#আমার_হৃদয়ে_সে,১৫,১৬,১৭
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৫
২১.
আমি সামনের সিলিং করা দেয়ালের সবুজ রঙ্গের পেইন্টার দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছি।পাশে আমার শাশুড়ী মা,রিমা এবং টিপি বসে আছে।তারা খালামণির সাথে কথা বলতেছে।তারা এসেছেন মিনিট ত্রিশেক হবে।অভি কাল বিধ্বস্ত মুখে বাসায় ফিরে যাবার পর অভির চেহারাটা নাকি শাশুড়ী মার নজরে আসে।তিনি দৌড়ে অভির কাছে যান।গিয়ে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে?তাকে এরকম কেন লাগছে?অভি বলতে চায় নি।মাও হাল ছাড়েন নি।অনেক বলাবলির পর,অনেক আকুতি মিনতি করার পর অভি অতঃপর আমার এবং তার মাঝের ঝামেলাটার কথা বলে!তা শুনেই আজকে আমার শাশুড়ী মা,রিমি আপু এবং টিপির খালামণিদের বাসায় আগমণ।শাশুড়ী মা খালামণির সাথে থমথমা মুখে বলেন,
“আমি ভাবতেও পারি নি অভি এরকম কিছু করবে!ও এতটা হিতাহিতজ্ঞানশূন্যতা কবে থেকে হলো সত্যি আপা আমার মাথায় ই আসছে না!আমার কষ্টতো সেখানে নয় আমার কষ্ট তো সবচে এখানে! এই মেয়েটার উপর!এই মেয়েটা ত আমাকে একটিবার বলতে পারতো অভি তার সাথে এরকম রূঢ় বিহেভ করতেছে।ইভেন শেষমুহুর্তে, ওর গাঁয়ে হাতও পর্যন্ত তুলেছে!বলেনি এই মেয়ে।এসবের কিছুই বলে নি আমাকে।আর বলবেই বা কী করতে?আমি কি ওর আপন মা যে বলবে?”
শাশুড়ী মাও পুরো কিংকর্তব্য বিমূঢ়!অভির এবং আমার সাথে যে এতবড় একটা ঝামেলা ছিল তা শাশুড়ী মার বিশ্বাসই হচ্ছে না।এখানে ঢোকামাত্র ত আমাকে দেখে প্রথমেই কেঁদে ফেললেন!তারপর রাগী রাগী কয়েকটা কথাও শুনালেন!!আসলে এসব শাশুড়ী মার পক্ষে যায়।আমি সে বাড়িতে উনাদের সামনে এতটা হাসিখুশি থেকেছি।মনের চেপে রাখা কষ্টগুলোর এক ছিটেফোঁটাও বুঝতে দিই নি তাতে তো তিনি ভেবেছেন আমি অভির সাথে খুব হ্যাপী!খুব!কিন্তু আজ এসব শুনার পর কতটাই না কাহিল এবং অস্থির!খালামণি বলেন,
“ছিঃ আপা,এভাবে বলবেন না।ও আপনাকে নিজের মার মতনই ভাবে।এখানে আসার পর থেকে আপনার,ওর শ্বশুর,রিমি মার এবং টিপির কত যে প্রশংসা করেছে।আপনারা নাকি ভীষণ ভালো!”
“হ্যাঁ,আপা আমরা ভীষণ ভালো।এতটা ভালো তাইতো ওর মনের ভেতরে চেপে রাখা কষ্টগুলো একটিবারের জন্যেও অনুধাবন করতে পারি নি!”
বলে শাশুড়ী মার ব্যথাতুর চোখজোড়া আবারো টলমল করে উঠে!গলায় প্রায় কান্নাও বেঁধে যায়।লম্বা করে বার কয়েক শ্বাস ছাড়েন। তারপর নিজেক সংযত করে বলেন,
“বউমা,এখানে আসার পর তাইতো আমি ভাবি বউমার আসতে এতো দেরী হচ্ছে কেন?সে না আমাকে চারদিনের কথা বলে গিয়েছে?আর আমিও কেমন অচেতন!একবারও ওকে কল করে জিজ্ঞেস করিনি ও কেন বাসায় ফিরছে না!”
“প্লিজ আপা,মন খারাপ করবেন না।যা হবার হয়ে গেছে।আগের কথা বলে লাভ নেই।এখন সামনের কথা ভাবতে হবে।”
“হ্যাঁ,সামনের কথাই ভাবতে হবে।”
বলে শাশুড়ী মা এবার আমার দিকে তাঁকান।কাঁধের উপর আলতো হাত ছুয়ে বলেন,
“পারিসা?”
আমি দেয়াল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শাশুড়ী মার দিকে তাকাই।বলি,
“জ্বী মা,বলুন?”
“তুমি অভির ঘরে আর যাবে না মা?”
