নেকড়ে_মানব,অন্তিম_পর্ব ( শেষের অংশ)

#নেকড়ে_মানব,অন্তিম_পর্ব ( শেষের অংশ)
#আমিনা_আফরোজ

রাতের দ্বিপ্রহর। চারিদিক নিস্তব্ধ। পুরো নেকড়ে টিলা চুপচাপ। কোথাও কোন প্রাণের সাড়া শব্দ নেই। শুধু কান পাতলে শোনা যায় একনাগাড়ে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকার শব্দ অথবা কখনো সখনো দূর কোন গাছ থেকে
শোনা যায় প্যাঁচার ডাক। হঠাৎ নেকড়ে টিলার গহিন অরণ্যে থেকে ভেসে আসে মৃদু ঘন্টা ধ্বনি। যেন কেউ এক নাগাড়ে বাজিয়েই চলেছে ঘন্টাটা। ঠিক তারপরেই শোনা গেল জোরালো শাঁখের শব্দ। যেন আকাশ ফুঁড়ে কেউ শাঁখ বাজিয়ে চলেছে। ঘন্টাধ্বনি আর শাঁখের বিকট শব্দ ছেয়ে গেল নেকড়েটিলার চারিপাশ। অজানা এক আতঙ্ক ছেয়ে গেলো পুরো বনে, যেন অদৃশ্য থেকে কেউ যুদ্ধের ঘোষনা জানান দিচ্ছে পুরো অরণ্যেকে।

নিলয়েরা সেই ভগ্ন কুঠিরেই বসেছিল। দরজার ওপাশে এখনো দাঁড়িয়ে আছে দুইটি নেকড়ে সৈন্য। ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে প্রায় বেশ কিছুক্ষণ। হয়তো খন্টাখানেকেরও বেশি। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল ওরা। অসহায় দৃষ্টিতে কেবল প্রহর গুনছিল নির্মম মৃত্যুর। এমন সময় ওরা চারজনে শুনতে পেল সেই ঘন্টাধ্বনি আর জোরালো শাঁখের শব্দ। নিভৃত কৌতুহল দমাতে না পেরে উঠে বসে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। চাঁদ তখন মাথার উপর। চাঁদের আলোয় ঝলমল করছে চারিপাশ। নিভৃত বাহিরের দিক থেকে মুখ ফেরাতেই ওর দৃষ্টি পড়লো ডক্টর আয়মানের দিকে। মিনিট খানেকের মধ্যেই লোকটা আবারো উবু হয়ে বসে পড়েছে ধুলো জমানো মাটির মেঝেতে। অথচ গত ঘন্টাখানেক ধরে লোকটা দিব্যি ওদের সামনে সুস্থ বসেছিল। নিভৃত দৌড়ে এলো ডক্টর আয়মানের দিকে। ডক্টর আয়মান তখন তীব্র ব্যাথায় ভয়ানক চিৎকার জুড়ে দিয়েছে। নিভৃত একা কিছুতেই সামলাতে পারছে না তাকে। নিভৃতের থেকে হাত দুয়েক দূরে দাঁড়িয়ে সবটাই দেখছিল নিলয়েরা। এইবার নিভৃতকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো দুজনেই।

গহীন অরণ্য থেকে ভেসে আসা ঘন্টার ধ্বনি আর শাঁখের শব্দ যত তীব্র হচ্ছিল ঠিক ততই তীব্র হচ্ছিল ডঃ আয়মানের ব্যথার পরিমান দেখতে দেখতে নিলয়দের চোখের সামনে ডক্টর আয়মানের পুরো শরীর রুপান্তরিত হয়ে গেল নেকড়ে মানবে। ডক্টর আয়মানের শরীর এখন আর কোন মানব শরীর নেই, রুপান্তরিত হয়েছে বাদামী লোমে ভরা এক নেকড়ে দেহ। নিলয়েরা বিষ্ফারিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ডক্টর আয়মানের দিকে যে কিনা মিনিট খানেক আগে সদ্য নেকড়ে মানবে পরিনত হয়েছে। সদ্য নেকড়ে মানবের দুচোখ ইটের ভাটার মতো জ্বলছে। নেকড়েরুপি ডক্টর আয়মান চোখের পলকে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাহিরে পাহারা দেওয়া নেকড়ে দুজনের উপর। এমন অতর্কিত হামলায় বেসামাল হয়ে পড়েছিল নেকড়ে দুটো। তাই তাদের শেষ করতে করতে খুব একটা সময় লাগে নি নেকড়েরূপি ডক্টর আয়মানের। পাহারাকৃত নেকড়ে দুটোকে শেষ করে ডক্টর আয়মান যখন আবারো ঘরে প্রবেশ করল তখন তার পুরো শরীর রক্তে ভেজা। ডক্টর আয়মান এবার নিলয়দের দিকে তাকালো। একপা দুপা করে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। তারপর আচমকা ওদের তিনজনকে দুহাতের মুঠোয় তুলে নিয়ে হাওয়ার বেগে মিলিয়ে গেল গাছের আড়ালে।

