#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০২+৩+৪+৫
_________________
-“তারপরেও না আসলে পারতেন।”
-“আমি আসায় কি আপনি বিরক্ত হয়েছেন?”
-“বিরক্ত হওয়ার তো কিছু নেই।”
শেহরেয়ার ড্রাইভ করতে করতে মেহরিনের দিকে এক পলক চোখ বুলিয়ে বললো,
-“চুলগুলো খুলে রাখলে আরো বেশি সুন্দর লাগলো।”
মেহরিন শেহরেয়ারের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি স্টুডেন্ট হিসেবে না ম্যাডাম হিসেবে যাচ্ছি।”
-“কিন্তু আপনাকে স্টুডেন্টদের থেকেও ছোট লাগছে।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে শেহরেয়ারের দিকে।শেহরেয়ার আড়চোখে দেখে মুচকি হেসে বললো,
-“এতো চিকন কেনো আপনি?খাওয়া-দাওয়া করেন না?”
-“দেখেন আপনি এখন এইসব বলে আমার মনোযোগ নষ্ট করবেন না।”
-“সত্যি কথা বললে সবারই গায়ে লাগে।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।যা দেখে শেহরেয়ার হেসে দিল।
ভার্সিটির সামনে গিয়ে শেহরেয়ার গাড়ি থামালো।গাড়ি থেকে নেমে মেহরিন বললো,
-“ধন্যবাদ।”
-“হবু বরকেও কেউ ধন্যবাদ দেয়?”
মেহরিন আর কিছু না বলে চলে যেতে গেলে শেহরেয়ার বললো,
-“আমি কিন্তু এখানে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।”
মেহরিন আবার গাড়ির কাছে ফিরে এসে বললো,
-“দরকার নেই।আমি চলে যেতে পারবো।”
-“আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করেনি।আমি আসবো সেটা জানিয়েছি মাত্র।”
মেহরিন আর কিছু না বলে হেঁটে চলে গেল।শেহরেয়ার মুচকি হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো।
____________________
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে একটি ছেলেকে হাত-পা-চোখ-মুখ বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে।সে মুখ দিয়ে গোঙাচ্ছে।এ ছাড়া তার আর কিছু করার নেই।দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করলো এক ব্যক্তি।সে এসে ছেলেটির সামনে বসে বললো,
-“কেমন লাগছে মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড?”
ব্যক্তিটিকে দেখার সাথে সাথে ছেলেটির গোঙানি আরো বেড়ে গেলো।ব্যক্তিটি ইশারা করায় পাশে থেকে একটি লোক এসে ছেলেটির মুখের থেকে কাপড়টি খুলে দিল।
-“প্লিজ শেহরেয়ার,আমাকে ছেড়ে দে।আমি আর এমনটা কখনোই করবো না।”
শেহরেয়ার উচ্চস্বরে হেসে দিল।আচমকা হাসি থামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“কিন্তু তুই এমনটা করেছিস।”
-“মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়।শেষবারের মতো সুযোগ দে আমাকে।”
শেহরেয়ার ঠা*স করে ছেলেটির গালে একটা থা*প্পড় মেরে বললো,
-“ও কি ক্ষতি করে ছিল?ওর সাথে এমনটা করতে একবারও তোর বুক কাঁপল না!”
ছেলেটি গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।নোমান এসে শেহরেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“স্যার আপনি বললে ও-কে এখনি শেষ করে দেই।”
-“নাহ্।নোমান তুমি ভালো করেই জানো আমি প্রাণ নিতে পছন্দ করিনা।কারণ কাউকে প্রাণ দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।আমার কাজ শুধু সঠিক পথে আনা।যদি সঠিক পথে না আসে তাহলে…………”
এটুকু বলে থেমে গেল শেহরেয়ার।তারপরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-“এক ভুল আমি বারবার করতে চাই না।”
আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সেখান থেকে বের হয়ে আসলো শেহরেয়ার।তার চোখের কোণে বিন্দু পানি জমে আছে।সে তা মুছে নিজেকে সামলে নিল।তারপরে হাসি মুখে গাড়ি স্টার্ট করে ‘মির্জা ইন্ডাস্ট্রি’র দিকে গেল।
__________________
-“দেখুন আপনার মেয়ের সাথে আমি আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই না।”
হেনা সাহেবার কথায় অবাক হলো রিয়াজুল রাহমান।কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
-“কিন্তু শেহরেয়ার তো বিয়েটা করতে রাজি হয়েছে।”
-“ওর কথা বাদ দেন।ও এতো কিছু বুঝে নাকি!নাহলে কখনোই এমন চরিত্র*হীনা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইতো না।”
রিয়াজুল রাহমান এবার বেশ চটে গেলেন।তাও ভদ্রতা বজায় রেখে বললেন,
-“আপনাকে কে বলেছে আমার মেয়ে চরিত্র*হীনা?না জেনেশুনে মন্তব্য করবেন না।”
-“চরিত্র*হীনা না হলে বিয়ে ছাড়া বাচ্চা হয় কি করে?”