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলাম।শাশুড়ী মাও নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে থাকলেন।তাকানোর সময়টা একটু বেশিই গড়াতে শাশুড়ী মা আবার বলেন,
“আমি তোমাকে অভির ঘরে ফিরে যেতে জোর করবো না।তবে এটুকুই বলবো তুমি না থাকলে আমি সত্যিই ওখানে ভালো থাকবো না!”
কথাটা বলতে শাশুড়ী মার গলাটা কেমন ধরে আসলো।এই মহিলাকে বিয়ের পর থেকে দেখে এসেছি। কতটা অকৃত্রিম মায়া ই না এই মহিলার মাঝে। বিয়ের প্রথম দিনই আমার মনটা খুব জয় করে নিয়েছেন ইনি ইনার স্নেহ,মমতা,ভালোবাসায়।শুধু ইনি না।আমার শ্বশুর। আমার ননদ-ননদী সবাই।শুধু একজন আমাকে বুঝলো না।সে অভি।হ্যাঁ,এই অভিটাই আমার জীবনের সব সুখময় মুহূর্তকে বিভীষিকা বানিয়ে দিলি!আমার স্বপ্নে গড়া জীবনটাকে তছনছ করে কতগুলো মায়াকে আজ বিচ্ছিন্ন করতে চললো!বুকটা আবারো ভার হয়ে গেলো।আমি শাশুড়ী মাকে জড়িয়ে ধরলাম।চোখের কোলে পানি চিকচিক করে উঠেছে।কোনোমতে বাম হাত দিয়ে চোখের কোণের পানি মুছে নিয়ে নিজেকে ধাতস্থতা করলাম।বললাম,
“মা,যদি ভাগ্য হয় অভির সাথে থাকবো আর না হলে তো আর কিছুই করার নেই।সব ওই উপরওয়ালাই জানেন।”
শাশুড়ী মা চুপ থাকেন চল্লিশ/পঞ্চাশ সেকেন্ডসের মতন।তারপর বলেন,
“অভি ক্ষমা চেয়েছে তোমার স্কাছে আমাকে তাও বলেছে।সে আসলে না বুঝে ভুল করে ফেলেছে।তবে ওর প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ!জানো কেন?ও তোমাকে বিষয়টা জিজ্ঞেস না করে কীভাবে পারলো ওই কথা বিশ্বাস করতে?ওর এই ব্যাপারটা আমিও মেনে নিতে পারছি না রে মা!তারপরও দেখ কি করবে!তবে তোকে ছাড়া আমি…
বলে শাশুড়ী মা আবার ভেঙ্গে পড়েন।রিমি আপু এগিয়ে আসেন।শাশুড়ী মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“মায়া জিনিসটা ভীষণ অদ্ভুত! মায়ার চাপাতলে পড়ে
অনেকে অনেক সময় ভুল সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলে।মন কেঁদে লাভ নেই মা।কান্নাটা কিছুই দিবে না।ভাবী তোমার যে ওয়েটা ঠিক মনে হয় তুমি তাই করো।আমরা তোমাকে বাঁধা দিব না।কারণ লাইফ তোমার। আমাদের নয়।তুমি যার সাথে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাঁটাবে তার তোমাকে কতটা ঠিক মনে হয় সেটার ডিসিশন অনলি তোমার।কারণ জীবন কোনো ছেলেখেলা নয়।ছেলেখেলা জীবনই দুঃখের হাতছানি দেয়।”
আবার দুইচোখ বেয়ে টলটল করে পানি গড়িয়ে যায়।রিমি আপু মাকে ছেড়ে আমার কাছে আসেন।এপাশে বসেন।বলেন,
“কুল,ডিয়ার।কুল।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
তারপর এরকম খানিকক্ষণ চলার পর পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়।শাশুড়ী মা আর বসেন নি।উঠে দাঁড়ান।বলেন,
“পারিসা?তুমি আরো সময় নাও মা।তুমি আরো ভাবো কি করবে।আমার কথা মনে রেখে আরেকটু ভাবো মা।এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ রইলো। ”
বুঝলাম শাশুড়ী মা নিজের মনকে মানাতে পারছেন না। ।খালামণি বলেন,
“আপা দেখা যাক কি করা যায়।ওর বাবা,মা, আপনারা সবাই ই আছেন কী করা যায় সেটা দেখবে সবাই।আগে প্লিজ খাবারটা খান।খাবারটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আপা।সেই কখন রাখলাম।”
“নাহ,আপা।আমার আর খেতে ইচ্ছে করছে না।অন্য আরেকদিন খাবো।কষ্ট দিলাম আজকে।এখন বোধহয় যেতে হবে।”
বলে উঠলাম,
“সে কি,মা!না খেয়ে চলে যাবেন?এটা মানতে পারছি না।”
“নাহ বউমা,জোর করো না।আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”
আমি আবার নিজেকে ধাতস্থতা করলাম।তারপর বললাম,
“আজ থেকে যান না, মা?”
