অবশেষে,পর্ব-৩,৪
Written_by_Sumaiya_Karim
পর্ব-৩
আদ্রর বাবার মুখে ‘অরিন’ নাম টা শুনে উপস্থিত তিনজন ই খুব অবাক হলো। আদ্র কিছু বুঝতে না পেরে বলে,
–‘বাবা তুমি কাকে অরিন বললে? ও তো আয়রা!’
সুলতানা বলে,
–‘কি বলছেন এটা অরিন?’
–‘এই অরিন টা কে? তোমরা দুজন আয়রা কে অরিন কেন বলছো?’
–‘এটা আয়রা না এটা অরিন!’
–‘কিহহ!’
আদ্র খুব অবাক হলো এখন। তাহলে তার কাছে যে পিক ছিলো সেটা তো এই মেয়েটি ই। আর এর নাম আয়রা ছিলো অরিন না। বিদঘুটে একটা অবস্থা। সুলতানা তাড়া দিয়ে বলে,
–‘জলদি ডক্টর কে আসতে বলুন! আমি জলপট্টি দেওয়ারর ব্যবস্থা করছি!’
–‘হ্যাঁ হ্যাঁ তাই করো! আমি ও দেখছি!’
সায়র নিচে চলে যায় আদ্র ও পিছন পিছন যায়। ব্যাপার টা কি হলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
–‘বাবা বলবে তো এই অরিন টা কে? আমি কিছুই বুঝতেছি না বলবা আমাকে প্লিজ?’
সায়র আদ্র কে পাত্তা না দিয়ে ডক্টর কে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলে। এর মাঝে ডক্টর আসেন। তন্নি আর সুলতানা আয়রার মাথায় জলপট্টি দেয়। তাতে তার জ্বর একটু কমে গেলে তাকে হালকা কিছু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেওয়া হয়।তার জন্য ঔষধ ও আদ্রই নিয়ে এসেছে। তবে হিসাব টা তার কিছুতেই মিলছে না। বাবা মা ও কিছু বলছে না। তন্নি আয়রার কাছেই বসে থাকলো। আদ্রর জরুরি তলবে সুলতানা আর সায়র ড্রয়িংরুমে আসলো। আদ্রর সেই এক প্রশ্ন,
–‘তোমরা আমাকে বলবা না কে এই অরিন? আয়রা অরিন কিভাবে হলো?’
–‘তুই কি আমাদের সাথে মজা করছিস আদ্র?’
–‘আমি মজা কেন করবো?’ প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তার!
–‘তার আগে তুই আমাদের বল যে তোদের মাঝে কাল রাতের বিয়ের ব্যাপার টা আসলে কি হয়েছে! বিয়ে টা কি সত্যি ছিলো নাকি মিথ্যা বলেছিস আমাদের?’
–‘মিথ্যা কেন বলবো তাছাড়া এতো রাতে কে দিবে ওকে আমার সাথে আসতে তোমরাই বলো!’
–‘তার মানে?’
–‘বিয়ে টা সত্যি কিন্তু একটা এক্সিডেন্ট বলা যায়!’
–‘কি সেটা?’
–‘প্রশ্ন আমি আগে করেছি তাই উত্তর ও আমার আগে পাওয়া উচিত!’
–‘কি উত্তর?’
–‘অরিন কে?’
–‘তুই অরিন কে চিনিস না তো ওকে বিয়ে করে নিয়ে এলি কি করে? অথচ আমরা যখন বলেছিলাম তখন সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলি তুই ওকে বিয়ে করবি না আর এখন?’
–‘তোমারা কি বলতে চাও বুঝিয়ে বলো আমি কিছু বুঝতে পারছি না বিলিভ মি।’
–‘কেন রে তোকে আমরা বলি নি অরিন কে বিয়ে করার কথা?’
সুলতানা বলে,
–‘আমার মনে পড়ছে আয়রা ও তো অরিনের ই নাম!’