-“সেটা আমি আপনার মতো মহিলাকে বলার প্রয়োজন বোধ করছি না।আপনি এই মুহুর্তে আমার বাড়ি থেকে চলে যান।আর আপনি কি বিয়ে দিবেন না!আমিই আমার মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়ে দেবো না।”
-“মেয়ে এইসব করে বেড়ায় আর বাপের ভাব দেখো!”
কথাগুলো বলে পান চিবাতে চিবাতে হনহন করে হেঁটে মেহরিনদের বাড়ি থেকে চলে গেলেন হেনা সাহেবা।হেনা সাহেবা চলে যেতে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রিয়াজুল রাহমান।
_________________
-জানো মনি আজকে আমাকে সামিদ মেরে*ছে।”
রায়ানের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকালো মুনিয়া।রায়ানের পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে বললো,
-“লাগেনি তো কোথাও তোর?”
-“আরে না!আমি ছেড়ে দিয়েছি নাকি?আমিও তো মে*রে এসেছি।”
-“সাব্বাশ বেটা।”
মুনিয়া রায়ানের হাত ধরে হাঁটছে আর গল্প করছে।হঠাৎ করে তাদের সামনে এসে একটা গাড়ি থামলো।ঠিক সময়ে ব্রেক না কষলে মুনিয়া আর রায়ানের সাংঘাতিক এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।হামিদ গাড়ি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে তাদের কাছে আসলো।মুনিয়া চোখ রাঙিয়ে বললো,
-“দেখে গাড়ি চালাতে পারেন না?রাস্তা রেখে আউটসাইড দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন কেনো?”
-“সরি!আসলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কখন যে আউটসাইডে চলে এসেছি খেয়াল করতে পারিনি!”
-“গাড়িতে বসে এতো প্রেম করা লাগবে কিসের জন্য?”
-“এক্সকিউজ মি।কে গাড়িতে বসে প্রেম করছিল?”
-“আপনি ছাড়া আবার কে!নাহলে আবার কেউ ড্রাইভ করতে করতে মেবাইলে কথা বলে নাকি?”
-“আমি একটা জরুরি কাজ নিয়ে আলোচনা করছিলাম।এইসব প্রেম করার টাইম নেই আমার।”
মুনিয়া হামিদকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
-“আপনাকে দেখতেই তো গোমড়ামুখো,আপনার সাথে এমনিও কোনো মেয়ে প্রেম করবে না।”
হামিদ চোখ রাঙিয়ে মুনিয়ার দিকে তাকালো।মুনিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রায়ানের হাত ধরে সেখান থেকে চলে গেল।
__________________
মেহরিন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে দেখলো শেহরেয়ার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,
-“আপনি সেই আসলেন?”
-“কেনো আপনি কি ভেবেছিলেন আমি এমনিই বলে গিয়েছি?”
মেহরিন আর কিছু বললো না।শেহরেয়ার গাড়ির দরজা খুলে দিতে গেলে মেহরিন বললো,
-“আমি পারবো তো!আমি তো আর বাচ্চা না।”
শেহরেয়ার দরজা খুলে দিয়ে বললো,
-“আপনি তো বাচ্চাই।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে শেহরেয়ারের দিকে তাকালো।
-“আচ্ছা এরপরে থেকে আপনি নিজে খুলে নিয়েন।”
শেহরেয়ার গাড়িতে উঠে বসলো।মেহরিনও তার সাথে উঠে বসলো।শেহরেয়ার গাড়ি স্টার্ট করে বললো,
-“তা প্রথম দিন ম্যাডাম হিসেবে কেমন কাটলো?”
-“অনেক ভালো।আমি খুবই এনজয় করেছি।”
-“আপনার মতো শিশুকে সবাই ম্যাডাম বলে মেনে নিলো?”
