ইতির_সংসার পর্ব ৩ ও ৪

0
611

#ধারাবাহিক_উপন্যাস
#ইতির_সংসার
পর্ব ৩ ও ৪
ক্ষুধায় কাঁদছিল ইতি। হঠাৎ শুনে নাঈম বিড়বিড় করে বলছে-“আমার হইছে জ্বালা। নিজের মা বোন যদি আমার শান্তি না চায় তাহলে পরের মেয়ে বুঝবে কি করে?”

সাথে সাথে চুপ হয়ে যায় ইতি। নাঈম ওকে ওর দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে -“দেখ ইতি, আমি জানি এক পরিবার থেকে এসে আরেক পরিবারে মানিয়ে নেয়া কষ্টকর। একটু চেষ্টা করলে কিন্তু পারা যায়। কিন্তু তুমি যদি শুরু থেকেই যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে থাক তাহলে কেমনে হবে বল? আমি জন্ম থেকে যাদের পাশে দেখেছি তারা হল আমার মা বাবা বোন। তুলি আমার বোন হলেও ওকে আমি দেখি সন্তানের মতো। ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করে বা ওর গায়ে হাত তুলে তুমি কখনোই আমার মন পাবেনা। বরং এই কয়দিনে যাও একটু কাছাকাছি হয়েছিলাম সেটাও দূর হয়ে যাবে। তুমি একজন শিক্ষক, এটা তো তোমার বুঝা উচিৎ।”

ইতি চুপচাপ সব শুনে যায়, উত্তরে কিছুই বলে না। মনে মনে ভাবে এই অন্ধ লোককে নিয়ে আমি পথ চলব কি করে? সে বুঝে যায় এই বাড়িতে তার রাতের ভাত ছাড়া কিছুই জুটবেনা, বরং নাঈমকে বলতে গেলে হয়তো সেটাও নাই হয়ে যাবে। হ্যাঁ ইতি নিজে স্বাবলম্বী, কিন্তু ইতির মা বাবা দুজনেই অসুস্থ। আজ যদি বিয়ের কয়দিনের মধ্যেই সে বাপের বাড়ি ফিরে যায় তাহলে হয়তো দুজনের কেউই বাঁচবে না শোকে। তার চেয়ে এখানে পরে থেকে বিষ খেয়ে বিষ হজম করা ভালো। অন্তত কিছুদিন পরপর বাবামায়ের মুখ তো দেখতে পারবে।

পরদিন ভোরে ফজরের আজানের আগে উঠতে যায় ইতি, যাতে দুপুরের রান্না করে রেখে সময়ের মধ্যে স্কুলে যেতে পারে। কিন্তু নাঈম ওকে উঠতে দেয়না। ইতি বুঝিয়ে বলে ভোরে না উঠলে দুপুরের জন্য রান্না করতে পারবেনা কিন্তু নাঈম বলে দুপুরের রান্না মা করবে, তুমি আমার কাছে আরেকটু থাক। ইতি পরে যায় উভয়সংকটে। না পারছে দুপুরে খাবার না পাওয়ার ব্যাপার নাঈমকে বলতে, না পারছে দুপুরের রান্না করতে উঠতে। পরে নাঈমের কথা শুনে থেমে যায়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় এখন থেকে দুপুরে মুড়ি বিস্কুট খেয়েই তাকে পেট ভরাতে হবে।

যথাসময়ে উঠে রেডি হয়ে স্কুলে চলে যায় ইতি। ও বরাবরই সকালের নাস্তা স্কুলে গিয়ে সারে। ফেরার সময় স্কুলের সামনের দোকান থেকে টোস্ট বিস্কুট নিয়ে যায় দুপুরে খাওয়ার জন্য। কিছু খেয়ে বাকিটা একটা বয়ামে ভরে খাটের নিচে রেখে দেয়। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিক ভাবে চা নাস্তা বানিয়ে দিয়ে রাতের রান্না কমপ্লিট করে। ওর শ্বশুর এশার নামাজের পরেই খেয়ে শুয়ে পড়েন। উঠেন একদম তাহাজ্জুদে। রিটায়ার করার পরে যখন বুঝলেন জাঁদরেল স্ত্রী ও ডাকাবুকো মেয়ের কাছে উনার কোন দাম নেই তখন নিজেকে জগতের সকল কিছু থেকে সরিয়ে নিয়ে ধর্মের দিকে মন দেন। খেতে দিলে খান, না খেতে দিলে কোন অভিযোগ করেন না। সংসারের ব্যাপারে উনি ততটুকুই জানেন যতটুকু উনার জানা দরকার বলে উনার স্ত্রী মনে করেন।

