কাবিননামা ১

#কাবিননামা
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona

-আব্বু প্লিজ অনেক হয়েছে আর না! আমি বলেছি তো বিয়ে করবো না। তাও কেন তুমি জোর করছো?? (কিছুটা রেগে গিয়ে জাবিন)
-জাবিন মা একটু বুঝ। সাগর ছেলেটা অনেক ভালো। ও তোকে ভালোবাসে। আর বিয়ে ও করতে চায়। (জাবিনের আব্বু)
-আব্বু এইসব ভালোবাসার মূল্য কি আমি কখনো দিয়েছি? দেই নি! এসব ভালোবাসা আমাকে বুঝিয়ো না। আম্মু মারা গেছে সবে মাত্র ৬ মাস হলো এর মাঝেই তুমি আমায় পর করে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছো?
-জাবিন এইভাবে কেন বলছো আম্মু? আব্বু কি তোমার খারাপ চাইবে?
-না বাট আমি ওই ছেলেকে বিয়েও করবো না আর এইটাই শেষ কথা। কতটুকু বয়স আমার? মাত্রই তো ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার।
-জাবিন আমি চাইবোনা যে এই ভাঙ্গা সংসারে থেকে আমার মেয়েদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক। তুমি বিয়ে করছো আর এইটাই আমার শেষ কথা। আগামী শুক্রবার সাগরের সাথে তোমার কাবিন। আমি আর কিছু বলব না।
-আব্বু দাঁড়াও শুনে যাও প্লিজ….

জাবিনের কোনো কথা না শুনেই জাবিনের আব্বু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। জাবিন টেবিলে বসে পরলো।

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে জাবিন। জাবিন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর জাবিনের মা মারা যায়। ৬ মাস হলো জাবিনের মা নেই। জাবিনরা তিন বোন। জাবিন বড় মেয়ে। ছোট বোনেরা জাবিনের চোখের মনি। জাবিনের মেজো বোন নবম শ্রেণীতে পড়ে আর জাবিনের ছোট বোন পঞ্চম শ্রেণীতে পরে। আর জাবিন তো ইন্টার প্রথম বর্ষে পরছে। মা মারা যাওয়ার পর সংসারের সব দায়িত্ব জাবিন ই পালন করছে। কোনোদিন বোনদের সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনি জাবিন। মায়ের মায়া মমতা দিয়ে আগলে রেখেছে আব্বু আর ছোট দুই বোনকে। কিন্তু মাঝখানে সাগর নামে কেউ এসে ঝামেলা করলো। সাগর হলো জাবিনকে যে অন্ধের মতো ভালোবাসে। এলাকার সবচেয়ে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান সাগর। সিংগাপুরে পড়াশুনা শেষ করে সাগর এখন বাবার বিজনেস দেখা শোনা করছে। সাগরের ছোট একটা বোন আছে। সে জাবিনের সাথেই পড়ে তবে আলাদা কলেজে। জাবিনকে একদিন স্কুল যেতে দেখেই প্রেমে পড়ে যায় সাগর জাবিনের। প্রায় এক বছর ধরে সাগর জাবিনকে ফলো করছে। জাবিনের মা যেদিন মারা যায় সেইদিন দূর থেকে সাগর জাবিনের স্বজন হারা চিৎকার দেখে নিজেও কেঁদেছে। সাগর তখন থেকে আর জাবিনের সামনে যায়না। জাবিনকে একেবারে নিজের করে পাওয়ার জন্যই সাগর মউরিয়া হয়ে গেছে জাবিনকে বিয়ে করার জন্য।

এইদিকে জাবিন সাগরকে দেখতেই পারেনা। সাগর যে আনস্মার্ট তা নয় অনেক হ্যান্ডসাম সাগর কিন্তু কেন যেন ধনী পরিবারের সন্তানদের জাবিন দেখতে পারেনা। জাবিন যখন কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয় তখন সাগর ও অফিসে যাওয়ার জন্য গাড়ি নিয়ে বের হয়। সানগ্লাস খুলে প্রতিদিন জাবিনকে দেখে আর একটা মুচকি হাসি দেয়। যেই পর্যন্ত জাবিনের কলেজ বাস না আসে সেই পর্যন্ত সাগর জাবিনের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকে এরপর অফিস যায়। এইভাবেই জাবিন সাগরকে দেখেছে। কিন্তু কেউ কোনোদিন কারো সাথে কথা বলেনি। জাবিন অত্যন্ত ভদ্র আর শুশ্লীল মেয়ে। জাবিনের নম্রতা আর মায়াবী মুখেরই প্রেমে পরে গেছে সাগর। এত স্মার্ট একটা ছেলে এমন মেয়েকে ভালোবাসতে পারে সেইটা ভেবেই জাবিন অবাক হচ্ছে। জাবিনের সবচেয়ে খারাপ একটা স্বভাব হচ্ছে কথা কম বলা। যাই হোক সাগরের মা বাবা আগামী শুক্রবার জাবিনকে আংটি পরাতে আসবে আর জাবিনের সাথে সেইদিনই সাগরের পরিবার কাবিন করে ফেলবে। জাবিনের স্বপ্নগুলো শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিচ্ছে সাগর এমন ভাবনা জাবিনের।

জাবিনের মেজো বোন রিমি স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখে জাবিন ঘরে বসে কাঁদছে।

-কিরে আপু? কান্না করস কেন? কলেজে যাস নাই?
-তুই কখন আসলি? (চোখের পানি মুছে জাবিন)
-মাত্রই। তুই কেন কাঁদছিস আপু বল তো?(জাবিনের কাঁধে হাত রেখে রিমি)
-আরে না কিছুনা। ড্রেস চেঞ্জ করে খাবার খেতে আয়।

এই কথা বলে জাবিন এক দৌঁড়ে ডায়নিং এ চলে গেলো। রিমি বুঝতে পেরেছে হয়ত সাগর কে নিয়েই কিছু হয়েছে! রিমি ড্রেস চেঞ্জ করে এসে জাবিনকে জিজ্ঞেস করে

-আপু সাগর ভাইয়াকে নিয়ে আবার কি কিছু হয়েছে?
-রিমি তোমার সাথে আমার কথা আছে। (আব্বু)
-হ্যা আব্বু বলো (রিমি)
-নেক্সট ফ্রাইডে জাবিনের বিয়ে সাগরের সাথে। প্রস্তুত থেকো তুমি আর লামিয়া। আর হ্যা জাবিনকে বুঝাইয়ো তুমি।
-কিহহহ? আব্বু তার মানে কি? আপুর বিয়ে মানে? (অবাক হয়ে রিমি)
-হ্যা জাবিনের বিয়ে।
-তার মানে আপু আর থাকছেনা আমাদের সাথে?
-থাকবে। ইন্টার শেষ করার পর সাগরের বাসায় উঠবে। এখন জাস্ট বিয়েটা করিয়ে রাখবো।
-আব্বু জাস্ট স্পিচলেস। ভাবতে পারছিনা আপুর বিয়ে!!
-স্পিচলেস হওয়ার কিছু নেই। শপিং যা লাগে করা শুরু করো। সময় বেশি নেই।
-হুম আব্বু।

জাবিন শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলো। তিন বোনের কেউই আব্বুর মুখের উপর কথা বলতে পারেনা। তাই কেউ কিছু বলল না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here