রাতের দ্বিপ্রহর। ভাঙ্গা মন্দিরের উল্টোদিকের এক টিলায় সভা বসেছে নেকড়েদের। সভায় উপস্থিত আছে সকল নেকড়েরা। আলোচনা হচ্ছে আজকের এই রাত নিয়ে। সভা সবে সমাগম হয়েছে এমন সময় একজন নেকড়ে হাঁফাতে হাঁফাতে এলো সেখানে। নেকড়েটার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। সারা গায়ে আঁচড়ের দাগ। সুশান্ত নামের নেকড়ে মানব এগিয়ে এলো তার দিকে। কঠোর স্বরে বলল,

–” তোমার এই অবস্থা কে করেছে? ”

নেকড়েটি ধীর গলায় বলল,

–” যে মানুষগুলোকে আপনি আটকে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ করে নেকড়েতে রুপান্তরিত হয়ে আমাদের দুজনের ওপর হামলা করে বসে। আমাদের লড়াই শেষে সেখানেই একজনের মৃত্যু হয়। আমি কোন রকমে সেখান থেকে পালিয়ে আপনাকে খবরটা দিতে এসেছি।”

-” বাকি তিনজন কোথায়?”

–” ওদেরকে ঐ নেকড়েটা নিয়ে চলে গেছে।”

–” কি?”

–” জি ।”

–” কোথায় নিয়ে গেছে জানো কিছু?”

–” তা তো দেখি নি। হঠাৎ করে হাওয়ার বেগে গাছের আড়ালে চলে গেল।”

আহত নেকড়েটির জবাব শুনে রেগে গেল সুশান্ত। আহত নেকড়েটিকে ছুড়ে ফেলল দূরের এক গাছ লক্ষ্য করে। নেকড়েটির প্রানবায়ু বোধহয় তখনি বেরিয়ে গেছে। সুশান্ত এইবার জোরে জোরে গর্জন করতে করতে ছুটে চলল বনের আরো গভিরে। যেখানে এখনো অবধি পড়ে নি কোন মানুষের পায়ের ছাপ। বাকি নেকড়েরা ছুটলো সুশান্তের পিছু পিছু।

এদিকে মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়ালো নেকড়েরুপি ডক্টর আয়মান। মন্দিরের ভেতর থেকে তখনো বেজে চলেছে জোরালো ঘন্টাধ্বনি আর শাঁখের শব্দ। নিলয়দের হাতের মুঠোয় থেকে নিচে নামিয়ে মন্দিরের ঠিক সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতজোড় করে মাথা নিচু করে বসে রইল। নিলয় আর নিভৃতের ঘোর এখনো কাটে নি। ওরা এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে। এমন সময় মন্দিরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো গেরুয়া কাপড় পরিধান করা এক ব্যক্তি। মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই লোকটার মুখাবয়ব স্পষ্ট হলো ওদের কাছে। আকাশে রুপালি চাঁদ। চাঁদের আলোয় লোকটাকে চিনতে মোটেই ভুল হয় নি নিলয়দের। লোকটাকে দেখে নিলয় এগিয়ে এসে বলল,

–” প্রফেসর কোথায় ছিলেন আপনি? আপনাকে কত খুঁজেছি আমরা কিন্তু…..

