রেস্টুরেন্টের ভেতর বসে আছে মুগ্ধ ৷ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসেই মুগ্ধের কলার চেঁপে ধরেই গালে সজোরে চড় মারে৷ মুগ্ধ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়৷ থম মেরে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে৷অচেনা অজানা এক মেয়ে হুট করে এসে চড় নামক জিনিস টা মারবে বুঝে উঠতে বেগ পেতে হচ্ছে তাকে৷ মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রক্তচক্ষু নিয়ে৷ রেস্টুরেন্টে বসা সমস্ত মানুষ ঘুরে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে৷ মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে কিছু বলার আগেই মেয়েটা তার কলার আবার ধরতে গেলে পেছন থেকে আরেকটা মেয়ে এসে আটকিয়ে ফেলে৷ মেয়েটা ঘুরে রাগী চোখে তাকাতেই সে বলল,
–‘ দোস্ত এ তো সে না..! ভুল টার্গেটে মেরেছিস৷ তাকিয়ে দেখ উনি অন্য কেউ৷ ‘
মেয়েটা সরু চোখে তাকায়৷ ফিচেল গলায় বলল,
–‘ অন্যকেউ মানে? সাদা শার্ট পড়া গ্রীণ রেস্টুরেন্টের দশ নাম্বার টেবিলের ছেলে ৷ আ’ম রাইট? ‘
মেয়েটার কথা শুনে পেছনে থেকে আরেকটা ছেলে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল,
–‘ দোস্ত,এইটা বারো নাম্বার টেবিল৷ ‘
মেয়েটা মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো৷ আমতা আমতা করে সামনে উঁকি মেরে পেছনে পিছিয়ে গিয়ে ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢেকে বলল,
–‘ আপনি কি তিয়াস? ‘
মুগ্ধ মেয়েটার সামনে গিয়ে ব্যাগ টেনে ফেলে দিয়ে হাত উঠাতেই নামিয়ে নেয়৷ গম্ভীর ভাবে চিল্লিয়ে বলল,
–‘ হুয়াই ডিড ইউ স্ল্যাপ মি?হোয়াট দ্যা হেল৷ ইউ স্টুপিড..!’
–‘ মামা ইংরেজ মনে হয়, সর্যি টর্যি বলে কেটে পরি চল৷ ‘ মেয়েটার পাশের ছেলেটা বলতেই মুগ্ধ রেগে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
–‘ চড় মেরে এখন আবার কেটে পরার বাহানা৷ পাবলিক প্লেসে হ্যারাসমেন্ট করার শাস্তি আপনাদের পেতে হবে৷ ‘
মুগ্ধ ঘুরে দাঁড়িয়ে টেবিলে থাকা মোবাইল উঠিয়ে কাওকে ফোন দেয়৷ ওপাশে ফোন রিসিভ হতেই আবারো গম্ভীর ভাবে বলল,
–‘ ইমিডিয়েটলি গ্রীণ রেস্টুরেন্টে আসুন৷ কাম ফাস্ট৷ ‘
মুগ্ধ ফোন নিয়ে ঘুরতেই মেয়েটা দুইজনের হাত ধরে এক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে যায়৷ মুগ্ধ ওদের পেছন যেতেই তিনজনেই সিএনজি তে উঠে মূহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায়৷ মুগ্ধ গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ সাদা সিল্কের শাড়ি জড়ানো মেয়েটা হুট করে এসে চড় মেরে আবার পালিয়ে গেলো আর সে দাঁড়িয়ে আছে ভেবেই রাগ আরো চওড়া হলো তার৷
সিএনজি তে বসে রীতিমতো কাঁপা-কাঁপি অবস্থা আমাদের তিনজনের৷ মারতে গেলাম একজনকে আর মেরে এলাম অন্যজনকে৷ ভেবেই গলা শুকিয়ে আসছে আমাদের সবার৷ আমি পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে কাঁপা গলায় বলল,
–‘ দ -দেখ তো আমাদের পেছনে আসছে কিনা? ‘
রাহাত উঁকি দিলো৷ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