–‘হুম অরিনের আসল নাম অরিন মেহনাজ আয়রা! ওর বাবা নাম দিয়েছিলো অরিন। কাদের ওকে অরিন ডাকে সেই হিসেবে আমরা ও ঐ নামেই চিনতাম। অরিনের বাবা আর আমি ভালো বিজনেস পার্টনারের পাশাপাশি খুব ভালো বন্ধু ও ছিলাম। অরিনের জন্মদিনে আমি তোর মা আর তন্নি যাই। সেদিন ওকে দেখে আমাদের খুব ভালো লাগে। কেননা মেয়ে হিসেবে ও খুব লক্ষী আর চঞ্চল একটা মেয়ে। আমি শুনেছিলাম আল্লাহ কাউকে রুপ ঢেলে দেন তো কাউকে দেন মায়া। কিন্তু অরিনের মধ্যে দুটোই ছিলো। ওর মায়ায় আটকে যাই। সেদিন ঠিক করলাম অরিন কে তোর বউ বানাবো। তুই তো তখন দুবাই তে ছিলি। কাদেরের সাথে এ নিয়ে কথা বলতে সে ও রাজি হয়েছিলো। আর তোকে সেটা জানালে তুই একবারে না করে দিয়েছিলি। আর সেজন্যই কাদের আমার উপর রেগে থাকে। তোর মনে নেই এইসব?’
আদ্র সায়রের সব কথা শুনে পুরো আহাম্মকের মতো বোকা বনে যায়। সে এতো সব জানতোই না। তবে একটা কথা তো সত্যি তার বাবা তার বিয়ের কথা বলায় সে না করে দিয়েছিলো। পরে অনেক জোড়া জুড়ি তেও কাজ হয় নি। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব! আদ্র জোড় পূর্বক হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,
–‘আর গতকাল কি হয়েছে জানো?’
–‘তুই না বললে কিভাবে জানবো?’
–‘আর সেদিন তোমাদের না করে দেওয়ার পর আয়রার ছবি দেখে আমার খুব ভালো লাগে। এক দেখাতেই ওর প্রেমে পড়ে যাই। যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইড। তাই ভেবেছিলাম দেশে এসে ওকে সারপ্রাইজ দেবো। কিন্তু তা আর হলো না। ছবি টাও হারিয়ে ফেলি আর তোমাদের ও বলার সাহস পাই নি। তাই এত্তো গুলো মাস নিজেই ওর খোঁজ করার চেষ্টা করি। গতকাল ই ওর খোঁজ পাই আর ওর বাসায় চলে যাই। আমি সোজা ওর রুমে চলে গিয়েছিলাম। এতো দিন পর ওকে কাছে থেকে দেখে মনে হয়েছিলো যেনো আকাশের চাঁদ পেয়েছি। আয়রা তখন ঘুমিয়ে ছিলো। জানিনা ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমি নিজেও কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম! আর…
–‘আর কি?’ সুলতানা আর সায়রের চোখ বড় বড় হয়ে যায় আদ্রর কথা শুনে।
আদ্র নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
–‘আর যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন ওর পরিবারের সবাই কে উপস্থিত দেখি। উনারা ও আমাকে চিনতে পারে নি। আমার কোনো কথা না শুনে ভুল ধারণা নিয়ে তৎক্ষণাৎ দুজনের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। আমি কিছু বলার সুযোগ টাও দেয় নি। শেষে আয়রা কে বাড়ি থেকেই বের করে দিলো!’
–‘এইতো বললি তুই কিছু বুঝতে পারিস নি আর এখন এটা কি বললি!’
–‘আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম গতকাল এসব দেখে মাথা ঠিক নেই তো!’
আদ্রর বাবা মা এই কথা গুলো শুনে হতভম্ব হয়ে যায়। ৭/৮ মাসে কাদের নিশ্চয় আদ্র কে ভুলে গিয়েছিলো তাই চিনতে পারে নি। কিন্তু আয়রার সাথে এটা তো ঠিক হয় নি। মেয়ে টা কে সকলের কাছে খারাপ হয়ে গেলো এটা খুব খারাপ হয়েছে বলে সুলতানা আর সায়র উঠে দাঁড়িয়ে যান। কঠোর কন্ঠে ছেলে কে বলে,
–‘তুই এটা ঠিক করিস নি আদ্র! অরিন কে ওর পরিবারের সবাই খুব ভালোবাসতো ভালো একটা মেয়ে জানতো। আর তুই এটা কি করলি আদ্র? মেয়েটা কতটা আঘাত পেয়েছে বুঝতে পারছিস তুই?’