“নারে মা।কপালে থাকলে আরেকদিন।”
চুপ করে রইলাম।রিমু আপু এবং টিপি এরফাঁকে মুখে কিছু একটা ফুঁরলেন।গিলা শেষ হলে রিমি আপু বসা থেকে উঠতে উঠতে বলেন,
“আমি এবং টিপি কিন্তু খেয়ে নিয়েছি।”
রিমু আপুর কথা শুনে বেদনাতীত মুখে হাসি চলে এলো।মাও হালকা হাসলেন।বললেন,
“ভালো করেছিস।”
২২.
রাতে বসে আছি বারান্দায়।নিরিবিলি দূরের তারাগুলো দেখছি।আমি এখন মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি অভির সাথে থাকবো না।তাই এটা নিয়ে তাই আর কি একটু মন খারাপ।মন খারাপ ত হবার কথা, তাই না?এখানে যদি আমার ডিভোর্স হয়ে যা তাহলে পরবর্তীতে কীরকম হবে জানি না!কারণ মা,বাবা এবং আমার রিলেটিভসরা কেমন রিয়েক্ট করেন কে জানে!এমনো হবে অভির সাথে আমার সেফারেশন হবার কথা শুনলে বাবা আমাকে আর ঘরেই ঢুকতে দিবেন না!কী করার বলুন?অভিকে আমি যে মন থেকে কেনজানি মানতে পারছি না।ওর সাথে সংসার করলে ও আমাকে কতটা ভালো রাখবে তার গেরান্টিও দিতে পারছি না!মোটকথা, আজ-অব্দি ওকে আমি ভালো করে বুঝতেই পারি নি।এতটা মাস একই ছাদনাতলে, একই রুমে তারপরও না!তাহলে কীভাবে এতটা নিশ্চিত। সবথেকে বড় কথা ও এতটা মাস আমাকে দেখার পরও কেন একটিবার ওর মনে হলো না আমি চরিত্রহীনা না?কেন নিজে নিজে অনুধাবন করলো না ওই ভার্সিটির ছেলেটার বলা সবগুলো কথা মিথ্যে?ওর নিজের কি বুঝার ক্ষমতা নেই?অবিশ্বাস্য!খুব অবিশ্বাস্য!
ফোনের স্কিনে আলো জ্বলে উঠে।পাশে তাকাই।মেসেজ এসেছে।হাতে ফোনটা তুলে নিই।মেসেজ নোটিফিশনে ঢুকে পাঠানো নাম্বারের উপর টাচ করি,
“মানুষ মাত্রই ভুল!মানুষ ভুল করতেই পারে।আর সেই ভুল থেকে সে শিক্ষাও পায়।সেই শিক্ষাটাকে কি একটু সুযোগে জাগায় দেওয়া যায় না?এতটা পাষাণ তুমি পারিসা!”
এরকম মেসেজ গত রাত থেকেই আসতেছে অভির!কলও করেছে বহুবার।রিসিভ করি নি।মেসেজের রিপ্লাই দিই নি।
চলবে…
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৬
দেখতে দেখতে আজ সাতদিন শেষ হলো।এই সাতদিনেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি নি। ইনসিকিউরডের মধ্যে আছি।আর এই সাতদিনের ভেতর অভি অনেক মেসেজ করেছে।তিনশোর মতন হবে হয়তো।আমি একটাও মেসেজেরেও রিপ্লাই দিই নি।মেসেন্জারেও পাঠিয়েছে।সেগুলো সিনই করি নি!শুনলাম অভির বাবা কামাল শেখ,মানে আমার শ্বশুর আগামী সোমবার দেশে ফিরবেন!তিনি এসেই একটা সিদ্ধান্ত নেবেন।
২৩.
