😋 সত্যি???
হুমমম তিন সত্যি!! এখন হা করো। আইস ক্রিমের কাহিনী শুনিয়ে দুজনেই টিফিন বক্স খালি করে দিয়েছে।

মায়া খাওয়া শেষ করে খুশি মনে আতিক কে বলে ঐ কখন আইস ক্রিম খাওয়াবে??

আতিক ভ্রু নাচিয়ে বলে আইস ক্রিম??? কিসের আইস ক্রিম মায়া???

কিহ?? সব সময় মিথ্যা আশ্বাস দেও আমায়।

আতিক বুঝতে পারলো মায়া মিথ্যা আশ্বাসের মানে টাতে কি বুঝানোর চেষ্টা করলো।

চলবে_____????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here