অনুরাগের_প্রহর #মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি #পর্ব_১৬

#অনুরাগের_প্রহর
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_১৬
_________________
শেহরেয়ার মেহরিনকে ইশারা করে শান্ত থাকতে বললো।রুশমির দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“কি সব বলছিস তুই রুশমি?মাথা ঠিক আছে তোর?”

-“কেনো কিছু মনে নেই তোর শেহরেয়ার?”

শেহরেয়ার চোখ বন্ধ করে বললো,

-“রুশমি প্লিজ!তুই এইসব উল্টাপাল্টা কথা কেনো বলছিস?”

-“সেদিন ওমন কিছু করার আগে এইসব মাথায় আসেনি তোর?”

তিহা রুশমির পাশে এসে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো।শেহরেয়ার অবাক হয়ে বললো,

-“তিহা আপু তুই?”

-“হ্যাঁ আমি!এই মেয়েটা তোর জীবন থেকে দূরে সরে গেছিল তোর ভালোর কথা ভেবে।এতোদিন ধরে তোর মেয়েকে একা মানুষ করেছে।কি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে তা শুধু সে জানে।আমি ও-কে জোর করে নিয়ে এসেছি এখানে।”

-“সবই বুঝলাম।কিন্তু এই বাচ্চা আমার না।সেদিন আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি।অকারণে আমার উপরে দোষ চাপাবি না।”

রুশমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে তিহার দিকে তাকিয়ে বললো,

-“আমি আগেই বলেছিলাম ও কিছুই বিশ্বাস করবে না তিহা আপু।”

তিহা চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“বিশ্বাস তো ও-কে করতেই হবে।একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করেছে!আর এই মেয়েই বা কি!কিছু না জেনেই বিয়ে করে নিয়েছে একটা ছেলেকে।”

তিহার কথা শুনে শেহরেয়ার তার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,

-“মেহরিনকে নিয়ে কোনো উল্টাপাল্টা কথা বললে তোর জিভ ছিঁড়ে ফেলব।”

-“তুই নিজেই ভেবে দেখ তোর অধঃপতন!বড় বোনের সাথে এভাবে কথা বলছিস।”

-“তা তুই মেহরিনকে ওভাবে বললি কেনো?ও আমার স্ত্রী!তোর কোনো অধিকার নেই ওর সাথে এভাবে কথা বলার।”

হঠাৎ শেহমীর মির্জা এসে ঠাস করে শেহরেয়ারের গালে একটা থাপ্প*ড় মারলো।

-“ছিঃ!তুই আমার ছেলে তা ভাবতেও আমার ঘৃণা লাগছে।তিহা তুমি ও-কে নিয়ে গেস্টরুমে যাও।”

শেহমীর মির্জা কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেলেন।

মেহরিন ছলছল চোখে শেহরেয়ারের দিকে তাকিয়ে আছে।শেহরেয়ার মেহরিনকে ধরতে গেলে সে দূরে সরে গিয়ে বললো,

-“শেহরেয়ার তুমি আমাকে স্পর্শ করবে না!”

শেহরেয়ার কিছুক্ষণ মেহরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

-“তুমিও আমাকে অবিশ্বাস করছো মেহরিন?”

-“তোমাকে আমি কখনোই অবিশ্বাস করবো না শেহরেয়ার।আমাকে একটু সময় দেও।আমি রায়ানকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।সঠিক সময় হলে ফিরে আসবো।”

মেহরিন কথাগুলো বলে রুমের দিকে চলে গেল।তিহা আঙ্গুল তুলে বললো,

-“আমি শেষ পর্যন্ত দেখে নিবো।”

তিহা কথাগুলো বলে রুশমিকে নিয়ে গেস্টরুমের দিকে চলে গেল।হেনা সাহেবা এসে শেহরেয়ারের কাঁধে হাত রাখলো।শেহরেয়ার শক্ত করে হেনা সাহেবাকে জড়িয়ে ধরলো।কত বছর পর যে শেহরেয়ার হেনা সাহেবাকে জড়িয়ে ধরলো তার হিসাব নেই!উনিও শক্ত করে শেহরেয়ারকে জড়িয়ে ধরলেন।

-“মা তুমি বিশ্বাস করো আমি এমন কিছুই করিনি।”

-“আমি জানি বাবা!আমার তোর প্রতি বিশ্বাস আছে।”

-“কিন্তু মেহরিন!যতই বলুক অবিশ্বাস করেনি।যদি অবিশ্বাস নাই করতো তাহলে কি আমাকে একা রেখে চলে যেতে চাইতো!”

-“বাবা ও দোটানায় পড়ে গেছে।”

মেহরিন এক হাতে রায়ানের হাত ধরে আর অন্য হাতে স্যুটকেস নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলো।শেহরেয়ার মেহরিনের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছে বললো,

-“আমার প্রতি এতোদিনেও এক বিন্দু বিশ্বাস জন্মায়নি তোমার?”

-“শেহরেয়ার আমি একবার বলেছি তোমাকে।”

-“মেহরিন যতই মুখে বলো অবিশ্বাস করতে পারো না!কিন্তু তুমি আমাকে অবিশ্বাস করেছো।তুমি আসলে আমার একান্ত ব্যক্তিগত মানুষটি হতে পারোনি।তাহলে এই অবস্থায় কখনোই আমাকে একা রেখে চলে যেতে না।এতো ভালবাসার পরেও যে মানুষটি আমার হয়নি , উৎসর্গ হোক তার প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা!”

