অরুর সংসার,পর্ব-৬,৭

অরুর সংসার,পর্ব-৬,৭
লেখিকা-নিশিকথা
পর্ব-৬

অয়ন : মাথা টা খুব ব্যাথা করছে ” চেপে দেও তো
(অরু অবাক)
অয়ন: কি হল?? দেও
(অরু কাপা কাপা হাতে অয়নের মাথায় হাত দিল। চেপে দিচ্ছে ধীরে ধীরে .. আর অয়নের চোখ বন্ধ)
(এরকম আধা ঘন্টা যাওয়ার পর হঠাৎ অয়ন চোখ খুলে তাকালো অরুর দিকে একটা নেশা ভরা চোখে)
অয়ন: হয়েছে আর লাগবে না।কিছুটা রিলিফ লাগছে! আর বাকিটা…..
(অয়ন উঠে বসে অরুর ২গাল ২হাত দিয়ে টাচ করলো….তারপর হুট করে অরুর ঠোটে নিজের ঠোট মিলিয়ে দিল )
(অরুর চোখ বড়বড় হয়ে গেল )
♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥♥
কলিং বেলের আওয়াজে ঘোর কাটলো অয়নের। অরু চোখ কুচকে আছে এখনো! অয়ন হেসে দিল… … … বলল….
অয়ন : আর বাকিটা এই এখন হল..yeah now i feel relief….
(অরু এবার চোখ খুলে মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে)
অয়ন : এই তুমি কিস করতে পারো বা কেন? কেমন করে ঠোট শক্ত করে রাখো!! সব সময় আমি ই দিব নাকি! তুমি আমাকে দিবা না?
অরু: কি??? কি দিব?
অয়ন: (এক ভ্রু উচু করে তাকিয়ে আছে এবার) তোমার মাথা
অরু: (আবার মাথা নিচু করে আছে) মনে হয় বাবা এসেছেন
অয়ন: এসেছেন না এসেছে! অহন এসেছে। যাও দেখে আসো………
অরু দ্রুত উঠে যেতে নিলে অয়ন আবার বলল…
অয়ন: আরেহ ! বেশ দ্রুত হাটতে পারো তো!! আমি তো ভাবছিলাম তোমার পা সবসময় বরফের মত জমে থাকে তাই অত আস্তে হাটো! কিন্তু নাহ!!! আমার কাছে আসতে গেলেই হাতা দ্রুত হয় না শুধু !!!!!!!!
(অরু আর দেরী না করে এক প্রকার দৌড়ে চলে গেল রুম থেকে )
(অয়ন আবার আগের মত শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলো)
(অরু নিজে নিজের গাল দুটো দুই হাত দিয়ে চেপে নিচে নামছে…কেমন টমেটোর মত লাল হয়ে আছে!!নিচে নেমে দেখলো অহনা নয় বরং আরেকটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, সাথে একটা ছোট মেয়ে)
সেলিনা বুয়া দরজা খুলে বলল….
সেলিনা : বড় আম্মা যে! কিরাম আছ??? আরে রুশা মা আহো আহো!!
(অরু এবার বুঝলো এটা তার বড় ননদ! মুখে প্রসস্থ হাসি নিয়ে দোড়ে গেল নিচে )
অরু : আসসালামুআলাইকুম আপু! কেমন আছেন?
আরোহী : এইতো! কি খবর?
অরু : ভাল
(হাই! কি নাম। তোমার)
রুশা : লুশা
আরোহী : রুশা
সবাই সোফার ঘরে বসলো!
(আরোহীর মন যে কত খারাপ সেটা যে শুধু আরোহী ই জানে! আজ তার সব থেকে প্রিয় মানুষ টা যে তার গায়ে হাত তুলেছে!..খুব কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে তার.. কিন্তু উপায় নেই ! এই বাসায় সবাই যে বুঝে যাবে তাহলে!! )
(অরু যে বাসায় নতুন তাই তো সে বুঝতে পারে নি যে আরোহীর *ভাল আছি* কথা টা যে পুরোপুরি মিথ্যা!! “”আরোহী যে ভাল নেই এটা এখনো অরুর অবুঝ মন যে বোঝে নি..আরোহী যে কত চঞ্চল তাও তো জানেনা অরু …অরু তো সেই থেকে রুশার সাথে খেলা করতে ব্যস্ত…………….. )
(আরোহীর আজ দুপুর থেকে খাওয়া হয় নি… এখন খুব দুর্বল লাগছে… )

আরোহী : অরু।।।। কি রান্না হয়েছিল আজ দুপুরে ??
অরু : সেটা তো জানিনা আপু!
আরোহী : মানে? খাওনি তুমি দুপুরে??????
অরু: মাথা নাড়িয়ে না বলল……
আরোহী সেই মিনু,সেলিনাকে ডাকলো

অরু: আপু মানে আমি ই ঘুমায় গেসিলাম।
আরোহী : থাক আর খালাদের হয় সাফাই গাইতে হবে না।আমার ভাল জানা আছে উনাদের স্বভাব….