–‘সরি আম্মু আমি আসলে উৎকন্ঠা চেপে রাখতে পারি নি। তাই ওর ঘরে চলে গিয়েছিলাম। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি! আ’ম এক্সট্রিমলি ভেরি ভেরি সরি!’
উনাদের আদ্র যা বুঝালো উনারা তাই বুঝে নিলো খুব বিশ্বাসের সঙ্গে। মূলত পুরোটাই আদ্র বানানো ডাহা মিথ্যা আর বানোয়াট। সে জেনে বুঝেই গিয়েছিলো আয়রার ঘরে। তবে ভালোবাসা থেকে নয় গভীর ঘৃণা থেকে। সায়র তাড়া দিয়ে বলে উঠেন,
–‘এতোক্ষনে ওদের সকলের মাথার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে কে জানে। সুলতানা তুমি আমার সাথে এক্ষুনি চলো। কাদেরের বাসায় যেতে হবে। নয়তো পরে আরো খারাপ অবস্থা হয়ে যেতে পারে!’
সুলতানা আর সায়র তাড়াহুড়ো করে দুজনি ছুটলেন আয়রার বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ছেলের করা ভুল কাজের জন্য খুব আফসোস আর অনুতপ্ত দুজন।
______________★
আয়রার ঘুম আচমকা ভেঙ্গে যায়। আর মাথার পাশের তার মা আর চাচি কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে সে। এটা সত্যি নাকি স্বপ্ন তা নিয়ে কনফিউজড হয়ে যায় আয়রা। অনুপমা হু হু করে কেঁদে উঠলে ও বুঝতে পারে সব সত্যি। সেও হুট করে উঠে মা কে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কাঁদতে শুরু করে। রাশেদা মা মেয়ে কে শান্তনা দিচ্ছেন। অনুপমা পরম মমতায় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দেয়। আর কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা। সুলতানা আর সায়র সব কিছু খুলে বলার পর সবাই নির্বাক হয়ে যায়। খুব আকুতি মিনতি করে কাদের আর রাশেদের এতো দিনের জমানো রাগ কেটে যায়। যখনি শুনে মেয়েটা জ্বরে কাতর হয়ে আছে ছুটে আসে আদ্রদের বাসায়। এমনিতেও পুরো রাত সবার উপর দিয়ে কি গেছে নিজেরাও জানে না। কেউ কল্পনাও করতে পারে না যে আয়রা এমন কিছু করতে পারে! কিন্তু চোখের সামনে দেখা ঘটনা কে মিথ্যা ও বলা যাচ্ছে না!
আদ্র আঁকুপাঁকু করছে আয়রা যদি বলে দেয় সে আদ্র কে চেনে না তখন সবাই ওকে বিশ্বাস করলে তো কেল্লাফতে। আদ্রর সব মিথ্যা ধরা পড়ে যাবে কিন্তু সে যেভাবে তার বাবা মা কে বুঝ দিয়েছে তাতে আয়রার কথা সবাই বিশ্বাস করার চান্স ১০০ তে ৪০% তাও সে যেনো কিছুতেই স্থির হয়ে দাঁড়াতে ওবধি পারছে না। গতকাল রাতে তো সে রাগের মাথায় আয়রা কে আরো কিসব ও বলেছিলো এখন সেসব যদি ও বলে তাহলে কি হবে? ভাবতেও পারছে না আদ্র! কি ভীষণ অস্বস্তিতে কাটতে লাগলো মুহুর্ত টা! নিজেকে শান্ত করতে না পেরে সে নিজের রুমের বাহিরে ঘুরঘুর করতে থাকে! এটা দেখে তন্নি এসে তার পিঠে চাপড় মেরে বলে,
–‘কিরে আমার মজনু ভাই! কি করিস এখানে?’
