অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_৭,৮

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_৭,৮
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_৭

আজ আপুর গায়ে হলুদ। সকাল থেকেই সবাই ব্যস্ত। একটু পর ঘরোয়া ভাবে প্রথমে হলুদ দিয়ে গোসল করানো হবে। তারপর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানে আবার আপু আর আরফান ভাইয়াকে একসাথে হলুদ দেওয়া হবে। আর মেহেন্দির অনুষ্ঠান ও একসাথে হবে। আমার তো তেমন কোন কাজ নেই। আপুকে সাজিয়ে দিয়ে নিজে একটা হলুদ শাড়ি পড়েছি। মাথায় খোপা করে তাতে বেলিফুল আর গোলাপ কম্বিনেশন করে লাগিয়েছি। আপুর বান্ধুবিরা আমার সবগুলো কাজিনদের নাচ কোরিওগ্রাফ করেছি আমি। আজ সন্ধ্যায় সবার পারফরম্যান্স। ভালোয় ভালোয় নাচতে পারলেই হলো। কিছুক্ষনের মাঝেই আপুর শ্বশুরবাড়ি থেকে ১৫ জনের মতো লোক এলো। সবার হাতেই একটা, দুটো করে ঢালা। আমার এই রং বেরং এর ঢালাগুলো দেখতে বেশ লাগে। একটাতে হলুদ, আরেকটায় শাড়ি, এরকম পর পর কেক, একটা ঘরের মতো কি যেন, আমি ঠিকভাবে চিনিও না। সবচেয়ে অবাক হলাম একটা ঢালা দেখে, কেননা সেটাতে ছিল একগাদা চকলেট, প্রায় ২০ মুট চুড়ি আর একটা নীল সিল্কের শাড়ি। ঢালাটা এতো সুন্দর করে সাজানো ছিল যে কি বলব! আমি দৌড়ে ওই ঢালার দিকে গেলাম। এটার উপরে সুন্দর করে লেখা, “For Subha”। আমি এগুতেই ভাইয়াটা হেসে আমার হাতে ঢালাটা ধরিয়ে দিলো। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করবো তার আগেই ভাইয়াটা বেরিয়ে গেল। ওমা! উনি এভাবে বেরিয়ে গেল কেন? এখানে তো সবার খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি যারা সাথে এসেছিল সবাই ভিতরে চলে গেছে। আমিও ভিতরে গিয়ে একজন আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম,
–আচ্ছা আপু তোমাদের সাথে যে এই ঢালাটা নিয়ে এসেছে সে চলে গেলো কেন?
আপু চারপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
-কই সবাইই তো আছে। আমরা মোট ১৫ জনই আছি এখানে। আর এই ঢালা তো আমরা কেউ আনিনি!
আমি তো অবাক! তাহলে ওই লোকটাকে? কিন্তু এখানে তো আমার নাম লেখা! ঢালাটা রুমে রেখে এসে অনুষ্ঠানে মন দিলাম। আপুকে হলুদ দেওয়ার পর সবার আগে আমাকে হলুদে রাঙিয়ে দিলো আপু! আমি ঠোঁট উল্টে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। এর মধ্যেই এক আন্টি বলে উঠলো,
-এমা কি সৌভাগ্য! এবার রুবাইয়ার পরই সুবাহর পালা। বিয়ের ফুল মনে হয় ফুটেই গেল, নয়তো এভাবে সবার আগে কনের হলুদ ওর গায়ে লাগতো না!
আমি আপু দুইজনেই অবাক। এ কি ধরনের কথা? আমি হেসে দিয়ে আন্টিকে বললাম,
–তা আন্টি আমার বরটা কোথায় যদি একটু বলতে! সে না হলে আমার বিয়েটা হবে কিভাবে? ইশ যদি এখানে থাকতো আমার গালের হলুদ তার গালে লাগিয়ে দিতাম! কি রোমান্টিক হতো বিষয়টা বলুন তো! ইশ ভাবতেই ফিলিং অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে।
আন্টি পুরো দমে গেলেন। নাক ছিটকে বললেন,
-ছিঃ কি অসভ্য মেয়েরে বাবা!
আমি এবার তাচ্ছিল্যের সুরে বললাম,
–লও ঠেলা! এখানে অসভ্যতামির কি হলো? আমি যদি না বলতাম আপনি এক্ষুনি বলতেন, বিয়ের পরপরই বাচ্চা নিয়ে নিও, স্বামী কন্ট্রোলে আসবে, শাশুড়ী খুশি হবে, তোমার জীবন ধন্যওওওও হয়ে যাবে! যেখানে বিয়েরই নাম গন্ধ নেই সেখানে বাচ্চাও পয়দা করে দিতেন আপনারা। আমি আপুর বেলায় শুনেছি আপনাদের কথা! তাই আমার বেলায় আর চান্স দিলাম না।