খালা নিতুন একজন মানুষ বাসায় আছে ভুলেই গেছেন বুঝি! কেন এমন করেন আপনারা? এতদিনের কথা নয় আলাদা ছিল যে বাবা, ভাইয়া আর বোনু বাইরে থাকতো বলে দুপুরে তেমন রান্নাবান্না হত না বাসায়! কিন্তু এখন থেকে নেক্সট যেন এমন না হয়! এখন দ্রুত খাবার দেন আমাদের।

অরু ভাইয়া আজ ও অফিসে গেছে তাই না?

অরু: গিয়েছিলেন কিন্তু ফিরে এসেছেন
আরোহী : তাই? ভাইয়া বাসায়?? আসছি আমি
(বলে আরোহী দৌড়ে উপরে অয়নের রুমে হেল)(অরু এদিকে রুশার সাথে খেলায় মগ্ন! রুশাও যেন অরুকে পেয়ে সেই খুশি। বান্ধুবি বানিয়ে নিয়েছে রুশা অরুকে )

দরজা খোকার শাব্দে অয়ন চোখ খুলে তাকালো…..
আরোহী ভাই এর কাছে যেয়ে বসলো
আরোহী : কেমন আছিস ভাইয়া?
অয়ন: ভালই। কি হয়েছে কেঁদেছিস কেন?
আরোহী : কই? ;
অয়ন : বল কি হয়েছে?
আরোহী : না তো । কে বলেছে?
অয়ন : বুঝি
আরোহী : বেশি বুঝিস তুই ভাইয়া! আচ্ছা অরু যে দুপুর থেকে না খেয়ে আছে!! ওকে খেতে বলিস নি কেন?
অয়ন: না খাওয়া নাকি? জানতাম না।না খেয়ে থাকার কি আছে?
আরোহী : ও কি ইচ্ছা করে না খেয়ে আছে? জানিস না খালা রা কিরকম?!
অয়ন: হুম! খালাদের সংসার তো এটা না…এটা অরুর সংসার! ওকেই সামলাতে হবে।
আরোহী : ও বাসায় নতুন ভাইয়া। সব বুঝতে সময় লাগবে…….
অয়ন: হুম
আরোহী : চল! একসাথে খাবো!
অয়ন : এখন খাবো না।বাবা, অহন আসুক খাবো! তুমি অরুকে নিয়ে খেয়ে নেও।
(আরোহী চলে যেতে নিলে অয়ন বলল……)
অয়ন: বোনু…?? অনিক আসে নি কেন?
(অনিকের কথা শুনে আরোহীর চোখে পানি চলে এলো….. অয়নের দিকে না ফিরেই বলল….)
আরোহী : কাল আসবে। আজ অফিসে কাজ ছিল
অয়ন : আর রুশা?
আরোহী : নিচে। অরুর সাথে খেলছে
অয়ন: আচ্ছা যা আমি আসছি।
(আরোহী বের হতে হতে চোখের পানি মুছে নিল)(অয়ন ঠিক ই বুঝতে পেরেছে যে আরোহী কাঁদছে, ওর ভারী গলা শুনে বুঝেছে…আরোহীর মনিল চেহারাটা অয়নের চোখ এড়ায় নি… তার বোনু টা তো আগের মত প্রাণচঞ্চল নেই! জানতে হবে অয়নের সবটা… )(অয়ন দ্রুত পায়ে গেল বাইরে, আরোহীর সাথে একসাথে নামল। ২জনে নেমে দেখে রুশা অরুর কলে ঘুমিয়ে পড়েছে)
আরোহী কিছু বলতে গেলে অরু হাত দিয়ে হুশশশ ইশারা করলো!
বলল ঘুমাক আপু…আমি ওকে খাইয়ে দিয়েছি

আরোহী হাসলো
অয়ন সিঁড়ি তে দাড়িয়ে অরুকে দেখছে । তারপর কাছে যেয়ে , অরুর কোল থেকে রুশাকে কোলে নিয়ে উপরে চলে গেল…