আজ সোমবার।দুপুরেই উনি আসবেন।তাই খালামণি রান্নাবান্না সব সেরে ফেলেছেন।আঙ্কেলও আজ উনার অফিসে যান নি উনি আসবেন তাই।বেলা দু’টার দিকে আমার শ্বশুর আসেন।সাথে আমার বাবাও এসেছেন দেখছি!বাবাকে যে আসবেন এটা আমি আন্দাজ করিনি।হয়তো অভির বাবাই নিয়ে এসেছেন।আমি দরজার ফাঁক দিয়ে উনাদের দেখলাম। আঙ্কেল বলেন,
“কেমন আছেন,বেয়াই সাহেব?অনেকদিন পর দেখলাম।”
“জ্বী অনেকদিন পরই দেখা হচ্ছে।আসলে কোম্পানিতে
প্রচুর লোকসান হয়েছিলো পণ্যের প্রডিউস খারাপ হওয়ার কারণে।তাই আর কি বিদেশ থেকে ভালো কিছু পণ্যের স্যাম্পল আমাদের কোম্পানিতে প্রোভাইড করেছি যাতে লোকসান কমে।এই নিয়ে বহুৎ ঝামেলা সইতে হয়েছে রে ভাই!কতগুলা স্যাম্পল সিলেক্ট করেছি আবার রিজেক্ট করেছি এই আর কি।তাই ফিরতে এতো দেরী হয়েছে।”
“বুঝলাম,বেয়াই।রাহেলা?টেবিলে নাস্তা দিয়ে যাও।”
“আমি কিছু খেতে আসি নি, বেয়াই সাহেব?আমি পারিসার সাথে কথা বলতে এসেছি।আপনি পারিসাকে একটু ডাকুন কষ্ট করে।”
“আচ্ছা ডাকবো, বেয়াই।সেটা নিয়ে তাগাদার কিছু নেই।
আগে খাওয়াদাওয়া শেষ করেন। কতদিন পর এলেন এই গরীবদের বাড়িতে!”
“এটা কেমন কথা,বেয়াই?আসলে খেতাম।কিন্তু আজ
খাওয়ার মতন আমার মানসিকতা টা নেই।তাই প্লিজ খাওয়ার জন্যে জোর করবেন না।আপনি পারিসাকে ডাকুন।”
আঙ্কেল অভির বাবার এ’কথার পিঠে আর কোনো জবাব তুললেন না।বোধহয় আমার রুমের দরজার দিকে তাকালেন।দুই সেকেন্ডস বাদেই শুনলাম,
“পারিসা তোমার শ্বশুর তোমাকে ডাকছেন?”
আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে মাথার ওড়নাটা ভালোভাবে ঠিক করে বাইরে এলাম।সালাম করলাম।অভির বাবা হেসে সালামের জবাব নিলেন।বললাম,
“কেমন আছেন,বাবা?”
“ভালো আর কীভাবে,মা?”
বলে মুখটা নিরস করে ফেলেন।তারপর ছোট্ট একটা শ্বাস ছেড়ে বলেন,
“বসো এখানে।”
আমি উনার পাশের সোফাটায় বসলাম।উনি চোখের চশমাটা খুলে সেন্টার টেবিলের উপর রাখলেন।সাত-আঁট সেকেন্ডস চুপ থেকে এবার আবার আমার দিকে তাকালেন।অত্যন্ত শান্ত এবং সুদৃঢ় কন্ঠে বলেন,
“পারিসা,নিশ্চয় জানো এখানে কেন এসেছি।”
আমি আলতো মাথা নেড়ে “জ্বী” ইঙ্গিত করলাম।বললেন,
“অভির ব্যাপারগুলো শুনলাম তার মার থেকে।তবে তুমি খুব পাষাণ মেয়ে! ”
আমি প্রশ্নসূচক চোখে অভির বাবার দিকে তাকালাম।বললেন,
“এই আঁট মাস ধরে কীভাবে পারলে এতটা কষ্ট লুকিয়ে রাখতে!কীভাবে!আমার মাথায়ই আসছে না!তোমার ধৈর্য্যের তারিফ করছি না।তোমার মান্যতা, শান্ত্বতা এবং ভদ্রতা দেখে যথেষ্ট অবাক হচ্ছি!তবে এতটা শিষ্টাচারও ভালো না!হীতে বিপরীত।অভির ওরকম বিহেভিয়ারে তোমার উচিত ছিল অভিকে তার যোগ্য কথা শুনিয়ে দেওয়া।তেমার শাশুড়ী ছিল,ননদী ছিল বা ফোনে আমাকেও বলতে পারতে এই ব্যাপারটা!”
“আসলে বাবা,আমি ভাবলাম ব্যাপারটা আমার এবং অভির ম…!”
অভির বাবা আমাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেন। বলেন,
“সমস্যাটা এখানেই!”
মাথা নুইয়ে চুপ করে রইলাম।অভির বাবা এবার আমার বাবার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোরও উচিত ছিল তোর মেয়ের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা ও কেমন আছে?কীভাবে আছে?ইত্যাদি তাও রাখোস নি।এতটা অজ্ঞার্তীয় হলে হয় না!ও তোদেরই মেয়ে।আমাদের না বললেও তোদের ঠিকই বলতো!’
বাবাও মাথা নুইয়ে ফেলেন।তারপর চোখের চশমাটা ঠিক করে আমতা আমতা গলায় বলেন,
“আ স লে আমি ভাবলাম মেয়ে সুখে আছে তাই আর কি..!আর হ্যাঁ পারিসা বলেছিলো অনেকবার।বিশ্বাস হয়নি!”
“এখন বিশ্বাস হয়েছে,তাই না?এই তোদের জন্যে মেয়েদের কপালে এতটা দুর্ভোগ!নিজের মেয়েকে বিশ্বাস না করে পরের ছেলেকে বিশ্বাস!”