-“দেখুন আপনি কিন্তু সকাল থেকে এইসব বলে আমাকে ইনসাল্ট করে চলেছেন।”
মেহরিনের কথায় মুচকি হাসলো শেহরেয়ার।মেহরিন গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো।কিছুক্ষণ পরে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামালো শেহরেয়ার।গাড়ি থেকে নেমে বললো,
-“গাড়ি থেকে কি নিজেই নামবেন নাকি আমি কোলে করে নামাবো?”
মেহরিন গাড়ি থেকে নেমে বললো,
-“এখানে গাড়ি থামালেন কেনো?”
-“বিকেল হয়ে গেছে প্রায়।কিছু খাওয়া হয়েছে আপনার?”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-“নাহ্!”
-“আমিও কিছু খাইনি।চলুন দুজনে একসাথে লাঞ্চ…..এটুকু বলে থামলো শেহরেয়ার।ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,
-“এটাকে তো লাঞ্চ বলা যায় না।যাই হোক কিছু একটা তো হবে।”
শেহরেয়ারের কথায় মুচকি হাসলো মেহরিন।খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে দুজনে।
-“ভার্সিটিতে তো ক্যান্টিন আছে।তাহলে আপনি লাঞ্চ করেননি কেনো?”
-“অফিসেও তো ক্যান্টিন আছে।তাহলে আপনি কেনো লাঞ্চ করেননি?”
মেহরিনের কথায় মুচকি হেসে শেহরেয়ার বললো,
-“আপনি আসলেই অনেক চালাক।”
-“হ্যাঁ।আর আমি সেটা জানিও।”
দুজনে একসাথে হেসে দিল।
___________________
সন্ধ্যা নেমে এসেছে চারিদিকে।মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে রিয়াজুল রাহমান দেখলেন মেহরিন রায়ানের সথে খেলছে।তিনি ধীর পায়ে মেহরিনের দিকে এগিয়ে গেলেন।রিয়াজুল সাহেবকে দেখে মেহরিন বললো,
-“বাবা তুমি এসেছো!তোমার ছোট মেয়ে সবার জন্য পিজ্জা বানিয়েছে।চলো গিয়ে টেস্ট করে দেখি।”
-“মা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
মেহরিন এতোক্ষণে খেয়াল করলো রিয়াজুল রাহমান বেশ চিন্তায় আছেন।
-“কি হয়েছে বাবা?”
রিয়াজুল রাহমান দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব ঘটনা মেহরিনকে বললেন।মেহরিন সবকিছু শুনে থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে নিজেকে সামলে বললো,
-“কিন্তু আজকে বিকেলেও তো আমি আর শেহরেয়ার একসাথে লাঞ্চ করলাম।কই উনি তো আমাকে কিছু বললেননি!”
-“আমি এতোকিছু জানি না।তোর সাথে শেহরেয়ারের বিয়ে আমি দিবো না।তাই ওর থেকে দূরত্ব রেখে চল।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৩
_________________
শেহরেয়ার তার বিছানায় শুয়ে আছে।ক্লান্ত শরীর,চোখে ঘুম ঘুম ভাব।হঠাৎ করে তার মোবাইলে একটা কল আসলো।আলসেমি লাগা সত্ত্বেও মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো মেহরিন কল করেছে।শেহরেয়ার ভ্রু জোড়া কুঁচকে বললো,
-“আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি!”
শেহরেয়ার আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করলো।
-“কি ব্যাপার ম্যাডাম,কি মনে করে কল করলেন?”
-“আপনি কি কিছু জানেন না?”
-“কেনো কিছু জানার কথা নাকি?”
মেহরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
-“আপনার মা এসে আমাদের বিয়েটা ভেঙে গিয়েছে।”
শেহরেয়ার শোয়া থেকে উঠে বসে বললো,
-“হোয়াট?”
-“এতো অবাক হচ্ছে কেনো?এটাই তো হওয়ার ছিল।আমি আগেই বলেছিলাম।”
শেহরেয়ার রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেললো।গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
-“আমি আপাতত কলটা কাটছি।”
শেহরেয়ার কলটা কেটে সোজা হেনা সাহেবার খোঁজে নিচে নামলো।নিচে নেমে দেখলো হেনা সাহেবা বসে বসে পান চিবচ্ছেন আর টিভি দেখছেন।শেহরেয়ার এসে টিভিটা অফ করে দিল।শেহরেয়ারের এমন কাজে বেশ অবাক হলেন হেনা সাহেবা।হেনা সাহেবাকে অবাক হতে দেখে শেহরেয়ার বললো,
-“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।তোমার সাথে জরুরি কথা আছে তাই টিভিটা অফ করেছি।”
-“কি জরুরি কথা বাবা?”
