অপরিচিতা_ভালোবাসা,পর্ব-১
ফাবিহা_নওশীন
আমি বর্ণালী।অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।আজকে রুপা আপুকে দেখতে এসেছে।আশ্চর্যের বিষয় হলো আজকে আমার ভালোবাসা আমার আপুকে দেখতে এসেছে।তবে সে বিষয়ে কেউ অবগত নয় একমাত্র আমি ছাড়া।আর না কাউকে অবগত করতে চাই।
আমার ভালোবাসার মানুষের নাম রাফি।রাফি ওর পরিবার নিয়ে আপুকে দেখতে এসেছে।ওর মা,বাবা আর বোন এসেছে।
আজকে আপু অনেক খুশি।আপু খুব সময় নিয়ে নিজেকে তৈরী করছে।নীল শাড়ি,দুহাত ভর্তি চুরি,চোখে মোটা করে কাজল,ঠোঁটে গারো লিপস্টিক,খোলা চুল।আপুকে অপূর্ব লাগছে।সাজের কোনো ত্রুটি রাখেনি আপু।কেননা রাফি যে আপুর ভালোবাসা।কিন্তু রাফির ভালোবাসা?
আপু ১বছর যাবত রাফিকে পছন্দ করে সেটা আমি ৬মাস আগে জেনেছি।
দেখাদেখির পর্ব শেষ।আমার ধারণা আপুকে ওদের পছন্দ হয়েছে হবেই বা না কেনো?আপু দেখতে অসম্ভব সুন্দরী।গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে।
রাফি আর রুপাকে আলাদা কথা বলার জন্য রুপার রুমে পাঠানো হলো।রুপা দাড়িয়ে আছে আর রাফি বিছানায় বসে আছে।রুপা শাড়ির আঁচল দিয়ে হাত পেচাচ্ছে আর অপেক্ষা করছে কখন রাফি মুখ খোলবে কথা বলবে।রাফির কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।হটাৎ করে রাফির কাশি উঠে যায়।
রুপা অস্থির হয়ে যাচ্ছে রাফির জন্য।
তারপর দরজার সামনে গিয়ে ছোট বোনকে ডাকলো।
—বর্ণা,,এই বর্ণা পানি নিয়ে আয়।
—আসছি।
দেরি দেখে আবারো ডাক দিলো।
—বর্ণা,,বর্নালী তাড়াতাড়ি আয় বোন।
বর্ণালী নামটা শুনে রাফির কাশি থেমে গেলো।দরজার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কারো প্রবেশের জন্য।
বর্ণা তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে ঢুকলো।রাফি ওকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।
হালকা পেষ্ট কালার একটা থ্রিপিস পড়েছে।চুলগুলো উচু করে বাধা।গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা।বড় বড় চোখ,পাতলা ঠোঁট।লম্বা,পাতলা গায়ের গড়ন।চেহেরায় কেমন একটা দুঃখী দুঃখী ভাব।সব মিলিয়ে রাফির বর্ণাকে মোহনীয় লাগছে।অসাধারণ কেউ।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো বর্ণা একবারও রাফির দিকে চোখ তুলে তাকায়নি।বর্ণা পানি ঢেলে গ্লাস মাথা নিচু করে রাফির দিকে বাড়িয়ে দেয়।রাফি কিছুক্ষণ থেমে ওর হাত থেকে গ্লাস নিয়ে পানিটা খেয়ে নিলো।
বর্ণা গ্লাস,জগ না নিয়েই চুপচাপ বেরিয়ে গেলো।রাফি সেদিকে চেয়ে রইলো।
রুপা বললো,আপনি ঠিক আছেন?
রাফি আমতা আমতা করে বললো, একচুয়ালি সরি।আমার ঠান্ডা লেগেছে।আপনাদের সমস্যায় ফেললাম।বিশেষ করে উনাকে।
—ইটস ওকে।
—ও আপনার বোন?
রুপা মিষ্টি হেসে বললো, হ্যা।বর্ণালী।আমরা বর্ণা বলি।অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।চুপচাপ শান্তিসৃষ্ট একটা মেয়ে।দেখলেন না কোনো কথা না বলে কাজ করে চলে গেলো।
– –জ্বী খুব ভালো।
~~~~
বর্ণালী নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে কাদছে।
—কেন আমার সাথে এমন হলো?যাকে প্রায় দুইটা বছর ধরে ভালোবাসি সে আজ আমার বোনের স্বামী হতে যাচ্ছে।কিভাবে আমি এসব চোখের সামনে দেখবো?
কিভাবে সহ্য করবো?
.
.