আরোহী : চল অরু খেয়ে নি আমরা(২ জনে খেতে বসলো)

রাতে অহনা আর বাবা বাসায় ফিরে এলে অয়ন নিচে খেতে এল।
খাবার টেবিলে…..
বাবা :অয়ন বিয়ে টা যে তারাহুরায় হল! পরশু বৌভাত কি ঠিক হবে? নাকি আরো ৪,৫ দিন পিছাবো ? কেউ ই তো তেমন জানে না! ইনফাক্ট তোমার হাসপাতালেও কেউ জানে না! কার্ড করতে তো সময় লাগবে….
অহনা: বাপী কার্ড এর ঝামেলা করার কি আছে? আর কার্ড এর সিস্টেম ওল্ড ফ্যাশান ওও!! দরকার নেই।ইমেইল করলেই তো হয়ে যায়!!
অয়ন: হা বাবা অহন ঠিক বলেছে। আমি আমার বন্ধুদের আর হসপিটালের সবাইকে ইমেইল করে ইনভাইট করে দিব রাতে
অহনা : আমি আমার ফ্রেন্ডদের আর কাজিনদের
বাবা:আমি আত্বীয়স্বজনদের ইমেইল করে দিব তাহলে
অয়ন: বাবা অনিককে আর ওর পরিবারকে ফোন করে বলবে শুধু
বাবা:আচ্ছা
/
//
///
//
/
খাওয়া শেষে সবাই যে যার রুমে চলে গেল। আরোহী আর রুশা আগেই ঘুমিয়ে গেছে।
অরু ওদের রুমে পানি রেখে রুমে এসে দেখলো অয়ন লেপটপে কাজ করছে! অরুর খুব ভয় করছে! আজ কি হবে?? অয়ন…. অরু নিজের শাড়ির আঁচল হাতে দিয়ে পেঁচাচ্ছে আর খুলছে…
আবার পেঁচাচ্ছে খুলছে! অয়ন কাজের ফাকে একবার অরুকে দেখে নিল।অরু ঠায় দাড়িয়ে আছে এখনো! এই দেখে অয়ন বলল…….
অয়ন: কি অভাবে বোকার মত দাড়িয়ে আছো কেন?

(অরু সাথেসাথে ওয়াশরুমে দৌড়……. )
অয়ন অরুর এই কাণ্ড দেখে বোল্ড!!!
অয়ন কিছুক্ষন অরুর যাওয়ার দিক তাকিয়ে থেকে আবার কাজে মন দিল।।।।।
ইমেইল এ কার্ড সিলেক্ট করে পাঠিয়েছে অহনা।সেটাই ইমেইল করবে এখন অয়ন নিজের ফ্রেন্ড + হাসপাতাল এর সবাইকে!!!
<এখন আমার পাঠকেরা বলেন অয়নের এই ইমেইল টা যখন জয়ার কাছে পৌছোবে তখন কি হবে?????জয়া কি করবে .... >

অয়ন যেই না প্রত্যকের ইমেইলে একসাথে নিমন্ত্রণ এর কার্ড সেট করে সেন্ড দিল সেই সময়ই অরু ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে বের হল।
অয়ন চোখ তুলে তাকাতেই ফ্রিজেড হয়ে গেল।।।।।।।।অরুকে দেখলে অয়নের মাথা ঠিক থাকে না।কামনা জাগে খুব হারে…. কামনার তারনা মাথায় চেপে বসে অয়নের! না আর কোন মেয়েকে দেখলে অয়নের এই ফিল আসে না। অয়নের কামনার একমাত্র সূত্র অরু।
হ্যা এখন ই সময়, এখন অয়নের আবার অরুকে চাই একান্ত নিজের করে।
♥♥♥♥♥♥♥♥♥
অরু চুপ করে যেয়ে খাটে বসলো!
অয়ন: অরু
অরু : জ্বি।।।।
অয়ন : এদিকে এসো
অরু : …….. ……..
অয়ন : কি হল??? এসো…
♦অরু ধীর পায়ে অয়নের কাছে গেল♦
♦অয়ন লেপটপ টা সাইডে রেখে অরুর হাত ধরে টানা দিয়ে নিজের কোলে বসালো.. ♦

অয়ন: তুমি আমাকে দেখে বা আমার কাছে আসলে এত ভয় পাও কেন ??
অরু : …………
♦অয়ন অরুকে কোলে করে উঠে দারালো… অরুকে নিয়ে বিছানায় দুকে আগালো … … ♦
♥♥♥♥
♥♥♥♥
♥♥♥♥
♥♥♥♥