আমার কথা শুনে আন্টিরা ভেংচি কেটে জায়গা থেকে সরে গেল। আপু আমাকে পিছন থেকে ধরে হাসছে। আর বলছে,
-কি দিলিরে সুবু! হাহা! আমার জীবন ধন্যওওও হয়ে গেল।

সেখানে উপস্থিত সবাই হেসে দিল।

.
সাদাদ উদাম গায়ে কফি হাতে টেরেসে চলে গেলো। মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে সে। চুলের পানিগুলো তার জানান দিচ্ছে। আরফানেরও গোসল শেষ। সাদাদের রুমে এসে দেখে সে টেরেসে দাঁড়িয়ে আছে। তাই জোরে ডাক দিল,
-সাদ!
সাদাদ পিছনে ঘুরে আরফানকে দেখতে পেয়ে রুমে চলে এলো। হঠাৎ তার ফোনে টোন বেজে উঠলো। ফোনটা হাতে নিয়ে সিন করতেই তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। সুবাহর ঢালা হাতে হাস্যজ্বল ছবি। তার পর একটা ভিডিও। সাদাদ কানে ইয়ারফোন গুজে ভিডিও টা সম্পুর্ন দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাদাদকে হাসতে দেখে আরফানও ভিডিও টা দেখলো আর বলল,
-দেখ! আমার শালিকার অবস্থা! আন্টিদের মুখে ঝামা ঘষে দিছে!

.
সন্ধ্যায় আপুর আর আরফান ভাউয়ার হলুদ আগে হবে তাই সবাই এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে। আর আমি রুমে এখনো সাজতে ব্যস্ত। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আরফান ভাইয়ারা এসে যাবে। আজ ওই কালো লেহেঙ্গা টা পড়েছি। আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওই ঢালাতে কালো রঙের রেশমি চুড়ি ছিল ওইগুলো পড়েছি। ভারী মেকআপ আমার কোনকালেই পছন্দ ছিল না। তাও আজ একটু সেজেছি। আমার সাজের মধ্যে সবচেয়ে ভালো হয়েছে স্মোকি আইস! আপু করে দিয়েছে। আজ আপুর অনুষ্ঠান তবুও আপু আমায় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। বাইরে গিয়ে দেখি সবাই এসে পড়েছে। আমি আপুকে স্টেজে বসা দেখে দৌড় দিলাম লেহেঙ্গা ধরে। এটা আমার বদ অভ্যাস। এক্সাইটেড হলে আশেপাশে তাকানোর সময় পাই না। ধুপ করে সামনে কারো সাথে ধাক্কা খেতেই পিছনে পড়ে যেতে নিলাম। কিন্তু তার আগেই কেউ আমার ডানবাহু ধরে বাঁচালো। উহু উহু করতে করতে সামনে তাকাতেই দেখি সাদাদ ভাই আমার হাত ধরে আছে। এমনভাবে ধরেছে যেন আমার গায়ে স্পর্শ লাগলে ওনার শরীর জ্বলে যাবে। আজাইরা! এক মিনিট উনি এখানে কি করছে। ভ্রু কুঁচকে ওনার দিকে তাকাতেই উনি বাঁকা হেসে বলল,
–দেখে চলাফেরা করো! এক্ষুনি তো পড়তে না ধরলে! বাচ্চাদের মতো দৌড়াচ্ছো কেন?
বাচ্চা বলায় বেশ অপমানিত বোধ করলাম। তাই মুখ ফুলিয়ে বললাম,
–আপনি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আর আপনি এখানে কিভাবে?
উনি হেসে আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলল,
–সেটা তোমার দুলাভাইকেই জিজ্ঞাসা করো!
উনি যেতে গিয়েও পিছনে ফিরে বললেন,
–বাই দ্যা ওয়ে অনেক এট্রেক্টিভ লাগছে তোমাকে! কুল! ফু…..
আমি তো পুরো অবাক! এই লোক বলে কি? এটা আবার কি ধরনের নাউজুবিল্লাহ মার্কা কম্পলিমেন্ট! হঠাৎ করেই মনে পড়লো আমি না ওনাকে ভয় পাই? ভয়টা কি পালিয়ে একদা ভয় পাইতাম হয়ে গেলো নাকি?
,
,
,
চলবে…………..❤️

