ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_02
Ariyana Nur
লোকটির কথা শুনে নুহা এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।একে তো ভয় পেয়ে আছে তার উপরে লোকটার কথায় নুহার আরো ভয় করছে।
নুহাকে কান্না করতে দেখে লোকটি বিরক্ত হয়ে বলল…..
—আপনি এভাবে কান্না করছেন কেনো???আজব তো….
নুহা এবার ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল…..
—আআপনি আমাকে বকছেন কেন???কি করেছি আমি???শুধু শুধু আমাকে বকছেন।
—আপনি জানেননা কি করেছেন???আমার আসতে আর একটু দেরি হলে কি হতো বুঝতে পারছেন।
—আমি কি ইচ্ছে করে কিছু করেছি।আমি তো….
—চুপ….
নিজে ভুল করে আবার বড় বড় কথা।(ধমক দিয়ে)
নুহা এবার ধমক খেয়ে শব্দ করে কান্না করছে।ওর মন চাচ্ছে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করতে।কিন্তু রাস্তায় যেই ময়লা এখানে হাত পা ছড়িয়ে কান্না করছে বাসায় গিয়ে নিজেকেই কষ্ট করে কাপড়-চোপড় ধৌত করতে হবে।তার জন্য নিজের ইচ্ছাটাকে কবর দিয়ে আপাতত দাড়িয়েই কান্না করছে।
নুহাকে কান্না করতে দেখে বাচ্চাটি একবার নুহার দিকে আরেকবার লোকটির দিকে গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে বলল….
—আংতেল তুমি আনতিকে বকছো কেনো???জানোনা পচারা বকে???
বাচ্চাটির কথা শুনে লোকটি একটু অবাক হয়ে বলল….
—এই বাচ্চাটি আপনার না???
নুহা মাথা নাড়িয়ে না বলে বলল….
—আমি বাচ্চাটিকে রাস্তায় দেখে বাচ্চাটির সামনে এসেছিলাম তার আগে…..
ওকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে লোকটি বলল….
—ইডিয়েট আগে বলতে পারলেন না।
নুহা অবাক হয়ে বলল….
—আমি তো এই কথাটা কখন থেকে বলতে চাচ্ছি আপনিই তো…..
—থাক আর কিছু বলতে হবে না।যখন বলার তখন তো মুখে তালা লাগিয়ে রেখেছিলেন।
নুহা হা করে লোকটির দিকে তাকিয়ে রইলো।ওর এখন মনে চাচ্ছে লোকটার মাথা ফাটাতে।আফসোস সামনে কিছু নেই।সেই কষ্টে নুহা আবার কান্না করতে লাগলো।
লোকটি বাচ্চাটির মাথায় হাত রেখে নরম শুরে বলল….
—বাবু তুমি রাস্তায় কি করছিলে???জানো না বাচ্চাদের রাস্তায় একা বের হতে নেই।
—তুমি পচা তুমি আনতিকে বকেছো।তোমার সাথে আমি কতা বলবো না।আনতি তুমি কান্না করো না আমি আনতেল কে বকে দিব।(নুহার চোখের পানি মুছে দিয়ে)
নুহা বাচ্চাটির কথা শুনে মুচকি হেসে বাচ্চাটির গালে হাত রেখে বলল….
—বেবি তুমি রাস্তায় একা একা কি করছিলে???আন্টি আরেকটু পরে আসলেই তো তুমি গাড়ির নিচে চাপা পরতে।তুমি তো গুডবয়।গুডবয়রা কি একা একা রাস্তায় বের হয়??
বাচ্চাটি রাস্তায় অপর পাশের একটি খেলনার দোকান দেখিয়ে বলল….