হঠাৎ এমন করায় খুব চমকে উঠে আদ্র। আর তোঁতলিয়ে বলে,
–‘আ..আস..আসলে ঐ আমাকে আয়রা খুব খারাপ ভাবছে। তাই কি করবো দুশ্চিন্তা হচ্ছে রে!’
–‘ওহ এই ব্যাপার! আরে এতো চাপ নিস না আমি মানে তোর বোন আছে তো!’
–‘মানে?’
–‘বুঝিস নি তাই তো?’
–‘হ্যাঁ!’
–‘৫০০ টাকা দে সব বুঝিয়ে দেবো!’
–‘কিহহ!’
–‘দিলে দে নাহলে আমার আবার ওদিকে অনেক কাজ বাকি!’ ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে বললো!
–‘দিচ্ছি!’
আদ্র ৫০০ টাকা দিলে তন্নি কি যেনো ভাবতে থাকে!
–‘কি ভাবছিস?’
–‘তোর বাসর ঘর সাজিয়েছি ১০০০ টাকা গেছে আমার সেটা ও ফেরত দে!’
–‘(সাক্ষুন্নি আমি কি তোকে কানে কানে বলছিলাম এসব করতে?)মনে মনে!
–‘সাক্ষচুন্নি বললি?’
–‘না না তোকে কি আমি সাক্ষচুন্নি বলতে পারি বল!’
–‘হাওয়া কম দিয়ে টাকা টা দিয়ে দিলে খুব উপকার হয়!’
–‘নাই রে আমার কাছে আর!'(অসহায় ভঙ্গিতে বললো!’
–‘তাহলে তোর ৫০০ টাকা ও লাগবে না। আমি আবার এতো ফকিন্নি না হুহ আমি গেলাম!’
–‘দিচ্ছি! (তুই তো একটা ডিজিটাল ফকিন্নি! আমার সময় টা আসুক মজা দেখাবো!)মনে মনে
আদ্র টাকা টা দিয়ে তন্নিকে কি কি করতে হবে বলে দেয়। তন্নি আয়রার কাছেই যায় আর আদ্র নিচে যেতে নিবে ওমনি শুনতে পায় আয়রার বাবা চাচা আর আদ্র বাবা মা বলছে,
–‘আমার ছেলেটা ভুল করে ফেলেছে। সেই ভুল কে ফুল মনে করে সবাই ওদের বিয়ে টা খারাপ মনে করুক তার আগে আমি চাই পুনরায় অনুষ্ঠান সহকারে ধুমধাম করে অরিন মামনি কে আমাদের ঘরে বউ করে নিয়ে আসতে! এখন আপনারা কি বলেন?’
আয়রার বাবা আর চাচা অমত করলো না। আদ্র কে দেখে সায়র আয়রার মা আর চাচি কে ডেকে দিতে বলে। আদ্র বাধ্য ছেলের মতো ডাকতে যায়।
আর তন্নি রুমে ঢুকতেই শুনতে পায় আয়রা বলছে,
–‘মা আমি উনাকে চিনি….
আয়রাকে থামিয়ে দিয়ে তন্নি বলে উঠে,
–‘আরে ভাবী তুমি ভাইয়া কে চিনবে কি করে! তুমি তো ভাইয়া কে সেই কবে দেখেছিলে ভুলেই গেছো আর এই দেখো ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসতো সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে উল্টো একটা খারাপ কাহিনী হয়ে গেলো! বেখাপ্পা হয়ে গেলো পুরা!’
এই কথাটা আয়রার মাথায় উপর দিয়ে গেলো। ও কিছু বলতে যাবে ওমনি কালো শার্ট গায়ে জড়িয়ে রুমে ঢুকে আদ্র। আর ওকে দেখেই আয়রা কিছু টা অজানা ভয়ে কেঁপে উঠে। আদ্র রুমে ঢুকেই সেটা লক্ষ্য করে তবে চোখ সরিয়ে নিয়ে আয়রার মা আর চাচি কে বলে যে উনাদের নিচে ডাকছে। উনারা চলে যায় আয়রা উনাদের সাথে যেতে চাইলে তন্নি আটকায়। উনারা চলে যায়। তন্নি বলে,
–‘আমি ও যাই! আমাকে ও বোধহয় ডাকছে তাই না ভাইয়া?’