বৃহস্পতিবার ইতির হাফ স্কুল। দুপুরের খাওয়ার আগেই বাসায় ফিরে সে। হাতমুখ ধুয়ে বের হতে যাবে রুম থেকে তখনই শুনে ওর শ্বশুর সামাদ সাহেব মেয়েকে বলছেন ইতিকে খেতে ডাকতে। উত্তরে তুলি ঝংকার দিয়ে বলে -“তুমি চুপচাপ খাও তো বাবা, একদিন দুপুরে না খেলে তোমার পেয়ারের বৌমা মরে যাবেনা।”

কথাটা শুনে মনে মনে হাসে ইতি, একদিন? ওর শ্বশুর কি জানেন আজ ছয়দিন ইতি দুপুরে ভাত খায়নি। অবশ্যই জানেন না। এরা নিজেদের কীর্তিকলাপের বয়ান বাড়ির পুরুষদের কাছে লুকিয়ে রাখে সেটা সে এতোদিনে বুঝে গিয়েছে।

পরদিন শুক্রবার নাঈম ঘুম থেকে উঠেই ওর মাকে বলে -“মা আজ দুপুরে কালোজিরে ভর্তা করনা প্লিজ। অনেকদিন খাইনা।” ইতিকে বলে -“আমি বাজার থেকে মাছের ডিম এনে দিচ্ছি, তুমি একটু মাছের ডিমের বড়া বানাও।” দুজনেই সম্মত হয়।

নাঈম বাজার করে এনে দিয়ে গোছল করে বের হয় বন্ধুদের সাথে। নামাজ পড়ে এসে একেবারে খেয়ে নিবে। ইতি তাড়াতাড়ি মাছের বড়া করার জন্য মাখিয়ে নিয়ে চুলায় কড়াই চাপায়, কড়াই গরম হতেই তেল ঢালতে যাবে সেই সময় নাজমা বেগম আড়াইশ গ্রামের মতো শুকনো মরিচ কড়াইয়ে দিয়ে বলে ভেজে দাও। ইতি ভাবে হয়তো একেবারে ভেজে রাখছে কয়েকদিনের জন্য, ওর মায়ের মতো। কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ মরিচ গুলো ভেজে দিয়ে মাছের ডিমের বড়া বানায় সে। শাশুড়ী বউ মিলে ফরমায়েশি রান্না শেষ করে দুজন গোছল করতে যায়। ইতি গোছল করে কয়েকদিনের জমানো কাপড় ধুয়ে বের হয়ে দেখে নাঈম অনেক আগেই চলে এসেছে, সবাই খেতে বসেছে। নাঈম ওকে খেতে ডাকে।

নাঈম ভাতের সঙ্গে কালোজিরে ভর্তা মাখিয়ে মুখে দিয়েই চিৎকার করে উঠে -“মা এতো ঝাল কেউ খায়? এতো ঝাল দিছ কেন?”

নাজমা বেগম নির্বিকার মুখে বলে -“তোর বউই তো মরিচ ভেজে দিল, আমার কি দোষ?”

এক ঝটকা দিয়ে ওর শাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে ইতি দেখে কোন বিকার ছাড়াই একটার পরে একটা মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন নাজমা বেগম। অন্তরটা বিষিয়ে যায় ইতির। এতো কেন নাটক করতে হবে আর এতো কেন মিথ্যে বলতে হবে। এ কেমন টক্সিক পরিবেশে এসে পড়ল সে? এই কি সে চেয়েছিল আল্লাহর কাছে? ও শুধু নাঈমকে বলে -“তুমি জানো আমি ঝাল খেতে পারিনা।”

সপ্তাহে একটা দিন সে দুপুরে খেতে বসেছিল কিন্তু শাশুড়ির নাটক দেখে সেই খাওয়ার রুচিও নষ্ট হয়ে যায় ইতির। সবার খাওয়া হলে বাসনকোসন ধুয়ে রেখে রুমে যায়। তখন শুনে তুলি নাঈমকে শুনানোর জন্য জোরে জোরে বলছে -“সারা সপ্তাহ স্কুল থেকে ফিরেই ঘরে দুয়ার দেয়, আজ আমার ভাইকে দেখে কাজ দেখাচ্ছে। ওই কয়টা বাসন আমরাই মাজতে পারতাম। কেন মা ওকে মাজতে দিলা?”

