আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৩) #তানজিলা_খাতুন_তানু

#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৩)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

বিয়েটা হয়ে যাবার পরেই রুহির মামা নিজের স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে চলে গেলেন। যাবার আগে অর্নব রুহির কাছে গিয়ে বলল,

– ‘ভালো থেকো রুহি, নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে সুখে সংসার করো।’

রুহি খুশি হবে না দুঃখ পাবে সেটা বুঝতে পারছে না। একদিকে আনন্দ হচ্ছে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাবার জন্য অন্যদিকে কষ্ট হচ্ছে চারবছর আগের অতীতের জন্য।

তিথি শশুর বাড়ি চলে যাওয়ার পরেই হামিদ চৌধুরী বলে উঠলেন,

– ‘জয় রুহিকে নিয়ে নিজের বাড়িতে যাও। আজকের পর থেকে রুহি তোমার বাড়িতেই থাকবে।’

বিষয়টিতে কেউ কিছু না বললেও রুহির মা আপত্তি প্রকাশ করলেন। নিজের আদরের মেয়েটার হঠাৎ করে এইভাবে বিয়ে হয়ে গেল, তার উপর আজকেই ওই বাড়িতে চলে যাবে যদিও বা বাড়িটা ওদের পাশেও তবুও মন সায় দিচ্ছে না।

– ‘দাদা আমি বলছিলাম কি, ওদের রিসেপশনের পরেই না হয় রুহু ওই বাড়িতে যাবে।’

হামিদ চৌধুরীও বিষয়টা ভেবে দেখে রাজি হয়ে গেলেন। ঠিক হলো রুহি আপাতত এই বাড়িতে থাকবে।

**

রুহি নিজের ঘরে গিয়ে শাড়িটা খুলে এলোমেলো হয়ে বসল। কিছু ভালো লাগছে না, মানতে পারছে না এই হঠাৎ করে বিয়েটা। মনে হলো একটা লম্বা শাওয়ার নিলে হয়তো ভালো লাগবে তাই করল।

চৌধুরী বাড়ির সবাই হামিদ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, রুহি ওর মামার বাড়িতে থাকত না বিষয়টি উনি কিভাবে জানলেন তার উত্তরের আশায় আছে।

– ‘কি হলো দাদা বলো, তুমি কিভাবে এই সবটা জানলে?’ (রুহির বাবা)
– ‘আসলে আমি একটা অফিসের কাজে ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম রুহির সাথে দেখা করে আসব, কথা মতোই কাজ। দারোয়ানের কাছে জানতে পারি রুহি প্রথম একমাস থাকার পর আর এই বাড়িতে থাকে না। চিন্তা শুরু হয়, ওর কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি রুহি একটা গার্লস হোস্টেলে থাকে।’
– ‘তাহলে দাদা তুমি এতদিন আমাদের বলোনি কেন? আমরা তো ওকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম। মেয়েটাকে এতটা কষ্ট করতে হতো না।’ (রুহির সেজকাকু)
– ‘হ্যাঁ আমি সেইদিনই রুহিকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম, তোদের জানাতে পারতাম কিন্তু ক্ষতিটা কার হতো? রুহির। রুহি নিজের স্বপ্ন পূরনের পথে আগাচ্ছিল সেই মুহূর্তে ওখান থেকে চলে আসা মানে দুই পরিবারের মধ্যে একটা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো, আর তাতে ওর মনের উপরে একটা চাপ পড়ত।‌ আমি চাইনি সেটা। আর সবথেকে বড়ো কারন কি জানিস, আমি চেয়েছিলাম আমাদের রুহি মা লড়াই করতে শিখুক, বাস্তবতা ঠিক কতটা কঠিন সেটা উপলব্ধি করুক তাই জানায় নি। তবে রুহির ভালো মন্দের খেয়াল সবটাই আমি দূর থেকে রাখতাম।’