–‘ও হ্যাঁ হ্যাঁ তোকে ও তো ডাকছে বলতে ভুলে গেছি!’
তন্নি ও চলে যায়। তন্নি মূলত সরল মনে ওদের একটু সময় দিতে চেয়েছিলো। আদ্র মনে মনে যে এতো সয়তানি বুদ্ধি চলছে সে জানলো ও না। আয়রা ও উঠে চলে যেতে নেয় মাথা ঘুরে উঠে তাই সে বসে পড়ে। আদ্র দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওর কাছে ফিরে আসে।
–‘আ.প.আপনি আমার কাছে আসবেন না আ..
–‘এখন যেটা হচ্ছে তা হতে দাও। যদি তুমি কোনো গন্ডগোল করেছো তো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না! আমি ভালোর ভালো খারাপের জন্য কিন্তু খুব খারাপ! এই যে তোমার মা বাবা চাচা চাচি কে দেখছো উনাদের এখান ওবধি নিয়ে আসার পেছনে আমার ভূমিকা আছে! খারাপ কে ভালোয় পরিনত করেছি! যদি তুমি এর মাঝে আমাকে সকলের সামনে খারাপ বানাতে চাও তাহলে তুমি আর তোমার পরিবারের সাথে কি হতে পারে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না!’
চলবে?
#অবশেষে
#Written_by_Sumaiya_Karim
পর্ব-৪
আদ্রর হুমকি মূলক কথা টা শুনে আয়রা বলে,
–‘আপনার যদি মনে হয় আপনি হুমকি দিয়ে আমাকে চুপ করাতে পারবেন তাহলে সেটা ভুল!আমি এক্ষুনি নিচে গিয়ে সবাই কে বলে দিবো আপনাকে আমি চিনি না। আর আমি এই বিয়ে ও মানি না!’
আদ্র পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য স্ব-গৌরবে নিজেকে তৈরি করে একটা ডেভিল স্মাইল দেয়। আর সেটা দেখে আয়রা ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয়। ওমনি আদ্র নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে এক পা এক পা করে আয়রার দিকে এগোতে থাকে। এটা দেখে আয়রার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। বুঝতে পারলো রাতের ঘটনা যেহুতু এই মানুষ টা ঘটাতে পেরেছে তাহলে এখনো যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। এর কোনো বিশ্বাস নেই! উপায়ান্তর না পেয়ে আয়রা নিজেই আমতা আমতা করে বলে,
–‘আ্ আমি্ কি্ কিন্তু চেঁচাবো!’
আদ্র তার এই কথার ও মুখে কোনো উত্তর দিলো না। উল্টো এমন ভাব করলো যেনো সে এই কথা কে গায়ে মাখলো না। আদ্র আর তার মাঝে দূরত্ব টা খুব বেশি নেই। অবস্থা বেগতিক দেখে আয়রা চেঁচিয়ে বলে উঠলো,
–‘আ্ আমি আপনার সব কথা শুনবো! আপনি যা বলবেন তাই হবে! প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন! আমার সাথে কিছু করবেন না!’
আয়রা নিজেই লাগাতার চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলতে থাকে সে আদ্রর সব কথা মানবে। নিজেই নিজের কথা থেকে নড়ে যায়। আর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে। আর আদ্র শার্ট টা খুলে ফ্যান টা জোড়ে ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ে আয়রা কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,
–‘যা গরম পড়েছে না একেবারে অসহ্য!’