–‘ না! থাপ্পরের শব্দ এখনো আমার কানে বাজছে দোস্ত৷ বেচারার চোয়াল মনে হয় বাঁকা হয়ে গেছে৷ আহারে.. বিনা দোষে জোর এক চড় খেলো ৷ এই তুই সত্যি চিনতে পারিস নি ওইটা হারামি তিয়াস না ৷’
রাহাতের কথায় অসহায় চোখে তাকালাম আমি ৷আমার অসহায় চোখ দেখে নীতি সাহস দিয়ে বলল,
–‘ আরে বাদ দে,ব্যাটা আমাদের আর ধরতে পারলে তো ৷ কাহিনি খতম ৷একটু আগের ঘটনা টুপ করে ভুলে যা সবাই।তবে হারামি ওই তিয়াসকে পেলে দাবাং মার্কা এক চড় দিবি হৃদি ৷ওই ইনোসেন্ট পোলারে যে ভাবে দিয়েছিস তার চেয়ে শক্ত করে ৷ ‘
নীতির কথায় তিনজনের মাঝেই প্রাণ ফিরে এলো৷ গলায় ঝুলানো আইডি কার্ডের দিকে নজর যেতেই একপ্রকার চিৎকার করে উঠলো রাহাত ৷আইডি কার্ড হাতে নিয়েই আমার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত ভাবে বলল,
–‘ দোস্ত,আইডি কার্ডে তোর নাম আছে সাথে আমাদের ভার্সিটির নাম..! ‘
–‘ আমার নাম থাকবে না তো তোর নাম থাকবে গাঁধা ৷ আর যে ভার্সি…. ‘ কথা শেষ করার আগেই আইডি কার্ড হাতে নিলাম৷ সেখানে গোটা গোটা অক্ষরে সুন্দর করে লেখা, হৃদিম নিদ্রা! ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট ,হল নং-৩০২। ‘
আমার ভয়ার্ত দৃষ্টি দেখে রাহাত বলল,
–‘ আইডি কার্ড ছুড়ে ফেল। তোরে আমি চিনি না আর না তুই আমারে। ডিপার্টমেন্টে টানা পনেরোদিন যামু না আমি।নীতি ওর সাথে আমাগো কোনো পরিচয় নাই।মামা গাড়ি থামাও আমি বাড়ি যামু। ‘
আমি রাহাতের কথা শুনে রাগী চোখে তাকালাম এইদিকে ব্লান্ডার করে জান যায় যায় অবস্থা তার উপরে ওর উল্টাপাল্টা কথা।থাপ্পড় মারার অপরাধে আমার জেল হবে নির্ঘাত ।ভার্সিটি তে এসে আমার খোঁজ করলেই ফিনিশ আমি। কি জন্য না দেখেই চড় মারতে গেলাম ভেবেই আরেকদফা কাঁপা-কাঁপি অবস্থা। তবে এখন হলে বা ভার্সিটি কোনোটায় ফেরা যাবে না।আমি ইচ্ছা করে মেরেছি না-কি?? ওদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে সাহসী হাসি দিয়ে বললাম,
–‘ বাদ দে তো। ভুল উনার ছিলো সাদা শার্ট পরে কেন আসবে?? দোষ উনার। না উনি সাদা শার্ট পড়ে আসতো না আমি চড় মারতাম। ‘
দুইজনের আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আমি রিলাক্স হয়ে আবার বললাম,
–‘ ভার্সিটি বা হলে এক সপ্তাহ যাবো না কেও।ওই সাদা শার্ট কয়দিন খুজবে?? বাসায় গিয়ে এক সপ্তাহ রেস্ট নিবো তারপর ভার্সিটি তে যাবো। ‘
–‘ ফোর্থ ব্যাচের স্টুডেন্ট দের ফেয়ারওয়েল আর সব দায়িত্ব আমাদের উপর।এখন বাসায় গিয়ে থাকলে নাকানিচুবানি খেতে হবে বলে দিলাম। ‘
আমি চুপসে গেলাম। শাড়ি খাঁমচে ধরে বললাম,
–‘ আই উইল ম্যানেজ নীতি। এখন আমরা বাসায় যাবো ঠিক সাতদিন পর ভার্সিটি থেকে হল। আর ওই সাদা শার্টের সামনে পরতে চাই না। নির্ঘাত আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবে।’
রাহাত আমার কথায় সায় দিলো। বনানী আসতেই লাফিয়ে নেমে পড়লো ও। আমি আর নীতি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি। নীতি আমার শাড়ি আঁচল ধরে বলল,
–‘ তোর শুভ্র রঙের শাড়ি আর তার শুভ্র রঙের শার্ট প্রেমটা হলে দারুণ হবে দোস্ত। থাপ্পড় খেয়ে প্রেম। ব্যাপারটা জোস। ‘