-“তুমি আজকে যে মহা কাজ করে এসেছো তা কি ভুলে গেছো?”
হেনা সাহেবা বুঝতে পারলেন শেহরেয়ারের ইঙ্গিত।তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
-“আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি।”
-“মা তুমি বারবার ভুলে যাও কেনো শেহরেয়ার মির্জা একবার মুখ থেকে যে কথা বলে তা সে করেই ছাড়ে।তাই এইসব করা বন্ধ করো।আমি যদি বিয়ে করি মেহরিনকেই করবো।এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত!”
শেহরেয়ার কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাগানের দিকে গেল।হেনা সাহেবা রাগে পানের ডালা ছুড়ে মারলেন।
____________________
শেহরেয়ার বাড়ির বাগানের বেঞ্চে বসে চাঁদ দেখছে।তার চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে হেলান দিয়ে বসলো।
-“মানুষের জীবনের কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী নয়।মেহরিন আপনি শুধু আমার জীবনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকিয়েন!আই উইশ এভাবেই বিয়ের পরে আপনার সাথে রাত জেগে চাঁদ দেখবো!”
শেহরেয়ারের মুখে হাসি ফুটলো।
-“এই মেয়েটার কথা ভাবলে মুখে হাসি না ফুটে পারে না।এই অল্পদিনেই আপনি আমার অতি প্রিয় হয়ে গেছেন মেহরিন ম্যাডাম।যাকে মনে করলে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।”
________________________
-“আপু কোথা থেকে কি হয়ে গেলো!”
মেহরিন ল্যাপটপ নিয়ে ভার্সিটির কাজ করছিল।কিন্তু কাজে তার মন বসছে না।মুনিয়ার কথায় সে আরও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লো।তাও নিজেকে সামলে বললো,
-“এটা তো হতোই।আমি আগেই জানতাম।বাচ্চাসহ মেয়েকে কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না!”
-“আপু রায়ুর আসল পরিচয়টা বলে দিলেই তো হয়।”
মেহরিন চোখ রাঙিয়ে মুনিয়ার দিকে তাকালো।
-“গুড্ডু আমার ছেলে।এটাই ওর একমাত্র পরিচয়।এইসব কথা আমার সামনে আর বলবি না!”
মুনিয়া আর কিছু না বলে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
_______________________
জানালার কাঁচ ভেদ করে সূর্যের আলো রুমে ঢুকছে।যা চোখে পড়তে শেহরেয়ারের ঘুম ভেঙে গেল।উঠে বসে হাত-পা ছাড়িয়ে হাই তুললো।ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাতে দেখলো আজ ছুটির দিন।তাই সে মুখের উপর বালিশ দিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।চোখটা লেগে আসতে হঠাৎ উঠে বসলো শেহরেয়ার।
-“এখন ঘুমানো যাবে না।আগে গিয়ে রিয়াজুল আঙ্কেলের সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করতে হবে।”
শেহরেয়ার বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল।
-“শেহরেয়ার যেটা চাচ্ছে সেটা করুক।তোমার এইসবে না ঢুকাই উচিত।ও এখন বড় হয়েছে।”
শেহমীর মির্জার কথায় বেশ বিরক্তি প্রকাশ করলেন হেনা সাহেবা।প্রতিত্তোরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন কারণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সেতারা বেগম।যিনি সম্পর্কে শেহমীর মির্জার মা!
হেনা সাহেবা দীর্ঘ সময় ধরে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকায় সেদিকে ঘুরে তাকালেন শেহমীর মির্জা।সেতারা বেগমকে দেখে উনার মুখে হাসি ফুটলো।অতি দ্রুত গিয়ে সেতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরলেন।
-“মা তুমি এসেছো!”
-“হ রে বাপ!কত্ত দিন পরে তোরে দেখলাম!”
হেনা সাহেবা ধীর পায়ে সেতারা বেগমের দিকে এগিয়ে গেলেন।জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললেন,
-“মা না জানিয়েই যে চলে আসলেন?”
-“ছেলের বাড়িতে আবার মা-কে জানিয়ে আসতে হবে নাকি!”