/
//
///
//
/
ডিনার শেষ করে নিজের রুমে গেল জয়া! মন টা এমনি ই ভাল না,অয়নের সাথে আজ সময় পায় নি সে… গত ৩ দিন ধরে কিছুই যেন ঠিক হচ্ছে না তার জীবনে!কেমন একটা ভয় লাগছে তার! কিসের ভয় সেটা জয়ার নিজের ই জানা নেই… কিন্তু লাগছে… খুব ভয় লাগছে….
রুমি গিয়ে বিছানায় শরীরে এলিয়ে দিল জয়া! ১৫ মিনিটের ন্যাপ নেবার পর চোখ খিললো! একটা প্রেগন্যান্সি কেস এর ব্যাপারে একটু স্টাডি করা লাগবে তার এখন তাই লেপটপ আর ফাইল নিয়ে বসলো জয়া। লাপটপ অপেন করতেই দেখলো ৫০+ ইমেইল। চেক করতে লাগলো হয়া। ২০টা ইমেইলের নিচে যেতেই একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল জয়ার!
বিশ্বাস হচ্ছে না জয়ার!।।।।

অয়নের ইমেইল।।।।।।।

চলবে………

অরুর সংসার
পর্ব-৭
লেখিকা-নিশিকথা

অয়নের ইমেইল!!!!!!!

জয়া কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। খুশিতে তার নাচতে ইচ্ছা করছে! মিনিটেই যেন তার সব ক্লান্তি দুর হয়ে গেল।……

কিন্তু জয়ার এই খুশি যে বেশিক্ষনের স্থায়ী না!……

জয়া ইমেইল অপেন করলো……………. তাকিয়ে আছে জয়া লেপটপ এর দিকে। তাকিয়েই আছে………….. চোখ থেকে দু ফোটা তিন ফোটা করে পানি পরছে তারর….কিছুক্ষন বাদে চোখ জোরা ঝাপসা হয়ে আসলো জয়ার……
কেবল ই তো ভালবাসার বিশার প্রাচীর গড়ছিল জয়া তার মনে…. হুট করেই দমকা হাওয়া এসে তার ভালবাসার প্রাচীর গুড়িয়ে দিল!!! বলতেও তো পারলো না অয়নকে তার মনের কথা! …… বলতে পারলো না যে ♥♥ভালবাসি ♥♥….
বড্ড বেশি ভালবাসি..।।।

জয়ার বুক টা ফেটে যাচ্ছে! ছোট বেলা থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে জয়া! ।।।।।। এই প্রথম যাকে চেয়েছিল তাকে পেল না… আর আজ যা পেল না তা জয়াকে পুরো শূন্য করে দিয়ে গেল।
ভালবাসার মানুষকে না পাওয়া এত কষ্টকর জানা ছিল না জয়ার……..

জয়া বেশ শক্ত মেয়ে.. চাপা স্বভাবের ও বটে…… সহজে কঁাদে না সে……. কিন্তু আজ তার খুব কান্না পাচ্ছে!! পাবেই বা না কেন আজ পর্যন্ত তো কখনও নিজেকে এত নিঃস্ব মনে হয় নি…..

ডুকরে কেঁদে উঠলো জয়া……………….
বাস্তবতা হয়তো এমন ই। কথায় আছে না ‘কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ ‘
আজ তেমন ই হয়েছে এদের জীবনে……..

একদিকে জয়া সারারাত ডুকরে ডুকরে কেঁদেছে আরেকদিকে অয়ন সারারাত অরুর সাথে সুখের মিলনে লুপ্ত অবস্থায় কাটিয়েছে

সকাল…………..