নিলয়কে কথা শেষ করতে না দিয়ে প্রফেসর সৌমিক চ্যাটার্জি বললেন,

–” এখন এসব কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই। সময় অল্প। আর কিছু সময়ের মাঝেই এখানে এসে পৌঁছাবে ঐ শয়তানটা। তোমাদের হাতে এখন কোন বন্দুকও নেই। তাই মাথা খাটিয়ে প্রতিটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে আমাদের। আপতত আয়মানই হবে আমার প্রধান অস্ত্র তবে আয়মানের মতো আরো একজনকে চাই আমার।”

প্রফেসরের কথার প্রতিউত্তরে নিলয় বলল,

–” আপনার কথার অর্থ হচ্ছে আপনি আমাদের মধ্যে একজনকে নেকড়ে বানাতে চাচ্ছেন। সে নেকড়ে যদি সুশান্তের মতোই হয় তখন কি করবেন প্রফেসর?”

–” পবিত্র আত্মা তখনি খারাপ হয় যখন তার মধ্যে হিংসা, প্রতিশোধ প্ররায়ণতা চলে আসে। যতক্ষন আত্মা শুদ্ধ থাকে , যতক্ষন তার মধ্যে কোন লোম,লালসা, হিংসা, প্রতিশোধ প্ররায়ণতা আসে না ততক্ষণ কোন পাপ তাকে স্পর্শও করতে পারে না। ”

প্রফেসরের কথা শেষ হতেই নিভৃত এগিয়ে এসে বলে,

–” আমি নেকড়ে মানবে পরিনত হবার জন্য প্রস্তুত প্রফেসর। এখন কি করতে হবে বলুন।”

–” দেখো নিভৃত এইটা কোন ছেলেখেলা নয়। জীবন মরনের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কিন্তু তোমার অনিষ্টও হতে পারে। তাই আবারো বলছি ,ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নাও।”

–” আমি সবকিছু ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রফেসর। এই ধরনীকে নেকড়েদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমার মৃত্যুও হয় তাহলে আমার কোন আফসোস থাকবে না।”

–” ঠিক আছে তবে তাই হোক।”

কথাটা বলেই আবারো ভগ্ন মন্দিরের ভেতরে চলে গেলেন প্রফেসর। মিনিট খানেক পর হাতে মোটা এক পুঁথি হাতে বাহিরে বেরিয়ে এলেন তিনি। তারপর বিড়বিড় করে মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে দাড়ালেন নেকড়ে রূপী ডক্টর আয়মানের সামনে। মিনিট খানেক সেভাবেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মন্ত্র উচ্চারণ করলেন তিনি। অতঃপর হাতের আগ্ঙুলী তুলে ইশারা নিভৃতের দিকে।
প্রফেসরের ইশারা পেতেই আর সময় নষ্ট করল না নেকড়ে রূপী আয়মান। দ্রুত ছুটে গেলো নিভৃতের দিকে। নিভৃত নিজেকে প্রস্তুত করেই রেখেছিল। তাই ডক্টর আয়মানের এমন আক্রমনে খুব একটা হকচকিয়ে বা ভয় পায় নি সে। নেকড়ে রূপী ডক্টর আয়মান নিভৃতের গলায় তার সূচালো দুইটি দাঁত বসিয়ে গ্রহন করতে লাগলো রক্তের নোনতা স্বাদ। তারপর একসময় নিভৃত ছেড়ে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়ালো সে। নিভৃত ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। এতক্ষন সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু নিভৃত মাটিতে পড়ে যেতেই চমক ভাঙ্গল ওদের সবার। নিলয় আর রমজান মিয়া ছুটে এলো নিভৃতের কাছে। মাটিতে থেকে নিভৃতেই মাথা তুলে কোলে শুইয়ে দিল নিলয়। কিন্তু প্রফেসর তার স্থান ত্যাগ করলেন না বরং সেখানে দাঁড়িয়েই আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি বাজাতে লাগলেন তিনি। মন্দিরের ঘন্টাধ্বনির শব্দ পাহাড়ের গায়ে লেগে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো পুরো গ্রাম জুড়ে। সময়ের সাথে সাথে বাড়ছিল সে ধ্বনির শব্দ। এভাবেই কেটে প্রায় বেশ কিছুক্ষন। আকাশের চাঁদ তখন হেলে পড়তে শুরু করেছে পুব দিকে। ভোর হতে আর খুব বেশি সময় নেই , মোটে ঘন্টা চারেকের ব্যবধান। বাতাসে মৃদু মন্দ ছন্দ। গাছের পাতার আড়ালে জোনাকিদের ঝাঁক। দল বেঁধে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা।