“আসলে কামাল তোকে ত আমি চোখবুঁজে বিশ্বাস করি তা তুই জানোস ই। তাই তোর ছেলে ভেবে অভিকেও তাই করেছি।”
“আমার ছেলে আমার মতন এটাই ভেবেছিস তাইতো?”
বাবা মাথা নাড়েন।অভির বাবা নাকের পাটা ফুঁলিয়ে বলেন,
“বড় ঠিকই হয়েছিস।বুদ্ধি টা বাড়ে নি।ডান হাত দিয়ে ভাত খায় মানুষ।তাই বলে বাম হাত দিয়ে খেতে হয়?হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল ছোট্ট তাই বলে অনামিকাও ছোট্ট হয়ে যাবে?একটু সর্বধিক ভাবার চেষ্টা কর!এত কম বুদ্ধি দিয়ে কীভাবে পারিস অফিস করতে?ক্লাইন্টরা কি অফিস দেখতে আসে নাকি?আচ্ছা যাইহোক বাদ!পারিসা?আমি তোমাকে বলতেছি এবার!ডিরেক্ট উত্তর দিবা!তোমার এখন ডিসিশন কী?”
আমি গাঢ় চোখে অভির বাবার দিকে তাকাই।তারপর আমার বাবার দিকে!কী উত্তর করবো এই মুহূর্তে কিছুই বুঝতেছি না ঠিক!চুপ থাকার সময়টা ১০/১২ সেকেন্ডসের উপরে গিয়ে গড়ায়।আমার উত্তর দিতে দেরী দেখে অভির বাবা আবার বললেন,
“অনেকদিন ধরে শুনতেছি ঝামেলা টা চলছে!তবে এভাবে কতদিন?এভাবে হয় না!”
“হ্যাঁ।” খালামণি।
“একটা ডিসিশন নেওয়া উচিত, পারিসা?একটা ডিসিশন দাও!কি করবে?ডিভোর্স নাকি অন্যকিছু?আঙ্কেল।
আমিও জানি এভাবে লম্বা সময় নিয়ে হয় না।আসলেই একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত আমাকে।বললাম
“আমাকে আর দুইদিন কষ্ট করে সময় দিন!আমি দুইদিনের মধ্যেই ডিসিশন নিয়ে জানাবো।”
সবাই মানে।সেদিন দুপুরে সবাই চলে যাবার সন্ধের পর হঠাৎ অভি এসে হাজির হয়।তবে সে একা।খালামণিকে একটু সৌজন্যতা দেখিয়ে সরাসরি সে আমার রুমে চলে আসে।আমি তাকে দেখে চরম মাত্রায় অবাক।সে প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে সরু হয়ে দাঁড়ায়।বলে,
“অনেকটা চ্যাঁচড়া হয়েছি তোমার কাছে।আমার বাবার কাছে।আমার মার কাছে!আমার বোনের কাছে।ইভেন তোমার খালামণি এবং আঙ্কেলের কাছেও!আমার নিজেরও যে একটা আত্মসম্মান বলে কথা আছে তা আমি নিতান্তই ভুলে গেছি!আর আমার আত্মসম্মানের দিকটা এই সামনের মানুষটার কোনো হেলদোল নেই।তুমি বড্ডই পাষাণ পারিসা!আজ এটুকু কথাই বলতে এসেছি তোমাকে দু’দিন পর তোমার ফাইনাল ডিসিশন হবে।ফাইনাল ডিসিশন নেবার আগে সবদিক টা একটু ভাববে আশা করি!”
বলে পকেট থেকে হাতদুটো বের করে ।তারপর তিন চার সেকেন্ডস চুপ থেকে আবার বলে,
“তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।কিন্তু বিয়ের আগে তোমাকে আমি ওতটা ভালোভাবে জানি নি।জানবোই বা কীভাবে?তোমাদের বাড়িতে যতবার গিয়েছি একবারও তোমার সাথে দীর্ঘ কথা হয়নি।ক্লোজ হয়নি শুধু সৌজন্যমূলক কথা ছাড়া!আর সেই তোমার সাথেই আমার বিয়ে হয়ে গেছে!বিয়ের রাতে কত স্বপ্ন ছিল তোমাকে একফোঁড় দেখবো।তোমার সাথে কথা বলবো।সারারাত দুজনে বসে বসে গল্প করবো।দরজা ঠেলে ঢুকার আগ মুহূর্তেইও অবাধ্য মনটা খুব আনচান করেছিলো।কিন্তু কপালটা যে আমার মন্দ?তোমাকে দেখার,ছোঁয়ার আক্রোশটা ভাগ্যের ফেরে দমিয়ে আবিষ্কার হলো তুমি চরিত্রহীনা!বুঝলাম ই না এরকম কীভাবে হলো!যাইহোক,ইউর লাইফ,ইউর চোজ।তোমাকে জোর করছি না!আই হোপ সবকিছু অন্তত একটিবার ভেবে ইউ উইল টেক ডিসিশন!”