রুমে ঢুকতেই নাঈম ওকে বলে -“তুমি প্রতিদিন দুপুরে স্কুল থেকে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়? কিছুই কর না?”

ইতি বিরক্ত হয়ে বলে -“অন্ধ যখন হয়েছ তখন পুরোপুরি অন্ধ হওনা। তোমার অনুপস্থিতিতে কি ঘটে তা জানার কি দরকার? এক পক্ষ কথা শুনে বিচার করতে যেওনা। আমি যদি ফরিয়াদি হই তাহলে সহ্য করতে পারবেনা কেউ। আর হ্যাঁ তাও যদি জানার জন্য মন উতলা হয় তাহলে সিসিটিভি লাগাও। রাতে দরজা ছিটকানি না দেয়ায় আমি ঘুমাতে পারিনা, সেটা দুপুরে ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেই। তাতে কোন সমস্যা হলে জানাও, সেটাও বাদ দিয়ে দেব।”

-“আরে কি ঝগড়া শুরু করলা? সপ্তাহে একটা দিনই দুপুরে বাসায় আছি, তাও যদি ঝগড়া করে সময় নষ্ট কর তাহলে হল?” হেসে পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা করে নাঈম।

-“ঝগড়া না নাঈম, আমি আসলে তোমাদের বুঝে উঠতে পারছিনা। দুপুরে আমি মাছের ডিমের বড়া করার সময় মা আমাকে বলল মরিচ গুলো ভেজে দাও, আমি ভাবলাম একেবারে ভেজে রাখবে, যেমন আমাদের বাসায় আম্মুকে করতে দেখেছি। আমি চুপচাপ ভেজে দিলাম। কে জানত যে সব মরিচ একটা ভর্তায় দিবে? অথচ সব দোষ আমার হয়ে গেল।” শ্লেষের সাথে বলে ইতি।

-“আরে বাদ দাওনা। মার একটু মজা করার স্বভাব। আমিতো বুঝেছিই ব্যাপারটা। এই সামান্য ব্যাপার টা আর বাড়িও না প্লিজ। আসো একটু রেস্ট নাও। বিকেলে কোথাও থেকে ঘুরে আসব শুধু তুমি আর আমি।” বলে ইতিকে বুকে জড়িয়ে নেয় নাঈম।

বিকেলে ইতি ও নাঈম বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বের হতেই দেখে তুলিও রেডি, ওদের সাথে যাবে। নাঈম কিছু বলার আগেই তুলি বলে উঠে “ভাইয়া কতদিন তুমি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওনা বলত? চল আজ আমি আর তুমি আগের মতো রিকশায় করে ঘুরব, ফুচকা খাবো, চল চল।” বলতে বলতেই ইতি ঘর থেকে বের হয়ে আসে। ইতিকে দেখেই তুলি ভ্রু কুঁচকে বলে উঠে “তুমি আবার কই যাও ভাবি? একটা দিন তোমার ঘরে মন টিকে না তাইনা? শুক্রবার স্কুল বন্ধ তাই এখন বাইরে যাও?”

তুলির কথা শুনে ইতি কটমট করে তাকায় নাঈমের দিকে। নাঈম চট করে বলে “মা, যাও তুমিও রেডি হয়ে আসো। তুমিও অনেকদিন বের হওনা। আজ আমাদের রিকশা ভ্রমণ হবে। তোমরা রেডি হও, আমি রিকশা ডেকে আনি।”

নাঈম বের হয়ে যায় রিকশা ডাকতে। সে নিজে মাকে রেডি হতে বলেছে ভেবেই নাজমা বেগমের মন খুশি হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি শাড়ি পালটে রেডি হয়ে আসেন। ততক্ষণে নাঈম রিকশা ডেকে এনেছে। মাকে আর বোনকে এক রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে ইতিকে নিয়ে সে আরেক রিকশায় উঠে। জোরে মাকে বলে “মা আগে এক ঘন্টা এলোমেলো রিকশায় ঘুরি, কি বল? সুন্দর আবহাওয়া আজ।”

ওর মা সম্মতি দিলে রিকশা ছাড়তে বলে। ইতি দাঁতে দাঁত পিষে বলতে থাকে “এমন একটা বেকুবের ঘাড়ে বাপ আমাকে চাপাইছে।” নাঈম শুনে মিটিমিটি হাসে।

কিছুদূর যাওয়ার পর কি মনে হতে ইতি পিছনে তাকায়, তুলিদের রিকশা দেখা যাচ্ছেনা। আরো দুই তিনবার দেখে ও নাঈমকে বলে “তুলিদের রিকশা কই? পিছনে দেখা যাচ্ছেনা।”