—আমি তো ঐথান থেকে খেলনা নিতে যাচ্ছিলাম।আর তুমি এসে আমাকে তোলে নিলে।তারপর এই আনতেল এসে তোমাকে বকছে।এই আনতেল পচা।
নুহাঃ না বেবি আঙ্কেলকে পচা বলতে নেই।তিনিই তো তোমাকে সুপারম্যান এর মত বাচিয়েছে।
—যাহ বাবা আমি তো মনে করেছিলাম পুরো তারিফটা নিজেই নিবেন।এখন দেখছি না সত্যিতা স্বীকার করলেন।
লোকটির কথা শুনে নুহা মিষ্টি হেসে বলল….
—আমি অন্য মানুষদের মত অকৃজ্ঞত আর মাথা মোটা নই।কারো তারিফ নিজের উপর নিব আর না জেনে কাউকে কথা শুনাবো।
লোকটির বুঝতে বাকি রইলো না যে,নুহা কথাটা তাকে বলেছে।লোকটি রেগে বলল….
—আপনি আমাকে কথা শুনাচ্ছেন।আপনি এই সাইফ চৌধুরীকে কথা শুনাচ্ছেন।
নুহা ভাব নিয়ে বলল….
—জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ইশারাই যথেষ্ঠ।
লোকটি নুহাকে পুনরায় কিছু বলার আগে একজন লোক ওদের সামনে এসে বাচ্চাটিকে নুহার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বলল….
—কারা আপনারা আমার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কি করছেন???
নুহা পান্টা প্রশ্ন করলো….
— আপনি কে???
—তার আগে আপনি বলুন আপনি কে???
নুহা বাচ্চাটিকে বলল…..
—বেবি একে তুমি চেনো???
বাচ্চাটি মাথা নাড়িয়ে বলল….
—এটা আমার পাপা।
—আপনি কে বলুন তো???আমার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এখানে কি করছেন???আপনি ছেলে ধরা নয় তো(সন্দেহ চোখে)
নুহা লোকটির কথা শুনে অবাক হয়ে বলল….
—ভালোর জামানাই পাল্টে গেছে।যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর।বাচ্চাটি আপনার???
নুহার কথা শুনে লোকটি তেলে বেগুলে জ্বলে উঠে বলল….
—আপনার সন্দেহ হচ্ছে???এটা আমার ছেলে।আর এই মাএ ও যে বলল আমি ওর পাপা শুনেনি আপনি।
নুহা নরম শুরে বলল….
—ও তাই।তাহলে এতোক্ষন কোথায় ছিলেন আপনি???বাচ্চাটা তো আর একটু হলেই গাড়ি চাপা পরতো।তাকে বাচাতে এসে একজনের ঝাড়ি খেলাম।আর আপনি তো পুরো বলেই ফেললেন আমি ছেলে ধরা।
—কথা না ঘুড়িয়ে সত্যিটা স্বীকার করুন।তা না হলে আপনাদেরকে আমি পুলিশে দিব।
—সাইফ এবার নিজের পরিচয় দিয়ে লোকটাকে সব বলল।
লোকটা এবার নরম শুরে বলল….
—সরি।আসলে আমার একটা জরুরী কল এসেছিলো।কখন যে ও আমার হাত ছেড়ে এখানে চলে এসেছে আমি বুঝতে পারি নি।আর যখন দেখলাম আপনি ওকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন তাই হুট করেই যা মনে হয়েছে তা বলে ফেলেছি।
নুহা এবার রেগে বলল….
—ফাজলামি পেয়েছেন হুট করে একটা বলে দিয়ে এখন সরি বলছেন।নিজের বাচ্চাকে দেখে রাখতে পারেন না তাহলে সাথে নিয়ে আসেন কেন???আর আপনি মিঃ…..
—না জেনে কাউকে কিছু না বলাই ভালো।আর একটা কথা… সব সময় দোষটা মায়েদের উপর দিবেন না।কেননা কোন মা ইচ্ছে করে সন্তানের ক্ষতি চাইবে না।আর মায়েদের কাছে নিজের সন্তান সবার আগে।বাকি সব পরে।
নুহা বাচ্চাটির গালে হাত রেখে বলল….