কথাগুলো বলে শেহরেয়ার তার রুমের দিকে চলে গেল।মেহরিন অবাক হয়ে শেহরেয়ারের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

-“মা বিশ্বাস করুন আমি শেহরেয়ারকে অবিশ্বাস করিনি।কিন্তু আমার পক্ষে ওই মেয়ের সাথে এক বাড়িতে থাকা সম্ভব না।বাবা কেনো এই সিদ্ধান্ত নিলেন সেটা উনি ভালো জানেন!তবে আমি পারবো না এই মুহূর্তে এই বাড়িতে থাকতে।”

-“মা রে তোদের ছাড়া আমি কিভাবে ভালো থাকবো?থেকে যা মা।”

-“প্লিজ মা আমাকে বাঁধা দিয়েন না।”

মেহরিন’ হেনা সাহেবাকে জড়িয়ে ধরলো।হেনা সাহেবা মেহরিনের মাথায় একটা চুমু দিল।তারপরে রায়ানকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করলো।

-“তোর শ্বশুর মশাইয়ের সাথে দেখা করবি না?”

-“না!উনার এই সিদ্ধান্তের জন্যই এই বাড়ি থেকে এখন আমার চলে যাওয়া লাগতেছে।”

মেহরিন রায়ানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল।হেনা সাহেবা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চোখের কোণের পানি মুছলেন।চোয়াল শক্ত করে নিজের রুমের দিকে গেলেন।

-“মেহরিন রায়ানকে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে গেছে।”

হেনা সাহেবার কথায় আঁতকে উঠলেন শেহমীর মির্জা।

-“কি বলছো তুমি?”

-“হ্যাঁ!আর ওর চলে যাওয়ার কারণ তুমি ওই মেয়েকে এই বাড়িতে থাকতে বলেছো তাই!”

-“তা আমি আর কি করতাম?তোমার ছেলে কোনো সঠিক প্রমাণ দেখাতে পেরেছে?”

-“তোমার নিজের ছেলের প্রতি বিশ্বাস নেই?”

-“না নেই!যেই তিহা ও-কে সবসময় বড় বোনের মতো স্নেহ করেছে সে কি মিথ্যা বলবে?”

-“আমি এইসব কিছু জানি না।”

হেনা সাহেবা রুম থেকে বের হয়ে শেহরেয়ারের রুমের দিকে গেলেন।রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখলেন শেহরেয়ার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।হেনা সাহেবা ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সেখানে মেহরিন আর রায়ানের ছবি!হেনা সাহেবাকে দেখে শেহরেয়ার মোবাইলটা অফ করে বললো,

-“রায়ানের জন্য খারাপ লাগছিল।আর কারো জন্য না।”

-“বাবা’ মেহরিন মা বাড়ি থেকে চলে গেছে তোর বাবা রুশমিকে এই বাড়িতে থাকতে বলেছে সেই কারণে।তোকে অবিশ্বাস করে না!”

-“তোমাকে কে বললো মা?”

-“ও আমাকে বলে গেছে যাওয়ার আগে।”

-“এটা তো ও আমাকে বলতে পারতো!যাই হোক ও-কে ওর মতো থাকতে দেও।আর ওই রুশমিকে তো আমি দেখতেছি!কিন্তু আমি বুঝতেছি না তিহা আপু কেনো ও-কে সাপোর্ট করতেছে!”

-“এটা তো আমিও বুঝতেছি না।”

________________
-“আপু তুই এমন পরিস্থিতিতে শেহরেয়ার ভাইয়াকে একা রেখে আসলি কেনো?”

-“ওই মেয়ের সাথে কি এক বাড়িতে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হতো!”

-“তাও!”

-“মুনি,এখন এইসব কথা বাদ দে।”

-“ভাইয়া যদি রাগে তোর সাথে সম্পর্ক ভেঙে দিতে চায়?”

-“এতো সহজ না সবটা!ও আমাকে ছাড়তে চাইলেও আমি কখনো ও-কে ছাড়বো না।এই বাড়িতে থেকেই আমি সব সত্যিটা বের করবো।কারণ আমার বিশ্বাস আছে শেহরেয়ারের প্রতি।ও কখনোই এমন কিছু করবে না!”

____________________
-“তোমার বাচ্চা তার প্রাপ্য অধিকার পাবে।কোনো চিন্তা করো না তুমি।”

-“আপু আপনার এই ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না।”

রুশমির কথা শুনে তিহা মৃদু হাসলো।



-“চাচি এইসব কি শুনতেছি আমি?ভাবি নাকি বাড়ি থেকে চলে গেছে?”

হেনা সাহেবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-“ঠিকই শুনেছিস।”

-“একটু বাইরে গেলাম আর এতোকিছু ঘটে গেল!ভাইয়া কোথায় এখন?”

-“একটু আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল।”

শুভ দীর্ঘশ্বাস ফেললো।হঠাৎ তার চোখ গেল বাচ্চা কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে।

-“চাচি উনি কে?”

-“এই তো সেই মেয়ে!”

-“উনি এখানে কি করতেছে?”

-“তোর চাচু ও-কে এই বাড়িতে থাকতে বলেছে।”

তিহা এসে রুশমির পাশে দাঁড়িয়ে বললো,

-“আর ওর এই বাড়িতে থাকার অধিকারও আছে।কারণ ওর কোলের বাচ্চাটা তোমার চাচাতো ভাই শেহরেয়ারের।”

শুভ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

-“ফালতু কথা বলা বাদ দেন।”

-“আমি কোনো ফালতু কথা বলতেছি না।”

রুশমি গিয়ে হেনা সাহেবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

-“একবারও আমার মেয়েটাকে কোলে নিবেন না?ওর শরীরে তো এই বংশের রক্তই বইছে!”

হেনা সাহেবা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলেন।রুশমির চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।

#চলবে____

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here