রাফির বর্ণালীকে দেখার পর থেকেই অস্থির লাগছে বারবার ওর মুখটা ভেসে আসছে।অপরিচিতাকে মনে পড়ছে।সে রোজই পড়ে,প্রতি মুহুর্তে পড়ে কিন্তু আজ একটু বেশিই মনে হচ্ছে।বুকের বা বাশে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।
রাফিন আহমেদ।ডাকনাম রাফি।কুমিল্লা শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।মা-বাবা আর বড় বোন নিয়েই পরিবার।বড় বোনের বিয়ে হয়েছে পাশের এলাকায়।রাফি মাষ্টার শেষ করে একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে ভালো বেতনে চাকরি করছে।বাবার শরীর ইদানীং ভালো যাচ্ছেনা তাই বাবার ইচ্ছে ছেলের বউ দেখবে।রাফি অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে।একমাত্র ছেলে যদি বাবার ইচ্ছে পূরণ না করে তবে কে করবে।সে জন্যই মেয়ে দেখা চলছে।রুপা রাফির মায়ের বান্ধবীর মেয়ে।সবকিছু ঠিকঠাক হলে দুই বান্ধবী আত্নীয় হবে।
রুপা রুম জোরে পাইচারি করছে কেননা এখনো ও বাড়ি থেকে কোনো নিউজ আসেনি।বর্ণা গালে হাত দিয়ে বোনকে পর্যবেক্ষণ করছে।
—আপু রিলক্স প্লিজ।
—আমি চিন্তায় মরে যাচ্ছি আর তুই বলছিস রিলেক্স।তোর রিলেক্স তুই খা।
–ঠিক আছে আমিই খাই।
বর্ণা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর রুপা বর্ণাকে টেনে তুলে নাচানাচি শুরু করলো।বর্ণা বেকুবের মতো চেয়ে আছে।
—ওরা আমাকে পছন্দ করেছে।আগামীকাল বিয়ের ডেট দিতে আসবে।
বলেই বর্ণাকে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো।রুপা এটা সেটা বলে যাচ্ছে কিন্তু বর্ণা রেসপন্স করছেনা।চুপ মেরে আছে।বুকের ভিতরে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।চোখের কোনে পানি জমেছে।
রুপা ভ্রু কুচকে বললো,
—কিরে তুই মুখ গোমড়া করে রেখেছিস কেন?আমার বিয়ে আর তুই চুপ কেন?তুই কি খুশি হস নি?
—সেটাই তো,,বর্ণা আমিও খেয়াল করছি তুই এমন মুখ ভার করে রেখেছিস কেন?
রুপার মা বললো।
বর্ণা নিজেকে সামলে আমতা আমতা করে বললো, খুশি হবোনা কেন?আমি অনেক খুশি।আসলে আপুর বিয়ে হয়ে যাবে।আপু আমাদের ছেড়ে চলে যাবে এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে।
রুপা বললো,
—আমাকে অনেক মিস করবি তাইনা?চিন্তা করিস না ফাইনাল পরিক্ষা হোক তোকেও বিয়ে দিয়ে দেবো।
বর্ণা জোরপূর্বক হাসছে।
ওদের মা নাক টেনে বললো,
—হয়েছে হয়েছে।গল্প করতে আর রাতে খেতে হবেনা।বর্ণা রান্নাঘরে আয়।আর রুপা রুমে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাক।আগামীকাল ওরা আবার আসবে।নিজের যত্ন নে।
বর্ণা মায়ের পিছুপিছু রান্নাঘরে চলে গেলো।পেয়াজ কুচিকুচি করছে আর চোখের পানি ফেলছে।
ভাজিতে পুরা লাগিয়ে ফেলেছে।যা দেখে ওর মা কান টেনে বললো,
—-ওই খেয়াল কোন দিকে?ভাজি পুরে ছাই হয়ে গেলো।
বর্ণা তাড়াতাড়ি গ্যাস অফ করে ভাজিটা নামিয়ে নিলো।তাড়াতাড়ি নামাতে গিয়ে হাতটা পুরে গেলো।
তাড়াতাড়ি কল ছেড়ে হাত পানির মধ্যে রাখলো।
—-এই তো হয়েছে টা কি বল তো?কোথায় আছিস তুই?কোনো কাজে মন নেই কেন?এখানে আসার পর থেকেই দেখছি কেমন করছিস?
বর্ণা শুখনো হাসি দিয়ে বললো,
—কিছুই না।কি হবে।জায়গাটা সুন্দর।ঢাকা শহরের মতো প্রাণহীন নয়।
ওর মা আর কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করলো না।
—মাছটা ভাজ।
তোর বাবা কিছুক্ষণ পরেই খেতে চাইবে।
বর্ণা রান্না শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে নিলো।তারপর বাবার জন্য চায়ের পানি বসালো।
চলবে…