নাঈম মৃদু হেসে বলে “ওদের রিকশা আরেক রুটে।”

– “মানে?” বুঝতে পারেনা ইতি।

-“মানে হল আজ শুধু তুমি আর আমি ঘুরব বলেছিলাম না? সেটাই করছি। তুলির ঘুরতে ইচ্ছে করল তাই মা আর ওকে পাঠিয়ে দিলাম। ওর যদি আগের মতো আমার সাথেই ঘুরতে ইচ্ছে করে তাহলে সামনের সপ্তাহে শুধু ওকে নিয়ে আমি ঘুরিয়ে আনব। কিন্তু আজ আমি তোমাকে কথা দিয়েছি শুধু তুমি আর আমি ঘুরব সেই কথা রাখছি।” বলেই মৃদু হেসে ইতিকে জড়িয়ে ধরে নাঈম।

ইতির হঠাৎ করে একটা ভালোলাগা জন্মায় নাঈমের জন্য। বিয়ের পর থেকে গত কয়েকদিন বদ্ধ ঘরেও শান্তি মতো সময় কাটাতে পারেনি নাঈমের সাথে, তুলি এসে দরজা নক করবে এই আশংকায় তাড়াহুড়ো করে দরজা খুলে রাখতে হত সারারাত, ছিটকানি দিতে পারত না। শুনেছে বিয়ের পরে নাকি নতুন বর-বউ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় কিন্তু তুলির বারেবারে এসে ভাইকে দেখে যাওয়ার ঢং দেখে ওরা দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে পারেনি, দুজনের মাঝে দূরত্ব রেখে খাটের দুই প্রান্তে ঘুমিয়েছে দুজন। তাই আজ ভরা শহরে রিকশায় একে অপরের সঙ্গ উপভোগ করে এই নবদম্পতি।

হঠাৎ ইতির মনে হয় অনেকক্ষণ হয়ে গেল এদের দেখা পায়নি তুলি, কিন্তু এখনো কল দিচ্ছেনা, ব্যাপার কি? নাঈমকে বলে “তুলি ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছালো কি না খোঁজ নিবেনা? দাও ফোনটা, আমি কল দেই।”

-“না, কল দিতে হবে না। আমি ফোন বন্ধ করে রেখেছি, তুমিও বন্ধ কর বা সাইলেন্ট করে রাখ। বাসায় না ফেরা পর্যন্ত শুধু তুমি আর আমি।” নাঈম বলে।

ইতি আসলে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা সাথের মানুষটাকে। এই সে বোনের জন্য ঘরের দরজা লাগায়না। আবার এই মানুষই বাইরে এসে ফোন বন্ধ রাখছে যেন তার বোন তাকে কল দিতে না পারে। অদ্ভুত ব্যাপার। ইতি আর এসব না ভেবে নাঈমের কথা মতো ওদের us time উপভোগ করে। বৈধ সঙ্গীর সাথে রিকশায় শুধু হাত জড়িয়ে ধরে বসে থাকাতেও যে একটা সুখ আছে তা এর আগে কখনো বুঝেনি। কারণ বিয়ের পরে আজই ওদের প্রথম আউটিং।

রিকশায় করেই ওরা শহরের বাইরে চলে আসে। সন্ধ্যা হয়ে যায়। ইতি নাঈমকে বলে বাসায় ফেরার কথা। কারণ সন্ধ্যার চা নাস্তা দিয়ে ওকে রাতের রান্না করতে হবে। নাঈম বলে “তুমি আসার আগে কি সবাই না খেয়ে ছিল? বলেছি না বাসায় ফেরার আগে আর আমাদের ছাড়া কিছু ভাববেনা।”

ইতি পড়ে যায় দোটানায়। পরদিন নাঈমের অনুপস্থিতিতে ওর কি অবস্থা হবে ভেবে এখনই গলা শুকিয়ে আসছে, আবার এখানে স্বামীসঙ্গও ভালো লাগছে। পরেরদিনের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বর্তমানটাকেই উপভোগ করার সিদ্ধান্ত নিল ইতি।

শহরের বাইরে নতুন একটা রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন হয়েছে কয়দিন আগে। সেখানেই এসে নাঈম রিকশা থামালো। যেহেতু ঘন্টা চুক্তি রিকশা ভাড়া করেছে তাই তাকেও অপেক্ষা করতে বলে। রেস্টুরেন্টে নেমেই চমকে যায় ইতি। কয়দিন আগে উদ্বোধন হবার পর ওর ফ্রেন্ড সার্কেল এখানে এসেছিল। তখন ওর মনে হয়েছিল যদি আমিও যেতে পারতাম। আজ সেখানেই নিয়ে এসেছে নাঈম ওকে।