রুহির বাবা মা রুহির জন্য হামিদ চৌধুরীর চিন্তাভাবনা দেখে মুগ্ধ হলেন। হয়তো ওনার জায়গায় ওনারা থাকলে এই কাজটা করতে পারতেন না।

জয় আপন মনে ভেবে চলেছে কি থেকে কি হয়ে গেল‌। সোহান জয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বলল,

– ‘কি রে ভাই আর কতক্ষন এইভাবে ছাদে বসে থাকবি।’
– ‘ভালো লাগছে না কিছু।’
– ‘তা ভালো কিভাবে লাগবে বল। বাসর রাত করার বদলে চন্দ্রবিলাস করতে হচ্ছে, আহা গো কি কষ্ট।’

জয় সোহানের পিঠে চড় বসিয়ে দিলো।

– ‘শা”লা হা*রামী আমি আমার জ্বালায় মরছি আর তুই মজা নিচ্ছিস।’
– ‘আরে কোথায় মজা নিলাম সত্যি বললাম তো।’
– ‘আরে তোর সত্যি রাখ। এইভাবে বিয়ে হওয়াতে দ্যাখ রুহি আবার আমার উপরে দ্বিগুন ক্ষে’পে গেল।’
– ‘ভাই চিন্তা করিস না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আর তুই রুহুকে কেন সমস্ত সত্যিটা বলছিস না।’
– ‘কিভাবে বলবো? তোর বোন কি ভালো করে শোনার মানুষ! আমার তো একটা কথাও সহ্য করতে পারে না, যা বলি সবটাতেই চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।’
– ‘কিন্তু এইভাবে আর কতদিন রুহুর ওহ সমস্ত সত্যিটা জানা প্রয়োজন আর কতদিন তোরা দুজন এইভাবে কষ্ট পাবি।’
– ‘বলে তো দিতে চাই কিন্তু ওহ তো শোনে না।’
– ‘আচ্ছা জয় তুই আগে ট্রাই কর রুহির মনে নিজের জন্য আগের সেই বিশ্বাস, ভরসার জায়গাটা তৈরি করার। তাহলে দেখবি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
– ‘হুমম।’

***

পরেরদিন,

রুহি নিজের রুমে রং তুলি দিয়ে ক্যানভাস সাজাতে ব্যস্ত। তখনি ওর ভাই বলল,

– ‘দিদিয়া একবার ছাদে যাবি?’
– ‘কেন?’
– ‘চল না, সবাই আছে খুব মজা হচ্ছে।’
– ‘ভাই বিরক্ত করিস না।‌ একটা কাজ করছি।’
– ‘আরে রাখ তোর কাজ এখন চুপচাপ চল তো।’

সোহান রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল। রুহি বুঝল ওকে ছাদে না নিয়ে গিয়ে এরা ক্ষান্ত হবে না, তাই বিরক্ত হয়ে বলল,

– ‘সোহান আমার এইসব ভালো লাগছে না।’
– ‘ভালো লাগার জন্যই নিয়ে যেতে চাইছি।এখন চুপচাপ চল।’
– ‘আমি যাবো না।’
– ‘তোকে যেতেই হবে। ওই রোহান ওকে ধর তো।’

দুজন দুইদিকে ধরে নিয়ে রুহিকে জোর করে ছাদে নিয়ে গেল কিন্তু ছাদে কেউ নেয়!!

– ‘কেউ তো নেই? আমাকে নিয়ে আসলি কেন?’
– ‘যে থাকার সেই আছে, ওইদিকে দ্যাখ।’

সোহানের কথা শুনে রুহি সামনে তাকাতে জয়কে দেখতে পেল।‌ বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে সোহানকে কিছু বলতে যাবে বলে পেছন ফিরছে, দ্যাখো দুজনের কেউই নেই! ছাদের দরজা বন্ধ করার শব্দ হতে রুহির বুঝতে অসুবিধা হলো না, সবটা একটা প্ল্যান।

রুহি রেগে গিয়ে দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল,
– ‘এই সোহানের বাচ্চা দরজা খোল বলছি, নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।’