আয়রা এক চোখ মিটমিট করে খুলে দেখে তার চোখ ছানাবড়া। মানুষ টা আয়েশ করে সোফায় বসে আছে। এই মুহূর্তে তার ঠিক কেমন রিয়েক্ট করা উচিত নিজেই বুঝতে পারলো না। আর রাগ টা মুখে প্রকাশ করতে না পেরে মনে মনেই বললো,
–‘তোর হুমকি তে আমি ভয় পেয়েছি মনে করিস! মোটেও না। তোকে তো আমি ছাড়বোই না! আগে আমি নিজে ছাড়া পাই একবার! তোর সাথে আমার কোন জন্মের শত্রুতা আছে তোকে বুঝিয়ে দিবো! বজ্জাত লোক কোথাকার!’
হুট করে আদ্র উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আয়রা শুধু তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে! তার যাওয়ার পর পর ই রুমে ঢুকে তন্নি আর বলে,
–‘ভাবী কি হয়েছে জানো?’
–‘কি?’
–‘তোমারা আর ভাইয়ার বিয়ে!’
–‘মানে?’
–‘তোমাদের বিয়ে টা তো একটা এক্সিডেন্ট! লোক জানাজানি হলে খারাপ দেখাবে বিষয় টা তাই সবাই একত্রে ডিসিশন নিয়েছে আজ থেকে দুদিন পর খুব ধুমধাম করে তোমাদের বিয়ে হবে!’
–‘কিহহ!’ খুব চমকালো আয়রা!
–‘আরে হ্যাঁ।’
আয়রা কি করবে বুঝতে পারছে না। তার কাছে মনে হলো কোনো এক মাইনকার চিপায় সে ভালো ভাবেই পড়ে গেছে। তার আগে এটাও তাকে ভাবাচ্ছে যে পরিবারের লোকজন তাকে রাতেই ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলো সকালেই আবার তারা কিভাবে এই লোকটার ঘরে উনারা আসলো? তন্নি আয়রার শুকনো মুখে দেখে নিজেই মন খারাপ করে বলে,
–‘ভাবী তুমি খুশি হও নি?’
–‘হ্ মানে ন্.. আচ্ছা তোমার নাম কি?’
–‘এটাও ভুলে গেলে?’ চোখ ইয়া বড় বড় করে!
আয়রা মনে কখন রেখেছিলো সেটাই ভেবে পেলো না।
–‘আরে আমি তন্নি। তোমার সাথে আজ থেকে প্রায় ৮ মাস আগে আদ্র ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো তোমার মনে নেই?’
আদ্র নাম টা শুনে ভড়কে গেলো আয়রা। ভ্রুঁ কুঁচকে নিজেকে তন্নির থেকে কিছু টা দূরে সরিয়ে নিয়ে বলে,
–‘তুমি এখানে কি করে?’
তন্নি হাসতে হাসতে বললো,
–‘ভাবী তোমার মাথা টা একেবারেই গেছে। নাহ তোমার দোষ ই বা কোথায় এতোগুলো মাস গেছে ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আরে এটা তো আমাদের ই ঘর। আর তুমি এখন আদ্র ভাইয়ার ই বউ!’
–‘কি বললে? এটা সত্যি? তোমার ভাইয়া তো বিয়ে টা ক্যান্সেল করে দিয়েছিলো তাহলে আমি উনার বউ কিভাবে হলাম? মজা করছি না তো তুমি আমার সাথে? ঐ লম্বা হাতির মতো লোকটা তোমার ভাই হতেই পারে না!’
তন্নি কিছু বলতে যাবে ওমনি রুমে ঢুকলো আয়রার মা আর চাচি। উনারা এক গাল হেসে বলে,
–‘তোকে আমরা দুপুরে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। আর তার ঠিক দুদিন পরে তুই খুব সুন্দর করে বউ হয়ে আসবি এই বাড়ি তে বুঝলি মেয়ে?’
চাচির কথা শুনে তন্নি বললো,
–‘হুম সেটাই তো বলছিলাম আমি ভাবী কে! আর দেখুন না ভাবী আমার ভাই কেই চিনতে পারছে না পোড়া কপাল আমার ভাইয়ের!’
তন্নি কপাল চাপড়ে এমন ভং ধরে কথা টা বললো যে সবাই হেসে দিলো। তখনি রুমে কেউ নেই ভেবে আদ্র ঠুকে পরে সবাই কে দেখে বলে,
–‘আব্..