শেহমীর মির্জা গম্ভীর কণ্ঠে বললেন।পরিস্থিতি সামলাতে হেনা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,
-“জানিয়ে আসলে আমি মায়ের সব পছন্দের খাবার রান্না করতাম।”
সেতারা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
-“তুমি আবার আমরে কবে এতো আপ্যায়ন কইরা খাওয়াইলা মা জননী!আমার তো তা মনে পড়ে না।”
সেতারা বেগমের কথায় বেশ চ*টে গেলেন হেনা বেগম।তিনি আর সেখানে না দাঁড়িয়ে রুমের দিকে চলে গেলেন।শেহমীর মির্জা’ সেতারা বেগমকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসলেন।সেতারা বেগম চারিপাশে চোখ বুলিয়ে বললেন,
-“আমার নাতিডা কই রে!হেরে দি দেখি না কোথাও।”
-“আজকে ছুটির দিন তো তাই হয়তো এখনো ঘুমিয়ে আছে।চিন্তা করো না একটু পরেই চলে আসবে।”
সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে হঠাৎ শেহরেয়ারের চোখ পড়লো সোফায়।সেখানে সেতারা বেগমকে বসে থাকতে দেখে সে এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলো।
-“কেমন আছো দিদুন?”
-“অনেক ভালা আছি।তোর কথাই জিগাইতে ছিলাম।”
শেহরেয়ার কিছুক্ষণ সেতারা বেগমের সাথে গল্প করে বললো,
-“দিদুন তুমি থাকো!আমার একটা জরুরি কাজ আছে।সেটা শেষ করে খুব শীগগির চলে আসবো।”
-“ছুটির দিনে আবার কিসের কাজ?”
শেহমীর মির্জার কথা শুনে শেহরেয়ার বললো,
-“মা গিয়ে কালকে বিয়েটা ভেঙে এসেছে।সেটাই ঠিক করতে যাচ্ছি।”
শেহমীর মির্জা অবাক হয়ে বললেন,
-“কি বলছিস তুই?আমি তো কিছুই জানি না।”
-“মা তো কাউকে কিছু না জানিয়েই কাজ করে বাবা।”
-“আসলে এই মহিলা যে কি শুরু করেছে!আচ্ছা চল আমিও যাই তোর আছে।”
-“কোনো দরকার নেই বাবা।ইনশাআল্লাহ আমি একাই সবটা সামলাতে পারবো।”
শেহরেয়ার মৃদু হেসে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।
-“কি হইছে রে বাপ?আমি তো কিছুই বুঝলাম না।”
-“মা তোমার এইসব নিয়ে এখন ভাবতে হবে না।”
__________________
-“আঙ্কেল মা যেটা করেছেন সেটা ঠিক করেননি।তার জন্য আমি দুঃখিত।বিশ্বাস করুন আমি মেহরিনকে….শুধু মেহরিন না রায়ানকেও;আমি দুজনকেই সুখে রাখবো।প্লিজ আঙ্কেল আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান।”
-“আমি তো রাজি ছিলাম বাবা।তোমার মা যা বলে গেছেন!”
-“বিয়েটা তো আমার মায়ের সাথে না আমার সাথে দিবেন।তাই আমার কথায় ভরসা রাখুন।আপনার মেয়েকে আর কেউ অপমান করতে পারবে না।’
রিয়াজুল রাহমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,
-“আচ্ছা বাবা।আমি তোমার সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো।”
শেহরেয়ারের মুখে হাসি ফুটলো।পর্দার আড়াল থেকে সবকিছু শুনছিলো মুনিয়া।সে দৌড়ে গিয়ে সবটা মেহরিনকে জানালো।
-“মুনি তোর আড়িপাতার কি দরকার?সামনে গিয়ে বসে শুনলেই তো পারতি!”
-“ওফ আপু!আমি তো আড়িপেতে ভালো কথাই শুনেছি।”
মেহরিন আর কিছু না বলে নাস্তা রেডি করে নিয়ে গেল।শেহরেয়ারের সামনে রাখতেই সে এক প্লেট নিয়ে খেতে শুরু করে বললো,
-“কালকে রাত থেকে টেনশনে কিছু খেতে পারিনি।এখন তো সবটা ঠিক হয়েছে।তাই এখন নিশ্চিন্তে খেতে পারতেছি।”
শেহরেয়ারের কথা শুনে রুমে উপস্থিত সবাই হেসে দিল।শেহরেয়ার বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে রায়ান এসে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলো।শেহরেয়ারও পরম যত্নে তাকে কোলে তুলে নিলো।
-“গুড্ডু কখন ঘুম থেকে উঠলো?”