“আপনার বলা কথা শেষ?”
অভি সরু চোখে তাকায়!বললাম,
“এতকিছু আর জানি না! আমাকে চরিত্রহীন বিয়ের রাতেই উপাধি দিয়েছেন।তো দিলেন যে একবারও জাস্টিফাই করার ভাবনা মাথায় আসে নি?আঁট আঁটটা মাস তো দেখলেন আমাকে?আমার চলনবলন।আমার হাবভাব!তাতেও মনে হলো আমি চরিত্রহীনা?আসলে আপনার মাঝে ব্যক্তিত্বতার অভাব আছে।আর একজন ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ আমার জন্যে সামনে কী নিয়ে আসবে এখনই বুঝতেছি!আপনি পরিস্থিতির কারণে এখন চাপা!পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বা আমার সাথে সংসারে গেলে আপনার সেই ব্যক্তিত্বহীন রূপটা আবার আসবে!”
“আমাকে চেনো নি তুমি,পারিসা!যদি চিনতে চাও?কাইন্ডলি রিকুয়েষ্ট আমাকে অন্তত আর একটাবার সুযোগ দাও!যদি এই সুযোগে আমাকে তোমার ভালো মনে হয় তাহলে এভাবে পাশেই থেকো।যদি সুইটেবল না হয় তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিও!কোনো আপত্তি করবো না।”
“সুযোগ দিলে আবারো আরেকটা চরিত্রহীনার দাগ বসাতে হবে আমাকে!”
“তাহলে ডিভোর্স দেবে?এটাই চাচ্ছ?”
“আপনার কি মনে হয়?”
অভি সরু চোখে আমার দিকে তাকায়।আমিও তাকাই তার দিকে।তার তাকানোর মাঝে চোখমুখ ক্রমশ কুঁচকে আসতে থাকে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে।বলে,
“বিয়েটা পুতুল খেলা নয়!”
“আর জীবনটাও!”
চলবে,,,,
#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-১৭
“বিয়েটা পুতুল খেলা নয়!”
“জীবনটাও!”
আমার কথা শুনে অভি যেন কিছুটা অবাক হবার মতন তাকালো।পরক্ষণে চোখমুখ স্বাভাবিক করে বাম পাশের ভ্রু টা উঁচিয়ে আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে বললো,
“জীবনটা কি আমার সাথে ডিভোর্স করার পর বুঝবে!”
এ’কথার পিঠে হালকা হাসলাম।এই ছন্নছাড়া হাসির মাঝে লুকিয়ে রাখলাম আকাশসম বিস্ময়ের আঁশ।অত্যন্ত শান্ত স্বরে বললাম,
“জীবন কারো জন্যে থেমে থাকে না!”
২৪.
দুইদিন পার শেষ হলো আজ!আমি অন্যদিনের মতন আজও চুপচাপ বসে আছি চারকোণা রুমের কোণার বিছানাটায়।দুপুরের শেষ লগ্নে খালামণি শেষ করে রুমে ঢুকেন। আমার কাছে আসেন!মাথায় হাত রাখেন।বলেন,
“মন খারাপ?”
আমি এবার নড়ে উঠলাম।এতক্ষণে খেয়াল হলো খালমণি আমার রুমে।হালকা হেসে বললাম,
“নাহ।মন খারাপ কেন হবে?”
খালামণি আর ঘাটলেন না।যদিও বুঝেছেন আমি মিথ্যে বলেছি।সারা রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে এবার আবার দিকে তাঁকিয়ে বলেন,
“ডিসিশন নেওয়া শেষ?”
“কিসের ডিসিশন?”
খালামণি একটু ধাতস্থতা হলেন।তারপর আবার স্বাভাবিকতা বজায় রেখে বললেন,
“নাহ মানে,ওদিন অভির বাবা যে আসলো উনাকে ডেট …!”
খালামণির পুরো কথা শেষ না করতে দিয়ে বলে উঠলাম,
“তা টেবিলের উপরেই আছে।”
“বুঝলাম না।”
“মানে টেবিলের কাছে গেলেই দেখবে একটা কাগজ।আর সাথে একটা চিঠিও আছে।”
খালামণি আমার কথা যেন বুঝতে পারলেন না।কাপল কুঁচকে তাকিয়ে থাকলেন।পরক্ষণে কুঁচকে ভাবটা মসৃণ করে আমাকে আর কিছু না জিজ্ঞেস করে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন!টেবিলের কাছে যেতে দেখলেন টেবিলের উপর একটা কাগজ পড়ে আছে।তিনি কাগজটা হাতে নিলেন।কাগমের মোড়কটা সরালেন।কাগজের উপর চোখ বুলাতেই চোখজোড়া মার্বেলের মতন বড় করে ফেললেন।বললেন,
“ডিভোর্স পেপার!তোর সই!অতঃপর অভিকে ডিভোর্স দিয়ে ফেলবি?”