হঠাৎ এই মনোরম পরিবেশের স্নিগ্ধতা ছিঁড়ে ভেসে এলো এক জান্তব হুংকার। রক্ত হিম করা সে গর্জন। যেন ক্ষুধার্ত একপাল নেকড়ে তেড়ে আসছে সবকিছু লন্ডভন্ড করতে। প্রফেসর তার মন্ত্র উচ্চারনের গতি বাড়িয়ে দিলো আরো খানিকটা। জান্তব গর্জন নিকট থেকে নিকটবর্তী হচ্ছে ক্রমশ। সেই সাথে স্পষ্ট হচ্ছে তাদের রক্ত হিম করা গর্জন। নিভৃতও এই মিনিট পনেরোর মাঝেই রুপান্তরিত হয়েছে নেকড়ে মানবে। ডক্টর আয়মান আর নিভৃত দুজনেই এসে দাঁড়িয়েছে দলের সামনে। নিলয় , রমজান মিয়া হাতে ক্রস জাতীয় কুঠার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদের দুজনের পিছনে। কুঠার দুখানা অবশ্য প্রফেসরই দিয়েছে ওদের হাতে। শয়তানগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিরস্ত্র থাকার চেয়ে হাতে কোন না কোন অস্ত্র থাকা ভালো। প্রফেসর আগের মতোই এক হাতে পুঁথি আর অন্য হাতে হোলি ওয়াটার নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মন্দিরের ভাঙ্গা সিঁড়িতে।

মন্দিরের উঠান প্রাঙ্গনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দু’দল। দুপক্ষের মধ্যে প্রায় হাত চারেক দুরত্ব। নেকড়ের দলের সংখ্যা অনেক। সবাই নেকড়ে রূপে দাঁড়িয়ে আছে মন্দির প্রাঙ্গণে । অন্যদিকে নিলয়দের দলে সদস্য সংখ্যা মোটে পাঁচ। এই পাঁচজনের মধ্যে নেকড়ে মাত্র দুজন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজনের হাতে নাম মাত্র অস্ত্র,যে অস্ত্রে বিপক্ষ দলের নেকড়েদের কিছু করতে পারবে কিনা সন্দেহ ,বাকি একজন মন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত। নিলয় নিজের দলের দিকে তাকিয়ে প্রফেসরের উদ্দেশ্যে বলল,

–” আপনার ক্যালকুলেশনে কিছু ভুল ছিল প্রফেসর। আমাদের দলে নেকড়ে দুটো নয় তিনটে লাগত। দেখছেন তো সামনের দলে অবস্থা। এতগুলো নেকড়ের সাথে কি আমরা যুদ্ধ করতে পারবো? ”

নিলয়ের প্রশ্নের জবাবে মুচকি হাসলেন প্রফেসর। তারপর ঝোলা থেকে দুটো ধাঁগা বের করে এগিয়ে এলো নিভৃতদের দিকে। ডক্টর আয়মান আর নিভৃতেই হাতে ধাঁগা পড়িয়ে দিয়ে সুশান্তের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— ” এখনো কি যুদ্ধ করার ইচ্ছে আছে তোমাদের? ”

সুশান্ত প্রফেসরের কথায় উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো যেন কোন মজার কোন কৌতুক শুনেছে সে। হাসি থামিয়ে নিজের দলের দিকে ইশারা করে বলল,

–” আমার দল দেখে কি আপনার এই মনে হচ্ছে যে আমরা পিছিয়ে যাবো রাজগুরু। আপনি সেই আদি কালেই পড়ে রইলেন রাজগুরু। নিজেকে সময়ের বদলাতে শিখলেন না যেমনটা পারেনি আপনার পূর্ব বংশধরেরা। খামোখা বারংবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে আমাদের সঙ্গে। ফলস্বরূপ কি হয়েছে জানেনই তো। সবাই তার জীবন হারাতে হয়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি অন্তত তাদের থেকে ভিন্ন হবেন। কিন্তু না আপনারাও তাদের পথেই হাঁটছেন। সে যাই হোক। প্রাণ গেলে আপনার যাবে তাতে আমার কি।”