–‘আরে ভাইয়া এদিকে আয় এই দেখ তোর বউ তোকেই চিনতে পারছে না! একটু তোর ইনট্রুডিউস টা ভাবী কে দে তো!’
আদ্র প্রতি উত্তরে মুচকি হাসলো। অন্যদিকে আয়রা অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পোঁছালো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখে। চোখ দুটো যেনো এমার সত্যি সত্যি কোটর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে! এটা যে আদ্র কল্পনায় ও ছিলো না তার!
দুপুরে খাবার দাবার শেষে আয়রা কে নিয়ে নিজ বাড়ি তে চলে যায় উনারা। এর মাঝেই তন্নির সাথে খুব ভাব জমে গেছে আয়রার। এতো মিশুক মেয়ে টা। চলে আসার আগে বলে দিয়েছে,
–‘খুব মিস করবো তোমাকে ভাবী।’
কথা বলার ফাঁকে তন্নির থেকে জেনে নিয়েছে যে তার বাবা মা রা এখানে কিভাবে এলো! সব শুনে শক্ড হয়ে যায় সে। বিশ্বাস ই করতে পারছে না যে এসব সত্য আর বাস্তব। তবে আদ্রর দু রূপের মধ্যে কোনটা আসল কোনটা নকল নিজেই কনফিউশনে ডুবে যায়। এই আদ্রর সাথে ৮ মাস আগের তার সেই আদ্রর একদমি মিল পাচ্ছে না সে।
সন্ধ্যায় নিজের রুমের মধ্যে পায়চারী করতে থাকে আয়রা। সব কিছু শুনার পর সে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বেশি। তার কোনটা করণীয় উচিত নিজেও বুঝতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে এই বিয়ে ভেঙ্গে দিবে কিন্তু সেটা কিভাবে? আদ্র যেভাবে সকল কে বুঝ দিয়েছে এতে করে কেউ এই বিয়ে টা না করবে না এতে সে নিশ্চিত। তার উপর আদ্র যে রাতে তাকে কিসব যেনো বলছিলি সেটাও মনে করতে পারছিলো না! একবার মনে হচ্ছে আদ্র ভালো তো আবার মনে হচ্ছে খারাপ! নিজের একটা ব্যক্তিগত ডায়রি টা হাতে নেয় সে। আর ওমনি হাত ফসকে ডায়রি টা নিচে পড়ে যায়।
সঙ্গে দুটো ছবি ও। ছবি দুটো তে থাকা স্থির মানুষ টা কে আট মাস আগে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছিলো সে। যখন শুনে বিয়ে টা ক্যান্সেল তো মন ভেঙ্গে যায়। জীবনের প্রথম কাউকে ভালো লেগেছিলো তার। আর সেই মানুষ টাই এই আদ্র! যখন বিয়ে টা হবে না জানলো সব কিছু শেষ হয়ে যায়। আর মনের উপর জোড় খাটিয়ে মাটি চাপা দিতে থাকে নিজের অপ্রকাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ভালোবাসা কে! এতো গুলো মাসে ডায়রি টা খুলে ও দেখা হয় নি! ধুলো জমে একাকার হয়ে মিশে আছে ডায়রিতে উল্লেখ্য প্রত্যেক টা শব্দের সাথে!
কিভাবে আদ্র কে মন থেকে মুছে ফেলেছিলো সে জানে। কিন্তু পুরোনো ক্ষত টা আবার ঝকঝকে করে দিতে আসলো কেন আদ্র? আর আসলোই যখন তখন এমন করে কেন? তখন বিয়ে না করে দিয়ে এখন এই বিয়ে টা কেন? এই সব কেন এর উত্তর গুলো খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে যায় আয়রা। মানুষ টা কে একটু জিঙ্গেস করবে তার সময় ও হয়ে উঠে নি! চলে আসার আগে আদ্র কে হন্ন হয়ে খুঁজেছিলো সে তবে পায় নি সে! দেখা মিলে নি মানুষটার!