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_৮
.
অনেক গবেষণার পর বুঝতে পারলাম সাদাদ ভাইয়ের এখানে আসার কারন! এমা! ছিঃ ছিঃ! আপুর ভাসুরকে কিনা আমি আবার গিয়ে ইনভাইটেশন কার্ড দিয়ে আসছি! যাইহোক আমি কি জানতাম নাকি যে উনি বরপক্ষ! আমি তো জানি আরফান ভাই একা! ওনার না কোন ভাই আছে আর না কোন বোন! কিন্তু আরফান ভাইয়ের মামাতো ভাই যে এই মি. সাদাদ সেটা আমার অজানা ছিল। আজ কেন যেন এই সাদাদ ভাইকে বেশ লাগছে। সাদা পাঞ্জাবিতে একদম শুভ্ররাজ লাগছে। কেন যেন ওনাকে দেখে আজ আমার একদম ভয় লাগছে না। কিন্তু এই গোমড়া মুখো কি একটু হাসতে পারে না? সবার সাথে কি গম্ভীর ভাবে কথা বলছে। এখানে আসার পর থেকে দেখছি ফোনের উপর ফোন! আজব মানুষ! ওনার দিকে তাকিয়ে গবেষণা করছিলাম এর মধ্যেই বা হাত ঢুকিয়ে দিল রাত্রি। এর টাইমিং আমার একদম পছন্দ না।
-এই সুবু! কি রে এভাবে ড্যাবড্যাব করে কি দেখিস?
–এই সর তো বিরক্ত করবি না একদম।
রাত্রি ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-দোস্ত তোকে তো আজ হেব্বি লাগছে। পুরাই হট! ছেলেরা যে কিভাবে আছে।
রাত্রির কথা শুনে সেই লেভেলে মেজাজ খারাপ হলো। মানে এটা কোন কথা? আজকাল পাবলিক কি সব কম্পলিমেন্টস দেয়! ছিঃ ছিঃ!
আমি আড়চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বললাম,
–ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য!
রাত্রি আমার দিকে এক ভ্রু উচিয়ে বলল,
-এই তুই কি আমার সাথে রাগ করেছিস? আমি কি করলাম আবার!
আমি রাত্রিকে মনে মনে কয়েকবার উদ্ধার করেছি।