মেহরিনের কথা শুনে পাশে থেকে মুনিয়া বললো,
-“এইতো কেবলই উঠলো রাজপুত্র!”
-“পাপা তুমি আমার আর মামুনির সাথে থাকো না কেনো?আমার সব ফ্রেন্ডদের পাপা-মামুনি তাদের সাথে থাকে।”
-“কিছুদিন পরে থেকে আমরা তিনজন একসাথে থাকবো।একটু ওয়েট করো বাবাই।আর তোমার চকলেট তোমার মামুনির কাছে দিয়েছি নিয়ে নিও।”
শেহরেয়ার রায়ানের গালে চুমু দিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেই তার মোবাইলে নোমানের কল আসলো।কলটা রিসিভ করতেই নোমান বললো,
-“স্যার ‘ও’ পালিয়েছে।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৪
_________________
-“কি বলছো তুমি!পাগল হয়ে গিয়েছো নাকি?”
-“স্যার কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না ও-কে।”
শেহরেয়ার আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে সেখানে গেল।সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।শেহরেয়ার চোয়াল শক্ত করে বললো,
-“কি করো টা কি তোমরা!এতোজন মিলে একজনকে পাহারা দিতে পারো না।”
কথাগুলো বলে শেহরেয়ার চুপ হয়ে গেল।ভাবান্নিত ভঙ্গিতে বললো,
-“আই থিংক ও বাড়িতেই যাবে!কারণ ওখানেই ওর আসল গুপ্তধন আছে।”
শেহরেয়ার সেখানে আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বাড়িতে গেল।কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলো ও যায়নি।
-“কিন্তু গেলো টা কোথায়!”
শেহরেয়ার এইসব ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি দিয়ে উঠছিল হঠাৎ হেনা সাহেবা উচ্চস্বরে বললেন,
-“রাজ…….”
নামটা শুনতেই শেহরেয়ার দাঁড়িয়ে পড়লো।সে পিছনে ঘুরে দেখলো বাড়ির সদর দরজায় রাজ দাঁড়িয়ে আছে।হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ করা,পরনে নতুন কাপড়-চোপড়!শেহরেয়ার ভালো করেই বুঝতে পারলো রাজ ওখান থেকে পালিয়ে গেটআপ চেঞ্জ করে এসেছে।
হেনা সাহেবা দৌড়ে গিয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
-“তোর হাতে-পায়ে এমন ব্যান্ডেজ করা কেনো?”
রাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আসলে মা,রাস্তায় কিছু গু*ন্ডা অ্যাটাক করেছিল।আমার সবকিছু নিয়ে গেছে।শুধু প্রাণটা নিয়ে বেঁচে এসেছি।”
রাজের এমন কথায় বেশ অবাক হলো শেহরেয়ার।বিড়বিড় করে বললো,
-“ও আবার নতুন কোন খেলা শুরু করলো!”
রাজ কিছুক্ষণ পরে শেহরেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“হাগ করবি না আমাকে শেহরেয়ার?”
শেহরেয়ার বাঁকা হাসি দিয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বললো,
-“বেশি চালাকি করিস না।তোর কপাল ভালো তাই পালিয়ে আসতে পেরেছিস।”
রাজ চুপ রইলো।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ পরে রাজকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
-“তুই হঠাৎ করে কোথা থেকে আসলি?না জানিয়ে চলে আসলি একদম?”
শেহরেয়ারের সাথে তাল মিলিয়ে হেনা সাহেবা বললেন,
-“হ্যাঁ তাই তো।তুই না জানিয়ে আসলি কেনো রাজ?”
-“তোমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম মা।”
হেনা সাহেবা রাজকে যত্ন করে রাজের রুমের দিকে নিয়ে গেল।নিরব দৃষ্টিতে সবটা দেখছিল শেহরেয়ার।হঠাৎ শেহরেয়ারের মোবাইলে নোমানের কল আসলো।শেহরেয়ার কলটা রিসিভ করতে নোমান বললো,
-“স্যার ও-কে পেয়েছেন?”
-“হ্যাঁ ও বাড়িতেই এসেছে।”
-“তাহলে এখন কি করবেন?”
-“চিন্তা করো না।ওর ব্যবস্থা আমিই করতেছি।”
শেহরেয়ার কলটা কেটে দিল।সেতারা বেগম এসে তার কাঁধে হাত রাখলো।সেতারা বেগমকে দেখে শেহরেয়ার মৃদু হাসলো।
-“খারাপ লাগছে নাতি তোর?”
-“খারাপ লাগবে কেনো দিদুন?”