—বেবি আর কখনো একা একা রাস্তায় আসবে না ঠিক আছে।
বাচ্চাটি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।নুহা বাচ্চাটির হাতে ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে দিয়ে বাচ্চাটিকে বাই বলে সেখানে আর একমুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো।
এদিকে সাইফ এর রাগে চোখ মুখ লাল করে মনে মনে বলল….
—কত বড় সাহস আমাকে কথা শুনায়।দেখে নিবো একে।
___________________________
অন্ধকার রুমে রাগে লাল হয়ে বসে আছে সাইফ।রুমের কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই।সব কিছু ছড়ানো ছিটানো।বাড়িতে এসে রাগে রুমের সব কিছু ভেঙ্গেও নিজের রাগ কমাতে না পেরে রাগ কমানোর জন্য দুহাত দিয়ে নিজের চুল গুলো টানছে।
একটু পর একজন এসে লাইট অন করে বলল….
—আল্লাহ ঘরে কি ঘুণিঝড় আসছিলো না কি……
কথাটা আর শেষ করতে পারলো না।কেননা সাইফ আগুন চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটি একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল….
—ভাই এমনে তাকাইও না।তোমার ঐ চোখ দেখলে আমার ভয় করে।
সাইফ সান্ত কন্ঠে বলল….
— এখান থেকে চলে যাও।আমাকে একা থাকতে দাও।
লোকটি সাইফ এর পাশে বসে বলল….
—আজ আবার কি হয়েছে।এভাবে রেগে আছো কেনো???
সাইফ দেয়ালে ঘুষি বলল….
—ঐ মেয়ের সাহস কি করে হয় আমাকে কথা শুনানোর।একে তো ওকে বাচিয়েছি তার উপরে আমাকেই কথা শুনালো।যদি কখনো আবার সামনে পরে তখন জানিনা আমি ওকে কি করবো।
—কোন মেয়ে তোমাকে কথা শুনিয়েছে???আরে আমাকে বলবে তো কি হয়েছে???🙄
সাইফ সব বললে লোকটি হাসতে হাসতে বলল….
—এই প্রথম আমার ভাই এর উপর কোন মেয়ে ক্রাশ না খেয়ে ভাইকে বাশ আই মিন কথা শুনিয়েছি।
সাইফ লোকটির দিকে রাগি চোখে তাকাতেই লোকটি ভৌ দৌড়।
চৌধুরী বাড়ির বড় ছেলে শাহদাত চৌধুরীর একমাএ ছেলে সাইফ চৌধুরী।দেখতে যেমন সুন্দর রাগীও তেমন সুন্দর।রাগ যেন তার নাকের ঢগাই থাকে।বাড়ির সবাই তার সাথে কথা বলতে ভয় পায়।পড়াশুনা শেষ করে এখন বাবার বিজনেস দেখছে।আফিসের সবাই তাকে এক নামে চিনে হিটলার বস।
আর এতোক্ষন যে এই হিটলার এর সাথে র্নিভয়ে কথা বলল,সে হলো সাইফ এর একমাএ আদরের ছোট ভাই নীলাভ চৌধুরী।শাহদাত চৌধুরীর ছোট ভাই সাদ্দাম চৌধুরীর ছেলে।নীলাভ এর বাবা মা নীলাভ ছোট থাকতেই মারা যায়।তারপর থেকে মিঃচৌধুরী আর মিসেস চৌধুরী তাকে নিজের ছেলের মত মানুষ করছে।আর সাইফ তো আছেই।যে তাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসে।
___________________________
আশু স্কুল থেকে দু’হাত দিয়ে দুই বেনি ধরে নাচতে নাচতে বাড়িতে ঢুকছে।বাড়ির ভিতরে ঢুকে সামনের দিকে তাকাতেই ওর মাথা গরম হয়ে গেলো।কেননা সামনে……
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)