আপুর গায়ে হলুদ শেষ। এখন মেহেন্দি অনুষ্ঠান শুরু হবে৷ সাথে নাচ গান তো রয়েছেই। প্রথমে বাচ্চাদের দিয়ে তা শুরু হবে৷ আমার কাজিনদের বেবিদের দিয়ে। ওদের এক রকমের কস্টিউম পড়িয়েছি দেখতে পুরো বাগানের ফুটন্ত ফুল মনে হচ্ছে। ওদের একেকজনের কান্ড দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। এই ভালো নাচছে তো আবার ছুটে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে এক অবাক করা কান্ড ঘটে গেলো। মাহিন ভাইয়ের বাবু ইশপিকে সুমি আপুর বাবু রাইয়ান চট করে গালে চুমু দিয়ে দিলো৷ এটা দেখে সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আর ইশপিতো কান্নাই করে দিলো। মাহিন ভাইয়া তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে ইশপিকে কোলে নিয়ে থামাচ্ছে। ইশপিকে কোলে নিতেই রাইয়ান কোমরে দুই হাত দিয়ে ভ্রু কুঁচকে মাহিন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মাহিন ভাইয়াকে বলে,
-তুমি ইশুকে কেন নিয়েছো? ছাড়ো ওকে আমি আদর করবো!
মাহিন করুন মুখে বলল,
-বাবা ও বড় হোক তখন বিয়ে করে আদর করিস! এখন তো ছোট তাই কান্না করছে।
অকালপক্ব রাইয়ান কি বুঝলো কে জানে? হেসে দিয়ে বলে,
-ইশু আমার বউ হবে?
মাহিন হেসে হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়। এদের ভালোবাসা দেখতে দেখতেই পারফরমেন্স শেষ হলো।
আমি হেসে দিয়ে ডানদিকে ফিরতেই দেখি আমার ভাই মুগ্ধ চোখে কারো দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার চোখ অনুসরণ করে তাকাতেই দেখি একটা সুন্দর আপু হাসছে কথার মাঝে আর আমার আর্মি ভাই তাতে কুপোকাত! আমিও হেসে দিলাম। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলাম ভাইয়ার হঠাৎ হঠাৎ মুচকি হাসির রহস্য। আমি ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি যে ভাইয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আছি তা ভাইয়ার খেয়ালেই নেই। দুইবার ডাক দিয়েছি তাও রেসপন্স নেই। এবার জোরে ধাক্কা দিয়ে ডাক দিতেই আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেলো কেননা সে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে যে সে আমার কাছে ধরা পড়ে গেছে। আমি ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম ওই আপুটা কিনা! ভাইয়া মুচকি হেসে মাথা চুলকালো। আমিও হেসে দিয়ে আপুটার কাছে এগিয়ে গেলাম। আমাকে দেখে আপুটা খুব খুশি হলো। পরক্ষনে জিজ্ঞাসা করলো,
-কেমন আছো সুবহা?
আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
–তুমি আমাকে চেনো?
আপুটা হালকা হেসে বলল,
-খুব ভালো করে।
আমার এবার বেশ কৌতুহল জন্মালো।
–কিভাবে চেনো তুমি আমায়?
আপুটা আবার হেসে আমার পিছনে তাকালো। আমিও তাকাতে দেখি কিছুই নেই। আবার আপুর দিকে তাকাতেই আপু বলল,
-তুমি তো রুবাইয়ার ছোটবোন, তাইনা?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম। আপুটা মুচকি হেসে বলল,
-আমি রুবাইয়ার ননদ হই। আমি সাদিয়া! আরফানের মামাতো বোন।
আমি এবার বুঝার মতো করে বললাম,
–ও তার মানে তুমি সাদাদ ভাইয়ের বোন।
আপু একটু চমকে বলল,
-সাদাদকে ভাইয়া বলো কেন?
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না আপুর কথা তাই বললাম,
–উনি তো আমার সিনিয়র তাই ভাইয়া বলি? কেন? উনাকে কি স্যার বলতে হয়?
আপু থতমত খেয়ে বলল,
-আরে না না! কি বলো। যা ইচ্ছা ডাকো সমস্যা নেই। বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে। ব্ল্যাক সুটস ইউ!
আমি আপ্লুত হয়ে বললাম,
–থ্যাংক ইউ আপু! বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে পুরো রেড চেরী লাগছে এই লাল শাড়িতে! আজ একজনকে পুরো কুপোকাত করে ছেড়ে দিয়েছো।
আপু তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,
-যাকে কুপোকাত করতে চাই সেই আজ এখানে নেই।
আমি চমকে বললাম,
–কাকে আপু? আমি কি জানতে পারি? তোমার কি বয়ফ্রেন্ড আছে?
আপু হালকা হেসে বলল,
-বয়ফ্রেন্ড না ফিয়োন্সি আছে।

আপুর বলা এই একটা কথাতে কেমন যেন বুকটা ধক করে উঠলো। তার মানে! নাহ! আচ্ছা আপুর ফিয়োন্সি আছে ভালো কথা কিন্তু তার কথা বলার সময় আপুর মুখটা এমন মলিন কেন হয়ে গেলো? আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে। হুম!

.
একটু পর আমার পারফরমেন্স। তাই চুলের খোঁপাটা ঠিক করে কানের দুল ঠিক করতে করতে হাঁটছিলাম এর মধ্যেই কেউ হাত ধরে টেনে অন্ধকার রুমে নিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে ধরলো। চিৎকার করবো তারও উপায় নেই। তার হাতটা আমার ঠোঁটের উপর। আমার ঠোঁট সম্পূর্ণ তার হাতের তালুতে আবদ্ধ। আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি। ঘরে একফোঁটা ও আলো নেই। হঠাৎ আমার কাঁধে সামনের ব্যাক্তি কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। আমি তো ভয়ে কাঁপছি। কে? কপাল ঠেকিয়ে ধরেই বলল,
–আর কন্ট্রোল হচ্ছে না বিশ্বাস করো! ইচ্ছে করছে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করি তোমায়! আর তুমি যে ভীতু! তোমাকে একটা ধমক দিলেই কান্না করতে করতে কবুল বলে দিবে। কিন্তু ইসলামে মেয়েদের অনেক সম্মান দেওয়া হয়েছে। ইসলামে জোর করে বিয়ের কোন অনুমতি নেই। আমি কখনোই তোমার অনুমতি ছাড়া তোমাকে স্পর্শ ও করতে পারবো না। কিন্তু কত সামলাবো নিজেকে? একটু আমাকে বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ!(একটা শ্বাস ছেড়ে) আমি ক্লান্ত! তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে, তোমাকে না পাওয়ার ব্যর্থতা আমাকে ক্লান্ত করে দিয়েছে। আই লাভ ইউ!