-“তোর মায়ের সব কিছুতেই বেশি বেশি।কার না কার পোলা!উনি একেবারে নিজের পোলার তে বেশি তারে মাথায় তুলে রাখে।”
-“রাজ তো মায়েরই ছেলে।শুধু শুধু তো আর এতো ভালোবাসে না!”
মনে মনে কথাগুলো বললো শেহরেয়ার।যার কারণে তা আর সেতারা বেগমের কান পর্যন্ত পৌঁছালো না।শেহরেয়ার কিছুক্ষণ পরে সেতারা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“ওফ দিদুন!আমি কি বাচ্চা নাকি যে এইসবে কষ্ট পাবো?”
-“নাতি রে…বাচ্চা হওন লাগে না।বাপ-মায় যদি নিজের ছেলে-মেয়ের তে অন্যের ছেলে-মেয়েরে বেশি আদর করে তাইলে তো কষ্ট লাগেই।”
শেহরেয়ার কিছু না বলে মলিন হাসি দিল।
______________________
-“ধ্যাত!কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।একটাও সিএনজি পাচ্ছি না।”
মুনিয়া সিনএনজি’র জন্য দাঁড়িয়ে আছে আর বারবার হাতের ঘড়ি দেখছে।
-“রুমি হয়তো এতোক্ষণে কেক কেটে ফেলেছে।ইশ!আমার আর যাওয়া হলো না।”
কাজিনের বার্থডে উপলক্ষে তার জন্য গিফট কিনে গাড়ি নিয়ে তার বাড়ির দিকে যাচ্ছিল হামিদ।কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে তার।তবে তা নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই।এক সময় গেলেই হলো এমন একটা ভাব!হঠাৎ করে রাস্তার পাশে চোখ পড়তে দেখলো কালকের সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে!
-“এই মেয়ে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছে?হয়তো বা সিএনজি’র জন্য অপেক্ষা করছে।চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ইমারজেন্সি!গাড়িটা থামিয়ে দেখি।”
হামিদ মুনিয়ার সামনে গিয়ে গাড়িটা থামালো।মুনিয়ার মেজাজ যেন একশো আশি ডিগ্রি তাপমাত্রায় গরম হচ্ছে।একটু পরে হামিদ গাড়ি থেকে নামলো।হামিদকে দেখে মুনিয়ার রাগ আরও বেড়ে গেল।হামিদ কিছু বলতে যাবে তার আগে মুনিয়া বললো,
-“সমস্যা কি আপনার?এতো জায়গা থাকতে আমার সামনে এসে গাড়ি থামাতে হবে?এমনি সিএনজি পাচ্ছি না।এখন যদি এতোবড় গাড়িটা আমার সামনে থাকে তাহলে তো আর সিএনজি চলে গেলেও দেখতে পাবো না।”
একদমে কথাগুলো বললো মুনিয়া।হামিদ কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“আপনি এতো কথা বলেন কেনো?আমি এখানে গাড়ি থামিয়েছি আপনার কোনো হেল্প লাগবে নাকি তার জন্য!”
-“আপনার থেকে আমি হেল্প কেনো নিবো?”
-“না নিলে না নিবেন।এমনিও আপনার মতো একজনকে হেল্প করতে আসাও ঠিক না।”
হামিদ চলে যেতে গেলে মুনিয়া বললো,
-“ওয়েট……..”
হামিদ পিছনে ঘুরে বললো,
-“কি?”
“আমাকে _____ জায়গায় পৌঁছে দিতে পারবেন?”
হামিদ অবাক হয়ে বললো,
-“আপনি ওখানে কেনো যাবেন?”
-“আমার ফ্রেন্ডের বার্থডে তাই।”
-“আপনার ফ্রেন্ডের নাম কি রুমি?”
-“হ্যাঁ।আপনি কিভাবে জানলেন?”
-“ও আমার কাজিন হয়।আচ্ছা গাড়িতে উঠুন।”
দুজনে গাড়িতে উঠলো।হামিদ গাড়ি স্টার্ট করলো।
______________________
শেহরেয়ার তার রুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে বোর হচ্ছিলো।
-“আর ভালো লাগে না টিভি দেখতে।এক কাজ করি।মেহরিনকে কল করে জিজ্ঞেস করি উনি কি করছেন।দুজনে মিলে ঘুরতে গেলে সময়টা ভালো কাটবে।”
শেহরেয়ার আর দেরি না করে মেহরিনকে কল করলো।মেহরিন কলটা রিসিভ করতে শেহরেয়ার বললো,
-“কি করছেন আপনি?”