– ‘রুহি।’

জয়ের কন্ঠস্বর শুনে রুহির সমস্ত রাগটা ওর উপর গিয়ে পড়ল।

– ‘এই এইগুলো নিশ্চয় আপনার প্ল্যান তাই না। সত্যি করে বলুন তো আপনি কি চাইছেন?’
– ‘তোমাকে।’

জয়ের মুখ থেকে তোমাকে সম্বোধন শুনে রুহি টাস্কি খেয়ে গেল। চোখ ছোট ছোট করে জয়ের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

– ‘এর আবার কি হলো! তুই থেকে তুমি!!’
– ‘তুমি যেমন তুই থেকে আপনিতে চলে গেছ, আমি তেমন তুমিতে গেলাম। নিজের বউকে তুই বলতে কেমন যেন লাগছে।’

রুহি নাক ফোলালো, জয় হুট করেই রুহির হাতটা ধরে নিজের দিকে এনে নাকে আলতো করে কামড় দিয়ে মৃদু স্বরে বলল,

– ‘খবরদার আমার সামনে নাক ফোলাবে না।’
– ‘কেন আমার নাক আমি যা ইচ্ছা করবো, আপনার কি?’
– ‘তাহলে আমার আদরের জন্য তৈরি থেকো, এতদিন অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখতাম কিন্তু আর নয়। এখন তুমি একান্তই আমার নিজের মানুষ, আমি যা ইচ্ছা করতেই পারি।’
– ‘যা ইচ্ছা করতে পারি মানে?’
– ‘মানে আদর করতে পারি, মারতে পারি আবার…
(কানের কাছে একটা এগিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল) আবার বাচ্চার মাও বানিয়ে দিতে পারি।

বলেই রুহির কানের লতিতে হাল্কা করে কামড় দিলো। রুহির গোটা শরীর বেয়ে কারেন্ট বয়ে গেল। বুকের ভেতরে ধকধক করে উঠছে, জয়ের লাগামছাড়া কথাবার্তা শুনে লজ্জায় লাল হতে মন‌ চাইছে। কিন্তু রুহি নিজেকে দূর্বল দেখাবে না, জয়ের বুকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,

– ‘রুহিকে গলানো এতটাও সহজ নয় মিষ্টার। আমি কিন্তু কিছুই ভুলে যায়নি, তাই আমার সামনে এইসব নাটক কম করবেন।’
– ‘এইগুলো তোমার কাছে নাটক লাগছে!!’
– ‘হ্যাঁ নাটকই লাগছে। ভাববেন না, পরিস্থিতির শিকার হয়ে আপনাকে বিয়ে করেছি বলে আপনাকে মেনে নিয়েছি কিংবা সমস্ত কথা ভুলে গেছি। আমি কখনোই আপনাকে নিজের স্বামী হিসাবে মেনে নেবনা।’

জয়ের রাগ উঠে গেল। রুহির হাতটা শক্ত করে ধরে আবারো নিজের দিকে টেনে নিলো।

– ‘আহ লাগছে ছাড়ুন।’
– ‘লাগুক, আর আমার বুকে যে প্রতিনিয়ত লাগছে তার বেলায়? তোকে আমি বারবার সত্যিটা বলতে চাইছি কিন্তু তুই তো কিছুই শুনবি না। ওকে শুনতে হবে না, আজকের পর আমি তোকে কোনোরকমের সত্যি বলার চেষ্টা করব না, তুই তোর চিন্তাভাবনা নিয়ে থাক।’

জয় রুহির হাতটা ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে ছাদ টপকে নিজের বাড়ির ছাদে চলে গেল। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দরজাটা টাস করে বন্ধ করল, যাতে রুহির বুঝতে অসুবিধা হলো না জয় রেগে গেছে। রুহি জয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবল, কি সত্যির কথা জয় বারবার বলে। কি এমন সত্যি আছে যেটা রুহি জানে না!!

#চলবে…….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here