নীতির কথা শুনে নিজের দিকে তাকালাম। সত্যি আজ একদম শুভ্র রঙের শাড়ি পড়া। তিয়াসও সাদা শার্ট পড়া ছিলো রাহাত বলেছে।আদেও এইটা সত্যি কিনা ও নিজেই জানে।তবে সেই ব্যাক্তিটি সাদা পরেই বড় ভুল করেছে আমার মতে।কাহিনীটা এখানে শেষ হলেই পারতো কিন্তু না কাহিনী শুরু হয় বাসায় থেকে হলে ফেরার পর।সেদিন সকালের ঘটনা আমি অজান্তেই মাথা থেকে বের করে দিয়েছিলাম।বাসায় ফেরার পর সবার সাথে থেকে রিলাক্সে ঠিক সাতদিন পর হলে ফেরার জন্য বের হই। এর মাঝে নীতি বা রাহাত থেকে কারো কোনো ফোন আসে নি। শুধু যাওয়ার দিন সকালে নীতি ফোন দিয়ে বলল, ‘ ইংরেজির নতুন প্রফেসর এসেছে।’
ওর এই কথাটা শুনে একপ্রকার লাফিয়ে উঠেছিলাম আমি। যাক অবশেষে হারুন স্যারের বোরিং ক্লাসের সমাপ্তি। পুরো উদ্দমে বাসা থেকে বের হয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্য রওনা হই।
ক্লাস টাইমের আগে ভার্সিটির চত্বরে আমি আর নীতি দেখা করি। নীতি আমার দিকে তাকিয়ে শাড়ি আঁচল টেনে ধরে।আজও সাদা শাড়ি পড়ে এসেছি আমি।ওর একটা বাজে অভ্যাস আমি শাড়ি পরলেই আঁচল টেনে ধরবে। আতংক নিয়ে বলল,
–‘ তোর সাদা শাড়ির প্যারায় টানা সাতদিন ক্লাসে আসি নি। আবার সেই শাড়ি পড়েই তুই চলে এসেছিস।ওই রেস্টুরেন্টের সাদা শার্ট তোকে খুজতে আসলে আজকে কি হবে ভেবে দেখেছিস ??’
ওর কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু এতোদিন পর সে আসবে বুঝি? আর আমার নাম বা ভার্সেটির নাম যদি না দেখে থাকে তাহলে আসবেই বা কি করে ?? আমি ওর হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলাম। জীবনের সাতটা দিন চড় মারার অপরাধে ঘরবন্ধী ছিলাম ভেবেই হাসি পেলো। কিন্তু আবারও মনে হচ্ছে, সাদা শার্টের সেই ব্যাক্তি খুজতে আসলে আমার কি হবে ??
রাহাত কোথায় গিয়েছে আল্লাহ মালুম। ওর জন্য ক্লাস টাইম ওভার হয়ে যাচ্ছে। ঠিক দশটা বিশে রাহাত হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দাঁড়ায়। ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে দৌড় লাগাই ক্লাসে যাওয়ার জন্য।ক্লাসের সামনে গিয়ে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে দাঁড়াতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাই। প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে সেই সাদা শার্টের ব্যাক্তি কাওকে খুজছেন। আমাকে?? এতোদিন পর। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। রাহাত আমার দিকে আর ক্লাসরুমের দিকে তাকাচ্ছে। নীতি আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আমি পেছনে ঘুরে আবার দৌড় দেওয়ার জন্য পাঁ বাড়াতেই পেছন থেকে সেই গম্ভীর কন্ঠ,
–‘ সাদা শাড়ি স্টপ দেয়ার..! ‘
উনার কথা শুনে মূহুর্তেই দাঁড়িয়ে গেলাম।শেষে কিনা ভার্সিটির সবার সামবে দাবাং মার্কা চড় খেয়ে রমণীর সম্মানহানি..! এই কথা ভাবতেই কান্না পেলো আমার।উনি আমার পেছনে এসে দাঁড়াতেই….
চলবে,,,,,
~” থিম মাথায় ঘুরছে বাট সাজাতে পারছি না একদম।জানি না কেমন হয়েছে। বড় না ছোট হবে সেটাও বলতে পারছি না।ভুল ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন সকলে।”~♥
শুভ্র_রঙের_প্রেম
সূচনা_পর্ব
#রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)