-“বই পড়ছিলাম।”
-“এখন এইসব বই পড়া রাখুন।রেডি হন আমি আসতেছি।দুজনে মিলে একটু প্রেম করতে যাবো!”
শেহরেয়ারের কথা শুনে মেহরিন খিলখিল করে হেসে দিল।হাসি থামিয়ে বললো,
-“আপনি যে কিসব বলেন তা আপনি নিজেও জানেন না!”
-“হ্যাঁ বুঝেছি তো।এতো কথা না বলে রেডি হন আমি আসতেছি।”
-‘আরে বাসায় কেউ নেই তো।বাবা গুড্ডুকে নিয়ে ঘুরতে গেছে আর মুনিয়া গেছে ওর ফ্রেন্ডের বার্থডে পার্টিতে।”
-“তো কি হয়েছে?আপনিও বের হয়ে পড়েন।”
-“আমার ভালো লাগছে না।”
-“এমনটা বলে আমাকে কষ্ট দিতে পারলেন?”
মেহরিন মুচকি হেসে বললো,
-“আপনি কষ্ট পেলে আমার কি?”
-“কিচ্ছু না আপনার?”
-“নাহ্!কিচ্ছু না আমার।”
শেহরেয়ার অভিমান করে কলটা কেটে দিল।মেহরিন মোবাইল হাতে নিয়ে বললো,
-“ইশ!কষ্ট পেল নাকি আবার?”
মেহরিন দুইবার কল দিল কিন্তু শেহরেয়ার কল রিসিভ করলো না।তৃতীয় বার কল দিতে গিয়ে দেখলো মোবাইল সুইচ অফ!মেহরিনের এবার কিছুটা খারাপ লাগলো।
শেহরেয়ার গাড়ি ড্রাইভ করছে আর হাসছে।
-“ম্যাডামের নিশ্চয়ই এতোক্ষণে মন খারাপ হয়ে গেছে।ওয়েট করেন আমি আসতেছি।
শেহরেয়ার গাড়ি নিয়ে মেহরিনদের বাড়ির সামনে থামালো।গাড়ির হর্ণ বাজালো।
গাড়ির হর্ণের আওয়াজ পেয়ে বেশ অবাক হলো মেহরিন।সে সদর দরজা খুলে দেখলো গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে শেহরেয়ার।শেহরেয়ারকে দেখে বেশ চমকে গেলো মেহরিন!
মেহরিন দরজা খুলতে তার দিকে এগিয়ে আসলো শেহরেয়ার।পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো,
-“কি ম্যাডাম মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল নিশ্চয়ই?”
মেহরিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-“মোটেও না।তবে আপনি মোবাইল অফ করেছেন কেনো?”
-“আপনার সাথে মজা করতে।বাই দ্যা ওয়ে দুই কাপ চা বানিয়ে আপনাদের বাগানের দিকে আসুন আমি ওখানে যাচ্ছি।”
মেহরিন অবাক হয়ে বললো,
-“বাগানে কেনো যাবেন বাড়ি থাকতে?”
-“আপনাদের বাড়িতে তো এখন কেউ নেই।এখন ভিতরে যাওয়াটা ঠিক হবে না।কারণ আপনার সাথে ফাঁকা বাড়িতে বসে গল্প করার এখনো অধিকার নেই আমার।”
শেহরেয়ার মুচকি হেসে বাগানের দিকে চলে গেল।মেহরিনের মুখে হাসি ফুটলো।
-“লোকটার চিন্তাধারা অভাবনীয়।”
___________________________
-“শুনলাম রাজ নাকি বাড়িতে এসেছে?”
শেহমীর মির্জার কথায় হেনা বেগম উজ্জ্বল হাসি দিয়ে বললেন,
-“হ্যাঁ এসেছে তো।”
-“তা কোথায় সে এখন?”
-“রুমে রেস্ট নিচ্ছে।জানো ও-কে নাকি গু*ন্ডারা অ্যাটাক করেছিল।”
-“তারপর কি হলো?”
-“ওর সব জিনিসপত্র নিয়ে ও-কে মে*রেছে।”
-“আহারে বেচারা।ডাক্তার তুহিনকে ডেকেছিলে?”
-“তার দরকার হয়নি।কারণ ও নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে ব্যান্ডেজ করে বাড়িতে এসেছে।”
-“তাহলে ঠিক আছে।”
#চলবে____
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]