অরুর ঘুম ভাংলো ভোর ৬ টায়। অয়নের গায়ে চাদর টেনে দিয়ে নিজেকে দ্রুত গুছিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। লম্বা শাওয়ার নিয়ে একটা হাল্কা পেস্ট কালারের সুতির শাড়ি পরে বের হল অরু।ভেজা চুল পিঠে ছড়িয়ে দিল। নিচে নেমে সোজা রান্নাঘরে চলে গেল। অরু রান্নাঘরে যেয়ে দেখে মিনু চা বিস্কিট নিয়ে খেতে বসেছে। অরুকে দেখে সেনিলা, মিনু সবাই অবাক।মিনু বলল..
মিনু : আরে নতুন বউ এখানে?
অরু: আটা ময়দা এগুলা কোথায় খালা?
মিনু : কেন কেন? আপনি কি করবেন ওগুলা নিয়া?
অরু : কি করবো মানে? নাস্তা বানাবো
মিনু: দরকার নাই। কেউ সক্কালে এত ভারী খাওন খায় না
অরু : আপনি বলেন কোথায় আছে ওসব…. আমি আজ থেকে রান্না করবো প্রতি বেলায়, আপনি আমাকে সহায়তা করবেন! সবাই খাবে না খাবে আমি বুঝবো
মিনু : মিনু তো রাগে একাকার ! গজগজ করতে করতে সব বের করে দিল।
(অরু মিনুকে বলল সব্জি গুলা কেটে দিতে,মিনু তাই কেটে দিল! মিনু শত রাগ বলেও কিছু বলার উপায় নাই)

অরু এক এক করে সবার জন্য পরোটা, আলু গাজর সিম মিক্সড একটা সবজি, মুরগী ছোট ছোট পিস করে ভুনা করলো… মিস্টান্ন হিসেবে সেমাই রেঁধে ফেলল। জুস আর চা বাকি এখন শুধু।

বুয়ারা সবাই অবাক। অরু একা হাতে দের ঘন্টার মধ্যে সব রেঁধে ফেলল!!! আর অরুর কাজ খুব ই নিট এন্ড ক্লিন! কারো খুত ধরার সাধ্য নেই !!….

ওই সময়ের মাঝে যে অরু শুধু নাসতা করেছে তা কিন্তু নয়!!!! অরু অয়ন, বাবা আর অহনার জন্য দুপুরের লাঞ্চ তৈরীর প্রস্তুতিও করছে!

সকাল ৮ টার এলার্ম বাজাতে ঘুম ভাংলো অয়নের। খুব ভাল ঘুম হয়েছে তার তাই মেজাজ টাও ফুরফুরে তার। টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে গেল অয়ন শাওয়ার নিতে।………….

৮:১০ বাজে অরু বুঝলো অয়ন উঠে গেছে। বুয়াদের টেবিল রেডি করতে বলে অরু উপরে গেল। অয়ন এখনো শাওয়ার নিচ্ছে …

অরু আলমারি থেকে অয়নের শার্ট, সুট, প্যান্ট, টাই, ওয়ালেট, বেল্ট, রুমাল মানে যাবতীয় সব প্রয়োজনীয় জিনিস বের করে রাখলো………

♣হ্যা অরু নিজের সংসার আজ থেকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে শুরু করেছে… এটা তো অরুর ই সংসার,…..
.অরুকেই সব দিক সামলাতে হবে ♣

অরু রুম থেকে যেই বের হয়ে গেল। তার যে অনেক কাজ!!

অয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তো অবাক! তার প্রয়োজনীয় সব জিনিস তার হাতের নাগালে রেখে গেছে!!!

কে???

অরু???

অয়ন বাকা হাসি দিয়ে বলল বাহ ♥ এমন হলে আজ থেকে আর ১০ মিনিট বেশি ঘুমানো যাবে……..

প্রতিদিনের মত সবাই ৮:৩০ এ নিজ নিজ রুম থেকে বের হয়ে নিচে গেল।
নিচে নেমে সবাই অবাক!! বিশেষ করে অয়ন।কত বছর পর যে এমন টেবিল ভর্তি খাবার দেখলো তাও আবার ঘরের তৈরি….

বাবা: সেকি!!! এত কিছু কে করলো।
সেলিনা : সাহেব নুতন বউ এইসব রানছে তাও একা একাই
বাবা: কি!! অরুমা এসব কি? ১দিন কেবল হয়েছে এই বাড়ীতে এসেছো আর আজই রান্নাঘরে ঢুকলে!”! আমি বলেছিললাম বটে যে তোমার হাতের রান্না খাবো তবে আজ ই!!!!
অয়ন:…….
অরু: বাবা আপনি ই তো বলেছেন এটা আমার সংসার!! তাহলে আমাকেই তো সামলাতে হবে!
(অয়ন,অহনা আর তাদের বাবা খেতে বসলো টেবিলে)(অরু সবাইকে খাবার বেড়ে দিল)
(এতক্ষনের আরোহীও চলে এসেছে! অরু আরোহী কে বসতে বলল)
বাবা: অরুমা আমাদের সাথে বস!
অরু : না বাবা আমি একটু পরে খাবো!
আরোহী : কেন? এখনই বস!!!
অরু: না আপু পরে প্লিজ! আপনারা খেয়ে বলুন কেমন হয়েছে…
অহন: ওয়াও!!! ভাবি ভাজি টা জি ইয়াম্মি হয়েছে!! আর চিকেন টাও জাস্ট ওয়াও
অরোহী অরুকে ইশারা করলো অয়ন কে সব বেড়ে দিতে! অরু অয়নকে পরোটা আর ৩ ড়া বাটিতে সব্জি, চিকেন, সিমাই বেড়ে দিল..
(অয়ন চুপচাপ খাচ্ছে নিচের দিকে তাকিয়া)

