অন্তর্দহন প্রণয়,পর্ব-৬

অন্তর্দহন প্রণয়,পর্ব-৬
লিখনীতে_সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

পিটপিট করে চোখ খুললো জয়নব। খোলা আকাশের নিচে নিস্তেজ ভাবে ঘাসের উপর শুয়ে আছে। পাখি গুলো কিচিরমিচির করে উড়ে যাচ্ছে। ভোরে নিয়ন আলো সরে সোনালী আলো চোখে পড়ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে দৌড়ে এলো কুয়াশা পড়নে জগিং এর কাপড়। মাত্র বের হয়েছে সে দৌড়াতে। কোনো এক অকারণেই শরীরের ওজন কমাতে চায় সে। জয়নবকে এভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিন্তার ভাজ পড়ে মাথায়। দৌড়ে কাছে এসে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,,

“জান? তুই এবাবে কেন পড়ে আছিস?? আর ইউ ওকে? জান? ”

জয়নব ব্যথাতুর দৃষ্টিতে তাকালো। সূর্যে এক ফালি আলো চোখের কোনের জলটুকু ঝিলমিল করে উঠলো। অসহায় ভাবে বলল,

“বাঁচাতে পারলাম নারে আমি! তাকে.. বাঁচাতে পারলাম না!”

স্তম্ভিত হলো জয়নব। চোখ কাঁপালে উঠে গেলো। আতঙ্ক নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“কার কথা বলছিস দোস্ত?”

“আয়ান ভাই!”

“কি বলছিস?”

“সত্যি বলছি। নীজের চোখে দেখেছি গত রাতে তাকে বস্তায় ভরে নিয়ে গেছে কেউ!”

কুয়াশা হতবিহ্বল। কি বলবে সে? কি করবে? এ মুহূর্তে কি রিয়েকশন দিয়া উচিত তার??

জয়নব আবার বলল,

“আমি কিছু করতে পারলাম না আরেকটা খুন হবে। আমি কেন পারলাম না!”

ফুপিয়ে উঠলো জয়নব। কুয়াশার যেন সব মাথার উপর যাচ্ছে। সে জয়নব কে সালাতে চাইলো। জয়নবের বাহু ধরে টেনে তুলে বলল,

“জান ডোন্ট বি স্যাড! এমন হতে পারে তুই ভুল দেখেছিস?”

জয়নব চেঁচিয়ে উঠলো,

“আমি নিজের চোখে দেখেছি। বিশ্বাস কর।”

“আচ্ছা আচ্ছা! তুই শান্ত হও। আমরা কোনো না কোনো পথ বের করবো উঠ এবার!”

———

“আই হেইট ইউ! যাষ্ট হেইট দ্যা গার্ল!”

অন্ধকারে মৃদুমন্দ আলোয় এক সুঠামো দেহী লোক বসে রয়েছে রোলিং চেয়ারে। হাতে তার পেপারওয়েট। বাহিরের দিকে তাকিয়ে বার বার ঘুরাচ্ছে আর একই কথা বলে যাচ্ছে সে।এবার সশব্দে আছড়ে মাড়লো মাটিতে পেপারওয়েটটি। ঘরের মাঝে বিকট শব্দ হযে উঠলো। কেঁপে উঠলো পাশে তাকিয়ে থাকা মুশফিক। কাচুমাচু হয়ে আছে। মুখ ভর্তি করে ফুটে আছে হাজারো প্রশ্ন,

“জয়নব মেয়েটিকে নিয়ে স্যার কেন এত ভাবছেন? এতই যখন অপছন্দ মেয়েটিকে সরিয়ে কেন দিচ্ছেন না এখনো?”

কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না কিছুই যদি বন্দুক তুলেই শাই করে চালিয়ে দেয়? শুকনো ঢুক গিললো সে। তখনি আবার ভেসে উঠলো ক্রোধান্বিত কণ্ঠ,

“আই হেইট ইউ। দু বোন একই রকম। কাঁঠালের আঠার মতো। একজনকে সরিয়েছি, তো আরেকজন হাজির! মেয়ে তুমি খুব বুদ্ধিসম্পন্ন,তেজী, সাহসী। তোমার সাহস ভাঙ্গতে আমার মজাই লাগবে!”

ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো সে। অন্ধকারে ভেসে আসা হাসির মালিকটি যেমন সুদর্শন তেমনি হিংস্র। ভেবেই ঘাম ছুটতে লাগলো মুশফিকের।

———

লাইব্রেরিতে বসে বাহিরে তাকিয়ে আছে জয়নব। জানালার বাধাই করা গ্রীল উপক্ষা করে ফেললো সে। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল শাড়ি পরিহিতা আকাশের দিকে। কি সুন্দর সাজ সেজেছে সে। খিল খিল করে হেসে যাচ্ছে কিশোরীদের মতো। জয়নব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আয়না ভাইকে নিয়ে তার ভাব চিন্তা নিত্যন্তই হ্যালোসিনেশন? কিন্তু না সে তো স্বচোখে দেখেছে। তাহলে? কেন কেউ বিশ্বাস করছে না তাকে! কেন? আর তারে ঘারের সেই দাগ? কামড়ের দাগ? যা দেখে সবাই তাকে কটু কথা শোনালো? উল্টো হেসে উড়িয়ে, তাকেই দোষারোপ করলো। কেউ কেউ মুখের উপরই বলে দিলো,

“গলার মাঝে লাভ বাইট নিয়ে চিরনি অভিযান করছো আয়ান ভাইকে নিযে? ব্যাপার কি? আয়ান ভাই আবার তোমার ফাইদা লুটে পালিয়ে টালিয়ে যায়নি তো? কে জানে? বোনের মতো তারো আবার শখ হয়ে প্লে গার্ল হওয়ার। ”

কান ঝাঝড়া হয়ে যাওয়ার মতো কথা বার্তা ভেসে আসতেই ফুপিয়ে উঠেছিলো জয়নব। কুয়াশা তখন বলে উঠে,

“আমি বিশ্বাস করি জান। তুই সত্যি বলছিস। এক কাজ করলে কেমন হয়? আয়ান ভাই যেহেতু হোস্টেলে নেই। বসায় গিয়েছে বলছে সবাই। তখন তার বাসায় টু মেরে আসি, দুধ কা দুধ ওর পানি কা পানি হয়ে যাবে!”

জয়নব তখন স্থীর নিশ্বাস ফেলে। কেউ তো তার সাথে আছে। যা ভাবা তাই করা। ক্লাস শেষে বেড়িয়ে পড়লো তারা। তিন ঘন্টা জার্নি করে পৌঁছে গেলো আয়ানের বাড়িতে। গেট খুলে বেড়িয়ে এলো একজন বৃদ্ধ। আয়ান ভাইয়ার কথা জিগ্যেস করতেই তিনি বলে উঠলেন,

“আয়ান তো কলেজে আম্মাজান, হে তো আরো দুইদিনবাদে আইবো।”

হতাশ হয়ে চাইলে এবার কুয়াশার দিকে। কুয়ার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নিরাশ হয়ে তারা ফিরে এলো হলে। কিন্তু হলে পা রাখতেই যা দেখলো, চোখ ছানাবড়া….!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here