আমি আবারো হাসলাম।বললাম,
“খালামণি,তুমিও শেষে চাইছিলে অভিকে ক্ষমা করে দিতে, তাই না?হ্যাঁ,আমিও মনে মনে ভেবেছিলাম অভিকে আর একটাবার সুযোগ দিব।কিন্তু দুইদিন আগে অভি সন্ধে শেষবার আমার সাথে দেখা করার পর তার একটা কথায় তাকে ক্ষমা করার ভাবনটা আমার মাথা থেকক সাথে সাথে উবে গেলো!তার আসল চরিত্রটা তখনই সামনে চলে এলো!”
“মানে?কী বলেছে সে?”
“উত্তর চিঠিতে!”
খালামণি ডিভোর্স পেপারটা নিচে নামিয়ে তরতর করে চিরকুটটা হাতে তুলে নেন,
“মিস্টার অভি?এতক্ষণে নিশ্চয়ই ডিভোর্স পেপারটা হাতে পেয়ে গেছেন!আপনি আমার সাথে আপনাদের বাসায় যে বিহেভ করেছিলেন তারথেকে সবথেকে নিকৃষ্ট বিহেভ হলো আমার গাঁয়ে হাত তুলেছেন!আপনার ওই অবিশ্বাসের ব্যাপারটাতে আমি ওতটা চাপ ক্রিয়েট করি নি।জানেন কেন?আপনার সেদিন ওকথাগুলে আমি পুরোপুরি না হলেও কিছুটা বিশ্বাস করেছি। আপনি বলেছিলেন আপনি আমাকে ভালোভাবে জানেন না।শুনেন না।সেই তাকে নিয়েই খারাপ ইস্যু শুনেছেন।এটা সাডেন একজন নতুন বউয়ের প্রতি নতুন বরের মনে কতটা আশানুরূপ হতে পারে তা খুবই কষ্টকর!হ্যাঁ, আমি আপনার ওই কথাগুলো আপনার জায়গা থেকে অনুভব করার চেষ্টা করেছি।তাই বলে এই নয় যে আপনি ওই একই কথাতে নেচে যাবেন।নেচে তো গেলেন ই।আপনি পরে আবার সেই কথার জাস্টিফাই করার চেষ্টাই করেননি!মানুষের এত রাগ কীভাবে হয়,মিস্টার অভি?এই যে সেই অবিশ্বাসে আমার সাথে কখনো প্রয়োজনতিরিক্ত কথা বলেননি।আবার গাঁয়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন।গাঁয়ে হাত তুলে কত টা যে নিকৃষ্ট পশুর পরচয় দিয়েছেন তা নিজেও জানেন না!যাক ওসব বাদ!আপনি অতঃপর সত্যটা সব জানলেন!তারপর আবার বিশ্বাস করলেন।।ছুটে চলে এলেন ক্ষমা চাইত!আমি ক্ষমা করিনি।এই নিয়ে আপনার মা,বাবা,বোন এবং বাবাকে একে একে আমার কাছে পাঠানো শেষ করেছেন!এরসাথে আপনার আমাকে অসংখ্য”সরি সরির” মেসেজ তো আছেই এবং ফোনকলও!জানেন আপনার এসবেতে আমি তখন কিছুটা নরম হয়েছিলাম।বার বার ভেবেছিলাম আপনাকে আসলেই একবার সুযোগ দেওয়া যায় কি না।কারণ মানুষ মাত্রই ভুল।মানুষ ভুল করতেই পারে।তাই বলে পরে আবার ভুল করবে এটা তো কোনো কথা না!নাহ অভি সেরকম না।সে ভুল করবে না।সে যতটা নরম,যতটা তার আত্মসমর্পণ,যতটা আত্মাসম্মাম হীন হয়ে গেছে সত্যিই সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে!কিন্তু আমার ভাবনাকে আপনাকে গুঁড়িয়ে দিয়ে শেষবার আমার সাথে আপনার বাবা বাসায় ফিরে যাবার পর সন্ধে যে আমার সাথে দেখা করলেন, সেই সাক্ষাৎকারে আপনার সবথেকে “জীবনটা কী ডিভোর্স করার বুঝবে!”এই একটা কথাই আপনার সবকিছু প্রমাণ হয়ে গেলো।আপনি সেই আগের অমানুষটা অমানুষই।কখনোই আর ঠিক হবেন না!সংসারে আবার গেলেও আপনার সেই ইগো,সেই এটিটিউড থাকবেই। তাই বলে এটা বলবেন না যে আমি এই কারণে আপনাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি।ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছি এই কারণে আপনি মানুষটা আসলে ই মনের দিক দিয়ে একদমই ভালো নেই।আর যে মনের দিক দিয়ে ভালো না তার সাথে সংসার করার কথা পারসা ভাবতেই পারে না!আপনার যেমন ইগো,ভাব,মুড আছে।মিস্টার অভি?এই পারিসা খুব ছোট্ট?নাকি এই পারিসা খুব তাচ্ছিল্যকর আপনার কাছে?”