আরোহী, অহনা আর বাবা তো অরুর রান্নার প্রশংসায় পঞ্চমুখ!!!

অরু বলল…
অরু: বাবা দুপুরে লাঞ্চে কি খাবেন? বললে ভালো হত
বাবা: কেন মা? তুমি লাঞ্চ ও বানাবে? আমরা তো বাইরে খেয়ে নেই তাউ প্রয়োজন নেই
অরু: এতদিক খেয়েছেন বাবা! এখন থেকে আর না! আমি রোজ আপনাদের ৩ জনের লাঞ্চ পাঠিয়ে দিব! বাইরের খাবার স্বাস্থের পিক্ষে ভাল না।
অয়ন:……..
অহনা : ওকে ভাবি আজ গরুর মাংস ভুনা খাব।
বাবা: আচ্ছা মা তুমি ভাত আর মাংস দিয়ো
অয়ন:………

খাওয়া শেষে অয়ন অহনাকে বলল…

অয়ন: অহন! চল তোকে কলেকে ড্রেপ করে দেই ”
অহনা : কেন ভাই! তোমার অফিস আর আমার কলেজ তো অপসিট রাস্তায়
অয়ন: ব্যাংকে কাজ আছে চল
অহনা : ওকে। আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি
অয়ন: হুম
……..

(অয়ন অরুর রান্না ভাল হয়েছে কি না কিছুই বলল না! অরুর মন খারাপ হয়ে গেল)
আরোহী : ভাইয়া বললি না তো অরুর রান্না কেমন হয়েছে???
(অয়ন অরুর দিকে তাকিয়ে বলল….
অয়ন: খাওয়ার মত হয়েছে…..
এই বলে অয়ন বের হয়ে গেল)
(অরুর মুখটা কালো হয়ে গেল)
আরোহী সেটা খেয়াল করে বলল..
আরোহী : আরে অয়নের খুব পছন্দ হয়েছে তোমার রান্না! দেখলা না কি গপাগপ খেল!! ৪ তা পরোটা!! ভাবা যায়!! অয়ন কে আমি অনেক দিন পর এত খেতে দেখলাম
(অরুর মুখে এবার বিশ্বজয়ের হাসি)

অরু নাস্তা খেয়ে নিল। বুয়াদের ও নাস্তা সাজিয়ে দিল। বুয়ারা অবাক!
কিন্তু খুব খুশি হল সবাই

আজ অয়নের মন টা ভাল সকাল থেকেই! হবেই বা না কেন সামনের উপর আজ সব প্রয়োজনীয় জিনিস গুছানো পেয়েছে, তার কষ্ট করে খোজা লাগে নি… আর আজকের নাস্তা টা সেই ছিল অয়নের কাছে!
আজ কতদিন পর যে এমন পেট পুরে সে খেল!!!! রোজ রোজ ব্রেড, জেলী, বাটার খেয়ে খেয়ে অয়ন ছিল ফেড আপ। আর আজকে বেস্ট এর উপর বেস্ট ছিল অরুর হাতের চা।যেন চা তে চুমিক দেওয়ার সাথে সাথেই মন প্রফুল্ল হয়ে গেছিল, এরকম এক কাপ চা যে কোন মানুষের সব ক্লান্তি দুর করতে সক্ষম।।।

অয়ন অহনাকে ড্রপ করে ব্যাংকে গেল। হাসপাতালের সকল ডাক্তার + স্টাফদের বেতন তুলে হাসপাতাল এর উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হল………………..

ওদিকে অনিকের মন টা খুব খারাপ! নিজেকে বড্ড পাষান মনে হচ্ছে তার! সে তার সব থেকে কাছের মানুষ টার গায়ে হাত দিয়েছে!! ১টা মাস ধরে তার কলিজার টুকরো কে কষ্ট দিয়েছে!!!
নিজেকে অনেক একা লাগছে তার!!! নিঃস্ব হয়ে গেছে সেই আজ

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here