সায়ন আর রাতুল আজ আদ্র কে একটু বেশি ড্রিঙ্কস করতে দেখে বলে,
–‘ভাই তুই ঠিক আছিস?’
–‘হ্যাঁ একদম!’
–‘এতো ড্রিঙ্কস তো তুই করিস না। কি ব্যাপার বলতো?’
–‘ঐ মেয়েটা কে দেখলে নিজেকে সামলাতে পারি না রে! খুব রাগ হয়! খুব!’
বলতে বলতে টেবিলের উপর ঢলে পড়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আদ্র। রাতুল আদ্রর গালে হাত দিয়ে বলে,
–‘এই ভাই কোন মেয়ের কথা বলছিস? আদ্র এই আদ্র কথা বল! কে আবার কি করলো তোকে? এই মেয়ে গুলা সব এক! সব কটা খারাপ!’
সায়ন বললো,
–‘ছেড়ে দে এ তো আজ গেছে। দুদিন পর এর বিয়ে আর ও কোন মেয়ের কথা বলছে এখানে?’
–‘আমি যদি জানতাম তাহলে তো বলেই দিতাম ওকে জিঙ্গেস করতাম না কি?’
–‘রাগ করছিস কেন? রিয়ার সাথে আবার ব্রেকআপ হলো নাকি?’
–‘হ্যাঁ!’
এমনিতে তো মেয়েদের খুব বড় ভক্ত রাতুল। তার মুখে আজ বেসুরে গান বাজতে দেখেই সায়ন বুঝে গেছে যে আবার ব্রেকআপ হয়েছে।
–‘ভাই তোদের রিলেশন টা কেমন একটু বল তো? দিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ১৬ ঘন্টাই তোরা ব্রেকআপ ব্রেকআপ খেলিস। ভালো না লাগলে ছেড়ে দে দুনিয়ায় আরো জোস জোস মেয়ে আছে মামা!’
সায়মনের এই কথা টা একদম পছন্দ হলো না রাতুলের। হুট করে তাদের কথা গুলো মধ্যে আদ্র নেশার ঘোরে বললো,
–‘মেয়ে রা হচ্ছে ছলনাময়ী!’
সায়ন আর রাতুল দুজন ই দুজনার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললো,
–‘আদ্রর মুখে তো শ্যামল দার ডায়লগ ডাউনলোড হয়ে গেছে রে!’
–‘হ্যাভ এ রিল্যাক্স সি ইউ নট ফর মাইন্ড হাহাহা!’
মূলত এই বিয়ে টা কে মন থেকে মানতে পারছে না আদ্র। সে যে কেন এসব করছে নিজেই জানে!
একটা চাপা কষ্ট সর্বদা বিদ্যমান তার মধ্যে! কিন্তু কি সেটা..?
এভাবে তিনদিন কেটে যায়। কেন যেনো বিয়ে টা কে না করতে পারলো না আয়রা। গায়ে হলুদ ও হয়ে যায়। এর মাঝে আদ্রর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা সে করেছে কিন্তু আদ্র কোনো রেসপন্স নেই! এক পর্যায়ে বিয়ে টা নিয়ে প্রচন্ড দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় আয়রা। দোটানার মধ্যে দিতে যাচ্ছে দিন আর আজ তার বিয়ে! সামনে কি হবে বা হতে যাচ্ছে তার কিছুই জানা নেই! বাহিরে থেকে শোনা যাচ্ছে বর যাত্রী এসেছে। ওমনি হুরমুড় করে সবাই বেরিয়ে যায়। আর রুমের মধ্যে একলা ভাবনায় বিভোর হয়ে পড়ে রইল আয়রা! তার ভাবনায় ছেদ পড়ে রুমে কারো উপস্থিতি তে! সেই মানুষ টি কে দেখে একটু অবাক হলো আয়রা। আর সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। মানুষ টি আয়রার দু গালে হাত রেখে বলে,
–‘তুই এই বিয়ে টা করিস না আয়রা! ভেঙ্গে দে বিয়ে টা!’
চলবে?