খালামণি পুরো চিঠিটা পড়া শেষ করে আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকলেন!কি বলবেন নিজেই বুঝতে পারছেন না!নিজেকে শান্ত করতে খানিকক্ষণ সময় লাগলো।শান্ত হলে ডিভোর্স পেপার এবং চিঠিটা আবার আগের জায়গা রেখে আমার কাছে এলেন।বললেন,
“ভেরী আপসেট!শেষপর্যন্তও ও তার আসল রূপটা দেখিয়ে দিলো?বুঝি না এরা কীভাবে পারে সব পরিস্থিতিতে নিজেদের এটিটিউড টানতে?টানার আগে একবারও ভাবে না এইতো তার আসল রূপ বেরিয়ে এলো?তবে অভি তোর কোনোদিক দিয়েই যোগ্য না!যাইহোক,এ নিয়ে আর মন খারাপ নয়।ইনশাআল্লাহ! সামনে যা হবে ভালোই হবে।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ মা।আর একজন শিক্ষিত মেয়ে হিসেবে আই হোপ সেই কনফিডেন্সটা তোর আছে।”
বলে খালামণি এবার থামেন।তারপর দুই তিন সেকেন্ডস চুপ থেকে বলেন,
“তোর মা-বাবাকে জানিয়েছিস এই ব্যাপারটা?”
দুই পাশে মাথা নাড়লাম!
“কেনো জানাস নি?জানিয়ে দে।”
“দিব।আজ রাতের মধ্যেই জানিয়ে দিয়ে কাল সকালে পাঠিয়ে দিব।”
“যেটা ভালো মনে হয় তোর।’
বলে তাকিয়ে থাকেন।তারপর ব্যস্ত হয়ে বলেন,
“থাক উঠলাম।”
আমি খালামণির হাতটা ধরে রাখলাম।খালামণি হাতের দিকে তাঁকিয়ে আবার মুখের দিকে তাকালেন।আমার চোখমুখ ক্রমশ কুঁচকে আসতে থাকে।এই বুঝি কেঁদে ফেললাম।আমি এক সপাটে খালামণিকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলাম।মনপ্রাণ উজাড় করে কাঁদতে থাকলাম।খালামণি আমাকে শান্ত করতে উঠে পড়তে লাগলেন।কিন্তু আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারলাম না।ভেতরের সবকিছুকে দমিয়ে উচ্চ আওয়াজে কান্নামুখরে
শুধু একটা কথাই বেরিয়ে এলো,
“খালামণি,আমিতে আগে স্বপ্ন দেখতাম আমার এক ভাত,এক কাপড়ে যেতে।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এটা আজ কী হলো?!কী হলো?!
২৫.
ডিভোর্স লেটার পাঠানোর একঘন্টা বাদেই অভির মার কল!কল দিয়েই কেঁদে উঠলেন।
“এটা কী করলে,পারিসা?কী করলে?আমাকে পর করে দিলে?তোমাকে ছাড়া যে আর ভালো থাকতে পারবো না।”
বলে আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।নিজেকে শক্ত করলাম।চোখখিঁচে বললাম,
“আই’ম সরি,মা!আমার আর কিছুই করার ছিল না।”
অভির মা আর কিছু বললেন না।শুধু কেঁদে চললেন।অভির মার থেকে মনে হয় অভির বাবা ফোন কেঁটে নেয়।বলে,
“একদম ঠিক করেছো পারিসা!সত্যি কথা জানো কি
এ তোমার কোনোকালেই যোগ্য না!ও এর এটিটিউডের জন্যে দেখবে একদিন সব হারিয়ে ফেলবে!সব।ইভেন আমাদেরও !”
বলে আঙ্কেল চুপসে যান।অভির মারও ওপাশ থেকে আর কান্নাকাটির আওয়াজ পাই নি।ফোনটা আমি কানের কাছে ওভাবে ধরেই রাখি!ধরে রাখতে রাখতে কলটা কেঁটে যায়!কল কেঁটে যাওয়ার আধা ঘন্টা পর সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসে।তবে এবারের কলার অভির মা এবং বাবা নয়।স্বয়ং অভি নিজেই,
“ডিভোর্স দিয়ে খুব বড় হয়ে গিয়েছো!”
চলবে…..