একটা টেবিল নিয়ে বসার পরে ইতি নাঈমকে বলে “জানো আমার না খুব ইচ্ছে করছিল এখানে আসতে। থ্যাংক ইউ ইচ্ছে টা পূরণ করার জন্য।”

নাঈম হেসে বলে “ম্যাডাম ইচ্ছে হয়েছিল তা বলেন নাই কেন? হঠাৎ করে তোমার একটা কমেন্ট আমার চোখে পড়ে। তুমি তোমার এক বান্ধবীর এখানে চেক ইন দেয়া পোস্টে কমেন্ট করেছিলে – দেখেই যেতে ইচ্ছে করছে, আগের মতো তো আর ইচ্ছে করলেই পূরণ হবে না। কেন বলেছিলে ইচ্ছে করলেই পূরণ হবে না বলত এখন শুনি।”

ইতি অবাক হয়ে যায় “তুমি আমার কমেন্ট পড়ে এখানে আনছ? তোমাকে দেখে কিন্তু মনে হয় না তুমি আমার জন্য চিন্তা কর বা ভাবো।”

হা হা করে হেসে উঠে নাঈম। বলে “দেখ ইতি আমার মা, আমার বোন ওরা আমাকে জন্ম থেকে একরকম দেখে আসছে। ছোটবেলায় একবার খেলতে খেলতে আমি তুলিকে না বুঝেই পানিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। অনেক কষ্টে ওকে বাঁচানো যায়। তার কিছুদিন পরে ও আমার সাথে রাগ করে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় একটা রিকশায় ধাক্কা লেগে রাস্তায় পড়ে যায়। সেই সময় প্রায় দুই সপ্তাহের মতো কোমায় ছিল তুলি। শুধুমাত্র আল্লাহর কাছে দিনরাত কান্নাকাটি করায় ওকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। সেই থেকে ওর সাথে আমরা কেউই রাগ করিনা। ভয় হয় যদি এবার আর আল্লাহ ফিরিয়ে না দেন। শুধুমাত্র এই ভয়েই আমি বা মা ওকে কিছু বলিনা। তার মানে এই না যে ওর অতি বাড়াবাড়ি আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু আমরা ভালোবাসার হাতে বন্দী। আর আজ ঘুরতে আসার জন্য মাই বলেছে কয়দিন আগে। তখন থেকেই ভাবছিলাম কোথায় ঘুরতে নিয়ে গেলে তোমার ভালো লাগবে? তখন আচমকাই তোমার কমেন্ট চোখে পড়ে। তাই আজ আমরা এখানে।”

-“ওহ, শুধু মা বলছে বলেই আনছ তাইনা। আসলেই তোমার কেয়ার নাই আমার ব্যাপারে।” অভিমানী স্বরে বলে ইতি।

-“আচ্ছা? তাই? তোমার বুঝি খুব কেয়ার আছে আমাদের ব্যাপারে? আজ কয় তারিখ বল? তারপর ভেবে দেখ কিসের তারিখ। তাহলে বুঝা যাবে ম্যাডাম কত কেয়ার করেন।” নাঈম বলে।

ভাবনায় পড়ে যায় ইতি। হঠাৎ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে “আজ আমাদের বিয়ের একমাস হল।”

-“যাক অবশেষে ম্যাডামের মনে পড়েছে। ধন্য হলাম।” হাসি ঠাট্টা খুনসুটিতে মেতে উঠে দুজন।

খাবার আসতে শুরু হয়। হঠাৎ ব্যাগে রাখা ফোনে একটানা অনেকক্ষণ ভাইব্রেশন হওয়ায় ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ইতির মা কল দিচ্ছে। নাঈমের অনুমতি নিয়ে কল ধরে ইতি। ওপাশের কথা শুনতে শুনতে চেহারা পাল্টে যায় ওর, নাঈম সেটা খেয়াল করে। ফোন রাখার পরে দেখে ইতির চোখে পানি। নাঈম জানতে চায় কি হয়েছে?

ইতি শুধু নাঈমের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আর ওর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। অবশেষে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে………
@সৈয়দা রাজিয়া বিল্লাহ

পর্ব ১ ও ২: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1906440119718933&id=100010588903193&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here