প্রফেসর হেসে বললেন,

–” তোমরাও দেখি এখনো আগের মতোই বোকা রয়ে গেছো। আমরা রাজগুরুর দায়িত্ব পালন করে আসছি আজ থেকে একশ বছর ধরে। আর এই গত একশ বছরে তোমাদের আমরা নিধন করেছি বহুবার। তবুও তোমরা তোমাদের সীমা ভুলে যাও। লঙ্খন করো তোমাদের স্পর্ধা। সেই কারনেই বারবার তোমাদের নিধন করতে ছুটে আসতে হয় আমাদের মতো হাজারো রাজগুরুদের। তবে এইবার আর তোমাদের ছাড়বো না। সমূলে ধ্বংস করবো তোমাদের। তোমাদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচাবো পুরো ধরনীকে, তবেই শান্তি হবে আমার।”

–” আমার পূর্বজরা ছিল অজ্ঞ। ছলনা তারা জানতো না তাই তাদের নিধন করতে পেরেছেন আপনারা । আমি কিন্তু মোটেই তাদের মতো নই। ছোট থেকে সংসার সামলানোর জন্য ছলনা ,কূট সবকিছু বেশ ভালোই জানা আছে আমার। তাছাড়া আপনার দলের ঐ নেকড়ে দুজন আমার কাছে নেহাত দুগ্ধপোষ্য শিশু। ওদের শেষ করতে আমি একাই যথেষ্ট।”

–” ঠিক আছে,তবে শুরু হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই। দেখা যাক কে জেতে।”

কথাটা বলেই নিভৃতদের দিকে ইশারা করলেন তিনি। ইশারা পেয়েই নিভৃতরা ঝাঁপিয়ে পড়লো সুশান্তদের ওপর। শুরু হলো দুপক্ষের লড়াই। লড়ায়ে লাল রক্তে ভিজে যেতে লাগলো বনের সবুজ ঘাসগুলো। ছন্দপতন ঘটল প্রকৃতির সরল নিয়মের। এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। দুপক্ষই তখন ঝিমিয়ে পড়েছে কিছুটা। তাছাড়া চাঁদ তখন পুরো ঢলে পড়েছে পুব আকাশে। নিলয় আর রমজান মিয়া নেকড়ের আঘাতে তখন মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। সুশান্তের বড় দলটার অবস্থা তখন নাজেহাল। ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে তারা। সুশান্তেরো অবস্থা ভালো নয়। ডক্টর আয়মান আর নিভৃত দুজনে একা সুশান্তের দলের অবস্থা নাস্তানাবুদ করে। একটা একটা করে শেষ করতে থাকে দলের সব সদস্যকে। অবস্থা বেগতিক দেখে সুশান্ত হার শিকার করলেও প্রফেসর ছেড়ে দেয় না ওদের। হোলি ওয়াটার আর রুপোর তৈরী কুঠার দিয়ে একে একে শেষ করলো সবাইকে। তারপর রক্ত মাখা কুঠার রাখলো দেবতার পায়ে। রাত পেরিয়ে তখন আকাশে উদিত হয়েছে ভোরের সূর্য। পুরোনো লালিমা মুছে নেকড়ে টিলায় সূচনা হয়েছে নতুন ভোরের। নতুন করে প্রকৃতি সেজে তার নিজস্ব রূপে। ধরনী পুত পবিত্র হয়ে আগের থেকে স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দ্বিগুন। লাল সূর্যের সাথে সাথে মন্ত্র জপ করতে করতে নেকড়ে টিলা থেকে বেরিয়ে এলো ওরা পাঁচজনে। ওদের পিছনে পড়ে রইল ঘন অরন্যে ঘেরা নেকড়েটিলা।

বিশ বছর পর। ভরা পূর্ণিমার ঝলমলে চাঁদের আলোয় আবারো নেকড়েটিলার আন্ধাঘেরা জঙ্গলটি জেগে উঠেছে মায়াবী আলোয়। পুরো অরন্যে নিস্তব্ধ। কোথাও কোন প্রাণের সাড়া নেই। হঠাৎ এই নিস্তব্ধতা ছিন্ন করে শোনা গেলো এক গর্জন। সেই হিম শীতল গর্জনে কেঁপে উঠলো পুরো নেকড়েটিলা। পরপর বেশ কয়েকবার শোনা গেল সে গর্জন। তারপর আবারো নিস্তব্ধতা।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here