আমি এখনো রীতিমতো কাঁপছি। মাথা নিচু করে কথা বলার জন্য ঠিকভাবে বুঝতেও পারছি না যে কে কথা বলছে। কিন্তু যেই বলুক না কেন সে একজন ছেলে। হঠাৎ মাথায় কিছু গুঁজে দিলো বুঝতে পারছি। কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
–কালোর সাথে কাঠগোলাপে এখন তোমায় পরিপূর্ণ লাগছে।

বলেই এক আকস্মিক কান্ড ঘটিয়ে বসলো। আবেশ আমার ঘাড় এক কাত হয়ে গেলো। হঠাৎই আমি ছাড়া পেতেই সামনে কাউকে খুঁজে পেলাম না। আমার গায়ে এখনো তার সুগন্ধ লেগে আছে। শ্বাস ক্রমশ উঠানামা করছে!

.
বাইরে এসে সাদাদ তার হাতের তালুতে কয়েক শতাধিক বার চুমু দিয়েছে। একটু আগেও এখানে তার প্রিয়তমার ঠোঁট ছিল যা সে এখনো অনুভব করছে। আর একটু থাকলে সে নিশ্চিত কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলতো। মুচকি হেসে হাত মুঠ করেই এগিয়ে গেলো সামনে।

.
আমি বাইরে এসে স্টেজের দিকে যাচ্ছি এমন সময় সামনে আয়নাতে নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হলাম। আসলেই এই কালো লেহেঙ্গাতে তিনটে কাঠগোলাপ অসম্ভব মানিয়েছে। মনটাই ভালো হয়ে গেলো। আসলেই অজানাকে একটা ধন্যবাদ দিতে হয়! স্টেজে গিয়ে ঠিক হয়ে আমার পারফরমেন্স শুরু করলাম,

ও হে শ্যাম,
তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবো,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো।

এর মধ্যেই রিফাত ভাইয়া আমার সাথে জয়েন করলো।

বাগিচার ফুল তুমি,
দুলিয়ায় নাচি আমি,
মালা গেঁথে গলায় পড়িব,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো

ও হে শ্যাম…!
বুকের মাঝে লুকাইয়িয়া
রাখে মুক্তা ঝিনুক,
এই বুকে লুকানো তুমি,
জগতের লজ্জা মুখ।

হো… বুকের মাঝে লুকাইয়িয়া
রাখে মুক্তা ঝিনুক,
এই বুকে লুকানো তুমি,
জগতের লজ্জা মুখ।

আকাশেরও চাঁদ তুমি,
দরিয়ায় নাচি আমি।
সারা অঙ্গেতে মাখিবো ,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো।

ও হে শ্যাম,
তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবো,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো।

ও হে শ্যাম…!
সুভাসও মিশিয়া থাকে
পাঁপড়ির ভাজে ভাজে ,
তেমন তুমি আছো মিশে,
আমার দেহের মাঝে।

ও… সুভাসও মিশিয়া থাকে
পাঁপড়ির ভাজে ভাজে ,
তেমন তুমি আছো মিশে,
আমার দেহের মাঝে।

সাত রাজার ধন তুমি,
খুঁজিয়া পাইয়াছি আমি,
মনের মনি কোঠায় রাখিবো,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো।

ও হে শ্যাম,
তোমারে আমি নয়নে নয়নে রাখিবো,
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দিবো।
ও হে শ্যাম…

সবাই আমাদের পারফরমেন্স এর জন্য হাতে তালি দিলো। কিন্তু একজন তার চোখ দিয়েই মনে হয় আমাকে ভষ্ম করে দিবে। আর কেউ না সবার প্রিয় সাদাদ ভাই। কিন্ত সাদিয়ার আপুর পাশে দাঁড়ানো একটা লোক রীতিমতো আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো। স্টেজে থাকতেই চোখ পড়েছে, ঘৃণায় গা গুলিয়ে উঠলো আমার। আমি স্টেজ থেকে নেমে দৌড়ে আম্মুর কাছে চলে গেলাম।

আমি আমার কাজিনদের সাথে কথা বলছিলাম এর মধ্যেই একজন আমাকে একটা মিষ্টির ঢাল ধরিয়ে বলল রান্নাঘরের দিকে রাখতে। কি আজব এই আজাইরা কাজের জন্য আমাকেই পায়? হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে পড়লো সাদাদ ভাই। ওনার ওই ভয়ংকর ওয়ালা গম্ভীর লুক দেখলেই আমার আত্মা কাঁপে! আমি তাকে সাইট কাটিয়ে যেতে নিলেই আমাকে ডাক দেয়,
–দাঁড়াও সুবহা!
,
,
,
চলবে……………..❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here